![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সন্মানিত মুসলিম ভাইেয়রা আস-সালামুআলাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন।
আজকের এই পোষ্টটির মাধ্যমে আমার ব্লগিংয়ের যাত্রা শুরু করলাম। নিম্নোক্ত লিখাগুলো আমার নয়, কিন্তু আমি লিখাগুলো পড়ে অনেক confused এর মধ্যে আছি তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য পোষ্টটি এখানে তুলে ধরলাম। এখন আপনারা যাচাই করুন লিখাগুলো কতটুকু সত্য এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে এগুলো নির্ভরযোগ্য কিনা এবং এগুলো বিশ্বাস করলে আমাদের ইমান কতটুকু পরিপূর্ন হবে?
দয়াকরে আপনাদের মূল্যবান মতামত পেশ করুন। এবং যাদের হাদীস ্ও ইসলাম বিষয়ক জ্ঞান কম তারা দয়াকরে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করা থেকে বিড়ত থাকুন।
দাজ্জালের পরিচিতি
দাজ্জালের আবির্ভাবের গুরুত্বের কথা বলার পর আল্লাহর রসুল তার সম্বন্ধে বেশ কতকগুলি চিহ্ন বোলে গেছেন যাতে তাঁর উম্মাহ দাজ্জাল (Dajjal)কে দাজ্জাল (Dajjal) বোলে চিনতে পারে ও সতর্ক হয়, তাকে গ্রহণ না করে এবং তার বিরোধিতা করে, তাকে প্রতিরোধ করে। এগুলো একটা একটা কোরে পেশ কোরছি। এক দিক দিয়ে বইয়ের এই অধ্যায়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দাজ্জাল (Dajjal)কে দাজ্জাল (Dajjal) বোলে আমরা যদি চিনতেই না পারি তবে আমাদের বিপদের সম্ভাবনা বহু বেশী হোয়ে যায়। এ অনেকটা এমন যে শত্রু যদি বন্ধু সেজে আমাদের মধ্যে প্রবেশ করে এবং আমরা তাকে শত্রু বোলে না চিনি তবে বিপদের ঝুঁকি কত বেশী হোয়ে যায়। এ জন্যই বোধহয় আল্লাহর রসুল দাজ্জাল (Dajjal)কে যাতে আমরা সহজেই চিনতে পারি সেজন্য অনেকগুলি চিহ্ন বোলে গেছেন। কিন্তু ঐসঙ্গে এ কথাও বোলে গেছেন যে প্রকৃত মো’মেন ছাড়া, মহাপণ্ডিত হোলেও দাজ্জাল (Dajjal)কে দাজ্জাল (Dajjal) বোলে চিনতে পারবে না, যদিও দাজ্জালের কপালে “কাফের” শব্দটি লেখা থাকবে। আর মো’মেন নিরক্ষর হোলেও দাজ্জাল (Dajjal)কে দাজ্জাল (Dajjal) বোলে চিনতে পারবে (এই অধ্যায়েরই ১১ নং হাদীস)।
এক ॥
আল্লাহর রসুল বোলেছেন- দাজ্জাল (Dajjal) ইহুদী জাতির মধ্যে থেকে উত্থিত হবে এবং ইহুদী ও মোনাফেকরা তার অনুসারী হবে। [ইবনে হানবাল (রাঃ) থেকে মোসলেম]
এই হাদীসটির বিশেষ ব্যাখ্যার প্রয়োজন করে না কারণ বর্ত্তমানের জড়বাদী (Materialistic) সভ্যতা যে ইহুদী জাতি থেকে জন্মেছে তা দাজ্জালের আবির্ভাবের গুরুত্বের এক নম্বর হাদীসেই বিশ্লেষণ কোরেছি। তাছাড়া এই সভ্যতার প্রচলিত নামই হোচ্ছে ইহুদী-খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতা (Judeo-Christian Technological Civilization)। নামকরণেই বংশ পরিচয় স্বীকার কোরে নেয়া হোয়েছে। ইহুদী ও খৃষ্টানরা যে এর অনুসারী হবে তা তো স্বাভাবিক কিন্তু মহানবী যে মোনাফেকদের অন্তর্ভুক্ত কোরলেন তার অর্থ হোচ্ছে এই যে, মোসলেম বোলে পরিচিত এই জাতিটি প্রায় সম্পূর্ণটাই দাজ্জাল (Dajjal)কে তার দাবি মোতাবেক রব অর্থাৎ প্রভু বোলে মেনে নেবে এবং নিয়েছে। মোনাফেকদের সংজ্ঞা অর্থাৎ ‘মুখে এক কথা বলা আর কাজে অন্যটা করা’ অনুযায়ী এরা মোনাফেকের পর্যায়ে পড়ে। নিজেদের মোসলেম বোলে পরিচয় দিয়ে, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাহ ও নানাবিধ এবাদত কোরেও আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান কোরে দাজ্জালের শেখানো মানুষের সার্বভৌমত্বকে জাতীয় জীবনে স্বীকার কোরে নেয়া যদি মোনাফেকী না হয় তবে আর মোনাফেকী কি?
