![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।
দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন খানকায়।
এখানে থাকেন তিনি। তার বাড়ী এবং খানকা পাশাপাশি। নানা প্রান্ত থেকে মানুষজন আসেন। একেকজনের একেক উদ্দেশ্য। কারো প্রয়োজন আত্মশুদ্ধি, কারো দোয়া প্রার্থনা। কেউ এসেছেন পরামর্শের জন্য, কেউ নিজের অবস্থা জানাতে। দূর-দূরান্তের সাক্ষাতপ্রার্থীদের ভিড় লেগেই আছে এ ছোট্ট খানকাহর আশেপাশে।
সবার হাতে একটি ফরম দেয়া হয়েছে খানিক আগে। যারা তার সাক্ষাতপ্রত্যাশী, এ ফরমটি পূরণ করতে হবে তাদেরকে। তারপর দেখা-সাক্ষাতের অনুমতি এবং সময় জানা যাবে।
নবাগত কয়েকজন এমন ফরম হাতে পেয়ে অবাক হলেন। এমন অভিজ্ঞতা তাদের আগে কখনো হয়নি। একে অপরের দিকে চোখ চাওয়াচাওয়ি করছেন সবাই। চোখে মুখে কৌতুহল। এ দরবারে কোনো তোষামোদ কিংবা লৌকিকতার ছড়াছড়ি নেই। হাদিয়া-তোহফার চারিদিকে ছিমছাম গোছালো পরিবেশ। সাদামাটা সবকিছুতে কি এক পরম গাম্ভীর্য ছড়িয়ে আছে।
এবার ফরম পূরণের পালা।
একটি একটি করে প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে।
তারপর মিলবে যথাযথ সময়। কি আছে সেই প্রশ্নতালিকার ফরমে।
নাম-
আসল বাড়ি- স্থানীয় ঠিকানা-
এখন কোথা থেকে কতদিন অবস্থান করে এসেছেন?
পেশা ও জীবিকার উপায়?
কারো ওয়ারিছী সম্পত্তি আপনার কাছে নেই তো?
শিক্ষাগত যোগ্যতা ঃ আরবী, ইংরেজী বা উর্দুতে কতটুকু আছে?
আগমনের আসল উদ্দেশ্য কী- শুধু সাক্ষাতত নাকি কিছু বলার জন্য?
যা বলার তা মৌলিক নাকি লিখিত বলবেন? সবার সামনে নাকি নির্জনে?
কারো কাছে বাইআত হয়েছেন কি? হয়ে থাকলে কার কাছে?
আমার কাছে হয়ে থাকলে তা কয়দিন হয়েছে এবং তালীম কার দায়িত্বে?
আমার মাওয়ায়েজ ও কিতাবাদী কী কী পড়েছেন?
আমার সঙ্গে পত্রালাপ হয়ে থাকলে তা সাথে আছে কি? থাকলে দেখাবেন।.
কয়দিন থাকার ইচ্ছা?
কোথায় থাকার ইচ্ছা?
খানকায় এই প্রথম নাকি এর আগেও এসেছিলেন? এসে থাকলে কয়দিন ছিলেন?
এখানকার খাবারের ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন কি?
বাইরে বড় হাতের লেখা ঝুলানো নোটিশটি দেখেছেন কি?
যারা নতুন এসেছেন, তাদের কয়েকঘন্টা লেগে যাচ্ছে ফরমখানা পূরণ করতে। এত খুঁটিনাটি বিষয়ে উত্তর দিয়েই কি তার সাক্ষাত পাওয়া যায়? কারো ওয়ারিছের সম্পত্তি আমার কাছে আছে কিনা? এটাও লিখতে হবে?
এ হযরতের পুরো জীবন এবং চলাফেরা ছিল এমনই। অন্য সবার চেয়ে আলাদা। কিন্তু অদ্ভূত নয়। যা কিছু সাধারণ, অথচ অন্যরা অবহেলায় তা ভুলে থাকে। এ সাধারণ কিছু গুণের কারণেই মানুষ তাকে অসাধারণ ভাবে।
...........................................
