![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের সময়
এপ্রিল ১০, ২০১১, রবিবার : চৈত্র ২৭, ১৪১৭ । আপডেট বাংলাদেশ সময় রাত ১২:০০
সাইফুল ইসলাম তালুকদার: হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশনের সদস্য মনোয়ার হোসেন আকন্দ গতকাল বাসসকে একথা জানিয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি)’র দায়ের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে ৬ মে হাইকোর্ট ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনা তদন্তের জন্য এ ‘তদন্ত কমিশন’ গঠনের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর সরকার ৩ সদস্যের এ তদন্ত কমিশন গঠন করে। কমিশন সদস্য আকন্দ বলেন, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও জামায়াত জোট সরকারের সময় সংঘটিত সুনির্দিষ্ট ৪ হাজারের মতো অভিযোগ পেয়েছে তদন্ত কমিশন। এসবের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি। অভিযোগসমূহের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তদন্ত প্রতিবেদনটি বই আকারে প্রস্তুতের কার্যক্রম চলছে। ২৬ এপ্রিলের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করা হবে।
মনোয়ার হোসেন আকন্দ বলেন, কমিশন বিভিন্ন জেলায় সরেজমিনে তদন্ত করে মারাত্মক আহত ও নিহতদের স্বজনসহ নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার অনেক ব্যক্তির সাক্ষ্য নিয়েছে। কমিশন প্রধান সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ শাহবুদ্দিনের নেতৃত্বে প্রায় একবছরের অধিক সময়ে সরেজমিন তদন্তে এবং কমিশন কার্যালয়ে সরাসরি প্রাপ্ত অভিযোগ যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করেছে কমিশন। তিনি বলেন, এ ছাড়াও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট, প্রতিবেদন ও প্রকাশিত গ্রন্থ, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির দাখিল করা সংখ্যালঘু নির্যাতন শীর্ষক প্রতিবেদন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ‘নির্যাতনের দলিল-২০০১’ এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা সম্পাদিত গ্রন্থ ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদন কমিশনের একটি সম্পূর্ণ তদন্ত রিপোর্ট প্রণয়নে সহায়ক হয়েছে।
২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:১৫
নাভদ বলেছেন: ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সহিংস ঘটনার তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে কমিশনের অন্যতম সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনোয়ার হোসেন আখন্দ প্রতিবেদনের কপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন।
এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন জানান, অতিদ্রুতই এই প্রতিবেদনের সুপারিশ জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। আমরা এ প্রতিবেদন পড়ে দেখে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।
তিনি বলেন, এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থরা মামলা করতে সাহস পায়নি। প্রয়োজনে সরকার তাদের সহযোগিতা দেবে।
২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সারা দেশে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে তা তদন্তের জন্য হাইকোর্ট ২০০৯ সালে তদন্তের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী প্রাক্তন দায়রা জজ শাহাবুদ্দিনকে সভাপতি করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।
এই কমিশন ৬ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় দেওয়া হয়। কিন্তু ঘটনার ব্যাপকতার কারণে কমিশন কাজের সুবিধার্থে সময় বাড়ানোর আবেদন করলে তাদের একবছর সময় দেওয়া হয়।
কমিশনের ৫ খন্ডের প্রতিবেদনে ২০০১ এর নির্বাচন পরবর্তী সময় থেকে মাত্র ১ বছর ৩ মাসের ঘটনাগুলোর ওপর প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে ৩ হাজার ৬২৫টি সহিংস ঘটনার উল্লেখ ও এ ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
কমিশনের সদস্য মনোয়ার হোসেন আকন্দ জানান, প্রতিবেদনের প্রথম খণ্ডে ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডে ভোলা, তৃতীয় খণ্ডে বরিশাল ফরিদপুর অঞ্চল, চতুর্থ খণ্ডে খুলনা এবং ৫ম খণ্ডে রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকা অঞ্চলের সহিংস ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১১
৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:১৯
নাভদ বলেছেন:
২০০১ নির্বাচনোত্তর সহিংস ঘটনার প্রতিবেদন দাখিল
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল (শীর্ষ নিউজ ডটকম): ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সংঘটিত সহিংস ঘটনার ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ সংবলিত ৫ খণ্ডের প্রতিবেদন দাখিল করেছে জুডিশিয়াল তদন্ত কমিশন।
আজ রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুনের কাছে তাঁর মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিশনের সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এ কে এম মনোয়ার হোসেন আকন্দ।
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল। ওই সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন সম্পন্ন না হওয়ায় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করলে ৩ মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়।
প্রসঙ্গত; ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। ফলে ২০০৯ সালের ৬ মে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ সরকারকে নির্দেশ দেয় অভিযোগের তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করতে। বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ এবং জনস্বার্থে বিস্তারিত তদন্ত হওয়ার প্রয়োজনে সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বরে একটি জুডিশিয়াল তদন্ত কমিশন গঠন করে।
সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. শাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের অপর দুই সদস্য হচ্ছেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এ কে এম মনোয়ার হোসেন আকন্দ এবং বাংলাদেশ পুলিশের সহকারি কমিশনার (সিআইডি) মীর শহীদুল ইসলাম। ইতিমধ্যে কমিশনের মেয়াদ শেষ হলে ২৬ এপ্রিল ২০১১ পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তদন্ত কাজ শুরু করে তদন্ত কমিশন।
(শীর্ষ নিউজ ডটকম/এমএইচআর/সস/১৩.৪০ঘ.)