দুই ॥
আল্লাহর রসুল বোলেছেন- দাজ্জাল (Dajjal) নিজেকে মানুষের রব, প্রভু বোলে ঘোষণা কোরবে এবং মানবজাতিকে বোলবে তাকে রব বোলে স্বীকার কোরে নিতে। [বোখারী]
দাজ্জালের এই দাবী “আমাকে প্রভু বোলে স্বীকার করো” এর অর্থ কি? এর অর্থ হোচ্ছে এই যে দাজ্জাল (Dajjal) পৃথিবীর মানুষকে বোলবে যে, আমি মানুষের সার্বভৌমত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ব্যবস্থা দিচ্ছি, যে আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, শিক্ষা-ব্যবস্থা দিচ্ছি তা তোমরা গ্রহণ ও প্রয়োগ করো। তোমরা বহু পুরাতন বেদ, মনু-সংহিতা ও কোরান-হাদীস নিঃসৃত যে আইন-কানুন, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি ইত্যাদি জীবনে প্রয়োগ কোরছিলে তা পুরানো, অচল ও বর্বর; ওগুলো ত্যাগ কোরে আমি যে অতি আধুনিক আইন-কানুন দিচ্ছি তা গ্রহণ করো ও তোমাদের সমষ্টিগত জীবনে প্রয়োগ করো। তা হোলে তোমরা আমাদের মত সভ্য হবে, সমৃদ্ধিশালী, ধনী ও শক্তিশালী হবে। তোমাদেও জীবন যাত্রার মান আমাদের মত উন্নত হবে। আমরা যেমন স্বর্গসুখে আছি তোমরাও এমনি স্বর্গসুখ ভোগ কোরবে। দাজ্জাল (Dajjal) রব, প্রভু হবার দাবী কোরছে কিন্তু স্রষ্টা হবার দাবী কোরছে না। পাশ্চাত্যের ইহুদী খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতা ও শক্তি ঠিক এই প্রভুত্বের, রবুবিয়াতের দাবিই কোরছে, মানুষের স্রষ্টা হবার দাবি কোরছে না। সে বোলছে ব্যক্তিগত জীবনে তোমরা হিন্দু, মোসলেম, খৃষ্টান, ইহুদী, জৈন, বৌদ্ধ যা থাকতে চাও থাকো এবং যত খুশি তোমাদের আল্লাহকে, ঈশ্বরকে, গডকে, এলীকে ডাকো। যত খুশি নামাজ পড়ো, রোযা করো, হজ্ব করো, প্রার্থনা করো আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু সমষ্টিগত জীবনে আমার রবুবিয়াহ্, প্রভুত্ব মেনে নাও। এখানে তোমাদের স্রষ্টার সার্বভৌমত্ব প্রত্যাখ্যান কোরে আমি যে জনগণের, একনায়কের, কোন বিশেষ শ্রেণীর, সংখ্যাগরিষ্ঠের অর্থাৎ এক কথায় মানুষের সার্বভৌমত্ব সৃষ্টি কোরেছি, তার যে কোন একটাকে মেনে নাও।
আজ মানবজাতি দাজ্জালের ঐ দাবি মেনে নিয়েছে এবং মেনে নেয়ায় দাজ্জাল (Dajjal) মানবজাতিকে তার কাছে যে জান্নাতের মত জিনিসটি আছে তাতে প্রবেশ কোরিয়েছে। তাই আজ সমস্ত মানবজাতি জাহান্নামের আগুনে পুড়ছে। সমস্ত পৃথিবীতে কোথাও শান্তি নেই। একটি মাত্র দম্পতি থেকে সৃষ্ট হোয়েও, একটিমাত্র জাতির অন্তর্ভুক্ত হোয়েও (কোরান সুরা বাকারা, আয়াত ২১৩; সুরা ইউনুস, আয়াত ১৯; সুরা নেসা, আয়াত ১) মানুষ একে অপরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা কোরছে, আগুনে পুড়িয়ে মারছে, তাদের বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ কোরছে। দাজ্জালের অর্থনীতি গ্রহণ করার ফলে মানুষের মধ্যে কেউ কোটি কোটি মুদ্রার মালিক হোয়ে জঘন্য বিলাস-ব্যাসনের মধে ডুবে আছে আর কেউ না খেতে পেয়ে মরে যাচ্ছে, খেতে পরতে দিতে না পেরে নিজেদের ছোট ছোট বাচ্চা সন্তানদের হত্যা কোরে নিজেরা আত্মহত্যা কোরছে, মা গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা কোরছে, পেটের সন্তান অন্যের কাছে বিক্রি কোরে দিচ্ছে; আল্লাহর দেয়া দণ্ডবিধি প্রত্যাখ্যান কোরে দাজ্জালের দণ্ডবিধি গ্রহণ করায় সর্বরকম অপরাধ চুরিডাকাতি, হাইজ্যাক, অপহরণ, ছিনতাই, খুনজখম, ধর্ষণ প্রতি দেশে, প্রতি জাতিতে ধাঁ ধাঁ কোরে বেড়ে চোলেছে; আল্লাহর দেয়া শিক্ষা ব্যবস্থা ত্যাগ কোরে দাজ্জালের দেয়া আত্মাহীন, আল্লাহহীন ব্যবস্থা গ্রহণ করার ফলে মানুষ তার নৈতিক চরিত্র হারিয়ে পশুর পর্যায়ে নেমে যাচ্ছে।
সাজদা অর্থ আত্মসমর্পণ, কাউকে সাজদা করার অর্থ তার কাছে আত্মসমর্পণ কোরে তার আদেশ নির্দেশ মেনে চলা- তাই আল্লাহ তাঁকে ছাড়া আর কাউকে সাজদা করা নিষেধ কোরেছেন। কিন্তু মোসলেমসহ সমস্ত মানবজাতি আজ দাজ্জালের অর্থাৎ ইহুদী খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতার পায়ে আত্মসমর্পণ কোরেছে, তার পায়ে সাজদায় পোড়ে আছে। এক কথায় এবলিস মানবজাতিকে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব থেকে, তওহীদ থেকে বিচ্যুত কোরে তাকে ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমায় পতিত করার যে চ্যালেঞ্জ আল্লাহকে দিয়েছিলো আজ তাতে সে সক্ষম হোয়েছে, আজ সে জয়ী অবস্থায় আছে।
তিন ॥
আল্লাহর রসুল বোলেছেন- দাজ্জালের বাহনের দুই কানের মধ্যে দূরত্ব হবে সত্তর হাত। [আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বায়হাকী, মেশকাত]
