![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।
মনা মিয়া যখন এ বাড়িতে চাকরি নিয়েছিল, তখনো সে জানতো না যে, কত বড় গুরুদায়িত্ব তার জন্য অপেক্ষা করছে। চাকরি তার খুব আহামরি কিছু না, সে একজন ড্রাইভার। মেট্রিক পাশ মনা মিয়ার সারাদিনে এটাই কারবার। সাহেবকে অফিসে দিয়ে আসা, তার বাচ্চাদেরকে স্কুলে নামিয়ে আসা এবং বিকেলে নিয়ে আসা, আর যখন-তখন ম্যাডামকে নিয়ে মার্কেটে যাওয়া- এসব তার কাঁধে অর্পিত অন্যতম দায়িত্ব। মাস শেষে মাইনে পায়, যা পায়, প্যাকেটসহ বাড়ীতে পাঠায়, এভাবেই জীবন চলে যায়।
মনা মিয়ার বয়স খুব বেশি না। বড়জোর পয়ত্রিশ হয়েছে, বলা যায়। কিন্তু মুখভর্তি দাড়িতে তাকে চল্লিশোর্ধ দেখায়। আজকাল শহরে এই এক নিয়ম। সাহেবরা নিজেরা দাড়ি রাখেন না। কিন্তু ড্রাইভার-দারোয়ান রাখার বেলায় দাড়িওয়ালাকে খোঁজেন। প্রথমদিকে মনা মিয়া রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবতেন, তার প্রতি এমন দয়ার কারণটা কী? তিনি নিজেই উত্তর সাজিয়ে নেন, দাড়িওয়ালা মানুষ ধর্মভীরু হয়, হয়তো এজন্য সাহেবদের পছন্দ। নিজেরা ধর্ম মানেন না সত্য, কিন্তু একজন ধার্মিক লোকের আয়-রোজগারের দায়িত্ব করে তারা কিঞ্চিত আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। পরের রাতে তার ভুল ভাঙে। নতুন উত্তর আসে মনে, মনা মিয়া ভাবছে, ‘ধর্ম-কর্ম করি বলে এরা আমারে নিজেদের জন্য নিরাপদ ভাবে। ম্যাডামের সাথে ফস্টিনষ্টিও হবে না। সহায়-সম্পদও চুরি করবে না।’ মনা মিয়া নিজেকে সৎ ভেবে পুলকিত হয়।
এ বাড়ির সদস্য অনেক। তবে আসল সদস্য চারজন। সাহেব, ম্যাডাম, তাদের বড় মেয়ে কনা, এক পুত্র শায়ান। এর সাথে আছে কাজের মেয়ে গোলাপী, বাড়ির দারোয়ান জয়নাল। সকালে আসে কাজের বুয়া হাবুর মা। সাহেবের পুরো বাড়ির সংসার এরা দেখভাল করেন। মনা মিয়া এ বাড়িতে আসার পর এখন পর্যন্ত এদের কোনো আলাদা বিশেষত্ব খুঁজে পায়নি। অন্য চাকরিগুলোতে তার যেমন দায়িত্ব ছিল, এখানেও তার একই দায়িত্ব। অন্য বাড়িগুলোতে দারোয়ানের পাশে তাকে ঘুমাতে হতো, এখানে আলাদা রুম পাওয়া গেছে, এটাই পার্থক্য।
মনা মিয়ার কোনো নেশা নেই। বিড়ি-সিগারেট এককালে খেতেন। এখন ধর্মে-কর্মে মন দিয়েছেন। তাই বাদ দিয়েছেন। তবে সাত-সকালে তার এক কাপ চা চাই। গরম পানিতে ধোয়া কাপে হালকা লিকারের লাল চা মনা মিয়ার বড়ই প্রিয়। চা বিনে তার সারাটা দিন অসহনীয়। এই এক কাপ চায়ের জন্য বাড়িতে বিবি সাহেবার সাথে সে যেসব ঝগড়া করেছে- ঢাকায় এসে সেসব মনে পড়লে মনা মিয়ার দু চোখে পানি আসে।
চলবে..
©somewhere in net ltd.