![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘ভুবন মাঝি’ এ ছবির কোনও সমালোচনা হয় না। হতে পারে না!
এই ছবি ঘরহীন মানবিক মুখের। যাদের পুড়েছে মাটি। নিভেছে ভিটের তাপ। তাড়া করে ভয়, বোমারু বিমান।শত শত মুখ অন্নহীন অন্য কোথাও যায়। কেউ বা নিজের একটু জমিতে মৃত্যুকে বেছে নেয়।এই কথাগুলো ছবির দৃশ্য তৈরি করে দেয়। হল থেকে বেরিয়েও দলা পাকায় মনে। তবে পাঠক ভাবতে পারেন ‘ভুবন মাঝি’ হয়তো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ছবি। নাহ, সিনেমার ক্যানভাসে পরিচালক ফাখরুল আরিফিন প্রথম পরিচালনাতেই গড়াই নদীর তীরের নীলাভ জোছনা আর ঘুমভাঙানিয়া সকালকে ভরে রেখেছেন 'নহির' আর 'ফরিদা'-র ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা মেঠো প্রেমে। প্রেম, যুদ্ধ, দেশ আর রক্ত মিশে আছে ছবির শরীরে। আর আছে এক সুরসাধকের আকাশ খোলা সুর। তার নাম কালিকাপ্রসাদ! ফাখরুল আরিফিন যেমন ফ্রেম গড়তে গড়তে দৃশ্য তৈরি করেছেন, কালিকা তেমনই সুর তৈরি করতে করতে মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন। এ ছবির প্রতি মুহূর্ত তার নাম গাইছে। গল্পের শুরু ১৯৭০-এর নির্বাচনের কিছু আগে থেকে। তারপর গল্প একে একে খুলে দিয়েছে ১৯৭১-এর কুষ্টিয়ার রক্তস্রোতের ঐতিহাসিক ধারা! এর মাঝে মাঝে এসছে ১৯৭০, ১৯৭১, ২০০৪, ২০১৩-র সময়। আঙুল দিয়ে কি দেখিয়ে দিতে চাইছেন পরিচালক ধর্মের মোহ, ক্ষমতার রাজনীতি আজও এক আছে। রাষ্ট্রের কাছে মানুষ অসহায়?যে কোনও মানুষ যে কোনও মুহূর্তে ঘর ছাড়া হতে পারে! লোভ হলে আজও নিস্তার নেই কিশোরীদের, নারীদের! এখনও শত্রুদেশের বহু সেনার লোলুপ থাবা মেয়েদের বুকে, ঘাড়ে, মুখের শিরায় শিরায়। ইতিহাস তো তাঁর যন্ত্রণা নিয়ে এ ভাবেই বর্তমানের পথ থামায়! ‘ভুবন মাঝি’ এ ভাবেই ভাবিয়ে তোলে তার দর্শকদের। ভাবনা থেকে যন্ত্রণা আসতে পারে কিন্তু মানুষ খুন কি সম্ভব? হয়তো নয়।যেমন ছবির নায়ক নহির। নহির গ্রাম থেকে আসে কুষ্টিয়ায় পড়াশোনা শেষ করে। সাদামাটা। পড়াশোনা, থিয়েটার- এ সবের মধ্যেই ডুব দিয়ে থাকতে পছন্দ করে সে। দেশের উত্তাল সময়কে এড়িয়ে চলতে চায়। রক্ত দেখে শিউরে ওঠে। কিন্তু হত্যাকারীর জন্য বন্দুক ধরতে পারে না। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় তাঁর চালচলন, কথা বলার ধরন, আর তাঁর নিজস্ব শিক্ষিত আবেগ নিয়ে ছবিতে ক্রমশ ‘নহির’ হয়ে উঠেছেন। নহিরের স্বভাবের মতোই তিনি তাঁর আবেগে সংযত। কুষ্টিয়াকে পাক সেনাদের হাত থেকে মুক্ত করার লড়াইয়ে তাঁর প্রেমিক থেকে বাউল হয়ে ওঠার পরিবর্তন সহজ অভিনয় দিয়ে প্রকাশ করেছেন পরম। ছবিতে চমৎকার গান গেয়েছেন পরম। কিন্তু নহির কি ছবিতে পরে নাম বদলেছেন? কেন তিনি সাঁই হলেন? নাকি আগে থেকেই তার নাম ছিল আনন্দ সাঁই? এ জায়গাগুলো স্পষ্ট হয় না। সোনার বাংলার সুর বুনতে বুনতে এই ছবিতে আজকের সময় আর একাত্তরের সময় বড্ড বেশি ওভারল্যাপ করেছে, যা দর্শককে ছবির সময়কাল আর ঘটনাকে গুলিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কোথাও মনে হয়েছে ছবিতে চরিত্রের উপস্থিতি অনাবশ্যক। যেমন ক্যামেরা নিয়ে একটি মেয়ের মৃত সাঁইয়ের ছবি তোলা...সে কে? এ রকম অনেক প্রশ্ন দর্শকদের মনে থেকে গিয়েছে। নদীর মাঝখানে নৌকাতে রাজাকারকে গুলি করে মারা হল, কিন্তু রাজাকার মরল না কেন? ফরিদাই বা হঠাৎ ছবির শেষে কেমন করে হাজির হল? ছবি বলে না। তবে এ পারের মানুষের এই ছবিতে ভিন্ন মুখ হিসেবে ফরিদাকে খুব পছন্দ হবে। অপর্ণা ঘোষকে সাধুবাদ। ভাল লাগে মিজান চরিত্রটিও।
এটুকু থাক।
থেমে যাই। রাতের শহরে যেমন ছবি শেষে থেমে গিয়েছিলাম...
একতারার ছিলা আর সুর লাগায় না যে...কালিকাপ্রসাদ আপনার সুর জীবনানন্দকে নিয়ে আসে…
আমি ঝ’রে যাবো–তবু জীবন অগাধ
তোমারে রাখিবে ধ’রে সেইদিন পৃথিবীর ’পরে,
—আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে।'
সেই তুমি হয়তো দেশ, ভাষা আর তার মানসীর প্রেম।
©somewhere in net ltd.