নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেসব কথা এই সামু ব্লগে লিখতে পারি না নানা কারনে- সেসব কথা আমার পার্সোনাল জার্নাল ব্লগে লিখি -- https://journalofjahid.com/

জাহিদ অনিক

ভালোবাসি কবি ও কবিতাকে

জাহিদ অনিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিন দু\'য়েক !

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:০২



অন্যান্য সন্ধ্যার মত আজকেও বাসায় ফিরে ভালো করে স্নান শেষে বেলকনিতে দু'টো চেয়ার টেনে একটাতে বসে আরেকটার উপর পা’দুটো রেখে একটু আরাম করে বসলো শ্রেয়া।
এতক্ষণে আদি’র অন্তহীন ম্যাসেজ এসে নিশ্চয়ই ফোনের ম্যাসেজ জ্যাম হয়ে গেছে। বেলকনির ধারে গ্রিল ঘেঁসে পাওয়া বাড়তি জায়গাটুকুতে চায়ের মগটা অর্ধেকটা কায়দা করে রাখলো শ্রেয়া। এবার এক এক করে আদির ম্যাসেজ পড়বার পালা!
- বের হয়েছো অফিস থেকে?
- শোনো, অটো নিয়ো না। রিক্সা নিয়ে যাও। আর অবশ্যই দেখে নিও রিক্সা মটরের কিনা!
- বাসায় গিয়ে রিপ্লাই দিবে। এখন ফোন একদম ব্যাগের থেকে বের করবে না।
- শুভ হোক সন্ধ্যা।
মাত্র ৪ টা ম্যাসেজ! আর কিছু না! আর কিচ্ছু লিখেনি আদি?

মন একটু কেমন কেমন করতে থাকে শ্রেয়ার। মাত্র ৪ টা ম্যাসেজ! অথচ আগে অফিস থেকে বাসায় ফেরা এবং চায়ের মগ নিয়ে বারান্দায় বসা পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫টা ম্যাসেজ এসে ভিড় করতো আদির।
চায়ের মগটা উঠিয়ে হাতে নিয়ে একই জায়গায় ফোনটা রেখে দেয় শ্রেয়া। হাতের বা আঙ্গুলের একটু টোকা পেলেই ফোনটা পরে যাবে সোজা পাঁচ তলা নিচে। যায় যাবে, এসব থাক। মগে চুমুক দিয়ে শ্রেয়া দেখছে দূরের বিল্ডিংগুলো। প্রত্যেকটা ফ্ল্যাটের মধ্যে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।

আদিকে ম্যাসেজের উত্তর দেয়া হয়নি। রিপ্লাই করতে ইচ্ছে করছে না। অথচ শ্রেয়া জানে যে, সে বাসায় এসেছে, সহীহ সালামতে আছে। ফ্রেশ হয়েছে, লং শাওয়ার নিয়েছে; এসব না জানা পর্যন্ত আদিরও মন ছটফট করবে। কিন্তু ফোন হাতে নিয়ে টাইপ করতে ইচ্ছে করছে না। আদি ও’কে ভালোবাসে। ভালোই যদি বাসে তাহলে সে বুঝে নিতে পারবে না বাসায় পৌঁছেছে কি পৌঁছে নি!

শ্রেয়ার মনে আজ একটু মেঘালয়য়ের মেঘ এসে ভর করেছে। কেমন একটা মন খারাপ মন খারাপ ভাব। আদিকে কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না। কিছু জানাতেও ইচ্ছে করছে না। কিন্তু একটা কিছু লিখে দেয়া উচিত, না হলে টেনশানে থাকবে। অথচ আজ সত্যিই কাউকে কিছু না লিখে, কিচ্ছু না শুনে বুঝে একটু একা থাকতে চেয়েছিল শ্রেয়া।

ভালোবাসলে কি নিত্য রোজ, সব বেলার খবর জানাতে হয়? রাস্তার ট্রাফিক আপডেট, ইন্টারনেট স্পিড, বাতাসের গতিবেগ, রক্তচাপ সবকিছু মেপে মেপে পাঠাতে হয় প্রেমিকের কাছে?

আদির অফিস ছুটি হয় রাত ৮টায়। বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে ওর ১০টা বেজেই যাবে। দুই ঘণ্টা একা একা থাকা যাবে। খাবার ফ্রিজে রাখা আছে, গরম করে নিয়ে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়বে নাকি আদির জন্য অপেক্ষা করবে বুঝতে পারছে না শ্রেয়া। খেতে বসলে অবশ্য কিছুটা খেয়ে প্লেট রেখে উঠে যেতে হবে, খাওয়ার মুড আজ নেই। ডিনার সেরে যদি শুয়ে পড়ে আদি এসেই জিজ্ঞেস করবে, ‘কিছু হয়েছে কিনা, শরীর খারাপ? মন খারাপ? কী হয়েছে বাবা বলো প্লিজ?’

