নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ সত্য বাকী সব মিথ্যা

মোঃ শওকত হোসেন বিপু

আমি মনের আনন্দে লিখি তাতে কেহ খুশি হতে পারে আবার নাও হতে পারেন তাতে এই অধমের কিছু আসে যায়না।

মোঃ শওকত হোসেন বিপু › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?\'

১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৩৬

আজকে শেষ করলাম সৈয়দ শামসুল হকের "নূরলদীনের সারাজীবন" যা বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত। বাংলা ১১৮৯ সনের রংপুর এলাকার এক তরুন প্রতিবাদী কৃষক নেতা নূরুল উদ্দিন, তাকে ঘিরেই এই কাব্যনাটক রচিত। লেখক নূরুল উদ্দিন কে রংপুরের সাধারন মানুষের ভাষায় অভিহিত করেন নূরলদীন হিসেবে।

নূরলদীনের বর্ননায় তখনকার সমাজ বাস্তবতা বা নিজেদের অবস্থাঃ

'বাপজান, তুমি ক্যানে? বলদ কোন ঠাঁয়?'
'বলদ তো নাই বাপ, বেচিয়া নগদে
রাজার খাজনা শোধ দিনু কোনোমতে।'
বা
ধান করিব, পাট করিব রক্ত ঝরা ঘামে,
ধান কিনিবে মহাজনে নিজের খুশি দামে,
ধান বেচিয়া খাজনা দিলোম, সন্তানে কি খায়?
ঋণ করিতে চাষী আবার সানকি ধরি যায়।

নূরলদীন স্বপ্ন দেখে, কল্পনা করে, স্বপ্ন দেখায় আপন মনে যার কল্পিত রুপ এইরকমঃ

দেখিবার অপেক্ষায় আছোঁ,
হামার পুত্রের হাতে ভবিষ্যত আছে।
হামার কন্যার চোখে সুস্বপন আছে।
হামার ভাইয়ের মুখে ভাই ডাক আছে।
হামার ভগ্নীর ঘর নিরাপদ আছে।
কিংবা
সুখে দুঃখে অন্নপানে সকলেই একসাথে আছে।
সোনার বাংলার সোনা বাংলাদেশে আছে।

নূরলদীন তার জীবনদশায় তার স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি, তবে আহবান রেখে যায় এই জনপদের মানুষের প্রতি।

এ দ্যাশে হামার বাড়ি উত্তরে না আছে হিমালয়,
উয়ার মতন খাড়া হয় য্যান মানুষেরা হয়।
এ দ্যাশে হামার বাড়ি দক্ষিণেতে বংগপসাগর,
উয়ার মতন গর্জি ওঠে য্যান মানুষের স্বর।
এ দ্যাশে হামার বাড়ি পূর্ব দিকে ব্রক্ষপুত্র আছে,
উয়ার মতন ফির মানুষের রক্ত য্যান নাচে।
এ দ্যাশে হামার বাড়ি পশ্চিমেতে পাহাড়িয়া মাটি,
উয়ার মতন শক্ত হয় য্যান মানুষের ঘাঁটি।
বা
আব্বাসের শেষ কথা -
ধৈর্য সবে- ধৈর্য ধরি করো আন্দোলন।
লাগে না লাগুক, বাহে, এক দুই তিন কিংবা কয়েক জীবন।

নূরলদীন এখন অনেকের কাছে প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি কিংবা সংগ্রামের অনুপ্রেরনা। কেননা-

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন শকুন নেমে আসে এই সোনার বাংলায়;
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার দেশ ছেয়ে যায় দালালেরই আলখাল্লায়;
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার স্বপ্ন লুট হয়ে যায়;
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার কন্ঠ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়;
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায়
ইতিহাসে, প্রতিটি পৃষ্ঠায়।
আসুন, আসুন তবে, আজ এই প্রশস্ত প্রান্তরে;
যখন স্মৃতির দুধ জ্যোৎস্নার সাথে ঝরে পড়ে,
তখন কে থাকে ঘুমে? কে থাকে ভেতরে?
কে একা নিঃসঙ্গ বসে অশ্রুপাত করে?
সমস্ত নদীর অশ্রু অবশেষে ব্রক্ষপুত্রে মেশে।
নূরলদীনেরও কথা যেন সারা দেশে
পাহাড়ী ঢলের মতো নেমে এসে সমস্ত ভাসায়,
অভাগা মানুষ যেন জেগে ওঠে আবার এ আশায়
যে, আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায়,
আবার নূরলদীন একদিন কাল পূর্ণিমায়
দিবে ডাক, 'জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?'

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৫৫

কলাবাগান১ বলেছেন: "আবার নূরলদীন একদিন কাল পূর্ণিমায়
দিবে ডাক, 'জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?'"

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:০১

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
এ এক প্রতিবাদ লিপি। গ্রামের চাষাভুষোদের দিনলিপি নিয়ে লেখা মাটির কথা। কবি মরেন নি। গ্রাম বাংলার হাজার নুরুদ্দিনের অন্তরের কুঠিরে অমর হয়ে আছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.