নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভরসার গান

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা

মানব ও মানবতা

রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।

মানব ও মানবতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে ঘটনা কবি নজরুলকে বদলে দিল, কবি কাঁদলেন, এরপর থেকে বিষণ্ণ হয়ে গেলেন..

১৩ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১২:৪৬

কবি নজরুলের প্রথম ছেলেটির নাম ছিল বুলবুল।

কবি তার এই ছেলেটিকে খুব ভালবাসতেন, তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। বাবা হিসেবে মনের মত করে তিনি তাকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, তার জীবন ও যৌবন সাজাতে চেয়েছিলেন। বুলবুল এর গলাও ছিল অসাধারণ মিষ্টি। কবির সাথে যারা আড্ডা দিতে আসতেন, তারাও তাকে আদর করতেন, তার মুখের কথা শুরে অবাক হতেন।

শুধু কি তাই, কবি যখন হারমোনিয়াম হাতে নিয়ে কোন সুর বাজাতেন, ছোট্ট ছেলে বুলবুল সবাইকে তাক লাগিয়ে বলে দিত, আব্বু এখন এই গানটি করবেন, এ বাজনা এ গানেরই। তার গলায় গান শুনে অবাক হয়েছিলেন তৎকালে কবির বন্ধুবান্ধবরা।



কবি যেখানে যেতেন, এই ছোট খোকাকে সাথে নিয়ে যেতেন। বুলবুলকে নিয়ে কেটে যেত তার হাসি আনন্দে ভরা উচ্ছল সময়গুলো। বাধা বন্ধনহীন কবির ছন্নছাড়া জীবন ধীরে ধীরে সুশৃঙ্খল হয়ে উঠছিল বুলবুলকে ঘিরে।



জন্মের পর থেকে দুঃখ যার নিত্য সঙ্গী, সেই দুখুমিয়া কবি নজরুলের কপালে এ সুখ আনন্দ বেশীদিন সইলো না। অল্প বয়সে কবির ছেলেটি অসুখে ভুগে চলে গেল পরপারে।



আদরের প্রথম সন্তান ছোট খোকা বুলবুলের এ মৃত্যু কবিকে ভেঙে চুরমার করে দিল। জীবনের প্রথম স্বপ্নসৌধ অবেলায় টুকরো টুকরো হয়ে গেল সদা হাস্যপ্রাণ কবি নজরুলের। মাত্র কয়েক লাইন লিখে কবির দুঃখ বেদনা আর মুষড়ে পড়ার কথা এখানে বুঝানো অসম্ভব।



কাঁদতে কাঁদতে কবির চোখদুটো ফুলে গিয়েছিল, নাওয়া খাওয়া ভুলে এমন ”ঞ্চল কাজী নজরুল একেবারে নীরব হয়ে গেলেন, কতখানি শোকে বিদ্রোহী কবি পাথর হয়ে চুপচাপ হয়ে যেতে পারেন, তা অনুমান করা হয়তো কিছুটা সম্ভব।

বুলবুলের সব খেলনা, জামা কাপড় কবি পরম আদরে সাজিয়ে রেখেছিলেন। তাকে সান্তনা জানিয়ে তার বন্ধুরা যেসব চিঠিপত্র পাঠাতেন, সেসব পড়ে কবি জোরে জোরে কেঁদে বুক ভাসাতেন নয়নের জলে।



বুলবুলের চিকিৎসায় তার অনেক টাকাও খরচ হয়েছিল, কাজেই মৃত্যুশোকের সাথে এবার যোগ হল অর্থকষ্ট। ভরাক্রান্ত কবির কাছে এ দিনগুলো ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠছিল।



তার জীবনীকারদের কেউ কেউ লিখেছেন, প্রথম সন্তানের মৃত্যুর পর থেকে কবির জীবনে একটি ভাবান্তর আসে, কবি তখন সবার অলক্ষ্যে আধ্যাত্মিক জীবনের দিকে আসক্ত হয়ে পড়েন, তার রচনা ও লেখার স্রোত ধীর হয়ে আসে, এভাবে চলতে থাকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত, এরপর তো তিনি চিরতরে নিশ্চুপ হয়ে গেলেন।



