নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাম নেই গল্পের-শেষ পর্ব

২৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:০১

(আজকে এই গল্পের শেষ করবো আমি। গল্পের শেষ লিখাটা আমার জন্য খুবই দুঃসাধ্য। জীবন বয়ে চলেছে। জীবনের মত গল্পগুলোও যেন বয়ে চলতে চায়। মানুষ যেমন জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে থেমে যায়। কলের পুতুল হয়ে যায়। চক্রের মধ্যে পড়ে যায় ঠিক তেমনি গল্পগুলোও থেমে যায়। তাও আজকে শেষ করবো। শেষটা কিন্তু মনমত হবে না। আগেই বলে রাখলাম)



মানুষ জীবনে ঠিক কি চায়? কিসের জন্য এই পুরো পৃথিবী? কিসের আশায় ছুটছে সবাই? একটা থেকে আরেকটা কিছু পাওয়ার আশায়!! কিছুতেই যেন তৃপ্তি নেই। কিছুতেই যেন শান্তি নেই। ছুটছে ছুটছে ছুটছে সবাই। কেন ছুটছে তাও জানে না। এই ছুটে ছুটেই মনে হয় মানুষ নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে চায়। মনে হয় জীবনের প্রকৃত সার্থকতা হচ্ছে ব্যস্ত থাকা। যত ব্যস্ততা ততই মনে হয় নিজের মুখোমুখি কম হওয়া। যত ব্যস্ত হওয়া যায় ততই সময় কম পাওয়া যাবে নিজেকে প্রশ্ন করার। ‘ভালো আছ তো?’ এই প্রশ্নের উত্তরেই তো সব অভাব অভিযোগ অভিমান এক লাইনে দাঁড়া হয়ে একটার পর একটা আসতে থাকে। অভাব অভিযোগ অভিমানের মুখোমুখি হওয়াও একটা নেশার মত। নিজেকে অসহায় দুঃখী ভাবতে পারার মত বিলাসিতা দারুণ লাগে মানুষের। কিন্তু এই বিলাসিতা মানুষকে অকর্মণ্য করে তোলে। কারণ নিজের দুঃখবিলাস অন্যে বোঝে না। তাই মানুষ ব্যস্ততার ভান ও করে আবার দুঃখবিলাসও করে।



আমাদের নাম নেই গল্পের নায়ক রুদ্রও ভাবছে যে আসলেই সে কি খুব দুঃখী!! নাকি সবটাই এক ধরনের বিলাসিতা? ভিতরের ফাঁকা ভাবটা কি এক ধরনের ধোঁকা? এই যে এই নগরী। কত ভিড়!! কত হুড়োহুড়ি। কত গরম!! ঠেলাঠেলি!! এর মাঝে কি তাঁর এই দুঃখ অতিমাত্রায় বিলাসিতা নয়? ওই যে ফুটপাথে বসে থাকা নারী যার বসতি ফুটপাথেই। ও যদি হঠাৎ করে এসে জিজ্ঞেস করে, ‘কি দুঃখ আপনার?’ ‘আপনার থাকার জায়গা নাই?’ ‘আপনার টাকা নাই?’ ‘আপনার বুঝি পঙ্গু স্ত্রী আছে যাকে নিয়ে আপনার ভিক্ষা করতে নামতে হয়?’ ‘আপনার বুঝি অনেক বাচ্চা কাচ্চা যাদের খাবার যোগানর টাকা নাই?’ ‘আপনাকে বুঝি রাতের বেলা লোকেরা খারাপ কাজ করতে ডাক দেয়?’



এসব ভাবতে ভাবতে রুদ্র নিজেই অনেক লজ্জিত হয়। সত্যিই তো!! তাঁর তো সেরকম কোন দুঃখ নেই। কিন্তু তারপরও তো মানুষের আরো কিছু চাওয়া থাকতে পারে!! সে চাইতেই পারে একটা পূর্ণতা। সে চাইতেই পারে এমন কাউকে যে তাঁকে একটু ভালবাসবে। তাঁর পছন্দ অপছন্দের একটু খেয়াল করবে। তাঁর জন্য অপেক্ষা করবে। এটা মানুষের আরেক বদভ্যাস। ঠিক যে জায়গায় কেটেছে সে জায়গাটা অনবরত খোঁচাবে। যতক্ষণ না সে জায়গাটাতে ঘা হয়ে যায়।



শায়লার সাথে নিয়মিত কফি হাউসে বসছে রুদ্র। তাঁর সময় কেটে যাচ্ছে। শায়লা কথা বলে সে শুনে যায়। পরে রাত ৯টা বাজতেই দুজনে দুজনের বাসার পথ ধরে। রুদ্র জানে প্রতিদিনের এই বসাটা মোটেও কোন স্বাস্থ্যকর ব্যাপার হচ্ছে না। জটিলতাই বাড়ে শুধু এসব থেকে। হয়তো দেখা যাবে, রুদ্রর অবহেলিত মন এই শায়লাকেই আশ্রয় করে আঁকড়ে ধরতে চাইবে। আঁকড়ে ধরার পর মনে হবে আগেই ভালো ছিলাম। কারণ কাউকে পেয়ে যাওয়ার পর আর মানুষ তাঁর মূল্য বোঝে না। কিন্তু একাকীত্ব আর রুদ্রের ভালো লাগছে না। আর মেয়েটা নিজে থেকেই আসছে। সে তো তাঁকে ডাকেনি। যেমন চলছে চলুক না!!



