নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রবাসী মন!
স্বদেশী আন্দোলনের সেই মাতাল দিনের চট্টগ্রামের দামাল বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, দেশমাতৃকার জন্য যিনি বিলিয়ে দিয়েছিলেন নিজের জীবন। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহীদ বীরকন্যা তিনি। বীরবিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্যসেনের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন এই মহীয়সী নারী।
দেশমাতৃকার মুক্তির আকাঙ্খায় বীর কন্যা প্রীতিলতা ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে মরণপণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। দেশপ্রেমের অটল মন্ত্রে দীক্ষিত প্রীতিলতা ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কায় মাত্র একুশ বছর বয়সে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর আত্মাহুতি দেন। অগ্নিযুগের এই অগ্নিকন্যার মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতিমুহূর্ত জানাই বিনত শ্রদ্ধা।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।(আমার বাড়ির পাশে ওনার বাড়ি ) বাবা জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার ছিলেন একজন চাকরিজীবী আর মা প্রতিভা ওয়াদ্দেদার ছিলেন গৃহিণী। চট্টগ্রাম খাস্তগীর উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী প্রীতি ১৯২৭ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন। পরে প্রীতিলতা কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে ডিস্টিংশনসহ গ্র্যাজুয়েশন করেন। ১৯৩২ সালে চট্টগ্রামে ফিরে নন্দনকানন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন।
কলেজে পড়াশোনার সময় প্রীতিলতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তক পড়ে জানতে পারেন ফিলিস্তিন, আলজেরিয়া, ভিয়েতনামসহ পৃথিবীর বহুদেশে মাতৃভূমিকে সাম্রাজ্যবাদের কবলমুক্ত করতে পুরুষের পাশাপাশি বহু নারী আত্মদান করে নারীর সংগ্রামী মর্যাদা ও বীরত্বের ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এদেশের নারীরা কেন পরাধীন দেশকে স্বাধীন করার সংগ্রামে পিছিয়ে থাকবে, এই চিন্তা তার ভিতর গভীরভাবে রেখাপাত করে। ছাত্রজীবনেই প্রীতিলতা জড়িয়ে পড়েন বিপ্লবী সংগঠনের সাথে। পরে সূর্যসেনের সঙ্গে দেখা করে তার দলে যোগ দেন।
মাস্টারদা সূর্য সেনের নির্দেশ পেয়ে ১৯৩২ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে সামরিক পোশাকে বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা মৃত্যুভয়হীন কিছু তরুণকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাবে ইংরেজদের ওপর আক্রমণ করেন। খাকি সামরিক পোশাকে সজ্জিত হয়ে প্রীতিলতার নেতৃত্বে ১০-১৫ জন যোদ্ধা রাত দশটায় আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে ৫৩ জন ইংরেজ নর-নারী নিহত হয়েছিল। বহু ইংরেজকে হতাহত করে সফল অপারেশনের পর কাল বিলম্ব না করে প্রত্যাবর্তনকালে হঠাৎ একটি গুলি এসে বিঁধে তাঁর বুকে। এ সময় ইংরেজ সেনারা তাঁকে ঘেরাও করে ফেললে নিজেদের গোপন আস্তানার কথা ব্রিটিশরা যাতে তাঁর কাছ থেকে জানতে না পারে সেজন্য তিনি জীবিত ধরা না দিতে নিজের কাছে থাকা পটাশিয়াম সায়নাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন।
ময়না তদন্তে দেখা যায় প্রীতিলতার গায়ে গুলির আঘাত তেমন গুরুতর ছিল না, তাঁর মৃত্যুর কাণন ছিল পটাশিয়াম সায়নাইড।
আত্মদান করে প্রীতিলতা প্রমাণ করেছেন, মেয়েরাও পারে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য জীবন উত্সর্গ করতে।প্রাণভয় তুচ্ছ করে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারীদের তালিকায় শীর্ষভাগে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নামটি অক্ষয় হয়ে থাকবে।
একনজরে প্রীতিলতা
নাম : প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (ডাকনাম রাণী)
জন্ম : ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামে
বাবা : জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার
মা : প্রতিভা দেবী
শিক্ষা জীবন : ডা. খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজ, কলকাতা বেথুন কলেজ
পেশা : শিক্ষকতা
মৃত্যু : ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর
যে জন্য পরিচিত : বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ।
চট্টগ্রামের এই বীর কন্যা প্রীতিলতার মত মানুষেরা টিকে থাকে যুগ যুগ ধরে। তারা অমর, তারা চিরস্মরণীয়।
অশেষ শ্রদ্ধা তার অমর স্মৃতির প্রতি!
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২০
চাটগাইয়া জাবেদ বলেছেন: ওনার সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানি! ধীরে ধীরে একেক করে সব দেব। শুধু তাকে নয় চট্টগ্রামের সব বীরদের নিয়ে লেখব/ লেখা পাবেন
কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৩
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: চমৎকার তথ্যবহুল পোষ্টে। এরকম একজন বীর সম্পর্কে অনেকেই জানেন না, তাকে নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। প্রথম প্লাস।