আরবী ভাষায় সত্তর বোলতে সাতের পিঠে শুন্য দিলে যেমন ৭০ বোঝায় তেমনি এর আরও একটা ব্যবহার আছে। সেটা হোল কোন সংখ্যাকে বহু বা অসংখ্য বোঝাবার জন্যও ঐ সত্তর সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। এটা শুধু ঐ সত্তর সংখ্যা দিয়েই করা হয়, অন্য কোন সংখ্যা, যেমন পঞ্চাশ বা একশ’ দিয়ে করা হয় না। এই হাদীসটায় বিশ্বনবী দাজ্জাল (Dajjal) যে বিশাল, বিরাট কিছু এই কথাটা রূপকের মাধ্যমে বোলেছেন। বাহনের দুই কানের মধ্যকার দূরত্ব বহু হাত হোলে, বাহনটা কত বড় এবং তাহোলে সেই বাহনের আরোহী কত বড়। এই প্রসঙ্গে এখানে আরেকটি হাদীস পেশ কোরতে চাই। এ হাদীসটি আমি ছাত্রজীবনে ভারতের মধ্যপ্রদেশের একজন বড় আলেমের কাছ থেকে শুনেছিলাম। তখন ওটার উৎস লিখে রাখি নি এবং এখন আর কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। হাদীসটি হোল, আল্লাহর রসুল বোলেছেন- দাজ্জালের ঘোড়ার বা গাধার (বাহনের) এক পা পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে, অন্য পা পশ্চিমপ্রান্তে হবে। এ হাদীসটি আমি সহিহ বোলে বিশ্বাস কোরি, কারণ ওপরে আবু হোরায়রার (রাঃ) ঐ হাদীসটির এটি পরিপূরক ও একার্থবোধক। দু’টোরই অর্থ দাজ্জাল (Dajjal) ও তার বাহন উভয়ই বিরাট, বিশাল ও পৃথিবীব্যাপী।
বর্ত্তমানে পৃথিবীতে ইহুদী-খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতার চেয়ে বড়, এর চেয়ে শক্তিধর কিছুই নেই, এ কথায় কেউ দ্বিমত কোরতে পারবেন না, এটা সন্দেহাতীত সত্য। এই শক্তির কাছে সমস্ত পৃথিবী নতজানু হোয়ে আছে, এর পায়ে সাজদায় পোড়ে আছে। কারো সাধ্য নেই এই সভ্যতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার বা একে প্রতিরোধ করার। আরোহী দাজ্জাল (Dajjal) হোচ্ছে ইহুদী-খৃষ্টান সভ্যতা আর তার ঘোড়া বা বাহন হোচ্ছে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগত যন্ত্র (Scientific Technology)। এই বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগত যন্ত্রই হোচ্ছে এর মহাশক্তি। এই সভ্যতার যন্ত্র আজ পৃথিবীর সর্বত্র। এ এত শক্তিশালী যে এর পারমাণবিক অস্ত্র (Nuclear weapons) আজ এই পৃথিবীকে ভেঙ্গে ফেলতে পারে। বিশ্বনবীর রূপক বর্ণনার শাব্দিক অর্থ নিয়ে যারা বিরাট এক ঘোড়ায় উপবিষ্ট একচক্ষু এক দানবের অপেক্ষায় আছেন, এই দুইটি হাদীসই তাদের ভুল ধারণা শোধরাবার জন্য যথেষ্ট মনে কোরি। দুই কানের মধ্যে শত শত বা হাজার হাজার হাত দূরত্ব বা পৃথিবীর দুই প্রান্তে দুই পা, এমন বাহন কি সম্ভব বা বাস্তব? এটা নড়াচড়া কোরবে কোথায়? এরপরও যারা ঐ ধারণা নিয়ে থাকবেন তারা কেয়ামত পর্যন্ত তাদের ধারণার (আকীদার) দাজ্জালের জন্য অপেক্ষা কোরতে পারেন।
চার ॥
আল্লাহর রসুল বোলেছেন- দাজ্জালের গতি হবে অতি দ্রুত। সে বায়ুতাড়িত মেঘের মত আকাশ দিয়ে উড়ে চোলবে। [নাওয়াস বিন সা’মান (রাঃ) থেকে মোসলেম, তিরমিযি]
এই হাদীসের বেশী ব্যাখ্যার প্রয়োজন করে না। দাজ্জাল (Dajjal) অর্থাৎ পাশ্চাত্য যান্ত্রিক সভ্যতার তৈরী এরোপ্লেন যখন আকাশ দিয়ে উড়ে যায় তখন যে সেটাকে বায়ুতাড়িত অর্থাৎ জোর বাতাসে চালিত মেঘের টুকরোর মত দেখায় তা কেউ অস্বীকার কোরতে পারবেন কি?
পাঁচ ॥
আল্লাহর রসুল বোলেছেন- দাজ্জালের আদেশে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হবে। [নাওয়াস বিন সা’মান (রাঃ) থেকে মোসলেম, তিরমিযি]
বর্ত্তমান ইহুদী খৃষ্টান সভ্যতার বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি (Scientific Technology) আকাশে হালকা মেঘের ওপর রোপ্লেন দিয়ে রাসায়নিক পদার্থ (Chemicals) ছিটিয়ে বৃষ্টি নামাতে পারে এ কথা তথ্যাভিজ্ঞ প্রত্যেক লোকই জানেন। পৃথিবীর বিভিন স্থানে ঐ প্রক্রিয়ায় কৃষি কাজের জন্য বৃষ্টি নামানো হোচ্ছে। সন্দেহ হোলে যে কোন আবহাওয়া বিজ্ঞানীর (Meterologist) বা কৃষিবিদের (Agriculturist) কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।
ছয় ॥
আল্লাহর রসুল বোলেছেন- দাজ্জালের গরু-গাভী, মহিষ, বকরি, ভেড়া, মেষ, ইত্যাদি বড় বড় আকারের হবে এবং সেগুলোর স্তনের বোটা বড় বড় হবে (যা থেকে প্রচুর পরিমাণে দুধ হবে)। [নাওয়াস বিন সা’মান (রাঃ) থেকে মোসলেম, তিরমিযি]।
তথ্যাভিজ্ঞ প্রতিটি লোকই জানেন যে ইউরোপ, আমেরিকার অর্থাৎ পাশ্চাত জগতের Cattle অর্থাৎ গরু মহিষ, বকরী ভেড়া ইত্যাদি প্রাণীর আকার বাকি দুনিয়ার ঐসব গৃহপালিত পশুর চেয়ে অনেক বড়, কোন কোনটা একেবারে দ্বিগুণ এবং ওগুলো প্রাচ্যের পশুগুলির চেয়ে চারপাঁচ গুণ বেশী দুধ দেয়। ও দু’টোই ওরা সম্ভব কোরেছে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে।
