নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জয়দীপ চক্রবর্তী : পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। নেশায় লেখক। আকাশবানী কোলকাতায় সম্প্রচারিত হয়েছে তার লেখা নাটক। পেশাদারী থিয়েটার “অবেক্ষন” তার লেখা নাটককে বেছে নিয়েছে তাদের প্রযোজনা হিসেবে। তার কাহিনী চিত্রনেট্যে তৈরী সর্ট ফ্লিম, প্রচারিত হয়েছে ইউটিউব চ্যা

জয়দীপ চক্রবর্তী

জয়দীপ চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভুতের বাপের শ্রাদ্ধ

২১ শে মে, ২০২০ সকাল ৯:৩২


একটি বাতানুকূল অনুষ্ঠান বাড়ি। মুল প্রবেশ দরজাটি সাদা কাপড় ও নানা রকম সাদা ফুল দিয়ে সুসজ্জিত। তার ওপর থার্মোকলের নক্সা সহযোগে লেখা “মহেন্দ্র বিশ্বাসের আত্মার শান্তি কামনায়”। সেই লেখার নিচে অপেক্ষাকৃত ছোটো কিন্তু সহজেই চোখে পড়ে এমন হরফে লেখা রয়েছে, ট্রিটমেন্ট নার্সিংহোমের সৌজন্যে।
দুজন সাদা সিল্কের শাড়ি পরা সুন্দরী যুবতী আগত অতিথিদের স্বাগতম জানিয়ে প্রত্যেকের হাতে একটি করে গীতা তুলে দিচ্ছে। যুবতীদের শাড়িতে ট্রিটমেন্ট নার্সিংহোমের লোগো। অনুষ্ঠান বাড়ির ভেতরে পুরোহিত শ্রাদ্ধের মন্ত্র পড়ছেন। মাইকের সাহায্যে সেই মন্ত্র এসে পৌঁছচ্ছে প্রবেশ দরজা পর্যন্ত্য।
অনুষ্ঠান বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ট্রিটমেন্ট নার্সিংহোমের নাম ও লোগো। তার নিচে লেখা, “আমাদের পরিশ্রম, আপনার উপশম”। এছাড়া বাড়িটির জায়গায় জায়গায় জান ফার্মাসিটিক্যালসের নানা ওষুধের বিজ্ঞাপনও শোভা পাচ্ছে। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন বাড়ির দোতলায়। একটি বড় টেবিলে মহেন্দ্র বিশ্বাসের ও তার পাশে মহেন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে যোগেন্দ্র বিশ্বাসের ছবি ফটো ফ্রেমে বন্দী হয়ে রজনীগন্ধার মালায় সু-সজ্জিত হয়েছে। এই ছবি দুটোর নিচেও ছোটো ছোটো করে ট্রিটমেন্ট নার্সিংহোমের নাম লেখা।
ট্রিটমেন্ট নার্সিংহোমের কর্ণধার স্বয়ংসিদ্ধ মুখার্জী সপরিবারে এসে উপস্থিত হয়েছেন।শোনা মাত্রই দোতলা থেকে নেমে এলো মহেন্দ্র বিশ্বাসের নাতি, যোগেন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে ডঃ সহজাত বিশ্বাস। বাড়িটির একতলায় গাড়ি রাখার জায়গা রয়েছে। সেখানে স্বয়ংসিদ্ধ মুখার্জীর গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করে ওনাদের সসম্মানে দোতলায় নিয়ে এলেন সহজাত। কয়েকটি সুন্দরী যুবতী ট্রেতে করে সরবত ও দই-বড়া নিয়ে ঘুরছে। স্বয়ংসিদ্ধ বাবুদের বসিয়ে একটি মেয়েকে ডেকে ওনাদের হাতে কমলা লেবুর সরবত ও দই-বড়া তুলে দিল ডঃ বিশ্বাস।
সহজাত আজ খুশি। সে আজ তার বাবার বহুদিনের একটা ইচ্ছে পূরণ করছে। তবে একটা খটকা রয়েই গেছে মনের মধ্যে। বাবা বেঁচে থাকতে যদি বাবার এই ইচ্ছেটা ও পূরণ করতে পাড়ত, তবে কি ভালোই না হোতো। ইচ্ছে করলেই পারত ও। তখন হয়ত নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে দাদুর শ্রাদ্ধ করতে হত। তবে সে সাধ ওর মনে জাগেনি কখনও। আজও হয়তো সেই সাধ সহজাতর মনে জাগত না, যদি ত্রিপর্ণ ওকে এই আইডিয়াটা না দিত।