একবার তিনি যাচ্ছিলেন সাহারানপুর থেকে কানপুরের উদ্দেশে। সাথে তিনি বেশকিছু আখ নিয়েছিলেন।
রেলবিভাগের নোটিশে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে এ আখগুলোর ওজন বেশী কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি মাপাতে চাইলেন। বেশী হলে তিনি মাশুল দিয়ে সেগুলো বহন করবেন।
ওজন করার জন্য নির্ধারিত জায়গায় আখগুলো নিয়ে গেলে কেউই তা মাপতে চাইলোনা। বরং অমুসলিম কর্মচারীরাও পরম শ্রদ্ধাভরে তাকে অনুরোধ করছিলেন, ওজন করানো ছাড়াই আপনি ট্রেনে উঠুন। আমরা গার্ডকে বলে দিচ্ছি। হযরত থানভী তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন.
- এ গার্ড কোন পর্যন্ত যাবে?
- হুজুর! গাজীআবাদ পর্যন্ত।
- তারপর কী হবে?
- এই গার্ড পরবর্তী গার্ডকে বলে দিবে।
- কিন্তু এরপর?
- ঐ গার্ড আপনাকে কানপুর পর্যন্ত পৌছে দিবে। সেখানেই তো আপনার শেষ গন্বব্য।
- হযরত আবারও বললেন, আরে না না, কানপুর গিয়েই তো আমার সফর শেষ নয়। এ পার্থিব জীবনের আয়ু ফুরিয়ে যাওয়ার পর পরকালের সফরেও তো আমাকে যেতে হবে, সেখানে কোন গার্ড আমাকে পার করে দিবে? মাশুল না দিয়ে এ আখগুলো নেয়ার কৈফিয়ত সেখানে কে জানাবে?
কথাগুলো শুনে কর্মচারীদের চোখ বড় হয়ে এল। এমন সাধু কি এই কলিকালের? রেলের অফিসার বাবুদের সবাই হতভম্ব হয়ে গেলেন তার ভয় দেখে। পাশে দাঁড়ানো কয়েকজন হিন্দু শিক্ষিত ভদ্রলোকরা পরস্পর বলাবলি করছিল, এ দুনিয়াতে আজও এমন লোক রয়েছেন যারা তাদের খোদাকে এত ভয় করে!!
শুধু তার একার অবস্থা এমন নয়, ঐ রেলস্টেশনে থানাভবনগামী কোন দাড়ি টুপীওয়ালা যাত্রী দেখলে তাদের মাল ওজন করার জন্য অফিসাররা আটকাতেন না। তাদের সবার সম্পর্কে রেল অফিসারদের আস্থা ছিল- থানাভবনগামী কেউ কখনো মাল না মেপে ট্রেনে ওঠেন না।
তার সততা ও খোদাভীতি এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অসংখ্য বিস্ময়কর এবং হৃদয়ঁেছায়া ঘটনা এরকম অসংখ্য।
এত সম্মান ও প্রভাব সত্বেও তিনি ভ্রমণ করতেন তৃতীয় শ্রেণীর বাহনে। সাধারণত রেলের তৃতীয় শ্রেণীতে তিনি প্রায়ই ভ্রমণ করে আনন্দ পেতেন এবং সাথীদেরকে বলতেন, তৃতীয় শ্রেণীতে যে আনন্দ ও আরাম, তা উচ্চ শ্রেণীতে কোথায়!! কারণ তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীরা নিজেরা আমাদের সমীহ করে, আর উচ্চ শ্রেণীতে ভ্রমণকারীরা আত্মগৌরবে বিভোর থাকে, তার আর কী সমীহ করবে, বরং তাদের উল্টো সমীহ করতে হয়, মনখুলে হাসি খুশীর কথাও বলা যায়না।’
কে এই হযরত প্রথম পর্ব
২| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩০
ঝটিকা বলেছেন: আশরাফ আলী থানভী অসাধারন ব্যাক্তিত্ব।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:১৩
জেনো বলেছেন: বেশ ভাল লাগল। পরের পর্বের অপেক্ষায়।