নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়

জাহাজ ব্যাপারী

জাহাজ ব্যাপারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার নেপথ্যে।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৭

মোহাম্মদ মতিউর রহমান

তারিখ: ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩



একটা কথা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে, মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনী সম্মিলিত বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছে। কথাটা কতটুকু সত্য? সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় মূলত মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার পর থেকে প্রথমে অসংগঠিতভাবে এবং পরে প্রবাসী সরকার গঠিত হওয়ার পর সুসংগঠিতভাবে। অপর দিকে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয় ৩ ডিসেম্বর এবং তা চলে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ভারত এমন একটা সময়কে যুদ্ধ করার জন্য বেছে নেয়, যখন মুক্তিবাহিনী বড় বড় শহর এবং সেনানিবাস ছাড়া প্রায় পুরো বাংলাদেশই নিয়ন্ত্রণ করছিল। কাজেই ৩ ডিসেম্বরের বহু আগেই শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনী নেতৃত্ব দিয়েছে এ কথা সত্যের অপলাপ, এটা মুক্তিবাহিনীর গৌরবময় ভূমিকাকে খাটো করে দেখার অপপ্রয়াস এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিতর্কিত করার অপকৌশল। উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধারা নয় মাস যে যুদ্ধ করেছে সে যুদ্ধ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধে সহায়ক হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ তথা মুক্তিবাহিনীর কাছে ভারতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।



এবার আসা যাক মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে ভারতের সহায়তা প্রসঙ্গে। এ কথা ঠিক যে, মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে। কিন্তু এর উদ্দেশ্য বা নেপথ্যের কারণ কী ছিল তা অনুধাবন করা দরকার। বাংলাদেশ কিংবা এ দেশের জনগণকে ভালোবেসে ভারত আমাদের সহায়তা করেনি। যদি বাংলাদেশকে ভালোবেসেই ভারত আমাদের সহায়তা করত তাহলে আমাদের আন্তর্জাতিক নদী গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত এবং তিস্তা চুক্তি সই করতে গড়িমসি করছে কেন? টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রক্রিয়াই বা শুরু করেছে কেন এবং ছিটমহলঅপদখলীয় এলাকাগুলোর বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নেই বা টালবাহানা করছে কী কারণে? এসব প্রশ্ন আজ জনগণকে আলোড়িত করছে।



আর যদি নীতিগত অবস্থান থেকে ভারত বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা দিয়ে থাকে তাহলে কাশ্মির এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টার্স’-এর স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রে নির্মম দমন নিপীড়নের নীতি গ্রহণ করেছে কোন যুক্তিতে? মূলত ভারত বাংলাদেশকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল তার ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে। এ কথা সুবিদিত যে, শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান সম্পর্কে সর্বদা একটা ভয় ভারতের মনে ক্রিয়াশীল ছিল। কারণ ঐতিহাসিক অনিবার্যতা তথা প্রয়োজন হিসেবে ভারত বিভক্তির পর থেকেই নয়া দিল্লি সুযোগ খুঁজছিল তার এক নম্বর শত্রু পাকিস্তানকে ভাঙা ও দুর্বল করার জন্য। অবশেষে ১৯৭১ সালে ভারত সে সুযোগ পেয়ে যায় এবং পুরোদস্তুর তা কাজে লাগায়।



পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ায় ভারতের তুলনায় দেশটি একটি দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এতে ভারতের আধিপত্যবাদী চেতনা আরো শাণিত হলো এবং ভারত ইতোমধ্যেই একটি আঞ্চলিক শক্তির রূপ পরিগ্রহ করেছে। বাংলাদেশ কোনো শত্রুভাবাপন্ন দেশ না হওয়ায় ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে সৈন্য সংখ্যা হ্রাস করে তার অন্যান্য এলাকায় বিশেষ করে পাকিস্তান সীমান্ত এবং কাশ্মির এলাকায় অধিক সৈন্য মোতায়েন করতে পেরেছে। কাশ্মির এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে অধিক সৈন্য মোতায়েন করে ভারত এসব এলাকার স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলন দাবিয়ে রেখেছে।