ত্রিপর্ণ ট্রিটমেন্ট নার্সিংহোমের মার্কেটিং ম্যানেজার। ওর কাজ বিভিন্ন ডাক্তারদের সাথে দেখা করে, তাদের এই নার্সিংহোমের সুযোগ সুবিধেগুলি বলে, তাদের সুপারিশে ট্রিটমেন্টে রোগী ভর্তি করানো। ত্রিপর্ণকে বিভিন্ন ডাক্তারদের ধরে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগীকে নার্সিংহোমে ভর্তি করাতে হয়। ওর এই লক্ষ্যের অর্ধেকটাই ডঃ সহজাত বিশ্বাস পূরণ করে দেয়। আর এই কাজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যই আজ এই অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছে ট্রিটমেন্ট নার্সিংহোম। তবে অনুষ্ঠানের সম্পূর্ণ খরচাই এরা একা বহন করছে না। খাওয়া দাওয়ার খরচের অর্ধেক জোগান দিচ্ছে জান ফার্মাসিটিক্যালস।
মহেন্দ্র বিশ্বাস যখন মারা যান তখন সহজাত খুবই ছোটো। স্বাভাবিক ভাবেই তখনকার কথা তেমন মনে নেই ওর। যোগেন্দ্রর মুখে শুনেছিল যে সামর্থ্যের অভাবে উনি ওনার বাবার পারলৌকিক ক্রিয়াদি তেমন ভাবে করতে পারেন নি। কেবল মাত্র নিয়ম রক্ষা করেছিলেন শুধু। তবে যোগেন্দ্রের মৃত্যুর পর তার শ্রাদ্ধ বেশ ধুম-ধাম করেই করেছিল সহজাত। সেই অনুষ্ঠানেই ত্রিপর্ণ এসে সহজাতকে বলেছিল,
- স্যার, আপনি এতো বড় কাজটা নিজে করতে গেলেন কেন? আমাদের ওপর ছেড়ে দিতেন, আমরাই সব ব্যবস্থা করে দিতাম।
- না, না। সে হয় না। আমার বাবার শেষ কাজ, আমারই করা উচিৎ।
- তবে আপনার কোনও ইচ্ছের কথা বলুন, যেটা আমরা পূরণ করবো।
- আমার কোন ইচ্ছেটা বলি বলত? কিছুদিন আগেই তো মন্টাস ফার্মা আমাকে ইউরোপ ট্যুর করিয়ে আনল।
- আপনার না হয়, আপনার পরিবারের কারো, অথবা আপনার বাবারও যদি কোনও ইচ্ছে থাকে, সেটাও আমরা পূরণ করতে পারি।
- বাবার ইচ্ছে? .... হ্যাঁ, আমার দাদুর শ্রাদ্ধটা বাবার একটু ভালোভাবে করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তখন সামর্থ্যের অভাবে করতে পারেন নি।
- তখন পারেন নি তাতে কি হয়েছে? এখন করুন। আপনার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।
- সে হয় নাকি? বাবাই আর বেঁচে নেই। আর তার বাবার শ্রাদ্ধ করব আমি?
- কেন? দাদুর শ্রাদ্ধ তো নাতি করেই। দরকার হলে আমি একজন ভালো পুরোহিতের সাথে আলোচনা করে নেব ক্ষণ। আপনি শুধু এমনি ভাবেই আমাদের নার্সিংহোমে রোগী পাঠিয়ে যান।
- তুমি আর চাপ দিও না তো। তোমার ঐ টার্গেট অ্যাচিভ করাতে গিয়ে প্রয়োজন না থাকলেও আমাকে তোমাদের নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়ার অ্যাডভাইস দিতে হচ্ছে।
- কি বলছেন স্যার? আমাদের নার্সিংহোমের মতো এতো অত্যাধুনিক সরঞ্জাম, এতো সুযোগ সুবিধে আপনি কোন নার্সিংহোমে পাবেন? তাছাড়া পেসেন্ট ভর্তি হলে সেই পেসেন্টকে তো আপনিই দেখেন। দু-পয়সা রোজগার তো আপনারও হয়।
- তবু একটা বিবেক বিবেচনার তো প্রয়োজন আছে। সেদিন একজন পেসেন্ট বুকে ব্যথা নিয়ে আমার কাছে এলো। গ্যাসের ব্যথা। ওষুধেই সেরে যেত। তবু নানারকম ভয় দেখিয়ে ট্রিটমেন্টে ভর্তি করিয়ে দিলাম। খামাখা আই.সি.ইউতে রেখে ইসিজি, এক্স-রে, এম.আর.আই করিয়ে লাখ টাকা বিল তুলে দিল নার্সিংহোম।
- ছাড়ুন তো। ঐ টাকা কি উনি পকেট থেকে দিয়েছেন। মেডিক্লেম দিয়েছে।
- আর মেদিনীপুরের ঐ চাষির বৌয়ের কেসটা? ওকে যদি আমি তোমাদের নার্সিংহোমে ভর্তি না করিয়ে কোনও চ্যারিটেবল নার্সিংহোম বা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতাম তবে ঐ চাষিকে ওর ধানের জমি বেচতে হত না। কি লাভ হল বল ওর? বৌকে বাঁচাতেও পারলো না। মাঝখান থেকে জমি-জমা সব খোয়াল।