সাত ॥
আল্লাহর রসুল বোলেছেন- দাজ্জাল (Dajjal) মাটির নিচের সম্পদকে আদেশ কোরবে ওপরে উঠে আসার জন্য এবং সম্পদগুলি ওপরে উঠে আসবে এবং দাজ্জালের অনুসরণ কোরবে। [নাওয়াস বিন সা’মান (রাঃ) থেকে মোসলেম, তিরমিযি]
দাজ্জালের অর্থাৎ ইহুদী-খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতার জন্মের আগে ভূগর্ভস্থ অর্থাৎ মাটির গভীর নীচের খনিজ সম্পদ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান খুবই সীমিত ছিলো। মাটির সামান্য নিচের কিছু কিছু সম্পদ মানুষ কখনো কখনো আহরণ কোরতে পারতো। এই সভ্যতার সৃষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির উন্নতির ফলে দাজ্জাল (Dajjal) মাটির গভীর নীচ থেকে, এমনকি সমুদ্রের তলদেশ থেকে তেল, গ্যাস ইত্যাদি নানা রকমের খনিজ সম্পদ ওপরে উঠিয়ে আনতে সক্ষম হোয়েছে ও পৃথিবীময় তা ওঠাচ্ছে। এটাকেই মহানবী বোলেছেন যে, দাজ্জালের আদেশে মাটির নিচের সম্পদ ওপরে উঠে আসবে। তারপর ঐ সম্পদ দাজ্জাল (Dajjal)কে অনুসরণ কোরবে তার অর্থ হোল এই যে, মাটির নিচ থেকে ওপরে উঠে আসার পর দাজ্জাল (Dajjal) তা পৃথিবীর যেখানে ইচ্ছা নিয়ে যাবে, যেখানে ইচ্ছা পাঠাবে, ঐ সম্পদ দাজ্জালের যন্ত্রপাতি, কল-কারখানা, জাহাজ, গাড়ী, যুদ্ধের যানবাহন ইত্যাদি সমস্ত কিছুতে ব্যবহার কোরবে। আজ বিশ্বনবীর ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্যায়িত হোয়েছে।
আট ॥
আল্লাহর রসুল বোলেছেন- দাজ্জালের কাছে রেযেকের বিশাল ভাণ্ডার থাকবে। সেখান থেকে সে যাকে ইচ্ছা তাকে দেবে। যারা তার বিরোধিতা কোরবে তাদের সে ঐ ভাণ্ডার থেকে রেযেক দেবে না। এইভাবে সে মোসলেমদের অত্যন্ত কষ্ট দেবে। যারা দাজ্জাল (Dajjal)কে অনুসরণ কোরবে তারা আরামে থাকবে আর যারা তা করবে না তারা কষ্টে থাকবে। [বোখারী ও মোসলেম]
এখানে প্রথমেই পরিষ্কার করে নেয়া দরকার যে রেযেক শব্দের অর্থ শুধু খাদ্যদ্রব্য নয়। রেযেক বোলতে খাদ্যদ্রব্য, বাড়ী-ঘর, গাড়ি-ঘোড়া, টাকা-পয়সা সবই বোঝায়। এক কথায় পার্থিব সম্পদ বোলতে যা বোঝায় তা সবই রেযেক। দাজ্জালের কাছে অর্থাৎ পাশ্চাত্যের ইহুদী-খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতার কাছে যে রেযেকের বিপুল ভাণ্ডার আছে এ কথা ব্যাখ্যা করার কোন প্রয়োজন নেই। পৃথিবীর সম্পদের সিংহভাগই তাদের দখলে। এই সম্পদ থেকে দাজ্জাল (Dajjal) কাদের দেয়? শুধু তাদের দেয় যারা তাকে মেনে নিয়েছে, তাকে স্বীকার কোরেছে, স্রষ্টার দেয়া জীবন-বিধান ত্যাগ কোরে দাজ্জালের সৃষ্ট তন্ত্রমন্ত্র, বাদ, নীতি গ্রহণ কোরেছে। যারা দাজ্জাল (Dajjal)কে প্রত্যাখ্যান করে দাজ্জাল (Dajjal) তাদের দেয় না, যদিও আজ দাজ্জাল (Dajjal)কে প্রত্যাখ্যান করার প্রায় কেউ নেই। সমস্ত পৃথিবীতে তার একক আধিপত্য ও প্রভুত্ব বিরাজ কোরছে।
আজ যদি কোন দেশ, জাতি বা জনগোষ্ঠী দাজ্জাল (Dajjal)কে অস্বীকার কোরে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে ও কোরান হাদীসের ব্যবস্থায় সমষ্টিগত জীবন যাপন কোরতে চেষ্টা করে তবে কি হবে? নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, দাজ্জালের অর্থাৎ ইহুদী-খৃষ্টান সভ্যতার কাছ থেকে শুধু সর্বপ্রকার সাহায্যই বন্ধ হোয়ে যাবে না, সমস্ত পাশ্চাত্য জগতের বিরোধিতা আরম্ভ হোয়ে যাবে। এ বিরোধিতা শুধু দাজ্জাল (Dajjal) নয়, দাজ্জালের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার কোরে নিয়ে দাজ্জালের পায়ে সাজদায় অবনত অন্যান্য জাতিগুলির মানুষও, যার মধ্যে ‘মোসলেম’ নামধারীরাও আছেন, তাদের কাছ থেকেও আসবে। পাশ্চাত্য যান্ত্রিক সভ্যতার উদ্ভাবক ইহুদী খৃষ্টান জগতের বাইরে পৃথিবীর প্রত্যেকটি জাতি ও দেশ দাজ্জালের মুখাপেক্ষী, তার কাছে ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে যারা দাজ্জালের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি সমষ্টিগত ব্যবস্থা স্বীকার কোরে নিয়েছে তাদের সে ভিক্ষা ও ঋণ দিয়ে কৃতার্থ কোরছে, বাঁচিয়ে রাখছে। দাজ্জাল (Dajjal) ভিক্ষা না দিলে তারা না খেয়ে থাকে, দাজ্জাল (Dajjal) ঋণ না দিলে তাদের সরকার অচল হোয়ে যায়, সমস্ত উন্নয়নমূলক (দাজ্জালের দৃষ্টিতে উন্নয়নমূলক) কর্মকাণ্ড বন্ধ হোয়ে যায়। পৃথিবীর যে কোন দেশ বা জাতি দাজ্জালের একটু অবাধ্যতা কোরলেই