নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়

জাহাজ ব্যাপারী

জাহাজ ব্যাপারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপেক্ষিত ভাষা সৈনিক খাদেমুল ইসলাম।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:০৫

রাষ্ট্র ভাষা সৈনিকদের প্রকৃত মূল্যায়ন করেনি : ভাষা সৈনিক খাদেমুল ইসলাম



নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার লক্ষ্মণপাড়া গ্রামে জন্ম নেয়া নিভৃতচারী ভাষা সৈনিক শহীদ বরকতের সহপাঠি অশিতিপর আলহাজ্ব খাদেমুল ইসলাম বললেন, রাষ্ট্র ভাষা সৈনিকদের তেমন ভাবে মূল্যায়ন করেনি। জীবনের ৮১ টি বসন্ত পার করে এবারের বসন্তেও তেমনি তরতাজা মনোবলের অধিকারী এই ভাষা সৈনিকের সাথে কথা হয় তার বর্তমান আবাস নওগাঁর পতœীতলা উপজেলা সদরের চাঁদপুর গ্রামে তার বাসায়। ভাষা সৈনিক খাদেমুল ইসলামের পিতা মৃত খয়বর আলী ছিলেন একজন আদর্শ স্কুল শিক্ষক। পড়াশুনা শেষ করে ১৯৫৩ সালের শেষের দিকে নজিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে তিনি শুরু করেন কর্মজীবন। তিনি এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। দায়িত্ব পালন করেন প্রধান শিক্ষকের।



সবশেষ ১৯৯০ সালে ধামইরহাট উপজেলা সদরে সফিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে। তার অনেক ছাত্র-ছাত্রী সমাজে প্রতিষ্ঠিত। পাঠদানের পাশাপাশি তিনি নিজেকে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবা মূলক কাজেও নিয়োজিত করেন। তার একান্ত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে নজিপুর মহিলা কলেজ, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ, আল-হেরা ইসলামী একাডেমী প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় জমি দান করেন। এছাড়া একটি পাঠাগার ও মসজিদও নির্মাণ করেন। ভাষা সৈনিক খাদেমুল ইসলাম বিরল প্রতিভার অধিকারী হলেও নিজেকে জনসম্মুখে তুলে ধরার কোন চেষ্টাই তিনি করেন নি। গৃহমুখী হয়ে জীবন যাপনেই তিনি বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। বর্তমানে তার সময় কাটে পত্রিকা ও বিভিন্ন বই পড়ে। এছাড়া তিনি সার্বক্ষনিক ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন।



২০০৬ সালে তার প্রিয় সহধর্মীণীর আকষ্মিক মৃত্যুতে তিনি ভেঙ্গে পড়েন। সহধর্মীণীর স্মৃতি বুকে নিয়েই বর্তমানে তাঁর নিঃসঙ্গ দিন কেটে যায়। তার সাথে আলাপ কালে তিনি জানান, ১৯৫২ থেকে ২০১২ দীর্ঘ ৬০ বছরে স্মৃতির আয়না থেকে তাঁর হারিয়ে গেছে অনেক কিছুই। তবে আজও যতটুকু স্মৃতি মনে পড়ে তা থেকে তিনি সুখ অনুভব না করে বরং কষ্ট পান। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাষা সৈনিকেরা প্রকৃত পক্ষে কোথায় কিভাবে জীবন যাপন করছেন সেটি ভাবলে এখনও তার বুকে ব্যথা লাগে। তাই শহরের কোলাহলমুক্ত পরিবেশ থেকে দূরে বহুদূরে নিজ বাড়ীতে বসে তিনি মাঝে মাঝে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে নিজেকে একজন গর্বিত ভাষা সৈনিক হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। তিনি জানান, ভাষা আন্দোলনে যখন সারাদেশ উত্তাল তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম, এ শেষ বর্ষের ছাত্র।



ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নেতারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে সায় না দিলেও সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল সমাবেশ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। তারা ১০জন করে ভাগ হয়ে রাস্তায় নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২১ ফেব্রুয়ারী সকালে মিছিল নিয়ে তারা রাস্তায় নেমে যান। প্রথম দলেই ছিলেন তিনি। মিছিল সহকারে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কে আসার আগেই পুলিশ তাকে সহ আরো প্রায় ৫০ জন ছাত্রকে আটক করে। প্রথমে তাদের লালবাগ থানায় এবং পরে সন্ধ্যায় জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।



জেলখানায় বসেই তিনি পুলিশের গুলিতে প্রিয় সহপাঠি বরকতের শহীদ হবার খবর জানতে পারেন। মশার কামড়, মাথায় ইটের বালিশ, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তাকে ২৮ দিন জেলখানায় কাটাতে হয়। জেলখানায় তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমানের সাথে একই সেলে ছিলেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তারা মাতৃভাষার জন্য মরণপণ যুদ্ধ করে মাতৃভাষা ছিনিয়ে এনেছেন। কিন্তু বতর্মানে মনে হচ্ছে বাংলা ভাষার আর তেমন প্রচলন নেই। সর্বত্র বিদেশী ভাষার ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়েছে। তিনি পৈতৃক সূত্রে প্রচুর পরিমাণ সম্পদ প্রাপ্ত হন। তার একমাত্র ছেলে ডাঃ কামরুল আহসান বাংলাদেশর অন্যতম হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। ফলে সংসারে তার অভাব অনটন না থাকলেও দেশের চলমান রাজনৈতিক দুরাবস্থা, বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন তাকে দারুণভাবে পীড়া দেয়। তিনি মনে করেন, ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাংলার স্বাধীনতার বীজ বপন করা হয়। এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। বতর্মানে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সম্মান প্রদর্শন করা হলেও ভাষা সৈনিকদের প্রতি জাতি বা রাষ্ট্র সেভাবে মূল্যায়ন করেননি। এটি ভাবতে তাঁর বড় কষ্ট হয়। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাষা সৈনিকদের খুঁজে বের করে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদানের জন্য তিনি সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন।



গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি প্রচারবিমূখ এই ভাষা সৈনিকের প্রতি। আশা করছি রাস্ট্র তাঁর যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মাননা দেবে।



সূত্রঃ http://bdn24x7.com/?p=27432

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.