৪| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:২৩
নাভদ বলেছেন: Of murder, rape and tears
Bagerhat, Apr 16 (bdnews24.com) – A woman burst into tears describing her public humiliation eight years ago.
Her ordeal of Aug 21, 2002 still seemed vivid in her memory.
On Friday she was giving a statement to the commission formed to probe into criminal offence on minorities and the opposition workers after the 2001 elections.
The 35-year old woman narrated her tale of insult, harassment, assault and rape in front of the commission members as well as the press.
She said some hooligans, set upon her by former Rampal upazila BNP president Mizanur Rahman Majnu and one Bashar Kazi, beat her severely on her way from the bus stand.
In the process her cloths got ripped.
At one point the hooligans stripped her off her cloths and dragged into the local BNP office.
They snipped off her hair after another round of beating.
It was at this time that the police arrived.
Majnu and Bashar quickly took the policemen aside and evidently came to an understanding at a nearby tea stall.
In the meantime, the hooligans raped her, one after another.
She told the commission that when her case was in the Bagerhat court, BNP's former MP, MH Selim, alias Silver Selim, wanted to settle the matter.
He even forcibly persuaded her to sign a document to that effect at his residence.
Faced with frequent threats she could not produce witnesses and thus had to transfer her case, to Dhaka at first, and then to Khulna.
The case is currently under trial.
Later, district Awami League president and MP of Bagerhat-4 Mozammel Hossain gave details of an attack on him.
He said on Nov 11, 2001 some armed miscreants including Koshai Abdul Haque (butcher Abdul), Sohel, Shahnewaz and Dollar, led by district Juba Dal organising secretary Mahbubur Rahman, attacked a press conference.
The press conference at the residence of district AL secretary Fakir Mansur at Amlapara was held to protest against the oppression of the BNP-led alliance government.
Fourteen people including eight AL members and six journalists were badly injured, Mozammel said, showing his wounds.
He said a Bagerhat court ruled out the case citing that witnesses would not come forward although the police had submitted a chargesheet.
Hena Mallik, wife of a slain AL leader of Gourambha Union recounted how her husband was killed by the ruling party cadres.
She said her husband was beaten to death while he was fleeing from home.
They tied her up with a tree when she tried to resist them.
The commission, between 10am to 4pm, received 72 written statements which include 12 rape incidents and eight murders.
Probe commission chief, a retired district and sessions' judge, Sahabuddin on Friday took the statements at Bagerhat Circuit House. Two other members of the commission, deputy secretary Monwar Hossain Akhanda and additional deputy inspector general of police Mir Shahidul Islam, as well as Bagerhat-3 MP Syeda Habibun Nahar were present.
Monwar said terrible situation was prevailing in Bagerhat after the 2001 polls.
The government formed the commission at end of 2009 following a High Court order of May 6 that year.
bdnews24.com/corr/dd/msb/of/pks/ta/0000h.
৫| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:২৪
নাভদ বলেছেন: 4-member commission to probe 2001 violence
Thu, Dec 17th, 2009 8:57 pm BdST
Dhaka, Dec 17 (bdnews24.com) – The government has formed a four-member commission to investigate reported acts of killing, rape, looting and assault on minorities and Awami League workers following the 2001 general election won by BNP.
The decision might be published as a gazette next Sunday, law minister Shafique Ahmed told reporters at a press briefing at his office.
The minister said the commission is led by former district and sessions judge Mohammad Sahabuddin, with members former deputy IGP Nazrul Islam, home ministry's deputy secretary Abdul Hannan and superintendent of police (Special Branch) Mir Shahidul Islam.
The commission has been asked to submit its report after investigation within four months, officials said.
The High Court on May 6 asked the government to form a commission to probe post-poll violence, including killing, rape, attack and plundering, after the eighth parliamentary elections. It asked for a report by the commission in the next six months.
The bench of justices ABM Khairul Haque and Mohammad Momtaz Uddin Ahmed gave the orders upon a writ petition by Human Rights and Peace for Bangladesh.
Manzill Murshid, who earlier moved the writ petition on behalf of the rights group, sent a legal notice on Dec 9 to the secretaries for home, prime minister's office, cabinet division as well as the inspector general of police for not complying with the High Court directives.
Murshid also told reporters at the time that he would file a contempt of court petition against the government if it did not form the commission within seven days from the day notice served.