আসলে খুশি থাকতে পারাও এক ধরনের ক্ষমতা। যেমন তানিয়া। ও খুশি। মজা করছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে রুদ্রর কথা তাঁর মনে হয়। রুদ্রকেও সে এরকম বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু রুদ্র একজন পার্টি স্পয়লার। ওর ভালো না লাগলে পার্টিতে গিয়ে মুখ হাড়ি করে রাখবে। কয়েকবার চেষ্টা করে এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে তানিয়া। স্ত্রী হিসেবে সে তাঁর দায়িত্ব ঠিকই পালন করে। রুদ্রর খাওয়া দাওয়া ঠিকভাবে যেন হয় সে ব্যাপারে বুয়াকে ইন্সট্রাকশন দেয়া থাকে সবসময়। সকালে একটা গুড মর্নিং কিস আর রাতে একটা গুড নাইট কিস। সবদিক দিয়ে তো সব কাভার করা হচ্ছেই। রুদ্র আগে ঝগড়া করত। এখন আর করে না। তাঁর মানে সেও এখন যথেষ্ট ম্যাচিউরড।



এখন আসা যাক ‘ভালোবাসার প্রশ্নে’। এরা কি কেউ কাউকে ভালোবাসে? ভালোবাসা আসলে কি জিনিস? ভালোবাসা আসলে খুবই অদ্ভুত জিনিস। এই ভালোবাসা শুধু অনাত্মীয় নারী-পুরুষদেরকেই বলতে হয়। বাবা-মা-ভাই-বোনদের না বললেও চলে। কিন্তু স্বামি-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে এই ‘ভালোবাসি’ না বলার কারণেও সম্পর্ক নষ্ট হয়। কি হাস্যকর!! রুদ্র কখনো ভালোবাসা ন্যাকামি করে দেখানোর পক্ষপাতি না। তোমার কাজই প্রকাশ করবে তুমি কতটুকু ভালোবাসো। অন্যদিকে তানিয়া এসব নিয়ে ভাবেই না। ভালোবাসি বলেই তো বিয়ে করেছি। ভালোবাসি বলে কি এখন লাইফ এঞ্জয় করা যাবে না? হাউ সিলি!!!



আমরা সারাজীবন সম্পর্কের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে জীবনের মানে খোঁজার কি আপ্রাণ চেষ্টাই না করি!! কিন্তু সত্যিকারের জীবনের অর্থ তাই যা আমরা দেখতে চাই। আমাদের হাতেই জীবনের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। সকালে উঠেই যদি জীবনের না পাওয়ার হিসাব করতে শুরু করি তাহলে এই জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া গেলেও তা খুব একটা সুখকর হবে না। রুদ্রর মত আমাদের অন্ধকারে হাতড়াতে হবে। আমরা প্রত্যেকটা মানুষ নিজের নিজের জায়গায় অনেক ভালো আছি। কিন্তু আমরা তা ধরতে পারি না। বুঝতে পারি না। কেন আমরা এমন কিছু করি না যা আমাদের জীবনের অপূর্ণতার গর্ত গুলো ভরাট করে দিবে।



এসব ভেবেই বুঝি জীবনের সব হতাশা দূর করে এক সকালে রুদ্র বের হয়ে গেলো। তানিয়াকে কিছু না বলে ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে পড়লো। বের হওয়ার আগে অফিসের বসকে এসএমএস করে দিলও যে হঠাৎ করে ঢাকার বাইরে জরুরী কাজে যেতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ লাগবে। তারপর মোবাইলটা ঘরে রেখে বের হয়ে গেল। কোথাও ঘুরে আসা দরকার। আর ভালো লাগছে না। তো রুদ্র অজানার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।



তানিয়া ঘুম থেকে উঠে দেখে রুদ্র নেই। ওর মোবাইল ও রেখে গেছে। ঘুম ঘুম চোখে সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখল। ওইদিন আর তানিয়া ঘুরতে বের হলো না। কেন হল না তা তানিয়াও জানে না।



শায়লা অফিস এসে দেখল আজকে রুদ্র আসেনি। সে রুদ্রকে ফোন দিল। ফোন ধরলো তানিয়া। দুইজনই অবাক হলো। অবাক হয়েই দুইজনে কথা শেষ করে ফোন রেখে দিল।



রুদ্র একটা জনবহুল একটা ট্রেন এর ছাদে চড়ে বসেছে। তার বহুদিনের শখ এটা। সাথে আছে তার ক্যামেরা। দ্রুত ট্রেন ছুটে যাচ্ছে। হঠাৎ অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে ক্যামেরা হাতে একটা মেয়েও ট্রেন এর ছাদে চড়ে বসেছে। মেয়েটা মনে হয় আগেও এরকম উঠেছে। ওকে বেশ অভ্যস্ত মনে হলো। রুদ্রর মজাই লাগছে। ও ভাবছে মেয়েটা যেখানে যেখানে যায় সেখানে যাবে। সে আগ্রহ নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা তখন ট্রেন এর পাশে দৌড়াতে থাকা বাচ্চাদের ছবি তুলছে। ক্লিক ক্লিক ক্লিক।



বাতাসে যেন উড়ে যাবে রুদ্র। কতদিন সে বের হয় না। এই চারপাশে কত মানুষ। সবাই ফিরছে নিজের প্রিয়জনের কাছে। তাঁদের সবার কত দুঃখ কত কাহিনী!! সব শুনতে শুনতে রুদ্র যেন নিজের কাছেও হারিয়ে যায়। আহা!!! আর যদি ফিরতে না হতো রুদ্রকে!!!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:০৭

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ভাল লাগলো।


পরের পর্বের অপেক্ষায়..........

২| ২৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:১৩

মাক্স বলেছেন: দুটো পর্বই পড়লাম, সুন্দর লিখেছেন।++++

৩| ৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:৫৪

বটবৃক্ষ~ বলেছেন: সুন্দর.....আগেরটাও.....++++

৪| ৩০ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:১৬

বটের ফল বলেছেন: একগুচ্ছ প্লাস।
+++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.