নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভরসার গান

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা

মানব ও মানবতা

রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।

মানব ও মানবতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কামাল আতাতুর্কের অজানা অধ্যায়

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৭

গত শতকে যে কয়েকজন উদভ্রান্তের হাতে ইসলামের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি ও মানহানি হয়েছে, মুস্তফা কামাল তাদের মধ্যে অন্যতম। তুরস্কে ইসলামের শেকড়ে কুঠারাঘাত এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিভক্তি তৈরীতে তার ষড়যন্ত্র ও কর্মকাণ্ড তুরস্কবাসীকে ভুগিয়েছে সুদীর্ঘকাল ধরে। তার বিষাক্ত হাতেই উসমানী খেলাফতের ধ্বংসচিত্র রচিত ও নিশ্চিত হয়েছে। নিজের নামের শেষে তিনি ‘আতাতুর্ক’ যোগ করে তুরস্কবাসীর ‘জাতির পিতা’ হিসেবে নামকে প্রলম্বিত করেছেন।

১২৯৮ হিজরী তথা ১৮৮১ সালে সালানিক শহরে জন্মগ্রহণকারী মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের মায়ের নাম যুবায়দা। বাবার নাম আলী রেযা। আলী রেযার বাবা এবং তার পূর্ববর্তী বংশধরেরা ইহুদী ধর্মের ‘দিওনমেহ’ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং বলা হয়ে থাকে, এ স¤প্রদায়ের মানুষ বাহ্যিক ভাবে পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করলেও ভেতরে ভেতরে ইহুদিবাদী মনোভাব পোষণ করতো এবং এরাই সুকৌশলে উসমানী খেলাফত ধ্বংসে এবং তুর্কি জাতির ঈমান-আক্বিদা বিনষ্টে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।







১৩১৮ হিজরীতে সালানিক থেকে ইস্তাম্বুলে এসে সশস্ত্রবাহিনীর কলেজে ভর্তি হন মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক। ১৩২২ হিজরীতে তিনি সেখান থেকে পাশ করার পর তাকে সিরিয়ায় পঞ্চম বাহিনীর প্রধান করে পাঠানো হয়। কর্মস্থলে গিয়েই শামে নির্বাসিত তুর্কীদেরকে নিয়ে গোপনে একটি দল গঠন করার চেষ্টায় লিপ্ত হন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মুস্তফা কামাল। সুনিয়ন্ত্রিত সশস্ত্রজীবনে থেকেও তিনি তারুণ্য থেকেই উচ্ছৃংখল জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।

ততদিনে সশস্ত্র বাহিনীতে পদোন্নতি এবং প্রসিদ্ধির জন্য মুস্তফা কামাল ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন। ১৩২৭ হিজরীতে তিনি লিবিয়াতে ইটালি বাহিনীর বিপক্ষে যুদ্ধাভিযানে রওয়ানা হন কিন্তু অভিযানের সূচনাতেই পালিয়ে আসেন। এরপর অবশ্যি বেশ কয়েকটি যুদ্ধে তিনি শামিল হন এবং তুরস্কের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানী খেলাফতের পরাজয়ের পর অধিকাংশ উচ্চপদস্থ নেতা ও কর্তাদের পালিয়ে যাওয়ায় এগিয়ে যাবার পথ সুগম হয় মুস্তফা কামালের সামনে। মুলত তখন থেকেই তার উত্থানপর্বের সূচনা। উসমানী খেলাফতের নতুন খলীফা ওহীদুদ্দীনের সাথে তার আগে থেকেই ভালো যোগাযোগ ছিল। এই নতুন খলীফা তাকে পদোন্নতি দিয়ে তার সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতা বাড়িয়ে দেন। নতুন এ পদ এবং পদবীতে উন্নীত হওয়ার পর থেকেই ইংরেজদের যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন মুস্তফা কামাল।



তখন থেকেই তাকে নিয়ে গভীর জাল পাতে ইংরেজরা। পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অনুযায়ী প্রথমে ইংরেজরা তাকে নিজেদের গোপন এজেন্টদের মাধ্যমে তুর্কী জাতির জাতীয় বীর হিসেবে জনসমাজে তুলে ধরে এবং ধাপে ধাপে মুস্তফা কামালকে ইংরেজদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যক্তিত্ব হিসেবে সর্বত্র পরিচিত করায়। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আপাদমস্তক অশ্লীলতা, নিয়মিত মদপান ও সকাল-সন্ধ্যা অনৈতিক পাপাচারে ডুবে থাকা মুস্তফা কামাল তখন ইসলামের লেবাস গায়ে দিয়ে তুরস্কের এখানে ওখানে ইসলাম ও মুসলমানদের শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া শুরু করেন এবং যে কোনো মূল্যে উসমানী খেলাফত রক্ষায় জানবাজির প্রত্যয় ব্যক্ত করতেন। দেশ ও জাতির সাহসী রাহবার হিসেবে নিজেকে পরিচিত ও বিশ্বাসযোগ্য করার কোনো উপায়ই তখন তিনি বাকি রাখেননি। আড়াল থেকে এসব নকশা এঁকে দিচ্ছিল কৌশলী ইংরেজরা।