Countrywide post-poll violence, against Awami League supporters and minorities, was reported following the 2001 general elections, which were won with a large majority by a coalition led by BNP, now the main opposition party.
bdnews24.com/mk/adk/rah/1937h
৬| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:২৫
নাভদ বলেছেন: Politics blamed for 2001 violence
Prodip Choudhury
Dhaka, Apr 24 (bdnews24.com)—A judicial inquiry blames dissimilarity in political philosophy, endeavour for establishing communal ideology and administrative weaknesses of the caretaker government for violent repression on the minorities, especially the Hindus, and the opposition activists immediately after the 2001 national elections.
The oppressions, destroying the spirit of liberation war and of non-communalism, aimed at projecting Bangladesh as an extremist communal country before the world, said the report on the investigation into the countrywide violence perpetrated after the BNP-led alliance won the ballot.
The 1078-page report was submitted to home minister Shahara Khatun on Sunday, more than nine years after the incident and over one year after the formation of the commission.
Shahara said necessary steps would be taken in line with the recommendations and the report would be put to public domain.
The report mentioned several top BNP and Jamaat-e-Islami leaders as the instigators of the grisly incidents.
It said over 18,000 people were involved in 3,625 occurrences that had been investigated.
bdnews24.com/pc/ach/bd/1318h
৭| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:৪৩
নাভদ বলেছেন: নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা: আদালতের নির্দেশনায় ব্যবস্থা
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল (শীর্ষ নিউজ ডটকম): স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এড. সাহারা খাতুন বলেছেন, ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সংঘটিত সহিংস ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের মতামত নেবে সরকার।
আজ রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সংঘটিত সহিংস ঘটনার তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার উপস্থিত ছিলেন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন, অত্যাচার, খুন, লুটপাট, ধর্ষণ, বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড, হিন্দুদের উপর নির্যাতন বাড়ি-ঘর দখলসহ নানা নৈরাজ্য চালিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সংঘটিত সহিংস ঘটনার কারণ উদঘাটন ও এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার জন্য হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতে একটি রিট করে। রিটের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন।
তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ হবে কী না- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনটি আজ পাওয়া গেছে। এটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করার পর শিগগিরই জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। অভিযুক্তদের বিচার করা বিষয়ে তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনায় রয়েছে দোষীদের বিচারের বিষয়ে উচ্চ আদালতের মতামত নেয়া যেতে পারে। অভিযুক্তদের বিচারের জন্য সরকার উচ্চ আদালতের মতামত নেবে।
এ সময় তদন্ত কমিশনের সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এ কে এম মনোয়ার হোসেন আকন্দ তাদের পেশ করা প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বলেন, এতে মোট ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, সংঘর্ষের ঘটনায় রয়েছে ৩৫৫টি অভিযোগ। এছাড়া আরো ১ হাজার ৯৪৬টি অভিযোগ অস্পষ্ট থাকায় প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। ২০০৩-০৬ সাল পর্যন্ত ১৪ হাজার সহিংস ঘটনা ঘটেছে। ২০০১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ১৮ হাজার সহিংস ঘটনা ঘটেছে।
তদন্ত কমিশনের ১ হাজার ৭৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের ৫ম খণ্ডে রয়েছে- রিপোর্ট ও সুপারিশ (খ--১); ভোলা জেলার বিবরণ (খ--২); বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর জেলার বিবরণ (খ--৩); খুলনা বিভাগের বিবরণ (খ--৪); রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের বিবরণ (খ--৫)।
(শীর্ষ নিউজ ডটকম/এমএইচআর/সস/১৪.৩৫ঘ.)
৮| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:০৪
নাভদ বলেছেন:
সংখ্যালঘু নির্যাতন: জড়িত বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা
ঢাকা, এপ্রিল ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার প্রত্যক্ষ মদদে ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংস ঘটনা ঘটেছে বলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিশনের সদস্য সচিব একেএম মনোয়ার হোসেন আখন্দ।
ঘটনার প্রায় সাড়ে ৯ বছর এবং কমিশন গঠনের প্রায় সোয়া এক বছর পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়লো।
একটি মানবাধিকার সংগঠনের আবেদনে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপপুকে প্রধান করে তিন সদস্যের ওই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। পরের বছর ফেব্র"য়ারির প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর সার্কিট হাউস রোডের কার্যালয়ে কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে।
প্রতিবেদনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে যাদের নাম এসেছে, তারা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সহসভাপতি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সহসভাপতি ও সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী হাফিজউদ্দিন আহমেদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী তরিকুল ইসলাম, ফেনীর সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), সাবেক উপমন্ত্রী নাটোরের রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুল হাফিজ, বাগেরহাটের এমএ সেলিম (সিলভার সেলিম), পাবনার সেলিম রেজা হাবিব প্রমুখ।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, যশোরের সাখাওয়াত হোসেনের সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে এসেছে তদন্তে।
সহিংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর এসব নেতাসহ অন্যদের প্রচলিত আইনে বিচার করার জন্য সুপারিশ করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "ওই সময় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অবৈধ প্রভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিহ্নিত দলীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে থানায় বা আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেনি বা থানা অভিযোগ নেয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগ করা সম্ভব হলেও রাজনৈতিক প্রভাবে সঠিক তদন্ত না করেই আসামিদের অব্যাহতিসহ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
"আদালতেও চাপ প্রয়োগ করে দলীয় লোক বিবেচনায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিচারকালে সাক্ষীদের আদালতে হাজির হতে দেওয়া হয়নি। হুমকির মুখে মামলা প্রত্যাহারে বাদিকে বাধ্য করা হয়েছে।"
"গণহারে ওই সময় সরকার কথিত রাজনৈতিক মামলা বিবেচনা করে ৫৮৯০টি মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। এছাড়াও ৯৪৫টি মামলা থেকে বেছে বেছে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।"
এসব কারণে সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা আইনের আশ্রয় নেওয়া বা আদালতে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফৌজদারি আইনে কোনো অপরাধই তামাদি হয় না উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছু সুপারিশ এসেছে।
যেসব ঘটনায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে পুলিশি তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার পাশাপাশি মামলাগুলো রিভিশন বা আপিল করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
"ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আইন ও রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে অপরাধীদের বিচার করতেই হবে", বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/পিসি/এএল/এমআই/১৮৫০ ঘ.
