![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।
৬০৩ হিজরী পরিক্রমা। চীনের উত্তরাঞ্চলে মঙ্গোলিয়া। এখান থেকেই উৎপত্তি ঘটেছিল তাতারদের। এ স¤প্রদায় বা গোষ্ঠীর প্রথম নেতা চেঙ্গিস খান।
চেঙ্গিস খান শব্দটির অর্থ রাজাদের রাজা। তবে তার আসল নাম- তিমুজিন। স্বভাবগত হিসেবে লোকটি শুরু থেকেই রক্তপ্রিয় এবং সুকঠিন মনোবলের সামরিক নেতা বা কমান্ডার হিসেবে লোকমুখে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। মানুষকে তার পাশে কিংবা বলয়ে ধরে রাখার বিস্ময়কর শক্তি ও প্রতিভা নিয়ে এ লোকটির জন্ম হয়েছিল।
চেঙ্গিস খানের শাসনামলেই খুব দ্রুত তাতারদের সাম্রাজ্য চারিদিকে বিস্তৃত হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তার রাজ্যসীমানা পূর্বদিকে কোরিয়া অঞ্চল থেকে শুরু হয়ে পশ্চিমে ইসলামী সালতানাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। ওদিকে উত্তরে সাইবেরিয়া থেকে দক্ষিণে চীন সাগর পর্যন্ত পৌঁছেছিল। সবমিলিয়ে তার শাসনসীমানায় অন্তর্ভুক্ত ছিল আজকের চীন, মঙ্গোলিয়া, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং সাইবেরিয়ার কিছু অংশ হয়ে লাওস, মিয়ানমার, নেপাল এবং ভুটান পর্যন্ত।
তাতার কিংবা মঙ্গোল বংশ- এদের সবার প্রধান উৎপত্তিস্থল চীনের উত্তরাঞ্চলে গোবি মরুভূমি থেকে। তাতার এদের মূল বংশের নাম। এ বংশ বা গোত্রটি বিভিন্ন উপগোত্রে বিভক্ত ছিল। মঙ্গোল, তুর্ক, সালাজিকা প্রভৃতি এ প্রধান গোত্র থেকে শাখা-প্রশাখা ছিল। তবে সামগ্রিকভাবে চেঙ্গিস খানের কর্মযজ্ঞ ও অভিযানসমগ্র বোঝানোর জন্য এটিকে মঙ্গোল সাম্রাজ্য বলা হয়ে থাকে।
তাতার বা মঙ্গোলদের কি কোনো ধর্মবিশ্বাস ছিল? ইতিহাসবিদরা এর নানা উত্তর দিয়েছেন। তবে গ্রহণযোগ্য মতামত হচ্ছে, চেঙ্গিস খান মূলত বিভিন্ন ধর্ম থেকে কিছু কিছু অংশ নিয়ে জোড়া লাগিয়ে নতুন মতবাদ বা ধর্মের সৃষ্টি করেছিল। ইসলাম, খ্রিষ্টবাদ, বৌদ্ধ মতবাদ এবং আরও অন্যান্য প্রাচীন ধর্মমত থেকে বিভিন্ন অংশ এক করে সে তার এবং তার অনুসারীদের জন্য ধর্ম নির্ধারণ করেছিল। চেঙ্গিস খানের পক্ষ থেকে তার অনুসারীদের জন্য রচিত একটি গ্রন্থ ছিল, যার নাম আল ইয়াসাহ বা আলইয়াসাক।
তাতারদের এ তান্ডবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি অধ্যায়ই যেমন হৃদয়বিদারক তেমনিভাবে তা বিস্ময়করও বটে।
মাত্র অল্প কদিনের তাতার আগ্রাসন ও অভিযানের ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল গোটা পৃথিবীর ইসলামী সালতানাত। বিশ্বময় আতঙ্ক ও নৈরাজ্যের ভীতিকর বাহিনী হিসেবে তাতারদের নাম-দূর্নাম ছড়িয়ে পড়েছিল পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতেও। কিন্তু কী ছিল তাদের এমন ভয়ানক তান্ডবের মূল উৎস? অতীতগবেষকরা এর বিভিন্ন কারণ খুঁজে বের করেছেন। সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি-
তাতার বাহিনী খুব দ্রুত মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিতো।
তারা ছিল সুশৃঙ্খল এবং কঠোর নীতিবদ্ধ।
তাদের বাহিনী ছিল সুবিশাল এবং অজস্য সৈন্যে সুসজ্জিত।
তাতার বাহিনীর হৃদয় ছিল পাষাণ এবং শক্ত পাথুরে কঠিন ভয়ঙ্কর।
তাদের নেতৃত্ব ছিল পরিকল্পিত এবং সুচারু দক্ষ।
এক কথায়- এ বাহিনীর প্রত্যেকে ছিল হৃদয়হীন, অমানুষ।
আর এসব কারণেই তারা যে কোনো ধরণের অত্যাচারে দ্বিধাবোধ করতো না। কোনো রকমের সংশয় ছাড়াই যে কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারতো চোখের পলকে, খুব সহজে।
উৎসুক পাঠক হয়তো তৎকালের বিশ্বশাসনে আলোচিত শক্তিগুলো সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সে সময়ে পৃথিবীতে শক্তি কিংবা পরাশক্তি ছিল মূলত তিনটি।
প্রথম-মুসলিম সাম্রাজ্য। মুসলমানরা সেসময়ে ছিল গোটা পৃথিবীতে প্রশিদ্ধ জাতি এবং শক্তি। যদিও ক্রমে ক্রমে তা দুর্বল হয়ে আসছিল কিন্তু তখনও এর প্রভাব অক্ষুন্ন ছিল। এ শক্তিকে হেয় করার মতো কোনো দম্ভ তখনও এর আশেপাশে ভিড়তে পারতো না। মুসলমানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অলসতা ও উদাসীনতার পরও অন্য ধর্ম ও শক্তির লোকেরা জানতো- যে কোনো সময় মুসলমানরা গা ঝাড়া দিয়ে উঠবে এবং এ শক্তিবীজ তাদের ভেতরেই লুকিয়ে আছে। শুধু প্রয়োজন একজন নেতা এবং একটি গর্জন।
