নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ সত্য বাকী সব মিথ্যা

মোঃ শওকত হোসেন বিপু

আমি মনের আনন্দে লিখি তাতে কেহ খুশি হতে পারে আবার নাও হতে পারেন তাতে এই অধমের কিছু আসে যায়না।

মোঃ শওকত হোসেন বিপু › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোহিঙ্গাদের কষ্টের দিন কবে শেষ হবে???

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২২

বিজ্ঞজনেরা বলেন, কোন আনন্দের ঘটনা নিজের জীবনে ঘটলে তা অন্যদের সাথে শেয়ার করুন তাতে আনন্দ বাড়বে। আবার কোন দুঃখের ঘটনা নিজের জীবনে ঘটলে তাও অন্যদের সাথে শেয়ার করুন তাতে দুঃখ লাঘব হবে। সুতারাং কিছুটা দুঃখ লাঘবের ক্ষনিক চেষ্টা, যদিও জানিনা তাতে দুঃখ প্রশমিত হবে, নাকি স্থায়ী হবে???

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি সম্পর্কে যখনই কিছু জানার চেষ্টা করেছি তখনই প্রচন্ড মনোকষ্টে বেদনাহত হয়েছি অথবা পড়া শেষ না করে জানার ইতি টেনেছি। একবিংশ শতাব্দীর এই যুগে এসে মানুষ এত বিভৎস আর অমানবিক হয় তা মিয়ানমারের জনগন বা সামরিক বাহিনীকে না দেখলে বা এদের সম্পর্কে না জানলে বুঝা যেতনা। হ্যাঁ, মিয়ানমারের জনগনকেও অসভ্য বললাম এই কারনে যে রোহিঙ্গাদের উপর এত নিপীড়ন আর নির্যাতন অথচ ঐ দেশের কোন মানুষ তো দূরের কথা কোন মানবাধিকার সংস্থা পর্যন্ত এই ব্যাপারে একেবারেই নিরব।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, রোহিঙ্গারা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী। রোহিঙ্গারা হলো আদিবাসী জনগোষ্ঠী যারা পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। এরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত। বর্তমানে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে বসবাস করে। মিয়ানমার ছাড়াও ৫ লক্ষের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এবং প্রায় ৫ লাখ সৌদিআরবে বাস করে বলে ধারনা করা হয় যারা বিভিন্ন সময় বার্মা সরকারের নির্যাতনের কারণে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

গত কয়েকদিন ধরে রাখাইন রাজ্যে (যেটা এক সময় আরাকান রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল) সামরিক অভিযান চলছে এবং এই সামরিক অভিযানের মোটো হলো- "আগে গুলি, পরে জিজ্ঞাসা"। কি ভয়ংকর কথা। গতকাল সামরিক পক্ষ থেকে প্রায় ১০৯ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করা হলেও অনেকেই বলেন হত্যার সংখ্যাটা কয়েকগুন হতে পারে। এটা প্রকারান্তরে মুসলমান রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করার নীলনকশা। কারন মায়ানমার রাষ্ট্র বা জনগন কেহ এদেরকে নিজেদের অধিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়না।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের রোহিঙ্গা স্বাধীন রাজ্য ছিল। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি মিয়ানমার স্বাধীনতা অর্জন করে এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু হয়। সে সময়ে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। এ জনগোষ্ঠীর কয়েকজন পদস্থ সরকারি দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে মিয়ানমারের যাত্রাপথ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে শুরু করে। রোহিঙ্গাদের জন্য শুরু হয় দুর্ভোগের নতুন অধ্যায়। সামরিক জান্তা তাদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ধর্মীয়ভাবেও অত্যাচার করা হতে থাকে। নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়া হয়। হত্যা-ধর্ষণ হয়ে পড়ে নিয়মিত ঘটনা। সম্পত্তি জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়। বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করা হতে থাকে। তাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নেই। বিয়ে করার অনুমতি নেই। সন্তান হলে নিবন্ধন নেই। জাতিগত পরিচয় প্রকাশ করতে দেওয়া হয় না। সংখ্যা যাতে না বাড়ে, সে জন্য আরোপিত হয় একের পর এক বিধিনিষেধ।

সামরিকজান্তা শাসিত মিয়ানমার সম্পর্কে বিশ্ববাসী একটি ইতিবাচক ধারনা পেতে শুরু করে যখন ২০১০ সালে গনতন্ত্রপন্থী ও শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সুচি দীর্ঘ অন্তরীন থেকে ছাড়া পায়। কিন্তু ২০১২ সালে যখন সামরিকজান্তা রোহিঙ্গাদের উপর ব্যাপক ধ্বংসলীলা শুরু করে সেই সময় অং সান সুচি বিরোধীদলে থাকা সত্বেও এই ব্যাপারে নিরবতা পালন অনেকের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম নেয়। ২০১২ সালের নির্যাতনের আর একরুপ দেখে বিশ্বব্যাপী, তাহলো মিয়ানমারের ধর্মযাজক বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের নির্যাতনে নেতৃত্ব দেয়া বা জান্তাদের সাথে নির্যাতনে সহযোগিতা করা। গত নভেম্বরের নির্বাচনে সুচির দল এনএলডি যখন দুই কক্ষেই নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে, তখন আবার অনেকে আশায় বুক বাধে হয়ত দীর্ঘ কয়েক দশকের নির্যাতন আর লাঞ্চনা-গঞ্জনা থেকে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা মুক্তি পাবে।