৯| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:০৫
নাভদ বলেছেন: 'সংখ্যালঘুদের আস্থা ফেরাতে বিচার দরকার'
ঢাকা, এপ্রিল ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ২০০১ সালে নির্যাতনে জড়িতদের বিচার করা উচিত বলে মনে করেন কমিশন প্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপপু।
২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সংখ্যালঘু হিন্দু স¤প্রদায় ও বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেন তিনি।
মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন। দুদকে দায়িত্ব পাওয়ার পর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন প্রধানের পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন।
ঘটনার প্রায় সাড়ে নয় বছর এবং কমিশন গঠনের প্রায় সোয়া এক বছর পর রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন।
দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, "তদন্ত কমিশন যে প্রতিবেদন সরকারকে দিয়েছে, ওই প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।"
"সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা উচিত। কোনোভাবেই যেন তারা মনে না করেন সংখ্যালঘুরা এদেশে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক।"
সাহাবুদ্দিন বলেন, "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে এবং এ দেশের মানুষ যে আর্দশের ভিত্তিতে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো, তা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণে বারবার এখানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।"
"এসব নির্যাতন বন্ধ করতে হলে এই মুহূর্তেই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার ভিত্তিতে প্রণীত সংবিধানে ফিরে যেতে হবে", যোগ করেন তিনি।
তিনি বাংলাদেশের আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিও দাবি করেন।
নির্বাচনের পর ওই নির্যাতনের অন্যতম কারণ হিসেবে কমিশন তত্ত্বাধায়ক সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছে।
এ প্রসঙ্গে সাহাবুদ্দিন বলেন, "আমরা তদন্তে পেয়েছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই নির্যাতন শুরু হয়েছিলো। দলীয় আনুগত্যের কারণে ওই সরকার সংখ্যলঘু বা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন প্রতিরোধ বা বন্ধ করতে প্রশাসনিকভাকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।"
নির্বাচিত না হওয়ায় এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিতা না থাকায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের ইচ্ছে মাফিক কাজ করেছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, "এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।"
রোববার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন তদন্ত কমিশনের সদস্য সচিব একেএম মনোয়ার হোসেন আখন্দ।
মানবাধিকার সংগঠন 'হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ'- এর একটি আবেদনে আদালতের নির্দেশে ২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের ওই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। পরের বছর ফেব্র"য়ারির প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর সার্কিট হাউস রোডের কার্যালয়ে কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে।
আদালতে আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এটি ছিল একটি দুরূহ কাজ। কমিশন বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে কষ্ট স্বীকার করে কাজটি সম্পন্ন করেছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এটি একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে।"
প্রতিবেদনে সুপারিশ করা বিষয়য়ে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আদালতে যাবেন বলেন কথাও জানান তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/পিসি/এএল/এমআই/১৮৩৩ ঘ.
