নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হায় আশরাফুল!!!

০৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫১

একদম ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট খেলাটাই ছিল আমার ভরসা। নাদুস নুদুস থাকাতে ফুটবল খেলার মত ফিটনেস কখনোই আমার ছিল না। তাই ক্রিকেট আর ব্যাডমিন্টন ছিল আমার প্রিয় খেলা। ক্রিকেট এও যে একদম নেদাকাল থেকে ভালো ছিলাম তা না। বোলার বল করতে আসলে চোখ বন্ধ করে ব্যাট চালাতাম। বেশীরভাগ সময়েই লাগতো না। খুব ক্রিকেট খেলা দেখতাম। টেনডুলকার এর ভক্ত ছিলাম। তাই ভারতই প্রিয় দল ছিল। টিভি তে খেলা দেখতাম আর ব্যাট হাতে টেনডুলকার এর খেলা শট প্র্যাকটিস। খেলা দেখতে দেখতে প্রথমে খেলা শিখা শুরু করলাম। ডিফেন্স। ফ্রন্ট ফুটে গিয়ে। ব্যাট আর পায়ে কোন ফাঁকা থাকবে না। ফাঁকা থাকলে বল সেই ফাঁক দিয়ে ঢুকে বোল্ড হয়ে যাবো। তা তো হওয়া যাবে না। বোল্ড হওয়া খুবই লজ্জার। কারণ যে ব্যাটসম্যান বেশী বোল্ড হয় তাঁর শিখায় তত ঘাটতি। আস্তে আস্তে ডিফেন্স থেকে অফেন্স শিখলাম। কলোনীতে খেলা প্রত্যেকদিনের শট বাসায় গিয়ে বার বার মনে করা আর পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ব্যাট হাতে নিয়ে হাওয়ায় শট প্র্যাকটিস।



এরপর ক্রিকেট অঙ্গনে বাংলাদেশ আসলো। আমরা একটু একটু করে পা ফেলতে শুরু করলাম। আমাদের নিজেদের দল। মনে পরে যেদিন বাংলাদেশ আই সি সি কাপ এ কেনিয়াকে হারালো। ওই খেলা রেডিও তে শুনিয়েছিল। বিকালবেলা বাংলাদেশ জিতার খবর পেয়ে বাটি আর চামচ নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছিলাম আমরা অনেকেই।



এরপর আশরাফুল নামের ছোট ছেলে আমাদের দেখালো আমাদের মধ্যেও আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় হবার সম্ভাবনা আছে। এখনো কার্ডিফ এ অস্ট্রেলিয়ার সাথে করা ওর সেঞ্চুরি এর কথা ভুলতে পারি না। কার্ডিফ এর পরের ম্যাচ এ ইংল্যান্ড এর সাথে স্টিভ হারমিসন নামের লম্বা বোলার একটা বেশ শক্ত রকমের বাউন্স দিল এই ছোটখাটো আশরাফুলকে। ফ্রন্ট ফুট এ দাঁড়িয়ে থেকে পুল। ছয়। ওঃ!!! এখনো ওই শট দেখলে মন তৃপ্ত হয়ে যায়।



ওর একেকটা শট দেখলে মন ভালো হয়ে যেত। যারা একটু হলেও ক্রিকেট বোঝে তারা জানে কতটা উঁচু মাপের শট সে খেলতে সক্ষম ছিল। ‘ছিল’। হ্যাঁ। এখন অতীতই।



ভালো খেলার চেয়ে খারাপ খেলার প্রবণতাই বেশী ছিল আশরাফুলের। অকারণ অফ স্ট্যাম্প এর বাইরের বলকে খোঁচা দিয়ে কত অসংখ্য অগুনতি বার সে আউট হয়েছে তাঁর ইয়ত্তা নেই। মুখটা খুলে গালি দিয়েছি আমরা। দরকার নাই অযথা রিস্কি শট খেলে আউট। আবারো গালি। তারপরো সেই গালি ছিল বাড়ির সেই ভাই, ছেলে আর সন্তানের প্রতি যে কিছুতেই কথা শুনে না।



২০টা ম্যাচের পর হয়তো একটা ভাল ইনিংস আসতো। তাও আমরা ওইটার জন্যই অপেক্ষা করতাম। একটা কভার ড্রাইভ দেখার জন্য। একটা দুর্দান্ত পুল শট দেখার জন্য। যতক্ষণ আশরাফুল ক্রিজ এ। শট আসবে। সারা জীবন যে আশরাফুলকে গালি দিয়ে আসছে। সেও এসে দেখছে। গালি দিচ্ছে আর দেখছে। আরে শালা!!! সব বল মারস কেন? শালা ভুল ভাল মাইরা চার হইসে দেইখা আবার হাস তুমি বেকুব। কত কথা কত কিছু।



এত আবেগ!! তাঁর এই প্রতিদান কিভাবে নেই আমরা। হায় আশরাফুল!!! হায় আশরাফুল!!! আমি আবেগী মানুষ না। আবেগ থেকে দূরে থাকি। মনটা তাও ভারী ঠেকছে। কাছের মানুষের মর্মান্তিক অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। মানুষ আসলে ক্ষমাশীল না। মানুষ কখনো ক্ষমা করে না। ভুলে যায়। ততদিনে আবেগও চলে যায়।



