নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাম নেই গল্পের-১

২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:২৭

বৃষ্টি পড়ছে। কখনো খুব ঘন হয়ে। কখনো আবার ছাড়া ছাড়া। রুদ্র জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখছে। জানালা দিয়ে গলিটা একটু দেখা যায়। আর দেখা যায় আকাশের এক ফালি অংশ। পাশের বিল্ডিং এর ছাদটা দেখা যাচ্ছে। বাড়িওয়ালা ছাদকে বাগানে পরিণত করেছেন। অনেক ধরনের গাছ-গাছালি লাগিয়েছেন। আমও আছে এর মধ্যে। ছাদটার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে রুদ্রর। অনেক সময় যেমন সব মানুষেরই অর্থহীনভাবে কোনকিছুর দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে, ঠিক সেরকম।



তানিয়া উঠে পড়েছে। ওয়াশ রুম থেকে শব্দ হচ্ছে। বের হয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল, ‘গুড মর্নিং’। রুদ্র কিছু বলল না। জানালার কাছ থেকে সরে আসলো। বারান্দায় গিয়ে পত্রিকা খুলে বসলো। তানিয়া কফি নিয়ে বারান্দায় এসে পাশের চেয়ারটায় বসলো।

-রুড!!! আজকে আমার স্কুল ফ্রেন্ড দের সাথে সিনেমা দেখবো। দুপুরে ওখানেই খাবো। আমি বুয়াকে বলে রেখে গিয়েছি তোমার খাবার গরম করে দিবে।

-ওকে!!!

ঘনিষ্ঠতার শুরু থেকেই তানিয়া রুদ্রকে রুড ডাকত। তখন রুদ্র আসলেই অনেক রুড ছিল। তখন তাঁর অনেক রাগ ছিল। যা ক্ষণে ক্ষণেই জানান দিত। মজা করে বলত রুড হ্যান্ডসাম। কিন্তু এখন আর রুদ্রের মধ্যে আর রুডনেস নেই। কবে যে তা ভোঁতা হয়ে গেছে তা নিজেই সে খেয়াল করেনি। কিংবা হয়তো করেছে। পাত্তা দেয়নি।



আজকে শনিবার। আজকে তাঁদের দুইজনেরই অফ ডে। বিয়ের আগে থেকেই নিয়ম ছিল যে শনিবার দিনটা শুধু তাঁদের হবে। আর কোন প্লান করা যাবে না অন্যদের সাথে। বিয়ের আগে তা খুব মেনে চলা হত। কিন্তু পুরোপুরি মানা হত না। বেশীরভাগ সময়েই তানিয়া সাথে কোন না কোন বন্ধু নিয়ে আসতই। এ নিয়ে বহু ঝগড়া-ঝাটি হয়েছে। কিন্তু রুদ্র ঝগড়ায় জিতলেও তানিয়ার কর্মকাণ্ডে কখনো কোন পরিবর্তন আসেনি। বিয়ের পরও তাই হয়ে আসছে। ঝগড়া হত। তানিয়া সব বুঝত। মেনে নিত। কিন্তু নেক্সট যেই কে সেই। আস্তে আস্তে রুদ্র ঝগড়া করা ছেড়ে দিল। ‘ওকে’, ‘হুম’ এসব দিয়ে যতটুকু কথা চালানো যায়। তাই চালায় সে।

তানিয়া বরাবরই হই চই পছন্দ করে। বন্ধু-বান্ধব। ঘুরা ফিরা। অন্যদিকে রুদ্র, ঝঞ্ঝাট কম পছন্দ করে। বরাবরই তাঁর বন্ধু বান্ধব কম। সে খুব বেশী পছন্দের মানুষ ছাড়া আর কারো সাথে বেশী সময় কাটাতে পছন্দ করে না। তাকেও বেশীরভাগ মানুষ ভয় পায় গাম্ভীর্যের কারণে। আর আগে থেকেই ‘রুড’ হিসেবে তাঁর পরিচয় তো ছিলই। তো তানিয়া বিয়ের পর নিজের বাবা মায়ের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে জীবনটাকে পুরোপুরি এনজয় করে নিচ্ছে। গত তিন বছরে এখনো তাঁর এঞ্জয়মেন্ট শেষ হয়নি। অফিস করে। অফিস এর পর পার্টি। তারপর বাসায় এসে ঘুম। শুক্রবারটা সে ফাঁকা রাখে নিজেকে এনারজাইজ করার জন্য। শনিবার আরও বড় বড় প্লান থাকে তাঁর। তানিয়া একজন সুখী মানুষ।



রুদ্র প্রতদিন অফিস থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ বোকার মত দাঁড়িয়ে থাকে। এখন ঠিক কোথায় যাবে। সে অবাক হয়ে লক্ষ্য করে যে তাঁর যাওয়ার মত কোন জায়গা নেই। কোথাও না। এমনকি বাসাতেও তাঁর জন্য কেউ অপেক্ষা করে নেই। রুদ্র ছিল মায়ের এক ছেলে। আদেখলেপনা আদর তাঁর মা তাঁকে কখনো দেয়নি। কিন্তু অবহেলাও কখনো স্থান পায়নি। মা মারা যাওয়ার পর এই শূন্যস্থান তাঁকে অবহেলার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।

-কি রুদ্র ভাই!! এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

শায়লা। অফিস এ নতুন জয়েন করেছে। পুরুষ মানুষ হাত করার বিদ্যা এই মেয়ের ভালোই জানা আছে। হাল্কা স্পর্শেই যে পুরুষকে বশে আনা যায় এবং নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানো যায়। তা এই মেয়ে ভালো করেই জানে। তাই রুদ্র এর সাথে কখনোই বেশী কথা বলেনি। শুধু কাজের কথা।

-এই তো!! এমনি! আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

-কোথায় আবার? বাসায় যাব।

-ও আচ্ছা!! ওকে তাহলে কাল দেখা হবে।

-আপনার কি খুব বেশী তাড়া?

