নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রক্ত বন্যা দেখিনি কোথাও,\nদেখেছি চোখের কান্না।\nসে অশ্রু ফোটায় ম্লান হয়েছে\nহীরা, মতি, মণি, পান্না।

মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া

আমি রক্ত বন্যা দেখিনি কোথাও, দেখেছি চোখের কান্না। সে অশ্রু ফোটায় ম্লান হয়েছে হীরা, মতি, মণি, পান্না।

মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ মিল

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৩৩

রিকশার প্যাডেলে দ্রুত পা চালায় করিম মিয়া ।প্রত্যাশা অনুযায়ী রিকশার গতি

বাড়েনা তেমন ।রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে অবস্থা খারাপ ।দশ মিনিটের পথ পেরোতে ঘন্ট

পেরিয়ে যায় ।

বৃদ্ধ সাদা দাড়ি আর চুল পাকা রিকশা ওয়ালা করিম।

তবে রুগ্ন নয় ।বয়স ৬০এর কোঠা পেরোলেও এখনও বেশ শক্ত সমর্থ্য সে ।

: হালার রাস্তা ঘাট বাইচতে ঠিক অইবনা !

মনে মনে আফসোস করে করিম।



ছোট খাট একটা গ্রাম্য বাজার ।বাজারের পাশে প্রাইমারি স্কুল ঘর ।আর এই

স্কুল ঘরের পাশেই রাস্তা সংলগ্ন মাঠ মত একটা জায়গা ।এখানেই এসে রিকশা

থামায় করিম ।তারমত আরও অনেকেই এখানে রিকশা নিয়ে যাত্রীর আশায় দাড়িয়ে

আছে ।রিকশার ষ্টেশন বলা যেতে পারে জায়গাটাকে ।



: কি রহিম্মা ! কয় টিপ মারলি ।

পাশের আরেক রিকশাওয়ালাকে প্রশ্ন করে ও ।

: কাকা একটা মাত্তর ।তাও লসের কোঠায় !হালার কপাল !

: কেমতে ?

ছেলেটার কথায় কৌতুহল জাগে করিমের মনে ।

: ভাঙ্গা রাস্তা ।থেতনায় চাকার রিং গেছে বেকা হয়ে ।গেছি সারাইতে ,কয়

তিরিশ টেকা মজুরি ।

: দুঃখ করিস নারে ! আপনিই কপাল ফিরব ।

: হ ! আর ফিরব কই ?

বেশ বিরুক্ত গলায় শেষে উত্তর দেয় রহিম ।করিমও আর কথা বাড়ায় না

।রিকশাটা ডানে রাস্তার পাশে দাড় করিয়ে সিটে বসে পড়ে হেলান দিয়ে ।

: করিম্মা যাবি নাকি ?

সহসা স্বরটা শুনে চমকে উঠে বসে করিম ।চেয়ারম্যান সাহেব ।বয়সে ওর অনেক ছোট ।কিন্তু টাকা আর প্রতিপত্তিতে করিম কোন ছার !

তাই হয়তো সম্মোধন হিসেবে 'তুই' টাই মানান সই ।

: হ !কই যাবেন চেয়ারম্যান সাব ? আলেন কইত্তে ?

: বাড়ির দিকে চল !

লাফ দিয়ে রিকশায় উঠে পড়ে চেয়ারম্যান ,রমিজ উদ্দিন ।

বাজারে বেশ ভিড় আজ ।হাটবার তো ।বাজারটা পেরোতেই বেশ কষ্ট পুহাতে হয়

করিমের ।ডানহাতে বৃদ্ধাঙ্গুলিটা

৭১এর সময় হানাদার বাহিনী কেটে নিয়ে ছিল ।তাই বেল বাজাতে বেশ কষ্ট হয় তার ।

: ঐ মিয়া ,তাড়া আছে !জলদি যাও ..

চেয়ারম্যানের মেজাজটা আজ খুব চড়া হয়ে আছে ।

অবশ্য চড়া হবার কারনও একটা আছে ।বিশেষ করে করিমের উপর ।

৭১এ মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল করিম ।স্বাধীনতার পর যখন বাড়ি ফেরে দেখে সব

খালি ।মা ,বাবা ,বড় ভাই কেউই বেচে নেই ।এরপর ৭৫এর শেষের দিকে বিয়ে করেও

।লেখাপড়া তেমন একটা নাই তার ।অগত্যা ভাড়া রিকশা চালানোই সই ।

১৯৮০র শেষের দিকে জন্ম নিল ওর মেয়ে ।এরপর কলেরায় মরল স্ত্রী ।

সুখে ,দুঃখে কাটাকাটি করে মেয়েটার মুখ চেয়ে বেশ চলে যাচ্ছিল দিন ।

কিন্তু মেয়েটা বড় হতেই হল কাল ।

চেয়ারম্যান সাবের স্ত্রী সম্প্রতি মারা গেছে ।এখন তার নতুন বিবি চাই ।আর

পছন্দ এসে ঠেকল করিমের বাড়িতেই ।ওর মেয়ে সখিনাকেই চাই ওনার ।



: ওই থাম !কই চাইয়া রিকশা চালাস ?

চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ি চলে এসেছে ।রিকশা থেকে নেমে পড়েন ওনি ।তারপর

ভাড়া মিটিয়ে হন হন করে চলে যান গেট পেরিয়ে বাড়ির ভেতর ।

: ঐ মিয়া খাড়াও !

করিম রিকশার প্যাডেলে পাড়া দিতে না দিতেই কে যেন বাঁজখাই গলায় চেচিয়ে উঠে ।

তাকিয়ে দেখে ,আমিন ।এক নাম্বারে বদমাস ব্যাটা ।চেয়ারম্যানের চামচা ।

দাড়িয়ে পড়ে ওঁ ।

: হোন করিম মিয়া ।চেয়ারম্যান সাবের মাথা কিন্তুক বেশি দিন আর ঠান্ডা

থাকব না ?ঠান্ডা থাকতে থাকতেই কামডা সাইরা ফেলাও ।

: কিয়ের কাম ?

সহসা হুমকির মানে বুঝে আসেনা করিমের ।

: ভান ধর না ?ধর ভান যত ইচ্ছা ধর ! ইমুন কাম কইরা দিমু মাইয়া বিয়া দিতে

রাস্তার একটা কুত্তাও পাইবানা ।

লজ্জায় ঘৃনায় চোখে জল আসে করিমের ।নাহ্ ! জীবনটা অতিষ্ট করে তুলেছে

ওরা ।মেয়েটাকে নিয়ে আর বুঝি এই গ্রামেই থাকা যাবেনা ।

আমিনের কথায় কোন উত্তর দেয়না ও ।দ্রুত প্যাডেলে পা চালায় ।

: ফক্কিনির পোলার দেমাগ দেখছ ..

পেছন থেকে আমিনের গজরানি কানে আসে করিমের ।



***



মধ্যরাত ।নিঝুম নিঃশব্দ চারদিক ।মাঝে দু একটা রাতজাগা পাথি কিংবা কুকুরের

ডাক কিছুখনের জন্য একটু পর পর নিরবতা খান খান করে দিচ্ছে ।কিন্তু

পরক্ষনেই আবার এক ঝাক নিরবতা ছেকে ধরছে চারদিক ।

মাঠের পাশেই করিমের কুড়ে ।চাঁদের আধো আলোয় হঠাত্ করেই কয়েকটা ছাড়া

মূর্তি দেখা যায় কুড়েটায় পাশে ।

ওদের হাটা চলা ,খসখসানি ,চুপি চুপি আলাপ তারপর দরজা ভাঙার শব্দ !

একটানা কয়েক সেকেন্ড নিরবতা ।তারপরই উঠে কান্না চিত্কার চেচামেচির শব্দ ।

: ও বাজান !বাজান ..

সখিনার করুন চিত্কার ভেসে আসে ।

: এই চুপ থাক !

তারপরই কারও শাসানির আওয়াজ ।

দ্রুত করিম উঠে বসে বিছানায় ।অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে চারপাঁচজনের একটা

দল ,কালো কাপড় মুখে বাঁধা ওর ঘরে ।

দুজন সখিনাকে বেঁধে তুলে নিয়েছে কাঁধে ।

: ঐ ক্যাডা তোরা !আমার মাইয়ারে কই ন্যাস ?

বলেই লাঠি হাতে উচিয়ে যায় করিম ।কিন্তু এত জনের সাথে পারবে কেন ? দুজন

ওকে নাকে মুখে ঘুসি দিয়ে বেড়ার দিকে ছুড়ে মারে ওকে ।

মুলি বাঁশের বেড়ার খাজে গিয়ে লাগে সেই কাঁটা বৃদ্ধাঙ্গুলিটা ।গলগল করে

রক্ত পড়তে থাকে সেখান থেকে ।

: মিল ..বড্ড মিল ..

ক্ষতস্থানে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে থাকে করিম।এক বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধা এবং

পরাজয়ী বাবা !

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:৫৬

খেয়া ঘাট বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে।
ক্ষতস্থানে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে থাকে করিম।এক বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধা এবং
পরাজয়ী বাবা - শুধুই দীর্ঘশ্বাস রেখে গেলাম।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৪

মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া বলেছেন: পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.