তাকে সব রকম সাহায্য দেয়া বন্ধ (Economic Sanction) কোরে দেয়, তার ওপর অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক অবরোধ (Embargo) স্থাপন করে। জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক সাহায্য তহবিল (Consortium) ইত্যাদি, এক কথায় দাজ্জালের অধীনে যত কিছু আছে তার কোন কিছু থেকেই কোন সাহায্য পাওয়া যায় না। ভাবতে আশ্চর্য্য লাগে যে বর্ত্তমানে দাজ্জাল (Dajjal) যে Sanction ও Embargo আরোপ কোরে তার অবাধ্য জাতিগুলিকে শাস্তি দিয়ে বশে আনতে চেষ্টা করে ১৪০০ বছর আগে আল্লাহর রসুল ঠিক সেটাই ভবিষ্যদ্বাণী কোরে গেছেন- শুধু আক্ষরিকভাবে ঐ Sanction ও Embargo শব্দ দু’টি ব্যবহার না কোরে।
নয় ॥
আল্লাহর রসুল বোলেছেন- দাজ্জালের ডান চোখ অন্ধ হবে। [আব্দুলাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে বোখারী ও মোসলেম]
দাজ্জালের ডান চক্ষু অন্ধ হবে অর্থ সে ডান চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পাবে না, যা দেখবে সবই বাঁ চোখ দিয়ে। আল্লাহ যা কিছু তৈরী কোরেছেন সব কিছুরই দু’টো বিপরীত দিক আছে। এই মহাসৃষ্টিও দৃশ্য ও অদৃশ্য, কঠিন ও বায়বীয়, আলো ও অন্ধকার, আগুন ও পানি, দিন ও রাত্রি ইত্যাদি বিপরীত জিনিসের ভারসাম্যযুক্ত মিশ্রণ। এই পৃথিবীতে আল্লাহ তাঁর যে খলীফা পাঠালেন সেই মানুষের জন্যও তিনি নির্দ্ধারিত কোরলেন বিপরীতমুখী বিষয়। তার জন্যও তিনি নির্দিষ্ট কোরলেন দেহ ও আত্মা, জড় ও আধ্যাত্মিক, সত্য ও মিথ্যা, সওয়াব ও গোনাহ, ভালো ও মন্দ, ইহকাল ও পরকালের ভারসাম্যযুক্ত সমন্বয়। এই দুইয়ের ভারসাম্যই হোচ্ছে স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক। তাঁর এই খলীফার জন্য যে দীন, জীবন-বিধান তিনি তাঁর নবী রসুলের মাধ্যমে প্রেরণ কোরলেন সেটার এক নাম দীনুল ফিতরাহ, প্রাকৃতিক, স্বাভাবিক জীবন-ব্যবস্থা এবং সেই দীন যারা মেনে চোলবে আল্লাহ তাদের নাম দিলেন মিল্লাতান ওয়াসাতা, ভারসাম্যযুক্ত জাতি (কোরান- সুরা বাকারা, আয়াত ১৪৩)। এই ভারসাম্যের দু’দিকের যে কোন দিককে বাদ দিলেই ভারসাম্য নষ্ট হোয়ে যাবে ও অস্বাভাবিক অপ্রাকৃতিক অবস্থার সৃষ্টি হবে এবং আল্লাহ তাঁর খলীফা, মানুষ সৃষ্টি কোরে যে পরীক্ষা কোরতে চান তা ব্যর্থ হোয়ে যাবে।
পথভ্রষ্ট বনি-এসরাঈল জাতিকে হেদায়াত করার জন্য প্রেরিত আল্লাহর নবী ঈসার (আঃ) প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর তাঁর শিক্ষাকে ইউরোপের সমষ্টিগত জীবনে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা একটা অচল অবস্থার সৃষ্টি কোরলো। রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাবিহীন একটা ভারসাম্যহীন ব্যবস্থা, যেটার উদ্দেশ্যই ছিলো শুধু আত্মশুদ্ধির পরিত্যক্ত প্রক্রিয়াকে (তরিকা) পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সেটা মানুষের সার্বিক জীবনে অচল এটা সাধারণ জ্ঞানেই (Common sense) বোঝা যায়। এই অচল ব্যবস্থাকে চালু করার চেষ্টা ব্যর্থ হোলে ইউরোপ যখন মানুষের সমষ্টিগত জীবনের সার্বভৌমত্ব আল্লাহর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে সংবিধান, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি তৈরী কোরে নিলো তখন তারা জীবনের ভারসাম্য সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস কোরে ফেললো। দু’চোখ দিয়ে না দেখে এক চোখ অন্ধ কোরে শুধু এক চোখ দিয়ে দেখতে শুরু কোরলো। অন্ধ কোরলো ডান অর্থাৎ দক্ষিণ চোখটাকে।
ডান এবং বামের মধ্যে ডানকে নেয়া হয় উত্তম ও বামকে নেয় হয় অধম হিসাবে। কেয়ামতের দিন জান্নাতিদের আমলনামা, তাদের কাজের রেকর্ড বই দেয়া হবে ডান হাতে, জাহান্নামীদের দেয়া হবে বাম হাতে (কোরান- সুরা হাক্কাহ্, আয়াত ১৯, ২৫ ও সুরা ইনশিকাক, আয়াত ৭)। দেহ ও আত্মার মধ্যে আত্মা ডান দেহ বাম, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সত্য ডান মিথ্যা বাম, ইহকাল ও পরকালের মধ্যে পরকাল ডান, ইহকাল বাম, জড় ও আধ্যাত্মের মধ্যে আধ্যাত্ম ডান, জড় বাম ইত্যাদি। ইহুদী-খৃষ্টান বস্তুতান্ত্রিক সভ্যতার (Judeo-Christian Materialistic Civilization) ডান চোখ অন্ধ অর্থাৎ জীবনের ভারসাম্যের একটা দিক, আত্মার দিক, পরকালের দিক, অদৃশ্যের (গায়েব) দিক, সত্যের দিক সে দেখতে পায় না, তার সমস্ত কর্মকাণ্ড জীবনের শুধু একটা দিক নিয়ে, দেহের দিক, জড় ও বস্তুর দিক, যন্ত্র ও যন্ত্রের প্রযুক্তির দিক, ইহকালের দিক, কারণ শুধু বাম চোখ দিয়ে সে জীবনের ঐ একটা দিকই দেখতে পায়। তাই বিশ্বনবী বোলেছেন, দাজ্জালের ডান চোখ অন্ধ হবে। এই ইহুদী-খৃষ্টান বস্তুবাদী ‘সভ্যতা’ শক্তিশালী দূরবীন দিয়ে তার বাঁ চোখ দিয়ে এই মহাবিশ্ব, এই বিশাল সৃষ্টিকে দেখতে পায়। কিন্তু তার ডান চোখ অন্ধ বোলে এই সৃষ্টির স্রষ্টাকে দেখতে পায় না; অণু-পরমাণু থেকে শুরু কোরে বিশাল মহাকাশ পর্যন্ত প্রত্যেকটি বস্তু যে এক অলংঘনীয় বিধানে বাঁধা আছে তা দাজ্জাল (Dajjal) তার বাঁ চোখ দিয়ে দেখতে পায়, কিন্তু ডান চোখ নেই বোলে এই মহাবিধানের বিধাতাকে দেখতে পায় না। শিশুর জন্মের আগেই মায়ের বুকে তার খাবারের ব্যবস্থা করা আছে তা দাজ্জালের চিকিৎসা বিজ্ঞান তার বাঁ চোখ দিয়ে দেখতে পায়, কিন্তু যিনি এ ব্যবস্থা কোরে রেখেছেন সেই মহাব্যবস্থাপককে সে দেখতে পায় না, কারণ তার ডান চোখ অন্ধ।
দশ ॥
আল্লাহর রসুল বোলেছেন- দাজ্জালের সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নামের মত দুইটি জিনিস থাকবে। সে যেটাকে জান্নাত বোলবে সেটা আসলে হবে জাহান্নাম, আর সে যেটাকে জাহান্নাম বোলবে সেটা আসলে হবে জান্নাত। তোমরা যদি তার (দাজ্জালের) সময় পাও তবে দাজ্জাল (Dajjal) যেটাকে জাহান্নাম বোলবে তাতে পতিত হয়ো, সেটা তোমাদের জন্য জান্নাত হবে। [আবু হোরায়রা (রাঃ) এবং আবু হোযায়ফা (রাঃ) থেকে বোখারী ও মোসলেম]
খৃষ্টধর্ম মোতাবেক সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা ব্যর্থ হওয়ার পর সার্বভৌমত্ব আল্লাহর হাত থেকে মানুষের হাতে তুলে নেবার পর সংবিধান, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি তৈরী কোরে মানব জীবন পরিচালনা আরম্ভ হোল, যার নাম দেয়া হোল ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র (Secular Democracy)। এই গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব রোইলো মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠের হাতে। অর্থাৎ মানুষ তার সমষ্টিগত, জাতীয় জীবন পরিচালনার জন্য সংবিধান ও সেই সংবিধান নিঃসৃত আইন-কানুন প্রণয়ন কোরবে শতকরা ৫১ জন বা তার বেশী। যেহেতু মানুষকে আল্লাহ সামান্য জ্ঞানই দিয়েছেন সেহেতু সে এমন সংবিধান, আইন-কানুন দণ্ডবিধি, অর্থনীতি তৈরী কোরতে পারে না যা নিখুঁত, নির্ভুল ও ত্রুটিহীন, যা মানুষের মধ্যকার সমস্ত অন্যায়, অবিচার দূর কোরে মানুষকে প্রকৃত শান্তি (এসলাম) দিতে পারে। কাজেই ইউরোপের মানুষের তৈরী ত্রুটিপূর্ণ ও ভুল আইন-কানুনের ফলে জীবনের প্রতিক্ষেত্রে অন্যায় ও অবিচার প্রকট হোয়ে উঠলো। বিশেষ কোরে অর্থনৈতিক জীবনে সুদভিত্তিক ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করায় সেখানে চরম অবিচার ও অন্যায় আরম্ভ হোয়ে গেলো। মুষ্টিমেয় মানুষ ধনকুবের হোয়ে সীমাহীন প্রাচুর্য্য ও ভোগবিলাসের মধ্যে ডুবে গেলো আর অধিকাংশ মানুষ শোষিত হোয়ে দারিদ্র্যের চরম সীমায় নেমে গেলো। স্বাভাবিক নিয়মেই ঐ অর্থনৈতিক অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে ইউরোপের মানুষের এক অংশ বিদ্রোহ কোরলো ও গণতান্ত্রিক ধনতন্ত্রকে বাদ দিয়ে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা কোরলো। ইউরোপের মানুষের অন্য একটা অংশ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অন্যান্য দিকের ব্যর্থতা দেখে সেটা বাদ দিয়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কোরলো। অর্থাৎ গণতন্ত্র থেকে একনায়কতন্ত্র, ধনতন্ত্র থেকে সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ এগুলো সবই অন্ধকারে হাতড়ানো, এক ব্যবস্থার ব্যর্থতায় অন্য নতুন আরেকটি ব্যবস্থা তৈরী করা। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রকৃতপক্ষে সমষ্টিগত জীবনের ধর্মহীনতা অবলম্বন করার পর থেকে যত তন্ত্র (-cracy), যত বাদই (-ism) চালু করার চেষ্টা ইউরোপের মানুষ কোরেছে সবগুলির সার্বভৌমত্ব মানুষের হাতে রোয়েছে। অর্থাৎ রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, একনায়কতন্ত্র, এসবগুলিই মানুষের সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন ধাপ, বিভিন্ন পর্যায় (Phase, step) মাত্র। এই সবগুলি তন্ত্র বা বাদের সমষ্টিই হোচ্ছে এই ইহুদী-খৃষ্টান সভ্যতা, দাজ্জাল (Dajjal)।