ক্লাস ফোর এ থাকতে প্রথম হওয়ার জন্য হাফ ইয়েয়ারলী পরীক্ষার খাতায় নিজে নিজে মারকিং করে সব নাম্বার ৯০ এর ঘরে দিয়ে দিয়েছিলাম আমি। যেন বাসায় মায়ের ঘ্যান ঘ্যান কমে। পরে তা এমন বড় আকার ধারণ করে যে স্কুল থেকে বের করে দেয় আর কি!!! শেষ মেশ দেয় নাই। কিন্তু কেউ আমাকে ক্ষমাও করে নাই। স্কুল জীবনের মর্মান্তিক সময় আমি পাড় করেছি সহপাঠীদের উদাসীনতায়। শিক্ষকদের আসতে যেতে চোখ রাঙ্গানিতে। যেন আমি একজন খুনের আসামী। এই শিক্ষকরা নাকি আমাদের জীবনবোধ শিখাবে। তাই এখন যখন নিজের স্কুল এর অ্যাড দেখি স্টুডেন্ট এর জন্য। অনির্বচনীয় সুখ লাগে। ওই বয়সেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম ক্ষমা পাওয়া যায় না। তাই পরবর্তী জীবনে আমিও কাউকে ক্ষমা না করার শিক্ষাই নিয়েছি। তাই তোমাকেও বলি আশরাফুল। ক্ষমা চাইলেই পাওয়া যায় না। ক্লাস ফোর এর বাচ্চা ছেলে পায় নাই। তুমি তো দামড়া পুরুষ মানুষ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:২১

অদ্ভুত স্বপ্ন বলেছেন: আশরাফুলকে শাস্তি দেয়ার আগে আইসিসি ও বিসিবির ভেবে দেখা উচিত সে যদি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ফিক্সিং কাহিনী প্রকাশ না করত আইসিসি কিংবা বিসিবি কখনই বুঝতে পারত না।

প্রথমবার সাক্ষাতেই সব কাহিনী প্রকাশ করার সৎ সাহস দেখিয়েছে সে। তাঁকে শাস্তি দেবার সময় বিসিবির এইটাও বিবেচনায় আনা উচিত।


০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:২৬

সুহান সুহান বলেছেন: আমি আপনার সাথে একমত না। যদি এমন হতো কোন সাক্ষাত ছাড়াই সে স্বীকার করেছে তাহলে বলা যেত সে সৎ সাহস দেখিয়েছে। চিপায় পড়ে ধরা পড়ে স্বীকার করাকে সততা বলে না। ওর কঠিন শাস্তি-ই হওয়া উচিৎ। পছন্দ করি বলে ও যা করেছে তা মানা যায় না।

২| ০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:১৮

অদ্ভুত স্বপ্ন বলেছেন: সে চিপায় পড়েছে বিপিএলে ম্যাচ পাতানোর কারণে। যেই ম্যাচটা দেখে খালি চোখেই সন্দেহ করা যায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ফিক্সিং এর কথা ও স্বীকার না করলে আইসিসির বাপেরও ক্ষমতা ছিল না এতদিন পরে এই রহস্য উদ্‌ঘাটন করা। কারণ একে তো স্পট ফিক্সিং, তাঁর উপরে অনেকদিন আগের কথা।

শুধু বিপিএলের ম্যাচে ফিক্সিং এর কারণে ওর হয়ত বড় ধরনের শাস্তি হত না। কারণ সেখানে সে একা দায়ী নয়। একটা ম্যাচ একজনের একার পক্ষে হারা সম্ভব না, সে অধিনায়ক হলেও না। আর সে যদি অন্যদের ম্যাচ হারার জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকে, তাহলে তো দলের বাকি খেলোয়াড়রাও ফিক্সিং এর অভিযোগে অভিযুক্ত হবে।

০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৪৭

সুহান সুহান বলেছেন: ২০০১ সাল থেকে সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে। ২০০৭ থেকে সে আন্তর্জাতিক ফিক্সিং করে। এই ১২-১৩ বছরের মধ্যে ১০ বছরই তাঁর কলংকিত। মনে যদি আসলেই সততা বলে কিছু থাকত তাহলে আরও আগে নিজে থেকে স্বীকার করত।

মাশরাফি কাপালি এদেরও ফিক্সিং এর হাতছানি দেয়া হয়েছিল। এরা যায় নাই। বোর্ডকে জানিয়েছিল সঙ্গে সঙ্গে। একে বলে সততা।

আমি আশরাফুল এর খেলার ভক্ত। ব্যাক্তি আশরাফুল যত না একজন অসৎ ব্যাক্তি তারচেয়েও একজন বুদ্ধিমত্তাহীন ব্যাক্তি।

এবং "বোকা বন্ধুর চেয়ে বুদ্ধিমান শত্রুও ভালো"।

০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৫২

সুহান সুহান বলেছেন: আরও যারা জড়িত সবারই শাস্তি হওয়া উচিৎ। তবে আর সবাই আর আশরাফুল তো এক না। প্রিয় মানুষের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না। মেনে নেয়াও যায় না।

খারাপ খেলার পরও মিডিয়া এর ছত্র ছায়ায় বহু বছর তো চলল উনার পথ চলা। আপনি আমি মেনে নিয়েছি এই মানের প্লেয়ার এর ২১-২২ গড়।

কিন্তু চরিত্রের এই অবমাননা আর আমি মানতে পারব না। মিডিয়া চাইলেও না। এটা যুক্তির ব্যাপার না। আবেগের জায়গার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.