নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুঃস্বপ্নের যাত্রী

দুঃস্বপ্নের যাত্রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত এই শহর..

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৮



আমরা আমাদের প্রিয় শহরকে ভালোবাসি না- কথাটা বলতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু না বলে উপায় নেই। যদি ভালোবাসতাম তাহলে দায়িত্ববোধ থাকত। আমরা দায়িত্বশীল হলে আমাদের শহর যৌবন নিয়ে এত দ্রুত মরে যেত না। মাঝেমধ্যে মনে হয়, সবাই মিলে শহরটাকে খুন করে ফেলেছি। নিষ্প্র্রভ, নিথর এক নগর। যে নগরীর কোনো প্রাণ নেই, আত্মা নেই। কতই-বা এই শহরের বয়স? কাগজে-কলমে ৪শ' বছর। অথচ পৃথিবীর অনেক শহর হাজার বছর পেরিয়ে এখনও চিরতরুণ। প্রতি বছর বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকা প্রকাশ পায়। সেই তালিকায় প্রথমদিকেই থাকে আমাদের জাদুর শহর ঢাকার নাম। দেখলে বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। কিন্তু কিছুই করতে পারি না। এ জন্য শহরও হয়তো আমাদের আর ভালোবাসে না। দীর্ঘদিন শহরে থাকলে মন বিষিয়ে ওঠে। একটুখানি মুক্ত বাতাসের জন্য, একটুখানি সবুজের জন্য মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। মনকে শান্ত করতে গাঁয়ের পথ ধরি আলো-বাতাস-বনানী আর বিশুদ্ধ অক্সিজেনের খোঁজে। শহর যদি আমাদের ভালোবাসত, এমনটা হতো না। এখন আমরা একে অপরের কাছে মৃত। যার জন্য কেউ কাউকে ভালোবাসি না। আসলে ভালোবাসতে পারি না।
কেন এই শহরের হাল এমন হলো- একবার কি মনে প্রশ্ন জেগেছে? জাগেনি। শহরের এ অবস্থার জন্য আমরাই দায়ী। কারণ, আমরা আমাদের শহরকে ভালোবাসতে পারিনি। আমরা সর্বদাই এক অশুভ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থেকেছি। কার আগে কে গেল, কার চেয়ে বেশি কে পয়সা কামাল, বড় বাড়ি বানাল, গাড়ি কিনল- সেই প্রতিযোগিতায়। তাই আমরা উল্টোপথে গাড়ি হাঁকাই। ফিটনেসহীন গাড়ি রোডে নামিয়ে বেপরোয়া চালাই। মানুষ চাপা দিই। আমরা শিল্প-কারখানার দূষিত বর্জ্য ফেলে শহরের নদীকে মেরে ফেলি। আইন-কানুনের ধার ধারি না। আমরা গাছপালা কেটে শহরকে করি বৃক্ষশূন্য; কংক্রিটের মরুভূমি। আমরা শহরে কোনো ট্রাফিক সিগন্যাল মানি না। তাই রাস্তায় দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। আমরা আবর্জনা ফেলি ড্রেনে। তাই একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটুজল দাঁড়িয়ে যায় রাজপথে। আমরা খাল ভরাট করি, নদী দখল করি। সব আমরাই করি। কিন্তু দিন শেষে গালি দিই সরকার কিংবা কর্তৃপক্ষকে। নিজে সাধু সেজে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে সুশীল কথা বলি। একবারও চিন্তা করি না- সরকারের আগে আমি কিছু করেছি কিনা! দেশপ্রেম কি শুধু সরকারেরই থাকতে হবে? নাগরিক হিসেবে আমাদেরও তো দেশপ্রেম থাকা উচিত। দেশের জন্য নিজেকে কতটুকু ঢেলে দিতে পেরেছি? সেই হিসাবের সময় আমরা চুপ থাকি। কিন্তু চুপ থাকার মানে তো নিরপেক্ষ নয়। বরং নিজের ধান্দায় থাকা। আমরা নিজের ধান্দায় মত্ত থাকি। দেশ বা অপরের ধার ধারি না। সবকিছু গোল্লায় যাক, তাতে আমাদের কী? আমাদের উদর ভরছে কিনা, সেটাই আসল কথা।
বছরের পর বছর শহরজুড়ে এত অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা দেখে আমাদের হৃদয় দূষিত হয়ে গেছে। চোখে পচন লেগেছে। অনিয়মই যেন অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এখন আর কিছুতেই বিচলিত হই না। মানুষ মরলে এমনকি রাস্তায় আহত মানুষ পড়ে ছটফট করতে থাকলেও আমরা হাত বাড়িয়ে ছুঁতে যাই না। বাসচালক হুমকি দিয়ে অটোচালককে রাস্তায় পিষে ফেলে। বেপরোয়া গাড়ি পথচারীকে চাপা দিয়ে হত্যা করে। কোনো প্রতিকার আসে না। কিন্তু আমাদের দোষগুলো সরকারের ঘাড়ে চাপে। যেন সরকার দোষী। আদতে অপরাধী তো আমরা। তবুও কেন সরকারের পিণ্ডি চটকানো হয়? বুঝি না। হয়তো সহজ বলেই এটা স্বাচ্ছন্দ্যে করা যায়

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.