নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভরসার গান

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা

মানব ও মানবতা

রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।

মানব ও মানবতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কে এই ভবঘুরে! যার ইশারায় রাজ্য নড়ে!!- ২

৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:০২

খ্রীষ্টান ফিরিঙ্গিরা মুসলমান বাদশাহর এমন সিদ্ধান্ত শুনে বলে ফেললো- তারা যা বললো তা ইতিহাসে সোনার হরফে লিখে রাখার মতো- তারা সেদিন বাদশাহ ইসমাইলকে বলেছিলো, ‘মহামান্য! এ মানুষটি যদি আমাদের ধর্মে এবং আমাদের অঞ্চলের হতেন- তবে আমরা এমন মানুষের দুটি চরণ ধুয়ে ঐ পানিটুকু পান করতাম সৌভাগ্য মনে করে।’

...............................................................



তখন শাম অঞ্চলের শাসনকর্তা বাদশাহ ইসমাইল। তার চাচাতো ভাই শাসন করতেন মিসর এবং পাশ্ববর্তী অঞ্চলগুলো। কি এক সাধারণ বিষয় নিয়ে তাদের দু জনের মধ্যে বিবাদ লেগে গেলো। এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বাদশাহ ইসমাইল উঠে পড়ে লাগলেন। তিনি তার চাচাতো ভাইকে শায়েস্তা করার জন্য খ্রিষ্টান ফিরিঙ্গি শত্র“দের সাথে আতাঁত করতে আগ্রহী হলেন। লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে তিনি নিলর্জ্জের মতো দুটি মুসলিম এলাকা ফিরিঙ্গীদের হাতে তুলে দিতে রাজি হলেন। এর বিনিময়ে তার চাচাতো ভাইকে শায়েস্তা করবে অমুসলিম বিধর্মী ফিরিঙ্গিরা।

কতটুকু মানসিক অবনতি ও নীতিবোধ হারিয়ে অধঃপতিত হলে একজন মুসলিম শাসক তার ভাইকে শায়েস্তা করার জন্য নিজের হাতে দুটি ইসলামী এলাকা খ্রিষ্টানদের হাতে তুলে দিয়ে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানায়- ভাবা যায়!!



যার ভেতর সামান্য পরিমান ইসলামী বোধ জেগে আছে- সে নিশ্চয়ই এমন সংবাদে ফুঁসে উঠবে। আর যে মানুষটি স্বয়ং দ্বীনের জন্য নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিচ্ছেন অকাতরে- তিনি- আমাদের আলোচিত এ মানুষটি- প্রচন্ডভাবে রেগে গেলেন বাদশাহর এমন খেয়ালীপনা দেখে।

বাদশাহ ইসমাইল তার মসজিদে নামায পড়তে আসেন, তার খুতবায় মাথা নত করে বসে থাকেন- তাই বলে তাকে ছেড়ে দেয়া যায় না। ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সাথে এমন ছেলেমানুষি মেনে নেয়া যায় না।



পরের শুক্রবার। বাদশাহ উপস্থিত হয়েছেন আজ। মসজিদের মিম্বরে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। তারপর তার গর্জন। আল্লাহর নামে মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে তার এ গর্জন। এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুরই পরোয়া নেই তার। কোনো কমিটি কিংবা তোষামোদের দাসখতে সই করে তিনি এ দায়িত্ব নেননি। তাকে দেয়া হয়েছে জোর করে। তাই তিনি স্বাধীন।



তিনি আজকের খুতবায় বাদশাহর সমালোচনা করলেন। মুসলমানদের সাথে খেয়ানতের দায়ে তাকে ভৎর্সনা করলেন। বাদশাহর উপস্থিতিতেই তিনি তার সমালোচনা করছেন। এ চুক্তির ভয়াবহতা মনে করিয়ে দিয়ে তাকে শাসাচ্ছেন। একজন খতিব রাষ্ট্রীয় ইস্যুতে স্বয়ং বাদশাহর উপস্থিতিতে তাকে শাসাচ্ছেন- সতর্ক করছেন- ভাবা যায়!



