নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রবাসী মন!
এখনো মনে পড়ে নব্বই দশকের শেষের দিকে বয়সে ছোট থাকায় আমার বাবা-মা রোজা থাকতে দিতেন না। অনেক জেদ ধরতাম, কেন আমি রোজা রাখতে পারবোনা? তাছাড়া সেসময় একটি গান শুনে খুব আবেগী হয়ে উঠতাম গানটি ছিলো এরকম...
ঘুম থেকে কেউ ডাকলো না যে তাকে
ভোরে উঠে বল্লো ছেলে মা কে,
কেন আমায় ডাকোনি ঘুম থেকে
রাখলে রোজা আমায় ঘুমিয়ে রেখে,
পরের রাতে ঘুমায় না সে আর
রাখবে রোজা ভাবনা শুধু তার…
এ গানটি আজো আমার প্রিয় একটি গান। তখন যখন এ গানটি শুনতাম তখন মনে হতো আমিই সেই ছোট্ট ছেলেটি যাকে তার মা-বাবা সাহরীর সময় ডেকে দেন না। একদিন তো আমি নিজে নিজেই ঘুম থেকে উঠলাম রাত তিনটার সময় (আমি অবশ্য জানতাম না ঠিক ক’টায় উঠেছি পরে আম্মুর কাছ থেকে শুনেছি)। উঠে দেখি সবাই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ভাবলাম সবাই খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে গেছে আমাকে ডাকেনি। আমি রান্না ঘরে ঢুকে খাওয়া শুরু করে দিলাম। খাওয়া যখন প্রায় শেষ তখন মা ঘুম থেকে জাগলেন। ঘুম থেকে উঠে মা আমাকে খেতে দেখে অনেক অবাক হলেন। তিনি প্রথমে ভাবলেন আমার বড্ড বেশী খিদে পেয়েছিলো। কিন্তু যখন জানলেন আমি কেন এভাবে একাই খেতে বসেছি তখনতো আমার মায়ের সেকি হাসি =D এরপর অনেক দিন আমার আত্বীয় স্বজনের হাস্য-কৌতুকে এই ঘটনাটি নিমেষেই এসে যেতো।
ছোটকালে রোজা আমার মা কখনই রাখতে দেন নি। মা-বাবা অনেক সুন্দর করে আমাকে বুঝাতেন। বলতেন দেখ, শিশুদের জন্য প্রতিদিন দুইটি রোজা হয়ে থাকে। সাহরীর পর থেকে দুপুর পর্যন্ত একটি রোজা। আবার দুপুর থেকে ইফতার পর্যন্ত আরেকটি রোজা। এই বলে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমাকে দুপুরে খাইয়ে দিতেন তারা। আমিও এ কথাটা খুব বিশ্বাস করতাম। ভাবতাম আসলেই দিনে দুটো রোজা হচ্ছে আমার। আমি যখন পাড়া-প্রতিবেশীদের বলতাম যে আমি দিনে দুইটি রোজা রাখছি তখন তারা অনেক হাসতো আর আমাকে উৎসাহ দিতো। তাদের সেই হাসির অর্থ তখন না বুঝলেও এখন ঠিক বুঝি।
আসলে তখন রোজার পুরো মাসটা আমাদের শিশুদের জন্য একটি উৎসবের মাস ছিলো। রোজা এলেই আমরা আনন্দে দুলে উঠতাম। ধার্মিক পরিবার আর অধার্মিক পরিবার নির্বিশেষে সকল পরিবানের শিশুদের কাছে রমজান একটি অতি কাংখিত মাস ছিলো। আমরা বাচ্চারা পরস্পর দেখা হলেই একে অপরের খোজ নিতাম যে কে কয়টা রোজা রাখলো। আর বড়রাও খুব আদর করে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করতেন কয়টা রোজা রেখেছি। আর ইফতার, তারাবীহ ও সেহেরী তো আছেই। এসব কারনে রোজা মানেই আমাদের কাছে আনন্দ ঘন একটি মাস ছিলো। এখন আর বাচ্চাদের মাঝে সেই উৎসব উৎসব রব এখন উঠতে দেখিনা। শুধুমাত্র ধার্মিক পরিবারের বাচ্চাদের মাঝেই যা একটু উচ্ছাস পরিলক্ষিত হয়।
আসলে দিন মাস আর বছর পেরুতে পেরুতে আমাদের বিশ্বাস ও কর্মের জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে, যে পরিবর্তন অবশ্যই সুখকর নয় বরং আতংকের! আসলে রমজানের মাস আমাদের সময় একটি অতি কাংখিত মাস হয়েছিলো শুধু মাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতা আর বড়দের নিষ্ঠার কারনে। আজকে এদুটো কোথাও খুজে পাওয়া যায় না, তাই রোজা আসে যায় কিন্তু রোজার সমঝদার তৈরী হয় না!
২| ০৩ রা জুন, ২০১৮ সকাল ১০:০২
রাজীব নুর বলেছেন: আহা সেই দিন গুলো কি দারুন ছিল।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৪৬
ক্স বলেছেন: ঐ গানটি একটি ভুয়া গান। ছেলেটি ইয়ামনের, বয়েস ৮ বছর। তাই যদি হয়, তবে
- ইয়ামনের রোজার দৈর্ঘ্য আমাদের দেশের মতইঃ ১২-১৫ ঘন্টা।
- এটুকু সময় না খেয়ে কোন ৮ বছরের ছেলে মারা যায়না যদিনা গুরুতর অসুস্থ হয়।
আমার বয়েস যখন ৬ বছর, তখন আমি প্রথম রোজা রাখি, তখন মে মাসের রোজা ছিল, তাই প্রচন্ড গরম পড়েছিল। আসর নামাজের পর পিপাসায় গলা শুকিয়ে গিয়েছিল - এ ছাড়া আর কোন কষ্ট অনুভব করিনি। সে বছর আমি ৬টি রোজা রেখেছিলাম। আর ঐ ছেলেটি একটি রোজা রাখতে গিয়েই মরে গেল। একদম অবাস্তব। আমার ছোট ছোট ভাগ্নে ভাগ্নিরা লন্ডনে বার্লিনে কোলনে ১৮/১৯ ঘন্টা রোজা রাখছে, কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু কারও জীবন শংকায় পড়ছেনা। ঐ গানটা সবার মধ্যে রোজা সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে।
পুরোটা গানে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে।গানের প্রথম পঙক্তি গুলো এরকমঃ
ইয়ামন দেশের আট বছরের ছেলে
দিনগুলো তার কাটত হেসে খেলে
সেই ছেলেটির আশা, বড় আশা
রাখবে রোজা মাহে সিয়াম এলে
রমাজানের ঐ চাঁদ যখন এলো
সেই ছেলেটি বড়ই খুশী হল
ঘরে এসে বল্ল মাকে ডেকে
রাখব রোজা প্রথম রোজা থেকে