পঞ্চানন ঘোষাল তখন কলকাতার তরুণ পুলিশ অফিসার। কাজী নজরুলকে তিনি ভালোবাসেন এবং মাঝে মাঝে তার সাথে গল্প করেন। একবার কবির বাসায় তল্লাশীর হুকুম এল উপর থেকে। এ বেচারাকে দায়িত্ব দেয়া হল সে দলে থাকার। গোয়েন্দারা তাকে নিয়ে দরজায় কড়া নাড়ল কবির ঘরের। কাজী নজরুল দরজা খুলে দিলেন এবং সঙ্গত কারণে এই তরুণ অফিসার এবং কবি দুজনই পরস্পরকে না চেনার ভান করে রইলেন। গোয়েন্দা পুলিশের দল কবির ঘরে সবকিছু তছনছ করে তল্লাশী চালাচ্ছে, কবিও তাদেরকে যথাসম্ভব বাক্স খুলে খূলে দেখাচ্ছেন।



হঠাৎ ঘরের কোনে পরম যতেœ উঠিয়ে রাখা একটি বাক্সে নজর পড়ল তাদের। তারা সেটি খুলে দেখতে চাইল। কবি অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলেন, না না, ওটাতে হাত দিবেন না যেন।



কবির বিচলিত মুখভঙ্গি দেখে পুলিশদের সন্দেহ তীব্র হল। তাদের একজন সজোরে সেটি খুলতেই সেই বাক্সটি থেকে ঝরে পড়ল কিছূ খেলনা আর ছোট ছোট জামা কাপড়সহ বাচ্চাদের অন্যান্য সামগ্রী।



এভাবে সেগুলো আছড়ে মাটিতে পড়তে দেখে কবির দু চোখ পানিতে ভরে গেল। ঝরঝর করে তিনি কেঁদে দিলেন সবার সামনে। এমন সুকঠিন মুখখানা তার ব্যাথায় ও দুঃখে কালো হয়ে এল।



এ খেলনা ও ব্যবহার্য সামগ্রীগুলো ছিল কবির আদরের সন্তান এই ছোট বুলবুলের। তার মৃত্যুর পর এসব বুকে জড়িয়ে কবি সান্তনা খূঁজে পেতেন, আদর আর চুমো পৌঁছে দিতেন বুলবুলের গালে।



এ অফিসার তার এক লেখায় নিজেকে অত্যন্ত ব্যর্থ ও লজ্জিত উল্লেখ করে লিখেছেন, এরপর কত মানুষের কত ঘর সার্চ করেছি, কিন্তু সেদিনের মতো এমন কষ্ট আর কোথাও পাইনি।



নজরুল লিখলেন তার বুলবুলকে নিয়ে, আমার কাননের বুলবুলি উড়ে গেছে, যে দেশে গেছ তুমি- সে কি বুলবুলিস্তান ইরানের চেয়েও বেশী সুন্দর।’

আরেক জায়গায় লিখেছেন, আমি যখন আমার পথ খুঁজছি, তখন আমার প্রিয়তম পুত্রটি সেই পথের ইঙ্গিত দেখিয়ে আমার হাত পিছলে মৃত্যুর সাগরে হারিয়ে গেল। মৃত্যু এই প্রথম আমার কাছে ধর্মযাজকরূপে দেখা দিল, সেই মৃত্যুর পশ্চাতে আমার অন্তরাত্মা নিশিদিন ফিরতে লাগল...ধর্মরাজ আমার পুত্রকে শেষবার দেখিয়ে হেসে চলে গেলেন।’



এ সময় কবি প্রায়ই ধ্যানমগ্ন থাকতেন, নীরব হয়ে দিন কাটাতেন, এমনকি এ দুরন্ত কবি তার বন্ধুদেরকে, যাদেরকে নিয়ে দিনরাত ভুলে হাসি আড্ডায় মেতে থাকতেন, তাদেরকে একবার বলে ফেললেন, আমি এ ভারতের সর্বসেরা ধ্যানমগ্ন ব্যক্তি।