- ওনার বৌ তো শেষ জীবনে একটা ভালো নার্সিংহোমের চিকিৎসা পেয়ে গেল। আর এসব এতো ভাবতে গেলে আমিও চাকরি করতে পারবো না, আপনিও এই পেশায় থাকতে পারবেন না।
- জানি তো। সেই জন্যই তো অন্তরের আন্তরিকতা চাপা দিয়ে দাঁতে ও জিভে সহানুভূতি আর সহযোগিতা মেখে চিকিৎসা করে চলেছি। তবু মানুষের মন তো। মাঝে মাঝে খারাপ লাগে।
- ঐ সব খারাপ লাগা গুলো টাকা দিয়ে মুছে ফেলুন। তবে ঐ কথাই রইল। আমি একজন ভালো পুরোহিতের সাথে আলোচনা করে আপনাকে জানাচ্ছি।
ত্রিপর্ণ পুরোহিতের সাথে আলোচনা করল। পুরোহিত যথারীতি তার নিজের সুবিধার্থে ত্রিপর্ণর পক্ষেই কথা বললেন। ওনার বক্তব্য শ্রাদ্ধের উদ্দেশ্য প্রিয়জনের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। যে কেউ তা করতে পারে। আর সহজাতর বাবার শ্রাদ্ধের সময়ও ওর পূর্ব-পুরুষদের স্মরণ করেছে ও । এখন যদি সহজাত আলাদা করে ওর দাদুকে শ্রদ্ধা জানাতে চায়, তাতে সমস্যা কোথায়?
পুরোহিত সম্মতি পেয়ে ত্রিপর্ণ আয়োজন শুরু করে দিল। সহজাতও আপত্তি করল না। বিনে পয়সায় কেউ যদি একটা গেট-টু-গেদারের আয়োজন করে দেয়, তাতে সম্মতি না দেওয়ার নেই। তার ওপর বাবার ইচ্ছে পূরণ বলে কথা।
নিমন্ত্রণ পত্র ছাপা হল। কার্ডের পেছনের এক অংশে ট্রিটমেন্ট নার্সিংহোমের বিজ্ঞাপন ছাপা হল। অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া করা হল। জান ফার্মা এই অনুষ্ঠানে বেশ মোটা অঙ্কের একটা টাকা দিতে রাজি হল। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত প্রতিবেশীদের আমন্ত্রণ জানানো হল। আয়োজন হল আজকের এই অনুষ্ঠানের।
শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান হলেও স্বাভাবিক ভাবেই অনুষ্ঠানের কোথাও কোনও শোকের ছায়া-বিন্দু নেই। রবিবারের শীতের দুপুরে সবাই একত্র হয়ে গল্প, আড্ডা ও সেলফিতে মেতেছে। কোনও কোনও অতিথিরা সহজাতরই শ্রাদ্ধ করছে।
- সহজাত তাহলে ভুতের বাপের শ্রাদ্ধ করে ছাড়ল!
- আরে পয়সা থাকলে ভুতের বাপের শ্রাদ্ধ কেন, কুকুর বেড়ালের শ্রাদ্ধও ধুম-ধাম করে করা যায়।
- একদম ঠিক বলেছ। স্পন্সরশীপের শ্রাদ্ধ বলে কথা। চারিদিকে দেখছ না বিজ্ঞাপনে ভরিয়ে দিয়েছে।
- মনে হচ্ছে খাওয়ার মাঝে খাওয়া থামিয়ে ক্যাটারারের এই মেয়ে গুলো অ্যাড দেবে, আজকের মেনুর এই আইটেম গুলো নিবেদন করলো ট্রিটমেন্ট নার্সিংহোম। আর ঐ আইটেম গুলোর নিবেদক জান ফার্মাসিটিস।
- নিমন্ত্রনের কার্ড থেকে শুরু করে, সহজাতদার বাবার ও দাদুর ছবি, সব কিছুতেই তো দেখছি ট্রিটমেন্ট নার্সিংহোমের নাম রয়েছে। আমার তো মনে হয় খাবারের গায়েও ঐ নার্সিংহোমের নাম, লোগো থাকবে।
- থাকতেই পারে। এতো গুলো টাকা দিচ্ছে, নাম তো দেবেই।
- টাকা যেমন দিচ্ছে, তেমন সহজাতকে দিয়ে সে টাকা তুলেও নেবে। দশ হাজারের বিল এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এরা তো মৃত রোগীকে ভেন্টিলেশনে দিয়েও বিল বাড়িয়ে চলে। ওসব এখন ভেবে লাভ নেই। চল, ডানহাতের কাজটা সেরেই আসি।
- হ্যাঁ, চল। ওটা করতেই তো এখানে আসা।
তিন তলায় খাওয়ার ব্যবস্থা। নিরামিষ আয়োজন। কুলচা, চানা মসলা, ফ্রায়েড রাইস, ধোঁকার ডালনা, পনির পসিন্দা, ফুলকপির মাঞ্চুরিয়ান, ফ্রুট চাটনি, পাঁপড়, বেক রসগোল্লা, মনোহরা, আইসক্রিম ও পান। বুফেতে খাওয়া চলছে। দুপুরে নিমন্ত্রণের নিয়ম মেনে একটা সময়ে একসাথে অনেক লোকের ভিড় জমেছে।