১০| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:০৫
নাভদ বলেছেন: বেশিরভাগ ঘটনারই তদন্ত হয়নি
ঢাকা, এপ্রিল ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সংখ্যালঘু হিন্দু স¤প্রদায় ও বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনার বেশিরভাগেরই তদন্ত করতে পারেনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন।
প্রতিবেদনে সহিংস ঘটনার সংখ্যা ১৮ হাজারেরও বেশি উল্লেখ করা হলেও কমিশন মাত্র ৩ হাজার ৬২৫টি ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এর কারণ হিসাবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- ঘটনার ব্যাপকতা, ঘটনার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়া, একটি মাত্র কমিশনের ওপর দায়িত্ব, লোকবল ও উপকরণ স্বল্পতা এবং নিরাপত্তার অভাবে ঘটনা শিকার হওয়া ব্যক্তিদের অভিযোগ জানাতে অনীহা।
অবশ্য কমিশন এসব ঘটনা তদন্তে প্রতি জেলায় একটি করে স্বল্প মেয়াদি কমিটি বা কমিশন গঠন করার সুপারিশ করেছে।
রোববার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন তদন্ত কমিশনের সদস্য সচিব একেএম মনোয়ার হোসেন আখন্দ।
ঘটনার প্রায় সাড়ে ৯ বছর এবং কমিশন গঠনের প্রায় সোয়া এক বছর পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়লো।
একটি মানবাধিকার সংগঠনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের রায়ে ২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রধান করে তিন সদস্যের ওই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। পরের বছর ফেব্র"য়ারির প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর সার্কিট হাউস রোডের কার্যালয়ে কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "২০০১ সালের নির্বাচনের সহিংস নির্যাতনের ঘটনার বেশিরভাগ কমিশনের পক্ষে তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সূত্র থেকে কমিশন জানতে পেরেছেন ওই সময় ঘটা সহিংস ঘটনার সংখ্যা ১৮ হাজারেরও বেশি। তবে কমিশনের কছে অভিযোগ জমা পড়ে ৫৫৭১টি। এর মধ্যে থেকে ৩৬২৫টি সহিংস ঘটনা তদন্ত করেছে কমিশন।
"কমিশনের সামর্থ্য, অপ্রতুল জনবল ও নানা সীমাবদ্ধতা নিয়েও কমিশন ৩৬২৫টি সহিংস ঘটনার তদন্ত করে একটি দুরূহ কাজ করতে সক্ষম হলেও বাস্তব কারণেই বহু সংখ্যক ঘটনা অন্তরালেই থেকে গেছে।"
এর ব্যাখ্যায় প্রতিবেদনে বলা হয়, "কমিশন মনে করে, একটি কমিশনের পক্ষে এমন ব্যাপক ঘটনার তদন্ত শুধু বাংলাদেশেই নয়, সমগ্র উপমহাদেশেও নেই।"
তবে পুরো কাজ সম্পন্ন করতে প্রতি জেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী পুলিশ সুপার এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে একটি করে স্বল্প মেয়াদের তদন্ত কমিটি/কমিশন গঠন করার সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগীয় কমিশন।
কমিশন বলেছে, "তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্বুদ্ধ করে অভিযোগ সংগ্রহ ও তদন্ত করে অনূর্ধ্ব তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে। জেলাভিক্তিক তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে ওই সময়ের সহিংস ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তরূপ দেওয়া সম্ভব।"
এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি মনিটরিং সেল স্থাপন করারও সুপারিশ এসেছে।
১১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:০৬
নাভদ বলেছেন:
পাঁচ খণ্ডে প্রায় ১১শ' পৃষ্ঠার প্রতিবেদন
ঢাকা, এপ্রিল ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সংখ্যালঘু হিন্দু স¤প্রদায় ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করে প্রায় ১১শ' পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন।
রোববার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন তদন্ত কমিশনের সদস্য সচিব একেএম মনোয়ার হোসেন আখন্দ।
ঘটনার প্রায় সাড়ে ৯ বছর এবং কমিশন গঠনের প্রায় সোয়া এক বছর পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়লো।
একটি মানবাধিকার সংগঠনের আবেদনে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপপুকে প্রধান করে তিন সদস্যের ওই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। পরের বছর ফেব্র"য়ারির প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর সার্কিট হাউস রোডের কার্যালয়ে কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে।
পাঁচ খণ্ডের ওই প্রতিবেদনটি এক হাজার ৭৮ পৃষ্ঠার। এর প্রথম খণ্ডে কমিশন গঠনের ইতিবৃত্ত, লেখচিত্রসহ সহিংসতার ধরন ও প্রকার, সহিংস ঘটনার কিছু উদাহরণ, কারণ ও পটভূমি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
এছাড়াও এই খণ্ডে কমিশনের কার্যক্রম, সারসংক্ষেপ, প্রাসঙ্গিক মতমত ও সুপারিশ, কমিশন গঠনের রিট আবেদনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলা, আওয়ামী নেতাসহ ২০০৪ সালের ২১ অগাস্টে শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার মতো স্পর্শকাতর কিছু সহিংস ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
অন্য চারটি খণ্ডে ঘটনার নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের অভিযোগ, ঘটনার বর্ণনা এবং প্রাথমিকভাবে জড়িতদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/পিসি/এএল/এমআই/১৮৪০ ঘ.