এই দাজ্জাল (Dajjal) অর্থাৎ ইহুদী-খৃষ্টান সভ্যতা পৃথিবীর মানবজাতিকে বোলছে মানুষের সমষ্টিগত জীবন যাপনের জন্য আমাদের এই ধর্মনিরপেক্ষ প্রণালীই হোচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। মানুষের তৈরী করা সংবিধান, সেই সংবিধানের ওপর ভিত্তি করা মানুষের তৈরী করা আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা-ব্যাবস্থা ইত্যাদিই সর্বশ্রেষ্ঠ, আধুনিক। তোমরা এই ব্যবস্থা মেনে নাও, গ্রহণ করো তাহোলে তোমরা স্বর্গসুখে বাস কোরবে, তোমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষা-দীক্ষা, চিকিৎসা, জীবনযাত্রার মান এমন উন্নীত হবে, এমন ভোগবিলাসে বাস কোরতে পারবে যে তা জান্নাতের সুখের সমান। আর যদি আমাদের এই নীতি তোমরা গ্রহণ না করো, তবে তোমরা দারিদ্র্য, ক্ষুধা অশিক্ষার মধ্যে জাহান্নামের কষ্ট ভোগ কোরতে থাকবে। যারা দাজ্জালের কথায় বিশ্বাস কোরে ইহুদী-খৃষ্টান সভ্যতার ধর্মনিরপেক্ষ অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বহীন জীবন-ব্যবস্থা মেনে নেবে তাদের সে গ্রহণ কোরে তার জান্নাতে স্থান দেবে, তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ইত্যাদি সর্বতোভাবে সাহায্য কোরবে। আর যারা দাজ্জালের জীবন-ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান কোরবে তাদের সে তার বিরাট ধন ভাণ্ডার থেকে কোন অর্থনৈতিক সাহায্য দেবে না, তাদের সে রাজনৈতিক, সামরিকভাবে বিরোধিতা কোরবে অর্থাৎ সে তাদের তার জাহান্নামে নিক্ষেপ কোরবে।
দাজ্জাল (Dajjal) যে মানবজাতিকে উপরোক্ত কথা বোলছে তা নির্দিষ্ট ঘটনাবলী দিয়ে প্রমাণ করার দরকার করে না। পাশ্চাত্যের সমস্ত প্রচার যন্ত্রগুলি এই কথা প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে, স্থুল ও সুক্ষ্মভাবে বোলে যাচ্ছে যে তাদের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক ব্যবস্থা (যার মধ্যে গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ও সাম্যবাদ অন্তর্ভুক্ত), তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (যার মধ্যে ধনতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত), তাদের শিক্ষা-ব্যবস্থা (যেটা সম্পূর্ণভাবে জড়বাদী, বস্তুবাদী, যেখানে আত্মার শিক্ষার কোন স্থান নেই), তাদের সামাজিক ব্যবস্থা (যেখানে অবৈধ যৌন কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বোলে গৃহীত, যেখানে সমকামিতা আইনসঙ্গত), তাদের তৈরী করা দণ্ডবিধি সবই সর্বোত্তম, প্রগতিশীল, আধুনিক। ওর চেয়ে উৎকৃষ্ট আর কিছু হোতে পারে না। ওর বাইরে যত রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাব্যবস্থা আছে সব গোঁড়া, পশ্চাৎমুখী, প্রতিক্রিয়াশীল, সেকেলে ও হাস্যকর ব্যবস্থা। আল্লাহর রসুল বোলেছেন- যারা দাজ্জালের জীবন-ব্যবস্থা স্বীকার কোরে নেবার ফলে দাজ্জালের জান্নাতে স্থান পাবে তারা দেখবে প্রকৃতপক্ষে তা জাহান্নাম। আর যারা দাজ্জাল (Dajjal)কে অস্বীকার করার দরুন তার জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে দেখবে তারা জান্নাতে আছে। আল্লাহর রসুলের কথা সত্য কিনা যাচাই কোরে দেখা যাক। এই যাচাইয়ের সময় এ কথা মনে রাখতে হবে যে গণতন্ত্র থেকে ধাপে ধাপে ও পর্যায়ক্রমে সাম্যবাদ (Communism) পর্যন্ত পৌঁছলেও প্রকৃতপক্ষে সমগ্রটা মিলিয়ে একটাই বিষয় ইহুদী-খৃষ্টান সভ্যতা, দাজ্জাল (Dajjal) এবং দাজ্জালের মৃদু থেকে উগ্রতম রূপ। অন্যভাবে বলা যায় জন্ম থেকে দাজ্জালের ক্রমে ক্রমে বড় হওয়া।
দাজ্জালের অর্থাৎ ইহুদী-খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই মানুষের একমাত্র গ্রহণযোগ্য সভ্যতা, জীবন-ব্যবস্থা এই প্রচারণায় বিশ্বাস কোরে যে জনসমষ্টি, জাতি বা দেশ তা গ্রহণ কোরেছে অর্থাৎ দাজ্জালের জান্নাতে, স্বর্গে প্রবেশ কোরেছে তাদের অবস্থা পর্যালোচনা কোরলে দেখা যায় প্রতারিত হোয়ে প্রবেশ করার পর অতি শীঘ্রই তারা বুঝতে পেরেছে যে তারা আসলে জাহান্নামে, নরকে প্রবেশ কোরেছে। কথাটা ভালো কোরে বোঝার জন্য দাজ্জালের উগ্রতম রূপ সাম্যবাদ (কমিউনিজমকে) বিবেচনায় নেয়া যাক।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে অর্থাৎ রেডিও, টেলিভিশনে-এ কথা লক্ষ কোটি বার বলা হোয়েছে যে সাম্যবাদী সমাজে, দেশে থাকা স্বর্গের সুখে থাকার সমান। যারা ঐ দেশগুলোর রেডিও মোটামুটি নিয়মিতভাবে শুনে এসেছেন তাদের এ কথা বোলে দেবার দরকার নেই। এখানে লক্ষণীয় যে, তারা তাদের সমাজটাকে সর্বদাই স্বর্গ (Paradise) বোলে বাকি পৃথিবীকে সাম্যবাদ গ্রহণ কোরে স্বর্গে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং বিশ্বনবী ঠিক ঐ জান্নাত অর্থাৎ Paradise শব্দটাই ব্যবহার কোরেছেন। দাজ্জালের স্বর্গ Paradise যদি সত্যই স্বর্গ হোয়ে থাকে তবে যারা সেখানে প্রবেশ কোরবে তারা নিশ্চয়ই আর কখনই সেখান থেকে বের হোয়ে আসার চিন্তাও কোরবে না, এ কথা তো আর মিথ্যা হোতে পারে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কি হোয়েছে? কমিউনিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ ও কার্য্যকরী করার কিছু পরই সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজেকে বাকি পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন কোরে ফেললো।