বয়স্ক লোক বা মহিলারা যাতে বসে খেতে পারে, সেই কথা ভেবে কয়েকটি টেবিল চেয়ারও পাতা হয়েছে। তবে সেই টেবিলে সব বয়সেরই ভিড় । অনেকেই দাঁড়িয়ে হাতে নিয়ে খাওয়ার চেয়ে, বসে আয়েস করে খাওয়া পছন্দ করে। তাই খাওয়ার টেবিলটি মিউজিকাল চেয়ারের রূপ নিয়েছে। কেউ অর্ধেক খেয়ে প্লেট হাতে নিয়ে খাবার আনতে গেলে, সেখানে আরেক জন বসে পড়ছে।
একদম কোনের একটা টেবিল ফাঁকা থাকলেও তাতে কেউ বসতে পারছে না। কারণ সেখানে যারা খেয়েছিল, তারা টেবিলে খাওয়ার স্মৃতি চিহ্ন ফেলে গেছে। টেবিলটা যেন একটা মেনু কার্ড। আজকের খাদ্য তালিকা জানতে হলে, ঐ টেবিলের উচ্ছিষ্ট দেখলে তা সহজেই অনুমান করা যাবে। খাওয়ার পাতে মিনারেল ওয়াটার দিয়ে হাতও ধুয়ে গেছে সেই অতিথিরা।
একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলাকে বসিয়ে খাওয়ানোর জন্যে ঐ টেবিলটি পরিষ্কার করার প্রয়োজন পড়ল। ক্যাটারারের লোককে বলে টেবিল পরিষ্কার করার লোক ডাকল সহজাত। একজন কালো, বেটে-খাটো, মাঝ বয়সী লোক ছুটে এলো মোছার কাপড় নিয়ে। টেবিল ক্লথ পরিবর্তন করে উচ্ছিষ্ট সহ প্লেটটা হাতে তুলে নিলো সেই মাঝ বয়সী লোকটি। তারপর সে ধীরে-ধীরে সতর্ক ভাবে চলল তার গন্তব্য-স্থলের দিকে। কিন্তু একজন আমন্ত্রিত অতিথি অসতর্কতা বসত লক্ষ না করে ঐ লোকটিকে ধাক্কা মারায় লোকটির হাতের প্লেট লাফিয়ে এসে ঐ ভদ্রলোকের ভুঁড়ি জাপটে ধরল। ফল স্বরুপ কারুকাজ করা শেরওয়ানিতে পনির পসিন্দা, ফুলকপির কোপ্তারা রেখে গেল তাদের উপস্থিতির স্মৃতি-চিহ্ন। অপ্রস্তুতে পড়ে পরিষ্কার করার ঐ লোকটিকে গালি-গালাজ করতে গিয়ে লোকটির মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেল সহজাত। মুখ দিয়ে আর কথা বের হল না ওর। অল্পক্ষণের নীরবতার পর প্রথম কথা বলল ঐ লোকটি।
- ডাক্তারবাবু, আপনি এখানে?
- এটা তো আমার বাড়িরই অনুষ্ঠান। আমার দাদুরই শ্রাদ্ধ হচ্ছে আজ।
- খুব ভালো হয়েছে আপনার সাথে দেখা হয়ে। সেদিন হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসার সময় তো আর মাথার ঠিক ছিল না, তাই আপনার সাথে দেখা করে আসতে পারিনি।
- তখন তোমার সদ্য স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে। মাথা ঠিক না থাকাই স্বাভাবিক।
- তবুও আপনি আমার বৌয়ের চিকিৎসা করছেন, আপনার সাথে দেখা করে আসা তো কর্তব্য।
- কি আর করলাম। তোমার বৌকে তো বাঁচাতেই পারলাম না।
- চেষ্টা তো করছেন। কত রকম চেষ্টা, কত রকম পরীক্ষা। আমার কপালডা খারাপ। আপনি আর কি করবেন?
- তা তুমি এখন এই কাজ ধরেছ?
- কি করব বাবু? পেট তো চালাতে হবে। বৌটা মরে গেল। জমি-জমা যা ছিল সব তো আগেই বেঁচে দিছি। চাষ-বাস করার আর উপায় নাই। মেয়েটারে এই শহরেই এক বাড়িতে কাজে ঢুকায়ে, আমি এক ক্যাটারার বাবুরে ধরে এই কাজে লাগছি। আপনাদের দয়ায় যেদিন কাজ জোটে যেদিন দুইশ ট্যাহা রোজগার হয়। সাথে ভালো-মন্দ খাবারও প্যাটে পড়ে। আর যেদিক জোটে না, সেদিন মুড়ি-বাতাসা খেয়ে থাহি।
সহজাত আর কথা না বাড়িয়ে লোকটাকে নিজের কাজে যেতে বলল। আজকের এই অনুষ্ঠানের জন্যে লোকটি অনেকদিন পড়ে পেট ভরে খেতে পারল। আজকের অনুষ্ঠানটা না হলে ওর এই খাবার জুটত না। হয়তো তখন এই খাবারের প্রয়োজনই পড়ত না ওর।
সমাপ্ত