কবির জীবনে বুলবুলের মৃত্যুতে যে ধাক্কা লেগেছিল, তা তিনি নির্বাক হওয়ার আগ পর্যন্ত আর ভুলতে পারেন নি। কবিতার আগুনে জ্বালাময়ী লেখায় আর ভরাট গলার টানে যে কবি পুরো বাংলাকে যাদুগ্রস্ত করে মোহময় করে রাখতেন, এমন বিদ্রোহী আর অশান্ত কবি নজরুলের মমতাময় মনের এমন প্রকাশ দেখে তার বন্ধুরাও নিশ্চুপ হয়ে থাকতেন।



আগের পর্বগুলো- Click This Link

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১৬/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১:০৩

চাটিকিয়াং রুমান বলেছেন: নিজ পুত্রের প্রতি নজরুলের কি রূপ টান ছিল সেটা আজ জানলাম আপনার পোষ্ট থেকে। মনটা খারাপ হয়ে গেল লেখাটি পড়ে।

২| ১৩ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১:৫৮

ফরিদ উদ্দিন মোহাম্মদ বলেছেন: পোষ্ট দাতাকে ধন্যবাদ,,,,,,,,,,,,,,,, এত সুন্দর একটা লেখা দেয়ার জন্য..।

৩| ১৩ ই জুলাই, ২০১১ রাত ২:০১

নিঃসঙ্গ নির্বাসন বলেছেন: খুব ভালো লাগলো

৪| ১৩ ই জুলাই, ২০১১ রাত ২:১৪

সীমানা পেরিয়ে বলেছেন: মনটা খারাপ হয়ে গেল লেখাটি পড়ে।:(

+ দিলাম জানানোর জন্যে

৫| ১৩ ই জুলাই, ২০১১ ভোর ৪:৪২

আনন্দক্ষন বলেছেন: যতদুর জানি - এক পুত্র শোকে আচ্ছন্ন পিতার আতর্নাদই

"শূণ্য এ বুকে পাখি মোর আয়
ফিরে আয় ফিরে আয়।
তোরে না হেরিয়া সকালের ফুল
অকালে ঝরিয়া যায়।"

আর

"বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল"

৬| ১৩ ই জুলাই, ২০১১ ভোর ৪:৫১

রিয়েল ডেমোন বলেছেন: আজ রাতে কেন মন খারাপেরা কড়া নারে প্রতিটি ঘরে? :(

৭| ১৩ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ৮:৪৫

তানভীরসজিব বলেছেন: আমার মনে হয় নজরুল এখান থেকেই সুফিবাদের দিকে ঝুকে পড়েন। কিছু গান আছে যেমন : তৌহিদের ই মুর্শিদ আমার মোহাম্মদ এর নাম .....মোহাম্মদ এর নাম জচেছিলি....বুলবুলি তুই আগে.....আল্লাহতে যার পূর্ন ইমান কোথা সে মুসলমান....এরকম অসংখ্য ।

আপনার লেখার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবনা ।

৮| ১৩ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ১০:৫৪

সোজা সাপটা বলেছেন: পোষ্ট দাতা মানব ো মানবতাকে ধন্যবাদ, এত সুন্দর একটা লেখা দেয়ার জন্য..।

অসাঢারন

লেখা চালিয়ে যাবেন।
অনুসারিত

৯| ১৩ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ১১:২৪

মেলবোর্ন বলেছেন: মানব ও মানবতা কে অসংখ ধন্যবাদ।

১০| ১৩ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ১১:৩৭

মদন বলেছেন: ঘুমিয়ে গেছে শান্ত র্হয়ে আমার গানের বুলবুলি... :(

১১| ১৩ ই জুলাই, ২০১১ দুপুর ১২:১০

আজাদ আল্-আমীন বলেছেন: ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি
করুণ চোখে চেয়ে আছে সাঁঝের ঝরা ফুলগুলি ...... :(

১২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৫৯

অচল স্বপ্ন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

১৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৪

নির্মল হাওয়া বলেছেন: মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। পুলিশগুলো আজো ঠিক হলোনা।

১৪| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৮:১৪

মানব ও মানবতা বলেছেন: এতদিন পর লেখাটি পড়তে আসার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.