![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সভ্যতা দিয়েছে বেগ নিয়েছে আবেগ।।
দুই সন্তানের জননী সাদিয়া। বয়স ৪০ ছুঁই ছুঁই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে
মাস্টার্স করেছেন। কাজ করছেন একটি
প্রাইভেট কোম্পানিতে। তার স্বামী
এনামুল হক এনামও মোটা বেতনে কাজ করেন
একটি প্রতিষ্ঠানে। এই দম্পতির তিন সন্তানই
পড়ে ইংরেজি মাধ্যমে। সবমিলিয়ে সুখের
সংসার। কিন্তু এই সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
শুরুটা ২০১১ সালে। ফেসবুকে। ত্রিশ বছরের
অবিবাহিত দেবাশীষকে ফ্রেন্ড
রিকোয়েস্ট পাঠান সাদিয়া। স্বাভাবিক
নিয়মেই হাই-হ্যালো হতো দু’জনের। আস্তে
আস্তে বাড়তে থাকা চ্যাট। অফিসের
কম্পিউটার থেকে মোবাইল ফোনে। দিন
নেই, রাত নেই চ্যাট চলতেই থাকে। এর
মধ্যেই সাদিয়া জানান, তার স্বামী বয়স্ক।
অর্থ-বিত্ত দেখেই তার সঙ্গে বিয়ে
দিয়েছেন মা-বাবা। তাকে পেয়ে তিনি
সুখী না। সুযোগটা নেন দেবাশীষ। নিজের
নিঃসঙ্গতার কথা জানান তিনি।
রাজধানীতে আছেন কয়েক বছর। ডিপ্লোমা
ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু
কোন বান্ধবী নেই তার। সাদিয়ার মতো
গার্লফ্রেন্ড পেলে নিজেকে সুখী মনে
করবেন। সেই শুরু। সাদিয়া আর দেবাশীষ
জড়িয়ে যান গন্তব্যহীন এক সম্পর্কে। প্রযুক্তির
কল্যাণে এমন সম্পর্কে আজকাল জড়িয়ে
পড়ছেন অনেকেই। বিশেষ করে ফেসবুক ও
মোবাইলফোনে নারী-পুুরুষের সম্পর্ক প্রথমে
বন্ধু হিসেবে গড়ে ওঠে। অধিকাংশ
ক্ষেত্রে বন্ধুতা থেকে তা প্রেমের
সম্পর্কে পরিণত হয়। অদেখা ব্যক্তির সঙ্গে
প্রেমে জড়াচ্ছেন বিবাহিতরা। এই
সম্পর্কের প্রভাব এতো বেশি যে, ধর্ম-বর্ণ,
বয়সের বাঁধ না মেনেই তা এগিয়ে যায়।
পরকীয়া এই প্রেমের ফলে অহরহ ভাঙছে
সংসার।
সাদিয়া-দেবাশীষের কাহিনী এখানেই
থেমে থাকে না। অতঃপর শুরু হলো
ফোনালাপ। কাছের এক বান্ধবীর নামে
ফোন নম্বরটি নিজের মোবাইল ফোনে সেভ
করেন সাদিয়া। কথা বলতে বলতে অনেকটা
বেপরোয়া। স্বামীর সামনে কথা বলতে না
পারলে দেবাশীষের কথা শুনতে মিস করেন
না তিনি। গান শুনার ভান করে কানে
ইয়ারফোনটা লাগিয়ে রাখেন। হুম-হ্যাঁ
জবাব দেন। যেন গানের সঙ্গে তাল
মিলাচ্ছেন তিনি। স্বামী বেচারা
পাশেই শুয়ে থাকে। কি ঘটছে তাতে
খেয়াল নেই তার। স্বামী অফিসে চলে
গেলে মাঝে-মধ্যে দেবাশীষ ও সাদিয়া
মিলিত হতেন বাসায়। এভাবে দীর্ঘদিন।
বিভিন্ন কফি শপ, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে
আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত
যাতায়াত তাদের। যে কারণে
পরিচিতদের চোখে প্রায়ই ধরা পড়ে এই দৃশ্য।
দেবাশীষের সঙ্গে প্রায়ই রিকশায় দেখা
যায় তাকে। সাদিয়াকে অফিসে পৌঁছে
দেয়া ও নিয়ে যাওয়ার কাজটিও মাঝে-
মধ্যে করেন দেবাশীষ। কাজের ফাঁকে কখনও
কখনও ধানমন্ডি লেকে বসে গল্প করেন দু’জন।
এরমধ্যেই সাদিয়া অফিস স্থানান্তরিত হয়
তেজগাঁও। তাতেও দেবাশীষের আসা-
যাওয়া ভাটা পড়েনি। কিন্তু সমস্যা প্রকট হয়
এক রাতে। সাদিয়া তখন বাসার ফ্রেশরুমে।
মোবাইলফোনে মেসেজ এলার্ট। এনাম
হাতে নিয়ে বাটন চাপতেই আঁতকে ওঠেন।
সে কী ক্ষুদেবার্তা! ডার্লিং সম্বোধন
করে লেখা। ‘সাদিয়া, খুব মনে পড়ছে
তোমাকে। আজ খুব হ্যাপি আমি। আমাকে
ধন্য করেছো। রোজ এভাবে চাই তোমাকে।
অনেক...।’ বার্তাটি পড়ে অন্ধকার হয়ে আসে
এনামের পৃথিবী। শুরু হয় প্রচণ্ড ঝগড়া। কোন
সদুত্তর দিতে পারেন না সাদিয়া। কথা বন্ধ
স্বামী-স্ত্রীর। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের
আগে তিন সন্তানের দিকে চেয়ে আরও
পর্যবেক্ষণ করতে চান এনাম। ফোনে কার
সঙ্গে কথা বললেন, অফিসে কখন গেল, কখন