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০২০ সকাল ১০:০৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


বাংলার মানুষের খাবারের সংস্হান করার মতো বাংগালী কোনদিনও জন্ম নিলো না।

২| ২১ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:৩৭

করুণাধারা বলেছেন: প্রথমেই প্লাস। এই বিষয়ে এমন চমৎকার গল্প লেখার জন্য।

আমাদের বাঙলাদেশে শোনা যায় ডাক্তাররা হাসপাতাল থেকে কমিশন নিয়ে অকারণে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করায়, ওষুধ কোম্পানির পয়সায় বিদেশ ভ্রমণ, টিভি ফ্রিজ এমনকি ফ্ল্যাট পর্যন্ত আদায় করে। ফলে আমাদের দেশে গ্যাসের ব্যাথায় এনজিওগ্রাফি করায়। শুনেছি ভারতের ডাক্তারেরা এমন অমানবিক নয়, তাই আমাদের দেশ থেকে দলে দলে লোক ভারতে যায় চিকিৎসা করতে... কিন্তু আপনি এ কী ডাক্তারীর গল্প শোনালেন!!! এই জিনিস ভারতেও হয়!!!

মন খারাপ করা গল্প, চমৎকার বর্ণনা!

২৫ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:১০

জয়দীপ চক্রবর্তী বলেছেন: দুর্নীতি সবখানে আছে। সব দেশে আছে। আপনার মন্তব্যে অনুপ্রানিত হলাম। এইভাবেই গল্প পড়ুন ও মন্তব্য করুন।

৩| ২১ শে মে, ২০২০ দুপুর ২:২০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভুতের চৌদ্দ গুষ্টি শ্রাদ্ধীয় করলেও বাঙ্গালী সোজা হবে না

৪| ২১ শে মে, ২০২০ দুপুর ২:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: আসলে আমাদের দেশের মানূষ গুলো অমানবিক। হৃদয়হীণ। আগে এমন এতটা বদ ছিলো না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.