১২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:৩৪
নাভদ বলেছেন:
বিএনপি-জামায়াত নেতারা সংখ্যালঘু নির্যাতন করেন২০০১-এর নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা : বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার প্রত্যক্ষ মদদে ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংস ঘটনা ঘটে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় এবং তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের মদদদাতা হিসেবে কমিশন বিএনপি-জামায়াত জোটের বেশ কয়েকজন নেতাকে চিহ্নিতও করেছে। তাঁদের মধ্যে আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাবেক পরিবেশমন্ত্রী তরিকুল ইসলাম, বান্দরবানের সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভঁূইয়া, বিএনপি নেতা হাফিজ ইব্রাহীম, সাবেক এমপি নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
প্রতিবেদনে বিএনপি-জামায়াত জোটের ১৮ হাজার নেতা-কর্মীকে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই প্রত্যক্ষভাবে সহিংসতায় অংশ নেন। চিহ্নিত এসব নেতা-কর্মীকে আইনের আওতায় নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
কমিশনের পক্ষে কমিশনের সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনোয়ার হোসেন আকন্দ গতকাল রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সহিংসতায় আক্রান্তদের মধ্যে যাঁরা এখনো মামলা করেননি তাঁদের দিয়ে মামলা করানোর সুপারিশ করা হয়েছে। ভয় বা অন্য কোনো কারণে কেউ মামলা প্রত্যাহার করে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা পরিবারকে দিয়ে মামলাটি আবার শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও সুপারিশ রয়েছে কমিশনের। এ ছাড়া ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য প্রতি জেলায় একটি করে কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশন তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, ওই সহিংসতার অন্যতম কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক বিভাজন ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। মাঠপর্যায়ের প্রশাসনও বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে। সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণের ফলে এত বড় ঘটনা ঘটেছে।
কমিশন নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের পর তাৎক্ষণিকভাবে সংযত আচরণ করা, পরাজয় মেনে নেওয়া, জয়ী প্রার্থীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন, প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করাসহ প্রতিপক্ষের ক্ষতি করার মনোবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসারও সুপারিশ করেছে। কমিশন মন্তব্য করেছে, বারবার সহিংস ঘটনা ঘটতে থাকলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কমিশন ২০০১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনা আমলে নিয়েছে। কমিশনের হাতে পাঁচ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ আসে। এ সবের মধ্যে রাজনৈতিক হত্যা ৩৫৫টি, ধর্ষণসহ গুরুতর আঘাতের ঘটনা ছিল তিন হাজার ২৭০টি। কমিশন তদন্ত করেছে তিন হাজার ৬২৫টি ঘটনা ।
প্রতিবেদনে দ্বিজাতিতত্ত্ব, ভারত-পাকিস্তান বিভক্তি, পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্মীয় ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছে কমিশন। একই সঙ্গে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা হত্যার পর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস, উগ্র ধর্মীয় নীতি প্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গও তুলে ধরা হয়েছে। ইসলামের নামে দেশজুড়ে জঙ্গিদের হামলা থেকে শুরু করে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা একই সূত্রে গাঁথা বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি এক হাজার ৭৮ পৃষ্ঠার। এর প্রথম খণ্ডে রিপোর্ট ও সুপারিশ রয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডে ভোলা জেলার, তৃতীয় খণ্ডে বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর জেলার, চতুর্থ খণ্ডে খুলনা বিভাগ এবং পঞ্চম খণ্ডে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তুলে ধরা হয়েছে। পাঁচ খণ্ডের এ প্রতিবেদনে লেখচিত্রসহ সহিংসতার ধরন ও প্রকার, সহিংসতার উদাহরণ, কারণ, পটভূমি, সারসংক্ষেপ, প্রাসঙ্গিক মতামত ও সুপারিশ রয়েছে।
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে সংঘটিত সহিংস ঘটনার কারণ উদঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ উচ্চ আদালতে রিট করেন। তাঁর এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জুডিশিয়াল তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
পরে সাবেক জেলা দায়রা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনোয়ার হোসেন আখন্দ ও ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মীর শহীদুল ইসলামের সমন্বয়ে কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের সদস্যরা মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে গত ১৩ মার্চ প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেন। একই দিনে কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে যোগদান করায় অপর দুই সদস্য আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পেশ করেন।
এর আগে ২০১০ সালের মার্চ মাসে কমিশন ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা, হত্যা, লুট, অগি্নসংযোগ, ধর্ষণ, বসতবাড়ি উচ্ছেদ, জমি দখল_এসব মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-উপাত্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাক্ষ্য-প্রমাণ দেওয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নাগরিক নেতা-কর্মীদের ওপর চরম নিপীড়ন চালানো হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এসব সহিংসতায় চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিল বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।
তাণ্ডবলীলার প্রমাণ এ রিপোর্ট : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রতিবেদন পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, হাইকোর্টের নির্দেশে কমিশন গঠন করা হয়েছে। ৬ মাসে তাদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। এক বছরেও তা পারেনি। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর যে তাণ্ডবলীলা চলেছে এ রিপোর্ট তারই প্রমাণ। বিএনপি-জামায়াত জোট সম্মিলিতভাবে এসব করেছে। কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে তা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর তো করেছেই, সেসব ঘরের ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিশনের প্রতিবেদন হাইকোর্টে দেওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই, তবে প্রয়োজন হলে আদালতকে জানানো হবে।
স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার সাংবাদিকদের বলেছেন, কমিশনের যেসব সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে।
১৩| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:৪২
নাভদ বলেছেন: ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংসতার তদন্ত প্রতিবেদন। দায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্বল প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ
ওটা ছিল ‘মানবিক দুর্যোগ’
রোজিনা ইসলাম | তারিখ: ২৫-০৪-২০১১
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনোত্তর সহিংসতাকে ‘মানবিক দুর্যোগ’ উল্লেখ করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ধরনের সহিংস ঘটনার জন্য ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্বল প্রশাসন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দায়ী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দলীয় আনুগত্যের কারণে সে সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্যাতন বন্ধ করতে প্রশাসনিকভাবে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আবার জনগণের কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো জবাবদিহি না থাকায় খেয়ালখুশিমতো প্রশাসন চালিয়েছে। বিশেষ করে, ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রশাসনে রদবদলের মাধ্যমে সহিংস ঘটনার জন্য পথ সৃষ্টি করে গেছেন।
উল্লেখ্য, ওই সময় প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন লতিফুর রহমান। যোগাযোগ করা হলে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘তখন আমাদের কাছে যেসব অভিযোগ এসেছিল, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’ তদন্ত প্রতিবেদনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্বল প্রশাসনকে দায়ী করার বিষয়টি ঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনটি দুর্বল।
২০০১ সালের ১ অক্টোবরের সাধারণ নির্বাচনের পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর একের পর এক হামলা হতে থাকে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, হাত-পা কেটে নেওয়া এবং খুন-ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন গতকাল প্রতিবেদন পেশ করেছে।
প্রসঙ্গত, এ ধরনের নৃশংস ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন আদালত। এরপর ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের দুই সদস্য হলেন উপসচিব মনোয়ার হোসেন আখন্দ ও ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মীর শহিদুল ইসলাম।
জানা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে হত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই গণবিজ্ঞপ্তি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ডিআইজিদের কাছে পাঠানো হয়। তদন্ত কমিশন মাঠপর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
গতকাল রোববার বেলা দেড়টায় তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের সদস্য মনোয়ার হোসেন আখন্দ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। কমিশন গঠনের প্রায় এক বছর পর প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলো। তবে প্রতিবেদনে কী আছে, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা কমিটির সদস্যরা।
তদন্ত কমিশনের সুপারিশে ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর ঘটনার জন্য দায়ী অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে কমিশনের সদস্য মনোয়ার হোসেন আখন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ওই সময়ের সহিংস ঘটনাগুলো একেকটি ‘মানবিক দুর্যোগ’। এ দুর্যোগের ধারা থেকে বের হয়ে প্রশাসন দলীয়করণমুক্ত হবে—এটাই কমিশনের প্রত্যাশা। তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই যেসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসার কারণেই এসব ঘটনা ঘটেছে।
তদন্ত প্রতিবেদন: সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাঁচ খণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদনটি এক হাজার ৭৮ পৃষ্ঠার। তদন্তকালে কমিশন মোট অভিযোগ পেয়েছে পাঁচ হাজার ৫৭১টি। ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া অভিযোগের সংখ্যা তিন হাজার ৬২৫। এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ৩৫৫টি এবং লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, পঙ্গুত্ব, গুরুতর আঘাত, সম্পত্তি দখল ও অন্যান্য গুরুতর অভিযোগ তিন হাজার ২৭০টি। অভিযোগ বাতিল করা হয়েছে এক হাজার ৯৪৬টি। কমিশনের তদন্ত করা তিন হাজার ৬২৫টি ঘটনায় ১৮ হাজারেরও বেশি লোক জড়িত। কমিশনের প্রতিবেদনে সহিংস ঘটনার কিছু উদাহরণ, কারণ ও পটভূমি, সহিংসতার ধরন, সারসংক্ষেপ, প্রাসঙ্গিক মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের বিবরণ আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও সাধারণ মানুষের ওপর সহিংস ঘটনার ব্যাপারে তদন্ত কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এটি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। তদন্ত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী দোষী ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। সহিংস ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি এখন মামলা করতে চান, সরকার তাঁদের সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, পুরো প্রতিবেদনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো যাবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটায়। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের খুন করে। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও বসতবাড়ি উচ্ছেদ, জমি দখল করে। নারী ধর্ষণসহ অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়ন চালায়। সংখ্যালঘুদের এ দেশ থেকে বিতাড়িত করতে যা করা দরকার, তা-ই তারা করেছিল।
