নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রবাসী মন!
আজ ১লা মহরম ১৪৩৭ হিজরী! আরবি নতুন বছরের প্রথম দিনে সামহোয়্যার ইন ব্লগের সবাইকে হিজরি নববর্ষের শুভেচ্ছা। যদিও ইসলামে নতুন বছর পালনের কোন অস্তিত্ব নেই, কারন আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি দিনই সুন্দর এবং মঙ্গলময়।
আসলে, বর্ষপঞ্জি হচ্ছে জীবনের একটা অপরিহার্য প্রসঙ্গের নাম। দিন, মাস আর সনের হিসাব ছাড়া আধুনিক পৃথিবীতে কোনো কাজই চলে না। আমাদের বাংলাদেশে তিনটি পর্ষপঞ্জির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সরকারি বেসরকারি দাফতারিক কাজকর্ম, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে ইংরেজি বর্ষপঞ্জি একটা অপরিহার্য মাধ্যম। হিন্দু-সম্প্রসায়ের পূজা-পার্বণ, বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ আর কৃষিজীবীদের আবাদি মৌসুমের হিসাব ছাড়া বাংলাদেশে বাংলা পঞ্জিকার ব্যবহার খুব একটা চোখে পড়ার মতো নয়। মুসলমানদের নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, শবেবরাত, শবেকদর, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহাসহ ধর্মীয় বিষয়াবলীর জন্য হিজরি সনের হিসাব অপরিহার্য। কিন্তু জীবনের প্রাসঙ্গিকতায় ইংরেজি ও বাংলা সনের বিদায় ও বরণে যতটা গুরুত্ব দেয়া হয় হিজরি সনের বেলায় তা মোটেও লক্ষ্য করা যায় না। মুসলিম সংখাগরিষ্ঠ দেশে ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রতি এতটা অবজ্ঞা সত্যিই দুঃখজনক। সাধারণ মানুষ তো বটেই, অনেক আলেম-যারা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পরিচালনা করে থাকেন, তারাও আরবি দিন-তারিখের খবর রাখেন খুব কমই। এভাবে অনেকেরই অজান্তে মুসলিম বর্ষপঞ্জির আরও একটি বছর পূর্ণ হয়ে যায়। বিদায় নেয় পুরনো বছর, আর আগমন হয় নতুন সনের। আল বিদা ১৪৩৬, খোশ আমদেদ- স্বাগতম ১৪৩৭ হিজরি।
ইসলামী বর্ষপঞ্জি তথা চন্দ্রবর্ষ, পরিক্রমাই হল পৃথিবীর আদি ও আদর্শ, সন গণনার পদ্ধতি, যা পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে চলে আসছে। যদিও হজরত উমর (রা.) তার খিলাফতকালে হিজরি সনের প্রচলন করেছিলেন। কিন্তু তিনি বর্ষ-গণনার কোনো নতুন পদ্ধতি চালু করেননি। পৃথিবীর আদি থেকে চলে আসা বর্ষপঞ্জিকে তিনি নতুন নামকরণ করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধানে বছর গণনার মাস ১২টি নির্ধারিত। এগুলোর মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এগুলোর বিষয়ে নিজেদের ওপর জুলুম কর না। (সূরা তওবা, আয়াত-৩৬) রাসূলুল্লাহ (সা.) ও বিদায় হজের ভাষণে একই কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হে মানবমণ্ডলী। তোমরা মনোযোগসহকারে শোন। যে দিন আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে সময় গণনার হিসাব যে বিধান অনুযায়ী হয়ে আসছে এখনও ওই একই বিধানের আলোকে তা পরিচালিত হবে। আল্লাহতায়ালা যেদিন আকাশ পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে আল্লাহর বিধানে বছর গণনার মাস ১২টি নির্ধারিত। এগুলোর মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ। ওই চার মাসের ব্যাপারে তোমরা নিজেদের ওপর কোন জুলুম কর না। (বুখারি)।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে উল্লিখিত চারটি নিষিদ্ধ মাস হল, মুহররম, জিলকদ, জিলহজ ও রজব। তবে জাহেলি যুগে, মাসগুলোর ধারাবাহিকতায় আরবরা কিছুটা রদবদল করে নিয়েছিল। মুজার গোত্র রজব মাসকে জমাদিউল আখির ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী তথা সপ্তম মাস হিসেবে গণ্য করত। পক্ষান্তরে রাবিয়া গোত্র অষ্টম মাস হিসেবে রজব মাসকে গণ্য করত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ১২ মাসের ধারা গণনায় মুজার গোত্রের হিসাব সঠিক বলে জানিয়ে দেন এবং রাবিয়া গোত্রের বছর গণনার রীতি বাতিল করে দেন। (ইবনে বাসির)।