সমগ্র সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরে কি হোচ্ছে না হোচ্ছে সে সম্বন্ধে শাসকরা যেটুকু খবর বাইরে যেতে দিতো তার বেশী আর কোন খবর বাকি পৃথিবীর কেউ পেতো না। এই বিচ্ছিন্নতা অতি শিগ্গিরই এমন পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছলো যে বাকি দুনিয়ায় এর নাম হোয়ে গেলো Iron Curtain, লোহার পর্দা। এ পর্দা এমন দুর্ভেদ্য হোয়ে দাঁড়ালো যে, বিরাট দেশটার সাধারণ সড়ক বা বিমান দুর্ঘটনার খবর পর্যন্ত বাকি দুনিয়ার মানুষ জানতে পারতো না। পরবর্ত্তীতে যখন চীন ঐ জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ কোরলো, দাজ্জাল (Dajjal)কে রব স্বীকার কোরে দাজ্জালের উগ্রতম পর্যায় সাম্যবাদী জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ কোরলো তখন সেখানেও সেই একই ব্যাপার দাঁড়ালো, চীন বাকি দুনিয়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন কোরে ফেললো এবং এর নাম হোয়ে গেলো Bamboo Curtain, বাঁশের পর্দা।
এই দুই বিরাট দেশের শাসকরা এই বিচ্ছিন্নতার নীতি কেন গ্রহণ কোরলেন? একটা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োগের ফলে কোন দেশ জাতি বা সমাজ যদি স্বর্গে পরিণত হয় তবে তো সেই জাতির শাসকদের ঠিক উলটো করা উচিত। পর্দা দেবার বদলে তাদের জন্য অবশ্য কর্ত্তব্য ছিলো সমস্ত দ্বার খুলে দেয়া; বাকি পৃথিবীকে বলা যে- দ্যাখো! আমরা বোলছি আমরা স্বর্গসুখে আছি এ কথা সত্য কিনা। তাদের কর্ত্তব্য ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণকে বলা যে, আমরা পাসপোর্ট প্রথা উঠিয়ে দিচ্ছি, তোমরা এ স্বর্গ ছেড়ে যদি কোথাও যেতে চাও যাও, কোন বাধা দেবো না। তাদের কর্ত্তব্য ছিলো বাকি পৃথিবীর মানুষকে ডেকে বলা- আমরা ভিসা প্রথা উঠিয়ে দিচ্ছি, তোমরা এসে দেখে যাও আমরা জান্নাতে (Paradise) আছি কিনা। পরবর্ত্তীতে ঠিক ঐ ব্যাপার চীনেও হোল। সাম্যবাদ, কমিউনিজমের জন্মের পর থেকে এই সেদিন পর্যন্ত অর্থাৎ স্নায়ুযুদ্ধের অবসান পর্যন্ত কমিউনিষ্ট দেশগুলি যে নিজেদের বাকি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন কোরে রেখেছিলো, তাদের জনগণের সাথে বাইরের পৃথিবীর জনগণের সামান্যতম সংযোগ ছিলো না এ কথা কোন তথ্যাভিজ্ঞ (Informed) মানুষই অস্বীকার কোরতে পারবেন না, এটা ঐতিহাসিক সত্য। ঐ দেশগুলির বাইরের দুনিয়ার সাথে সংযোগ ছিলো শুধুমাত্র ওপরের তলার শাসকদের সঙ্গে, আর কারো সঙ্গে নয়।
শুধু সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের ব্যাপারেই নয়, যখনই যে দেশ দাজ্জালের উগ্রতম রূপ কমিউনিজমের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার স্বর্গে প্রবেশ কোরেছে, তখনই সে দেশকে সোভিয়েত ও চীনের মত বাকি পৃথিবী থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন কোরে ফেলতে হোয়েছে।
‘স্বর্গে’ প্রবেশ কোরেও ঐ উল্টো নীতি গ্রহণ করা ছাড়া ঐ সব দেশের শাসকদের আর কোন নীতি গ্রহণ করা সম্ভব ছিলো না। তার কারণ হোল এই যে, স্বর্গের প্রতিশ্রুতি পেয়ে সেই স্বর্গে প্রবেশ করার পর সেসব দেশের জনসাধারণ অতি শীঘ্রই বুঝতে পারলো যে এ তো স্বর্গ নয়, এ তো নরক। কিন্তু তখন বেশী দেরী হোয়ে গেছে। তবুও তারা প্রাণপণ চেষ্টা চালাতে লাগলো ঐ স্বর্গ থেকে বের হোয়ে আসার জন্য। সহজ কথা নয়, কারণ ও স্বর্গ থেকে বের হবার অর্থ নিজেদের দেশ, লক্ষ স্মৃতি জড়ানো প্রিয় জন্মভূমি চিরদিনের জন্য ত্যাগ কোরে সম্পূর্ণ অপরিচিত দেশে, অচেনা সমাজে বাস করা, যাদের ভাষা পর্যন্ত তাদের অজানা। কিন্তু অনস্বীকার্য্য ইতিহাস এই যে ঐসব দেশের জনসাধারণ তাদের জন্মভূমি থেকে পালিয়ে অজানা দেশে চোলে যাবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়ে গেছে। এই চেষ্টায় তারা পরিবারের অন্যদের প্রাণও বিপন্ন কোরেছে, সহায়-সম্পদ বিসর্জন তো ছোট কথা।
ক
©somewhere in net ltd.