আদির সাথে শ্রেয়ার পরিচয় দুই বছরের মত। অথচ দুজনের এমন মনে হয় যেন ওদের অনেক বছরের জানাশোনা। ওদের মধ্যকার রসায়ন ওরা বেশ ভালো বুঝতে পারে। একসঙ্গে সময় কাটাতে, ঘুরতে, বিশেষ করে আদির সঙ্গে খেতে দারুণ লাগে শ্রেয়ার। খাওয়ার টেবিলটা'কে আদি একদম গল্পের প্লট বানিয়ে ফেলে। প্রতি লোকমা মুখে দেয়ার মনে হয় যেন, খাবার না একটা একটা খণ্ড খণ্ড আখ্যান, প্লট মুখে দিচ্ছে। মাঝেমাঝে যখন আদি নিজে খাইয়ে দেয়, শ্রেয়ার খুব আদুরে লাগে। নিজেকে মনে হয় ছোট বাচ্চা।
আদি অবশ্য এখনো অতটা ভালো খাইয়ে দিতে পারে না। হয় মুখের মধ্যে খাবার তুলে দিয়ে আঙ্গুল বের করে নিতে দেরী করে, অথবা খাবার বেশ কিছু পড়ে যায়। কিন্তু আদির ভাষায়, ‘আই এম প্রগ্রেসিং ডে বাই ডে!’

বারান্দা থেকে উঠে বেড রুমের লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়তে যাচ্ছে শ্রেয়া। ফোনটা সেই বেলকনিতেই পড়ে আছে। আদিকে কোনো রিপ্লাই দেয়া হয়নি।
যদি আধ ঘণ্টার মধ্যে শ্রেয়ার কোনো ম্যাসেজ না পায়, তাহলে সে কল করবে। কল পিকড আপ না হলে হয়তবা আর্লি বাসায় চলে আসবে। এসে দেখতে পাবে শ্রেয়া ঘুমাচ্ছে। খাবার ফ্রিজেই পড়ে আছে।

নতুন রঙ করা দেয়ালের গন্ধটা এখনো নাকে এসে লাগছে, খারাপ লাগছে না। শীত চলে যাচ্ছে যাচ্ছে প্রায়। এই সময়টাতে বৃষ্টি হয়। আজ রাতে কি হবে সেই বৃষ্টি? বাতাস কী বেড়েছিল বাইরে?
দুই হাত বুকের মধ্যে গুঁজে দিতে দিতে ঘুমিয়ে যাচ্ছে শ্রেয়া। আদিকে আজ সে কিছু লিখবে না। সে চায় না বাসায় ফিরেই আজ আদি তার কপালে হাত রাখুক, জিজ্ঞেস না করুক কিছু হয়েছে কিনা! আজ কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে না কাউকে।

মনে মনে শ্রেয়া চাইছে, আদিকে একটা বৃহস্পতি গ্রহের টিকিট ধরিয়ে দিতে। আজ মঙ্গলবার, বুধবারটা সেখানে কাটিয়ে আদি ঠিক ফিরে আসুক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। এসে সামনাসামনি বলুক, ‘হ্যাপি জুপিটার ইভনিং!’ এই দুটো-দিন একটু একা থাকুক শ্রেয়া। প্লিজ! মাত্র দুটো দিন!


February 24, 2020

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১২

রাজীব নুর বলেছেন: কবি যখন গল্প লিখে তখন তা অন্য উচ্চতায় চলে যায়।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৪৩

জাহিদ অনিক বলেছেন: রাজীব নুর ভাই, আপনার এমন মহান এবং চমৎকার মন্তব্য পড়ে আমি সত্যিই আপ্লুত। ভালো থাকবেন সতত। শুভ সকাল

২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২৭

ইসিয়াক বলেছেন: এক কথায় অসাধারণ।
খুব ভালো লাগলো প্রিয় কবি।
শুভকামনা

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫১

জাহিদ অনিক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মিঃ ইসিয়াক। সকালের শুভেচ্ছা নিন।

৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার সৃষ্টি, মুগ্ধ।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫৪

জাহিদ অনিক বলেছেন: ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানবেন মিঃ নেওয়াজ আলি

৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১৭

সোহানী বলেছেন: রাজীব নুর বলেছেন: কবি যখন গল্প লিখে তখন তা অন্য উচ্চতায় চলে যায়।.......

সহমত

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫৪

জাহিদ অনিক বলেছেন: বাপ রে ! তাহলে তো আর কিছু সত্যিই বলার নাই সোহানী আপু। ভালো থেকো, সুস্থ থেকো। তুমি দেশে এসেছো এই খবর পেয়েছি।

৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:২৩

শের শায়রী বলেছেন: দারুন লিখছেন। ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫৫

জাহিদ অনিক বলেছেন: অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানেবন শের শায়রী। ভালো থাকবেন

৬| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৫০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:

অনন্যসাধারণ!!
কবির গদ্য ভিন্নমাত্রা এনে দেয়।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:০৮

জাহিদ অনিক বলেছেন: ধন্যবাদ কবি স্বপ্নবাজ সৌরভ
শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞাত জানবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.