আর অর্থনৈতিক দিকটিও ভারতের মাথায় ছিল। পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশে ভারত এক বিরাট বাজার পেয়েছে। পাকিস্তানি পণ্যের মান উন্নত হওয়ায় ভারত তদানীন্তন পাকিস্তান তথা বিশেষত পূর্ব পাকিস্তানের বাজারে প্রবেশের সুবিধা লাভ করতে পারেনি। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারের একটি বিরাট অংশ ভারতের দখলে, যা তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।



ভারতের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ছিল দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বল্প ব্যয়ে ও স্বল্প সময়ে মালামাল পরিবহনের উপায় হিসেবে বাংলাদেশের কাছ থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিট সুবিধা আদায় করে নেয়া। এটা পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সম্পাদিত নৌ প্রটোকলের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা বর্তমান সরকারের আমলে পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার পথে।



সর্বোপরি ভারত বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে যেতে পেরেছে, যা পাকিস্তান আমলে সম্ভব ছিল না। এ ছাড়া জনশ্রুতি আছে, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভারত এক অসম ও গোপন চুক্তি তাদের ওপর চাপিয়ে দেয় এবং এর শর্ত হিসেবে ভারতীয় সংবিধানের আদলে আমাদের সংবিধানে মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সন্নিবেশিত হয়েছে, যদিও এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এই দু’টি নীতি বা মতবাদ তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য এবং সামাজিক কাঠামো বিনাশী বলে জ্ঞান করে।



এখানে উল্লেখ্য, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে সীমান্ত খোলা থাকায় ভারতীয় বাহিনী এ দেশ থেকে অস্ত্রশস্ত্র, সোনা-গয়না, ধান-চাল এমনকি গৃহস্থালি দ্রব্যাদি যেমন টিভি, ফ্রিজ, কার্পেট পর্যন্ত লুট করে নিয়ে যায়। এভাবে ভারত তার যুদ্ধের ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নিয়েছে। সুতরাং ভারত তার নীতিগত অবস্থান থেকে কিংবা আমাদেরকে ভালোবেসে মুক্তিযুদ্ধে সাহয়তা করেনি; করেছে তার ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে।



লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

সূত্র: http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=127628

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫১

চারশবিশ বলেছেন: মুক্তিযোদ্ধারা নয় মাস যে যুদ্ধ করেছে সে যুদ্ধ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধে সহায়ক হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ তথা মুক্তিবাহিনীর কাছে ভারতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত

২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:১৮

আদনান মাননান বলেছেন: Click This Link

৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭

জাহাজ ব্যাপারী বলেছেন: যতই ছাগু ফাগু করেন সত্যকে আড়াল করা যাবে না। স্বাধীন বাংলাদেশ ভাঁড়ত মাতার দুগ্ধপোষ্য, বঙ্গসেনা ও র-এর এজেন্টে ছেয়ে গেছে। কথিত আছে যে বাংলাদেশে ২০ লাখ র-এর সক্রিয় এজেন্ট আছে। স্বার্থবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী ইন্ডিয়ার চরিত্র ভাদারা বুঝতে চায় না কোনদিন – আফসোস!
বিঃ দ্রঃ
স্বাধীনতার সময় ভাঁড়ত “সাহায্য” ইনভেস্ট করেছিল অনন্তকাল বন্ধুত্ব (!) করার জন্য।
এই পোস্টে পাকিস্তান ও তাদের দোসরদের পক্ষে কিছুই বলা হয় নি।

৪| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৪:০৯

ওবায়েদুল আকবর বলেছেন: আপনি কি এই পোস্টের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ায় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আফসোস এখানে ঝেড়েছেন নাকি ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে বিধায় আমরা স্বাধীন হয়েছি এরকম ধারণা দিয়ে আমাদের জাতীয় চেতনাকে ক্রমান্বয়ে হীনমন্নতায় ঢেকে দিতে চাচ্ছে তাদেরকে উচিৎ জবাব দিতে চেয়েছেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.