![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তরুণদের ভাবনা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এখনও চলছে। তরুণরা বাস্তববাদী না আবেগপ্রবণ এ বিষয় নিয়েও তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। আবার তরুণদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কল্পনা না চিন্তাশীলতা কোন বিষয়টি বেশি কাজ করে এটি নিয়েও বিভিন্ন ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ অব্যাহত রয়েছে। তরুণরা রাজনৈতিকভাবে সচেতন কিনা কিংবা তরুণদের মধ্যে রাজনীতির প্রভাব আছে কিনা এ বিষয়গুলো নিয়েও এখন আমাদের ভাবতে হচ্ছে। সম্প্রতি গবেষণা ও কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজি ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘কলরেডি’ তরুণদের ওপর জরিপ চালিয়ে বলেছে, দেশের ৮০ শতাংশ তরুণ ভোটার রাজনীতি পছন্দ করে না।
এর কারণ কী? এই বিষয়টি নিয়ে যেমন আমাদের ভাবতে হবে, তেমনি তরুণদের মন ও মানসিকতা কেন রাজনীতির প্রতি নেতিবাচক এটি নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। তবে ধারণা করা যায় রাজনীতি কীভাবে তরুণদের ওপর প্রভাব ফেলছে, রাজনীতির ফলে তরুণদের কী ধরনের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে- হয়তো এ বিষয়গুলো তরুণদের আমরা ঠিকভাবে জানাতে পারছি না। অন্যদিকে রাজনীতির ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণাও তরুণদের রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার একটি কারণ হতে পারে। তবে যাই হোক না কেন, তরুণদের রাজনীতিকে বুঝতে হবে, জানতে হবে, নেতিবাচক রাজনীতিকে কীভাবে ইতিবাচক রাজনীতিতে পরিণত করা যায় এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। আজকের দিনে তরুণরা আদর্শ ও দর্শনের ভিত্তিতে রাজনীতি করছে, নাকি রাজনীতিকে ব্যবহার করে একে কলুষিত করার চেষ্টা করছে এগুলো নিয়েও এখন ভাবার সময় এসেছে।এ জন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সমাজবিদ, মনোবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের একত্র হয়ে ছাত্র রাজনীতির ধারা কেমন হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। যাতে করে আমরা তরুণদের বোঝাতে পারি রাজনীতি হচ্ছে আত্মত্যাগের, দেশপ্রেমের, মানুষ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন আর কল্যাণের।
তবে আশার কথা হচ্ছে, গত ১০ বছরে ২ কোটি ২৫ লাখ তরুণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। প্রতিবছর গড়ে ২৫ লাখ তরুণ ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। মোট ভোটারদের প্রায় ২৫ শতাংশ তরুণ। এর ফলে এবারের নির্বাচনে তরুণদের প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। আজকের তরুণরা এই বিষয়গুলো তাদের ভোট প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোট কর্মোপযোগী মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ।আমাদের দেশের তরুণরা সরকারি ও বেসরকারি চাকরির পেছনে ছুটলেও নিজেরা কীভাবে স্বল্প পুঁজি প্রয়োগ করে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে সে বিষয়টি নিয়ে তেমন একটা ভাবছে না। এটির কারণ কী তা খোঁজ করে বের করার দায়িত্বও আমাদের। এখন দেশ-বিদেশে এমন অনেক শিল্প বা বাণিজ্যিক ধারণা আছে যেখানে অর্থ ছাড়াই মেধাশক্তি প্রয়োগ করে তরুণরা নিজেদের যেমন কর্মমুখী করতে পারে, তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করতে পারে। এবারের নির্বাচনে এ বিষয়ে পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের বিষয়টি আসবে বলে তরুণ ভোটাররা আশা করছে। তরুণরা শিক্ষিত হতে চায়, তাদের সৃজনশীল শক্তি প্রয়োগ করে গবেষণামনস্ক সমাজ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে চায়।তরুণরা লেখক, কবি, সাহিত্যিক, অভিনয় শিল্পীসহ সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনে তাদের জয়যাত্রার পদচিহ্ন এঁকে দিতে চায়। তরুণরা সমাজ সংস্কারক, উদার মনোভাবাপন্ন এবং তারা রাষ্ট্রের উন্নয়নের নীতিমালা প্রণয়নে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চায়। আশা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে তরুণদের বিকাশের পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলোকে সম্পৃক্ত করা হবে।তরুণরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে চায়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনকে তাদের জীবনে প্রয়োগ করতে চায়, বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে নিজেদের মধ্যে লালন করতে চায়। তরুণরা নিজেদের কীভাবে গড়ে তুলে তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে দেশ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তা ছড়িয়ে দিতে পারে তার রূপরেখা চায়।তরুণরা তাদের মেধার মূল্যায়ন চায়, তরুণরা নিরাপদ জীবন চায়, দূষণমুক্ত পরিবেশ চায়, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা চায়, শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি চায়। দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চায়। স্বপ্ন দেখতে ও স্বপ্ন দেখাতে চায়। একটি উন্নত বাংলাদেশের তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তরুণরা দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হতে চায়। সব ধরনের কুসংস্কার, রক্ষণশীলতা ও জড়তা কাটিয়ে তাদের জীবনের জয়যাত্রার গল্প শোনাতে চায়।এবারের নির্বাচনে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে তরুণরা যেমন তাদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তেমনি উন্নত মানবিক ধারণা প্রয়োগ করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে চায়।তরুণরা পেছনের সব গ্লানি মুছে ফেলে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা। এ জন্য তরুণদের বাস্তববাদী হয়ে প্রকৃত স্বাধীনতার চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তবেই নির্বাচন মহোৎসব হয়ে তরুণদের জীবনকে বদলে ফেলবে।
©somewhere in net ltd.