-না। কেন?

-তাহলে কোথাও বসে একটু কফি খাই চলেন।

এক মুহূর্ত ভাবল রুদ্র। তারপর কি মনে করে বলল ‘চলুন’।

শায়লা কোন লাস্যময়ী নারী নয়। কিন্তু সে জানে কিভাবে পুরুষ বশে আনতে হয়। অফিস এর সবাইকে বশে আনলেও এই লোকটা কখনোই তাঁকে খুব একটা ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। এমন না যে সে কথা বলে না। বলে ঠিকই। কিন্তু একটা দূরত্বও ঠিক বজায় রাখে। পুরুষ আর দূরত্ব। ঠিক যায় না। অন্তত শায়লা দেখেনি।



রুদ্র এমন পুরুষ নয় যে সে নারীসঙ্গ পছন্দ করে না। এরকম কম পুরুষই আছে যারা নারীসঙ্গ পছন্দ করে না। প্রকৃতিগতভাবেই পুরুষ যে কোন নারীর প্রতি আকর্ষিত হয়। সমাজ, ধর্ম এবং শিক্ষা আমাদের এই আকর্ষণকেই দমিয়ে রাখতে শিখায়। কিন্তু আজকে আর কিছু ভালো লাগছিল না রুদ্রর। নিয়ম এর বাইরে কিছু হোক। সব তো নিজের খেয়ালমতই হল। কই তারপরও তো শুন্যতা পিছু ছাড়ল না। প্রেম করলো। পছন্দের মানুষকে বিয়ে করলো। মাকে রাজি করিয়েই করলো। এখন অফিস থেকে বের হয়ে তাঁকে ভাবতে হয় সে কই যাবে!! কেন তাহলে নিজেকে আটকিয়ে রাখা। হোক না যা হওয়ার।

- কি ভাবছেন?

কফিশপ এ এসে বসেছে ওরা দুইজন।

- নাহ কিছু না। আপনার কথা বলুন। কোথায় থাকেন?

এরপর তারা অনেক্ষন গল্প করলো। বেশী কথা শায়লাই বলল। রুদ্র শুধু শুনে গেলো। মেয়দের সাথে কথাতে এই মজা। তারা বলতে ভালবাসে। অবশ্য মেয়ে ছেলে এর ব্যাপার না এটা। সবাই বলতে ভালোবাসে। শোনে খুব কম মানুষই। এমনকি একটা সময়ে সেও অনেক কথা বলত। তানিয়া বিরক্ত হয়ে যেত। ভেবেই তাঁর হাসি পেল।

-হাসছেন কেন? –শায়লা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

-কই? না তো!! তারপর কি হলো!! আপনার ভাই যে লোকটাকে চুরি করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরল। তারপর?

-ও হা!!!!তারপর তো.....................

আবার শুরু হল শায়লার গল্প। রুদ্র কিছু শুনতে থাকল। কিছু নিজের কথা ভাবল। মানুষ নিজেকে খুব ভালোবাসে। খালি নিজের কথাই সারাক্ষণ ভাবে। নিজের পাওয়া না পাওয়া। তৃপ্তি-অতৃপ্তি।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩৩

মায়াবী ছায়া বলেছেন: ভালো লাগা রইল ।।

২| ২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩৯

ফ্রেয়া রুনি বলেছেন: কাউকে ভালবেসে তৃপ্ত হতেও দেখেছি ।

২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪৫

সুহান সুহান বলেছেন: আরও বেশী যেন দেখেন।

৩| ২৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:১৬

রাকিবুল৯০ বলেছেন: তারপর?

৪| ২৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ১:১৮

সোহাগ সকাল বলেছেন: নামছাড়া গল্প ভালো লাগলো।

+

৫| ২৯ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৪:১৯

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: এটা কি ধারাবাহিক??? শেষটা দেখে আর নাম থেকে তাই মনে হচ্ছে,......হয়ে থাকলে পরের পর্বের প্রত্যাশায় ......।

২৯ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৭

সুহান সুহান বলেছেন: পরবর্তী পর্ব লিখার ইচ্ছা আছে। লিখছি। আমার ধৈর্য কম।তাই দেরী হয়।

৬| ২৯ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৩৬

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: সত্যি অনেক সুন্দর লেখেছেন।


পরের পর্ব লেখেন, এই খানেই শেষ কইরেন না।

২৯ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮

সুহান সুহান বলেছেন: ধন্যবাদ। চেষ্টা করছি পরবর্তী পর্ব লিখার।

৭| ২৯ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৮

টুম্পা মনি বলেছেন: ভালো।

৮| ২৯ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৯

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: থামিয়ে দিলেন যে! সিরিজ করবেন নাকি?

২৯ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৯

সুহান সুহান বলেছেন: আমার সবসময়ই এক পর্বেই শেষ করে দেয়ার ইচ্ছা থাকে। কেন জানি পারি না। তবে পরবর্তী পর্বে শেষ করে দিব।

৯| ২৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:০২

অরুদ্ধ সকাল বলেছেন:
তারপর কি হইলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.