![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পোড়া গন্ধ ইতোমধ্যে বাতাসে মিশে গেছে। কিংবা মাইল দেড়েক দূরে বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে গেছে। বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ল চারপাশের সবুজের মধ্যে কালো দাগ। সামনের কাছারির টিন ও ভেতরে পুড়ে গেছে। দেয়ালগুলো কোনোরকমে খাড়া আছে। বাম পাশে আম, জাম, কাঁঠাল, রেইনট্রি গাছ পুড়ে ছাই। আর চেয়ারম্যানের পাকা বাড়ির ভেতরে গান পাউডার দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। ভেতরে পোড়া দাগ। আশপাশে আরো কয়েকটা ঘরে একই দৃশ্য। সামনে হাতের ডানে শুধু শূন্য ভিটাটাই দেখা যাচ্ছে।
এই দাগ এখন ওইসব ঘরের বাসিন্দাদের মনে স্থায়ী হয়ে গেছে। তারা অস্থির আর আতংকের মধ্যে আছে। স্বাধীন একটা দেশ, স্বাধীনতার পর বিয়াল্লিশ বছর পার হয়েছে। আর ঘরগুলো পুড়িয়েছে স্বাধীনতার বিরোধী যে দল তারা। কি যে করুণ এই ঘটনা। যেন ইতিহাসের তামাশা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আছে, সরকার আছে, শক্তিশালী গণমাধ্যম আছে, অথচ কেউনাই।
একটা জিনিস আছে। তা হচ্ছে সন্ত্রাস। মানুষের মনে সন্ত্রাস ঢুকে গেছে। নিষ্ঠুর হয়ে গেছে তার হৃদয়। যে দল ইসলামের নামে রাজনীতি করে, ধর্মের কথা যেখানে সেখানে বলে, তারাই এই অধার্মিক কাজ করেছে।
তখন দুপুর। রোদ হয়ত ছিল। তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। তারা যখন দল বেঁধে আসে, তখন রোদও লজ্জা পেয়েছিল কিনা, সেই কথা আজ বিকেলের আকাশে কিংবা শিমফুলে আঁকা আছে কিনা আমি জানি না। তবে দৃশ্য দেখে, কিছু কথা শুনে আমারও খুব লজ্জা লাগল। মনে হলো, এ রকম হওয়ার কথা না। এ রকম হতে পারে না। তবুও বারবার কেন হয়? কেন মাথা পেতে নিতে হয়?
একটা ঘরের কথা বলি। বর্বররা যখন আসে, তারা ভয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে ফেলে। ঘরটা ছিল পাকা। বাইরে রান্নাঘর তখন জ্বলছে। তারা দরজা ধাক্কায়। দা-কিরিচ লোহা দিয়ে ভাঙতে চায়, পারে না। গালিগালাজ করে। এদিকে ধোঁয়া ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। একটু পর বলে, দরজা যখন খুলিসনি এবার ঘরের ভেতর মর।
একটা কণ্ঠে শোনা যায়, চেয়ারম্যানের পোলারে বের কর। টুকরা করে নিয়ে যাব। ওই টুকরার অনেক দাম।
যার কথা বলছিল, সেই ছেলেটার বয়স মাত্র চার মাস। ছোট্ট একটা শিশুর প্রতিও এ রকম ক্রোধ! কেন? এত অমানুষ হয়ে গেছি আমরা!
তাদের এক চাচা, তার ঘরের ছাদ ছিল কাঠের। কাঠ জ্বলে যাওয়ার পর বেরিয়ে কীভাবে যেন তাদের বের করে আনে। না হয় ধোঁয়ায় প্রাণ যেত।
ঘটনাটা কেন ঘটল?
জামায়াতের এক নেতার লাশ পাওয়া যায় গ্রামের মধ্যেই। এর পরই এই ঘটনা। এলাকার চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের। কিন্তু ওই নেতাকে কে খুন করেছে তা কেউ জানে না। তবে ক্ষোভ চেয়ারম্যানের ওপরই পড়ল।
কথা হচ্ছে, এটা কি হতে পারে? কে হত্যাকা- ঘটিয়েছে তা জানা নাই, একের অপরাধে অন্যের ওপর আঘাত করা যায়? সেটা কোন ধর্মে আছে? সেই ধর্মটা পড়তে খুব ইচ্ছে করছে।
অনেক বাঙালি এসব দেখে না, বিবেক খাটায় না। তারা শুধু ইসলামের কথা বলে। কিন্তু ইসলামের নামে কেউ ভ-ামি করছে, তা তাদের নজরে পড়ে না।
আসার সময় গাড়ির পেছনে লেখা দেখলাম : পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিচারালয় হচ্ছে নিজের বিবেক। পড়ে মনে মনে হাসলাম। এই হাসির মধ্যে অনেক দুঃখ লুকিয়ে ছিল।
বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভুক্তভোগী একজন বলেন, ওই দেখেন। দেখলাম। কালো, লম্বা একটা ছেলে, মোবাইল হাতে আলপথে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ওই ছেলেটা পথ দেখিয়ে দিয়েছিল।
বাড়িঘর পুড়িয়েছে গ্রামের ছেলেরাই। এ রকম দৃশ্য কোথায় নাই? সীতাকু-, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, সাতক্ষীরা, নীলফামারি, বগুড়াÑসবখানে আজ আগুনে পোড়া বাংলাদেশ।
আগুনে পোড়া বাংলাদেশ/ক্ষত তোমার শুকানোর আগেই/হয়ে যায় কত কত ক্ষত/এভাবে স্বপ্নহীন আর কত!
রাজনীতির নামে হিংসা, হানাহানি চলছে, ধর্মের নামে হানাহানি চলছেই। বাহ! বেশ। বেশ তো চলছে সোনার বাংলাদেশ।
মামণি, এ রকম বাংলাদেশ তুমি দেখনি। তুমি দেখবে, সেই আশঙ্কা আজ মনের মধ্যে কিলবিল করে। এ রকম বাংলাদেশ দেখব বলে কি আমরা আশা করি? জানি না, আমাদের মনের মধ্যে কী আছে।
(এ লেখা পড়ার পর ভুক্তভোগী একজন কী বলেছে জানেন? তিনি বলেছেন, চোখ ভিজে গেল। বুকের মাঝে চাপা কষ্ট হচ্ছে।)
©somewhere in net ltd.