এখানেই শেষ নয়! মুসলমানদের সাথে খেয়ানতের অভিযোগে তিনি বাদশাহর অযোগ্যতা ঘোষণা করলেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, যে লোক সামান্য স্বার্থে দুটি ইসলামী অঞ্চল খ্রিষ্টানদের হাতে তুলে দিয়ে নিজের মুসলিম বংশীয় ভাইকে শায়েস্তা করতে চায়- তিনি এ অঞ্চলের শাসক হওয়ার অযোগ্য। তিনি পদচ্যুত।



বাদশাহর অনুগত কিছু লোক এ অপমান মেনে নিতে পারলো না। তারা কৌশলে এ মানুষটিকে বন্দী করে ফেলল। তার বন্দি হওয়ার সংবাদে মানুষ রাস্তায় নেমে এল। রাজ্যজুড়ে তোলপাড় শুরু হলো। বাদশাহ ইসমাইল নিরূপায় হয়ে প্রস্তাব পাঠালেন, শায়খ যদি আমার কাছে এসে আমার হাতে চুম্বন করেন- তবে আমি তাকে সসম্মানে মুক্ত করে দিবো।’ তৎকালে কারো হাতে চুম্বন করা মানে তার আনুগত্য স্বীকার করে নেয়া। তাকে নেতা হিসেবে মেনে নেয়া।



বাদশাহর এমন প্রস্তাব নিয়ে খুব দ্রুত ছুটে গেল রাজকীয় দূতেরা। তারাও চাচ্ছেন- খুব শিগগিরই বিষয়টির সুরাহা হোক। খুব আগ্রহভরে তারা গিয়ে শায়খকে জানালো এ সুবর্ণ প্রস্তাবের কথা। মাত্র একবার বাদশাহর হাতে চুম্বন- এর বিনিময়ে সসম্মানে মুক্তি এবং আগের দায়িত্বে প্রত্যাবর্তন।

মাত্র কয়েক বছর আগেও যে মানুষটি ঘুরে বেড়াতেন দামেশকের পথে ঘাটে- একজন দিনমজুর ছাড়া যার আর কোনো পরিচয় ছিল না এ সমাজে- তার কাছে আজ রাজকীয় সন্ধির প্রস্তাব। তাকে নিয়ে গোটা শাম অঞ্চল আজ উৎকন্ঠিত শঙ্কায়।



কিন্তু সাধারণ থেকে শুধু ইলম ও আল্লাহভীতির বদৌলতে অসাধারণ হয়ে ওঠা এ মানুষটি কী বললেন রাজকীয় দূতকে- তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, তোমাদের রাজাকে বলে দাও- আমি তার হাতে চুমো দেওয়া তো দূরের কথা- তিনি এসে আমার হাতে চুম্বন করতে চাইলেও আমি তাকে অনুমতি দিবো না। যাও, চলে যাও।’



ফুসতাত নামক একটি অঞ্চলে তাকে আটকে রাখা হলো। তার প্রতি ক্রমাগত বেড়ে চলা জনসমর্থন দেখে বাদশাহ ইসমাইলও চিন্তিত। তিনি ভাবছেন- এ মানুষটিকে মুক্তি দিলে মানুষ যেভাবে ছুটে আসবে- তখন হয়তো আমার আর শেষ রক্ষা নেই।



বন্দিখানায় বসে কুরআন পড়ছেন এ শায়খ। পাশেই বাদশাহ ইসমাইলের রাজপ্রাসাদ। যে ঘরে আটকে রোখা হয়েছে এ মানুষটিকে- সেখান থেকে ভেসে আসছে পাক কুরআনের আওয়াজ। এখানে বাদশাহর সাথে দেখা করতে এসেছে ফিরিঙ্গিদের খ্রীষ্টান প্রতিনিধি দল। আলাপচারিতার ফাঁকে বাদশাহ ইসমাইল তাদেরকে বলছেন, এই যে যার কুরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে- তিনি মুসলমানদের মধ্যে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশি রুষ্ট- কারণ আমি তোমাদেরকে দুটি অঞ্চল দিতে সম্মত হয়েছি। তোমাদের সাথে আমার আপোষের সংবাদ শুনে তিনি আমাকে অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছেন- আমি এজন্যই তাকে বন্দি করেছি। এখানে আটকে রেখেছি।’



ফিরিঙ্গি প্রতিনিধি দলের খ্রীষ্টান সদস্যরা এ মানুষটির নির্মোহ সাহসিকতার কথা আগে থেকেই জানতো। তার প্রতি এ অঞ্চলের মানুষের শ্রদ্ধাবোধ এবং ভালোবাসার খবর তাদের কাছেও ছিলো। তারা বাদশাহর এমন সিদ্ধান্ত শুনে বলেই ফেললো- তারা যা বললো তা ইতিহাসে সোনার হরফে লিখে রাখার মতো- তারা সেদিন বাদশাহ ইসমাইলকে বলেছিলো, ‘মহামান্য! এ মানুষটি যদি আমাদের ধর্মে এবং আমাদের অঞ্চলের হতেন- তবে আমরা এমন মানুষের দুটি চরণ ধুয়ে ঐ পানিটুকু পান করতাম সৌভাগ্য মনে করে।’