ফিরলো এইসব বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে
লাগলেন। কিন্তু তাতেও থেমে যায়নি
সাদিয়া-দেবাশীষের প্রেম। স্বাভাবিক
জামা পরে অফিসে যেতেন তিনি যাতে
এনাম সন্দেহ না করেন। কিন্তু ভ্যানিটি
ব্যাগে নিয়ে যেতেন গর্জিয়াস জামা।
অফিসের ফ্রেশরুমে তা পরিবর্তন করে
প্রতিদিনই দেখা হতো তাদের। কোন
কোনদিন অন্তত এক ঘণ্টা সময় নিয়ে মিলিত
হতেন তারা। যানজটের শহরে এই সময়ের
ব্যাখা দেয়া কঠিন কিছু না। এর মধ্যেই এক
বন্ধুর মাধ্যমে এনাম জানতে পারেন
সাদিয়া ও এক যুবক রিকশায় যাচ্ছিলেন।
যুবকটি তাকে জড়িয়ে ধরেছিল। কথা শুনে
ক্ষুব্ধ হয়ে বাগ্বিতণ্ডার পরে সাদিয়াকে
মারধর করেন এনাম। এখন এনাম-সাদিয়ার
সংসারে ভাঙনের শব্দ প্রবল।
শুধু সাদিয়া নয়, সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে এভাবে অনেকেই প্রেমের সম্পর্কে
জড়াচ্ছেন। ভাঙছে সংসার। তাদের মধ্যে
এক দম্পতি আনোয়ার হোসেন ও ফারহানা
নিশাত। একটি প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মরত
নিশাত। অন্যদিকে নিজেদের ব্যবসা
পরিচালনা করেন আনোয়ার। দুজনেই ব্যস্ত।
দু’জনেরই ফেসবুকে আইডি রয়েছে। কিন্তু ঢুঁ
মারার সুযোগ নেই। কদাচিৎ লগইন করে পুরনো
বন্ধুদের হাই-হ্যালো করেন। কিন্তু সমস্যা
বাধে যখন আনোয়ারের বড় ভাই ব্যবসা
দেখভালের দায়িত্ব নেন। আনোয়ার তখন
অনেকটা কাজ মুক্ত। এর মধ্যেই ফেসবুকে সময়
কাটান বেশি। পরিচয় হয় এক মডেলের সঙ্গে।
তারপর ঘনিষ্ঠতা। ওই মডেলের আমন্ত্রণে
বিভিন্ন শো’তে যেতেন তিনি। সেই ছবি
আপলোড করতেন ফেসবুকে। ওই মডেলের সঙ্গে
আনোয়ারের তখন প্রেম জমে উঠেছে।
স্ত্রীকে মিথ্যা বলে মডেলকে নিয়ে
সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন। আনোয়ারের
আচরণে তা বুঝতে সন্দেহ করছিলেন নিশাত।
কিছু একটা হয়েছে তা বুঝতে বাকি নেই
তার। এভাবে প্রায় দেড় বছর। হঠাৎ ব্যাংক
থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় ফেরেন নিশাত।
আনোয়ার তখন বাথরুমে গোসলে। বিছানায়
ল্যাপটপ। হাত দিতেই দেখেন ফেসবুক
খোলা। মেসেজ অপশনে লাল চিহ্ন
একাধিক। ক্লিক করতেই গলা শুকিয়ে যায়
তার। বেশ কিছুক্ষণ মেসেজগুলো পড়েন।
কিছুক্ষণ পর আর পারছিলেন না। মাথা ঘুরে
বিছানায় পড়ে যান। মেসেজ অপশনে
সিঙ্গাপুর ও ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক
হোটেলে ধারণ করা ওই মডেল ও
আনোয়ারের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও চ্যাট
দেখতে পান তিনি। কিন্তু আনোয়ারকে আর
তা বুঝতে দেননি নিশাত। পরদিন ভোরে
স্বামীর বনানীর বাসা থেকে বাবার
বাড়ি ধানমন্ডিতে চলে যান নিশাত। এর
কিছুদিনের মধ্যেই আনোয়ারকে ডিভোর্স
দেন তিনি।
এসব বিষয়ে মহিলা অধিদপ্তরের
মহাপরিচালক শাহীন আহমেদ চৌধুরী বলেন,
তথ্য-প্রযুক্তির কারণে আমরা এগিয়ে
যাচ্ছি। এর বিরূপ প্রভাব যাতে না পড়ে
এজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এজন্য
পারিবারিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি
বলেন, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা না থাকলে
এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। কাউকে যদি
ভাল নাই লাগে অন্তত সন্তান জন্মের আগেই
সম্পর্ক ভাঙা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
নতুবা সংশ্লিষ্ট নারী বা পুরুষের জন্য
সন্তানদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। সম্প্রতি
সংসার ভাঙার অন্যতম কারণ পরকীয়া
জানিয়ে তিনি বলেন, অধিকাংশ
ক্ষেত্রে ফেসবুক ও মোবাইলফোনে এসব
সম্পর্কের সূত্রপাত।
সংগ্রহ:মানবজমিন
©somewhere in net ltd.