দ্বিতীয়- খ্রিষ্টান শক্তি। এ ধর্মাবলম্বীরা সে সময়টায় তাদের সবচেয়ে অসহায় অবস্থা পার করছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে থাকা এবং সভ্যতার অভাবে এরা ছিল সবদিক থেকে বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত। এত কিছুর পরও এরা নিজেদের সংখ্যাধিক্য প্রমাণ এবং টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মুসলমানদের সাথে লড়াইয়ের আগ্রহে উন্মুখ হয়ে থাকতো।
ইসলাম এবং খ্রিস্টবাদ- এ দুটো ধর্ম এবং শক্তিই ছিল তৎকালে উল্লেখযোগ্য সাম্রাজ্য এবং আলাপ-আলোচনায় প্রসিদ্ধ।
তৃতীয়- তাতার। এদের না আছে কোনো সভ্যতা, না কোনো ইতিহাস। এদের আবির্ভাব আকস্মিক। না কোনো ধর্ম, না কোনো মতবাদ কিংবা আদর্শ- এ জাতির উদয় হয়েছিল খুব হঠাৎ করে। ঘূর্ণিঝড়ের মতোই এরা এসে অন্ধকার করে ফেলেছিল সেসময়ের বিশ্বপরিস্থিতির আকাশ এবং চারপাশ। সভ্যতা তো দূরের কথা, নিতান্ত ভব্যতা এবং স্বাভাবিক ভদ্রতার কোনো লেশমাত্র তাতারদে র´ে-মাংসে ছিলো না।
এ পৃথিবী-প্রকৃতির যুগ-যুগান্তরের ইতিহাস সাক্ষী- ইসলামকে নিমিয়ে দেওয়ার জন্য আশেপাশের অনৈসলামী শক্তিগুলো চিরকাল এক ছায়াতলে সমবেত হতে চায়। সময় ও সুযোগমতো এরা ইসলামী সাম্রাজ্যের উপর হামলে পড়ে সমূলে তাওহীদী শক্তিকে নিঃশেষ করে দিতে চায়। তাতারদের অর্বিভাবপূর্ব সময়েও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পৃথিভীর এক প্রান্তের খ্রিষ্টান শক্তি তাদের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল ইউরোপ থেকে মঙ্গোলিয়ায় পাঠায়। প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এরা তাতারদের দ্বারস্থ হয়। সেসময়ের আব্বাসী খেলামতকে ধুলোয় মিটিয়ে দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা তাতার শক্তিকে উস্কে দিতে কোনো চেষ্টা কিংবা প্রলোভন বাদ রাখেনি।
আব্বাসী খেলাফত ধ্বংস করার জন্য সুদূর বাগদাদ আক্রমণ করার ব্যাপারে ইউরোপীয় প্রতিনিধি দল অশিক্ষিত বর্বর তাতারদেরকে নানা রকম মিথ্যা ভয় ও আতঙ্ক দেখালো। তারা মুসলমানদেরকে ভয়ঙ্কর জাতি হিসেবে পরিচিত করিয়ে নিজেদেরকে তাতারদের বন্ধু হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখলো। তারা এও জানালো যে, যে কোনো আক্রমণে ইউরোপের সমর্থন ও শক্তি তাতারদের পাশে থাকবে সবসময়। এভাবেই তাতারদের মনে মুসলিম সাম্রাজ্য ও খেলাফত সম্পর্কে বিদ্বেষ ও উগ্রতা এবং নির্মমতার বীজ বুনে দিয়ে গেল ইউরোপীয় খ্রিস্টান প্রতিনিধিদলের চতুর সদস্যরা।
তাতারদের সে্ইসব অন্ধকার অধ্যায় নিয়ে এবারের নতুন ধারাবাহিক ব্লগপোস্ট- সবাইকে পড়ার আমন্ত্রণ।
২| ২৯ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৬
উড়োজাহাজ বলেছেন: সুন্দর লেখা। পরবর্তী সিরিজের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
৩| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৩:১৭
ঝটিকা বলেছেন: পড়ছি। সাথে আছি
৪| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ ভোর ৪:১৯
নস্টালজিক বলেছেন: তাতারদের সম্পর্কে জেনে ভালো লাগছে! ইন্টেরেস্টিং!
আপনার পরবর্তী সিরিজগুলো পড়বো আশা রাখছি!
শুভেচ্ছা নিরন্তর!
৫| ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:১১
হািসব্ের্ জা বলেছেন: তাতারদের সম্পর্কে জেনে ভালো লাগছে! পরবর্তী সিরিজের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
৬| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৭
হেজাজের কাফেলা বলেছেন: মাশাআল্লাহ! খুব সুন্দর এবং তথ্যবহুল লেখা…
পর্বর্তি সিরিজের অপেক্ষাই রইলাম
তামিম ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫২
মেদভেদ বলেছেন: পরে তাতাররা কিন্ত ইসলাম গ্রহন করে..........