১৩৪৫ হিজরীতে একটি যুদ্ধে বিজয়ের পর তুর্কি জাতি ও মুসলমানদের বীর নেতা হিসেবে কামাল আতাতুর্কের প্রসিদ্ধি বেড়ে যায়। তিনি এবং তার অনুসারীরা দেশের সর্বত্র প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারে নেমে পড়েন। তখনকার শাসক ওহিদুদ্দীনের সাথে দ্বন্দে জড়িয়ে যান মুস্তফা কামাল এবং পরিণতিতে পদত্যাগ করেন ওহিদুদ্দীন। এরপর খেলাফতের আসনে নামকাওয়াস্তে সমাসীন হন দ্বিতীয় আব্দুল মজিদ এবং মাত্র তিনদিনের মধ্যে তিনিও পতিত হন। ১৩৪১ হিজরীর রজব মাসের ২৭ তারিখে মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক খেলাফতে উসমানীর সমাপ্তি ঘোষণা করে তুর্কি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।



শাসন ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর পরই তিনি তুরস্কে ইসলাম নির্মূলে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়, মাদরাসা-মসজিদ বন্ধ করে দেন এবং হজ্জ-উমরার যাত্রা নিষিদ্ধ করেন। বড় বড় মসজিদগুলোতে নামায বন্ধ করে দিয়ে সেগুলোকে জাদুঘর হিসেবে উন্মুক্ত করে দেন। নারীদের জন্য হিজাব পরিধান বন্ধ করে দেন। আরবী অক্ষরের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন। সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে রবিবারকে নির্ধারণ করেন। তুরস্কবাসীকে তিনি ভিন্ন ধরণের পোষাক পরতে বাধ্য করেন। ঈদ এবং ধর্মীয় উৎসবসমূহ বর্জনীয় ঘোষনা করেন। তুরস্কের অধীন আজারবাইজানকে রাশিয়ার কাছে বিক্রি করে দেন। সংবাদ মাধ্যমে তার কীর্তি-মহিমা ও বিজয়ের মিথ্যা পল্প প্রচার শুরু করেন। বক্তৃতা এবং বিবৃতিতে নিয়মিত ইসলাম ও ইসলামী পরিভাষাসমূহ নিয়ে মিথ্যাচার ও কুৎসা করে সেগুলো বর্জনের প্রতি সবাইকে আদেশ-নিষেধ করা তার নিত্যকার অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়।



যে মানুষটি ক্ষমতার শীর্ষ আসনে এসেই ইসলাম ও মুসলমান এবং ইসলামী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এমন দুঃসাহসিক কাজগুলো শুরু করলেন, তার স্বভাব-ব্যবহারের অনেক কিছুই প্রচারের আড়ালে রয়ে গেছে। প্রথমত, তার জন্মবিভ্রান্তি। কোনো কোনো জীবনীকারক প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, ইহুদী বংশোদ্ভুত তার বাবার অনৈতিক অপকর্মের সন্তান তিনি। তার স্ত্রী লতিফার বর্ণনা অনুযায়ী তিনি নিজে ছিলেন পুরুষত্বহীন অক্ষম একজন পুরুষ। জীবনভর মুস্তফা কামাল অশ্লীলতার প্রতি আসক্ত ছিলেন এবং তিনি এসব নিয়ে গর্ব করে বেড়াতেন। তার বিরুদ্ধে সমকামিতার তীব্র অভিযোগ রয়েছে। তার নিজের ঘরে ত্রিশজন যুবতী ছিল, যাদেরকে তিনি কন্যা বলে ডাকতেন এবং তাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ রেখেছিলেন, এ মেয়েরা তার ব্যক্তিগত পার্টিতে অর্ধনগ্ন হয়ে সারারাত নৃত্য ও মদপানে তাকে সঙ্গ দিতো। তিনি তার পুরুষ সেবাদাসদেরকে মহিলাদের পোষাক পরতে বাধ্য করতেন এবং তাদের সাথে মদপান করে নাচের আসরে নিজেও নাচতেন। একবার আযানে মুহাম্মাদ সা. এর নাম শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি এবং সাথে সাথে সেই মিনার ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন, যেখান থেকে আযানের সুর ভেসে আসছিল।