বিধর্মী ফিরিঙ্গি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা যে সত্য অনুধাবন করেছিলো, মুসলমান হয়েও শুধুমাত্র শাসনক্ষমতা আর ব্যক্তিস্বার্থের মোহে অন্ধ বাদশাহ ইসমাইল তা বোঝার শক্তি থেকে বঞ্চিত ছিলেন। যুগে যুগে এমন অপদার্থরাই মুসলিম সাম্রাজ্যের শাসন নিয়ে ছেলেখেলা খেলেছে। আহা! এজন্যই কি আজ আমাদের এমন দূরাবস্থা!



এর চেয়েও বিস্ময়কর এবং সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র এমন বিরল ঘটনা নিয়েই তার জীবনগল্পে তৃতীয় এবং শেষ পর্ব- পড়ার আমন্ত্রণ সবার জন্য। নাম আসবে শেষ পর্বে, যথাসময়ে।





প্রথম পর্ব-

এ ধারাবাহিকের প্রথম পর্ব পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:১২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: যুগে যুগে এমন অপদার্থরাই মুসলিম সাম্রাজ্যের শাসন নিয়ে ছেলেখেলা খেলেছে। আহা! এজন্যই কি আজ আমাদের এমন দূরাবস্থা!

উত্তরনের পথে পথিক কেউ আছে???????????????????

৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:১৪

মানব ও মানবতা বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনি আমার লেখাগুলো পড়ছেন এবং মন্তব্য লিখে উৎসাহিত করছেন- বিষয়টি আমার জন্য আনন্দের। আল্লাহ আপনাকেও আনন্দিত করুন। অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।

২| ৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৩০

িটউব লাইট বলেছেন: প্রাণটা ভরে গেল।+++

৩| ৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:০৬

রহমান জর্জ বলেছেন: এটা কি ফিকশন?! বুঝলাম না। সময়কাল উল্লেখ করেন।

৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:২১

মানব ও মানবতা বলেছেন: মোটেও ফিকশন নয়। বাস্তব এবং এখানে বানিয়ে বলার কিছুই নেই। এ ঘটনাবলির সময়কাল ১২০০ থেকে ১৩০০ খ্রীষ্টাব্দ। মুসলিম সাম্রাজ্যের ঐসব অঞ্চলে তখন আইয়ুবি শাসন চলছিল। আগামী পর্বে এ মানুষটির নাম প্রকাশ করবো। আমি যা কিছু লিখছি- তা মূল আরবী ইতিহাস এবং জীবনীগ্রন্থ থেকে নিয়ে লিখছি। আগামী পর্বে তার সম্বন্ধে একটি ইংরেজী রচনার লিংক দেয়ারও চেষ্টা করবো। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৪| ৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:০৭

রহমান জর্জ বলেছেন: শাম দেশ বলতে আমরা থাইল্যান্ডকে জানি।এটা কোন শাম দেশ?

৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:২৪

মানব ও মানবতা বলেছেন: শাম অঞ্চল বলতে আজকের সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ফিলিস্তীনসহ আশেপাশের লাগোয়া এলাকাসমূহ উদ্দেশ্য।

৫| ৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪১

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ++++++++++++++++

৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪৪

মানব ও মানবতা বলেছেন: সমসংখ্যক শুভেচ্ছা আপনাকেও।

৬| ৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫০

খেয়া ঘাট বলেছেন: +++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
পরের পর্বের অপেক্ষায়।

৭| ৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫৫

ছািব্বর বলেছেন: কষ্ট করেছেন বুঝা যায় । অপেক্ষায় থাকলাম

৮| ০১ লা জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:৫৯

তামা বলেছেন: ভাল লাগল । অপেক্ষায় রইলাম ।

৯| ০১ লা জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:২৩

একজন ঘূণপোকা বলেছেন: +++++++++

১০| ০২ রা জুলাই, ২০১৩ ভোর ৬:৫৩

বাংলার হাসান বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায়।

১১| ০২ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১৭

ইফতেখার মাহ্দী বলেছেন: সুন্দর

১২| ০২ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:৪৬

তন্দ্রা বিলাস বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.