পৃথিবীর আদি থেকে বছর গণনার জন্য ১২টি মাস নির্ধারিত হলেও সন নির্দিষ্টকরণের জন্য কোনো সর্বজনীন পদ্ধতি চালু ছিল না। তাই মানুষ কোনো বিষয়কে স্মরণ করতে কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার বছরকে কেন্দ্র করে বছরের সংখ্যা গণনা করত।
একবার কুফার গভর্নর আমর ইবনুল আস (রা.) হজরত উমরকে লিখে পাঠালেন, আমীরুল মুমিনিন! বিভিন্ন সময় আপনার পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অনেক জরুরি পত্রাদি আসে, যাতে প্রজাতন্ত্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ থাকে, আমাদের প্রতি খলিফার জরুরি ফরমান থাকে। অথচ পত্রে কোনো দিন, তারিখ, সন উল্লেখ থাকে না, ফলে আমরা বুঝতে পারি না পত্রটি কবে আমাদের লিখা হল, কত দিন পর আমরা সেটা পেলাম। আর কবে থেকে খলিফার ফরমান বা আদেশ কার্যকর হবে? অতএব আপনার চিঠিপত্রে নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ থাকা জরুরি।
চিঠিটি পড়ে হজরত উমর (রা.) তাৎক্ষণিকভাবে বিশিষ্ট সাহাবিদের এক জরুরি সভা ডাকলেন। সভায় সন নির্দিষ্টকরণের জন্য সবাই যুক্তিসহ নিজ নিজ মতামত পেশ করলেন। কেউ বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মের বছরকে সূচনা ধরে মুসলিম বর্ষপঞ্জি চালু করা হোক। কেউ বললেন, আল্লাহর রাসূলের মৃত্যুর বছরকে কেন্দ্র করে মুসলিম বর্ষপঞ্জি নির্ধারণ করা হোক। আবার কেউ বললেন, মহানবীর নবুওয়াত প্রাপ্তির বছর থেকে মুসলিম বর্ষপঞ্জি সূচনা করা হোক। হজরত উমার (রা.) সবার প্রস্তাব শোনার পর এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিলেন। তিনি বললেন, জন্মের বছরকে সূচনা ধরলে খ্রিস্টানদের অনুসরণ করা হবে। কারণ তারা হজরত মুসা (আ.) জন্মের বছর থেকে সন গণনা করে। আর মৃত্যুর বছরকে কেন্দ্র করে। বর্ষপঞ্জি নির্ধারণ করলে শোককে স্থায়ীভাবে সামাজিকীকরণ করা হবে। আর নবুওয়াতের বছরকে কেন্দ্র ধরলে বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে আধ্যাত্মিক রূপ পাবে। তিনি প্রস্তাব দিলেন আল্লাহর রাসূলের হিজরতের বছর থেকে হিজরি সনের প্রবর্তন করা যেতে পারে। সাহাবায়ে কেরামের সভায় হজরত উমরের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় এবং মুসলমানদের স্বতন্ত্র বর্ষপঞ্জি হিজরি সন চালু হয়।
অতএব, আরবি নতুন বছরের প্রবর্তন বলার অপেক্ষা রাখে না, আরবি হিজরি সালের প্রতিটি মাসই বিশেষভাবে তাৎপর্যমণ্ডিত। আমরা হিজরি নববর্ষে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার দরবারে মোনাজাত করি- হে মহান রাব্বুল আলামিন! সারাবিশ্বের মুসলমান ও সকল মানবজাতিকে সুখে-শান্তিতে-সমৃদ্ধিতে তাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবন মঙ্গল এবং বরকতময় করে তোলো। বিশ্বময় রক্তক্ষয়ী অবস্থা থেকে আমাদের রক্ষা করো।
ইনশাআল্লাহ... ১৪৩৭ হিজরী আমাদের সবার জীবনে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসবে। আমিন।
©somewhere in net ltd.