কিন্তু কে শুনে কার কথা, কে শুনে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কথা, কে দিবে মুক্তি, কে দিবে পরিচয় এই আত্মপরিচয়হীন জনগোষ্ঠীকে, কে দিবে একখন্ড ভূমি যেখানে তারা বসবাস করতে পারে মানুষ হিসেবে??? আমি জানি কারো কাছে এর কোন উত্তর নাই, উত্তর নাই আমার কাছেও। অং সান সুচিও একজন মানুষ। আমরা হয়ত নোবেল বিজয়ী কিংবা গনতন্ত্রপন্থী হিসেবে আশা করতে পারি কিন্তু সমাজ, বাস্তবতা আর মিয়ানমারের জনগনই শেষ কথা, সুচি কিংবা আমাদের জন্যও। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিয়ন্ত্রনকারী মোড়লরা বা ভোগবিলাসী বেহুঁশ মুসলিম জাতিরা যতদিন এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর কষ্ট অনুধাবন না করতে পারবে, ততদিন রোহিঙ্গাদের কষ্টের, নির্যাতনের দিন শেষ হবেনা। শেষ হবেনা মজলুমের গগনবিদারী আহাজারি। তাই আসুন সকল মানুষের ভেতর লুকানো বা সুপ্ত ভাল আর মানবিক গুন দিয়ে বিশ্বকে সুন্দর করে গড়ে তোলার চেষ্টা করি এবং সাথে সাথে মুক্তি পাক মানবতা, মানবিকতা আর মনুষ্যত্ব।

মোঃ শওকত হোসেন বিপু
১৮.১১.২০১৬

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩১

চাঁদগাজী বলেছেন:

প্রতি মুসলিম দেশ, ৫০ হাজার করে রোহিংগাদের নিয়ে গেলে, সমস্যা শেষ!

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৪

মোঃ শওকত হোসেন বিপু বলেছেন: এটা তো মূল সমস্যাকে পাশ কাটানোর কথা... আগে সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং সমাধানও আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে। নিশ্চয়ই হত্যা করে নয়। ধন্যবাদ।

২| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৬

জে আর সিকদার বলেছেন: মানবতার আহ্বান। চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ।

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৩

মোঃ শওকত হোসেন বিপু বলেছেন: ধন্যবাদ... আপনাকে।

৩| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১৫

Mukto Mona বলেছেন: তদের আল্লা কোথায় পারলনা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিদের বাঁচাতে। আবার নাস্তিক নাস্তিক বলিস।

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৩

মোঃ শওকত হোসেন বিপু বলেছেন: এটা কি ধরনের কথা.... এটা কোন নাস্তিক, আস্তিক এর বিষয় নয়, বরং মানবতা আর মানবিকতার বিষয়। এবং কোন মানুষ নিশ্চয়ই নৃশংসতাকে সমর্থন করতে পারেনা।

৪| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৫৫

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
এভাবেই মানবিকতা পুড়ে যায়! আং সাং সুচির নোবেল কেড়ে নেওয়া হোক। সে নোবেল পাওয়ার অযোগ্য!

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৯

মোঃ শওকত হোসেন বিপু বলেছেন: আমরা কারো উপর আশা করতে পারি যে, তিনি হবেন মানবিক কিন্তু না হলে তো দোষও দিতে পারিনা। তার চেয়ে বরং সমস্যাকে চিহ্নিত করে সমাধানই হোক আমাদের চাওয়া।

৫| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০৬

মার্কো পোলো বলেছেন:
এশীয় শান্তিতে নোবেলবিজয়ী প্রত্যকে অকর্মার ঢেঁকি। আজ মানবতা ভূলুণ্ঠিত, সুচি শান্তির ফল দেখিয়ে দিচ্ছে।

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৩

মোঃ শওকত হোসেন বিপু বলেছেন: আমরা কারো উপর আশা করতে পারি যে, তিনি হবেন মানবিক কিন্তু না হলে তো দোষও দিতে পারিনা। তার চেয়ে বরং সমস্যাকে চিহ্নিত করে সমাধানই হোক আমাদের চাওয়া।

৬| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৫০

কবি এবং হিমু বলেছেন: সহজ সমাধান সবাই মুসলমান ধর্ম ত্যাগ করলেই হবে।তাহলে তারা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে।আর সংখ্যালঘুদের ইস্যু নিয়ে বিশ্বসহ সকল হলুদ সাংবাদিকরা ঝাপিয়ে পড়বে।তবে মনে রাখবেন সংখ্যালঘু মুসলমান হলে কিন্তু হবে না।

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৫

মোঃ শওকত হোসেন বিপু বলেছেন: আসলে বাস্তবতাই তাই কিন্তু সবাইকে মনে রাখতে হবে অন্যায় অন্যায়। মুসলিম, নন-মুসলিম ইস্যু নয় এবং দেখাও উচিত নয়। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.