সারাটা জীবন এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও নিয়ন্ত্রনহীন পাপাচারে ডুবে থাকার পর জীবনের শেষ দিনগুলোতে মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক নিজের পরিণতি নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকতেন এবং তার চারপাশে সার্বক্ষণিক অভিজ্ঞ চিকিৎসক রাখতেন। এত আয়োজনের পরও অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। লিভারে আক্রান্ত একটি রোগের পরিণতিতে তার পেট থেকে ইনজেকশনের মাধ্যমে সব পানি বের করতে হয়েছিল। তাতেও মুক্তি মেলেনি তার। মৃত্যুর আগের দিনগুলোতে সারা শরীরজুড়ে অদৃশ্য পোকার আক্রমণে তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। চুলকানিতে তারা গোটা শরীর রং বদলে গিয়েছিল। কাপড় খুলে তিনি প্রায় উলঙ্গ হয়ে শুয়ে থাকতেন। শেষ পর্যন্ত এ রোগ তার চেহারায়ও ছড়িয়ে পড়ে। পরে দেখা যায়, এক ধরণের অতি ক্ষুদ্র লাল পিঁপড়া তাকে কামড়ে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল, যেগুলোর আসল আবাস সুদূর চীনের বনে-জঙ্গলে।



প্রায় দু’বছর অসহনীয় যন্ত্রণায় ভোগে ১৩৫৮ হিজরীর ১৬ই শাবান তথা ১৯৩৮ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখে তার মৃত্যু হয়েছিল। মৃত্যুর পর তার জানাযা নিয়ে বিভক্তি দেখা দেয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জানাযার বিপক্ষে এবং সেনাপ্রধান জানাযার পক্ষে অবস্থান নেন। অবশেষে শরফুদ্দীন আফেন্দী নামের এক ভণ্ড তার জানাযা পড়ান, যিনি নিজেও ছিল নিন্দিত এবং ঘৃণিত। অবাক বিস্ময়ের ব্যাপার হল, মৃত্যুর পর তুরস্কের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক যাকে মনোনীত করে রেখেছিলেন, তিনি ছিলেন তৎকালে তুরস্কে নিযুক্ত ইংল্যান্ডের দূত। এর মাধ্যমেই নিজের প্রভুদের কাছে তার দাসত্ব ও আনুগত্যের শেষ নজির রেখে গেলেন এ কুখ্যাত শাসক।



নৈতিকতা ও ইসলামের এত বড় জঘন্য অপরাধীর নামে আমাদের রাজধানী ঢাকায় সড়কের নামকরণ করা হয়েছে, লজ্জা ও বিবেচনা কোথায় ছিল কর্তাদের!





লিখেছেন- তামীম রায়হান

শিক্ষার্থী, কাতার ইউনিভার্সিটি, কাতার

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৫

গোয়েন্দাপ্রধান বলেছেন: ভাই কামাল দুশ্চরিত্র কিন্তু এই লেভেলের তা ধারণার বাইরে ছিল

২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২১

গোয়েন্দাপ্রধান বলেছেন: তুর্কি জাতির বীর বেশ , এদেশের গো প্রজনন মঞ্চের সমর্থকদের স্বপ্ন পুরুষ ব্রিটিশদের পালিত ছাগল আর কি বিশেষণ দেয়া যায়

৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪২

অন্য কথা বলেছেন: তুরস্কের সত্যিকার মুসলমানরা তাকে ঘৃণা করে । মক্কায় এক হাজ্জ এর সময় এক তুর্কির সাথে কথা হচ্ছিল । যখনই কামাল পাশার নাম বললাম । সে এই কথা গুলোই আমাকে বলেছিল ( কামালের পারসনাল ইতিহাস বাদে) ।

৪| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:৫৯

মেলবোর্ন বলেছেন: তবুও মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। আর কামাল আতাতুর্কের এই কাহিনী তো আগে জানতাম না। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

৫| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৮

মাথা ঠান্ডা বলেছেন: এত কিছু তো আগে জানতাম না । তুরস্কের জাতীর পিতা হিসেবে তাকে শ্রদ্ধা করতাম।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

৬| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৩

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: সত্যিকার মুসলমানরা তাকে ঘৃণা করে

৭| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৬

দাম বলেছেন: কামাল, তার মত মতামত পোষনকারী, তার অনুসরণকারী বা অনুকরনকারী সবাইকে আল্লাহ ধ্বংস করুন।

আল্লাহ আপনি তাদেরকে ধ্বংস করুন তাদের পরষ্পরের দ্বারা।

আল্লাহ আপনি তাদের মধ্যে অনৈক্য তৈরী করে দিন।

আল্লহ আপনি যে সম্মানের কথা আপনার কোরআনে আপনি আমাদের জানিয়েছেন সে সম্মানের আসনে আমাদের অধিষ্ঠিত করুন।

৮| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৮

আছিফুর রহমান বলেছেন: এরকম দারুন ও তথ্য বহুল পোস্টে কোন আলোচনা নেই, মন্তব্য নেই। অবাক হলাম। পোস্টে প্লাস।

৯| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৫১

মুদ্‌দাকির বলেছেন: নাইস পোষ্ট

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.