চিহ্নিত দায়ী ব্যক্তি:
প্রতিবেদনে কিছু রাজনৈতিক নেতাকেও দায়ী করা হয়েছে। তাঁরা হলেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আবদুস সালাম পিন্টু, জয়নাল আবেদীন, আবদুল হাফিজ, এম এ এইচ সেলিম ও হাফিজ ইব্রাহিম। সূত্রমতে, তদন্ত প্রতিবেদনে এমন আরও কয়েকজনের নাম রয়েছে।
কারণ ও পরিপ্রেক্ষিত:
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেতা-কর্মীদের পাঁচ হাজার ৮৯০টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে উল্লেখ করে তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। রাজনৈতিক আক্রোশের কারণে কারও হাত-পা কেটে ফেলা হয়, কারও চোখ তুলে ফেলা হয়, অনেক নারীকে ধর্ষণ করা হয় মায়ের সামনেই।
কমিশন জানায়, ২০০১ সালে নির্বাচনোত্তর সহিংসতার ঘটনায় যেসব ব্যক্তির ওপর আক্রমণ করা হয়েছিল, লুটপাট চালানো হয়েছিল, গণধর্ষণ করা হয়েছিল, তাঁরা থানায় বা আদালতে অভিযোগ দায়ের পর্যন্ত করতে পারেননি। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করতে পারলেও রাজনৈতিক কারণে তদন্ত করা হয়নি।
সুপারিশ:
কোনো মামলা হয়ে থাকলে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে। অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে—এ ধরনের সহিংস ঘটনা তদারকি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি সেল গঠন করা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা করা, রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে পরিবর্তন আনা, নির্বাচনে জয়লাভের পর পরাজিতদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব, জয়লাভের পর তাৎক্ষণিক বিজয়োল্লাস পরিহার করা, জনগণের রায়কে স্বীকৃতি দেওয়া, স্থানীয় প্রশাসনকে দলীয়করণ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা, এসব ঘটনা তদন্তের জন্য প্রতি জেলায় একটি করে স্বল্পমেয়াদি কমিটি বা কমিশন গঠন করা ইত্যাদি।
১৪| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:৪৫
নাভদ বলেছেন: দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার : ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার তদন্ত প্রতিবেদন পেশ
সমকাল (তারিখ: ২৫-০৪-২০১১/ প্রথম পৃস্ঠা)
২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংস ঘটনা তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সংখ্যালঘু ও সাধারণ মানুষের ওপর সহিংস ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। তদন্ত কমিশনের সদস্য সচিব একেএম মনোয়ার হোসেন
আখন্দ প্রতিবেদনটি জমা দেন। ঘটনার প্রায় সাড়ে ৯ বছর পর এবং কমিশন গঠনের প্রায় সোয়া এক বছর পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ল।
পাঁচ খণ্ডের এ প্রতিবেদনে ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে খুনের ঘটনা ৩৫৫টি. ধর্ষণ, লুটপাট, অগি্নসংযোগসহ গুরুতর অপরাধের ৩ হাজার ২৭০টি ঘটনা চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ২০০১ থেকে ২০০২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে।
১ হাজার ৭৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সুপারিশ অনুযায়ী সরকার শিগগিরই এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। প্রতিবেদনও জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।
তদন্ত কমিশনের এক সদস্য এ প্রতিবেদকের কাছে প্রতিবেদনের দু'একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পরপরই নিজের গোয়ালের গরু জবাই করে মেজবান দেন যশোরের চৌগাছায় ভাদ্রা গ্রামের আবদুল বারিক। তার ছিল না কোনো রাজনৈতিক পরিচয়। তবে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার একান্ত ভক্ত আবদুল বারিকের ওপর ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসায় নেমে আসে নিষ্ঠুরতা। বিএনপি ক্যাডাররা আবদুল বারিকের দুটি পা কেটে নেয় ও তার দুই ছেলেকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। আওয়ামী লীগের বিজয়ের আনন্দে গরু জবাই করে মেজবান খাওয়ানোয় তার ওপর এভাবে নির্যাতন করা হয়।
অন্যদিকে বাগেরহাটের ঘটনাটি আরও করুণ। বৃদ্ধ এক বাবার সামনে মেয়েকে গণধর্ষণ করে বিকৃত উল্লাসে মেতে ওঠে বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা। ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ভুক্তভোগীর পরিবার গেলেও কোনো বিচার পায়নি। উল্টো ক্যাডাররা তাদের দেশত্যাগের হুমকি দেয়। ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংসতার অনেক চিত্রই ছিল এমন।
সূত্র জানায়, ৫ খণ্ডের ওই প্রতিবেদনে লেখচিত্রসহ সহিংসতার ধরন ও প্রকার, সহিংস ঘটনার কিছু উদাহরণ, কারণ ও পটভূমি, সারসংক্ষেপ, প্রাসঙ্গিক মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। কমিশন প্রতিবেদনে সারাদেশে সংঘটিত ওইসব নির্যাতনের ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ কয়েক নেতার প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে উলেল্গখ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, অত্যাচার, খুন, লুটপাট, ধর্ষণ, বাড়িতে অগি্নসংযোগ, হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, বাড়িঘর দখলসহ নানা নৈরাজ্য চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সংঘটিত সহিংস ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন ও এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার জন্য হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতে একটি রিট করে। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন।
তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে কি-না_ এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনটি আজ পাওয়া গেছে। এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করার পর শিগগিরই জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। অভিযুক্তদের বিচার করার বিষয়ে তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনায় রয়েছে দোষীদের বিচারের বিষয়ে উচ্চ আদালতের মতামত নেওয়া যেতে পারে। অভিযুক্তদের বিচারের জন্য সরকার উচ্চ আদালতের মতামত নেবে।
রিট মামলায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার আলোকে সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিন সদস্যের একটি 'জুডিসিয়াল তদন্ত কমিশন' গঠন করে। কমিশনের প্রধান ছিলেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। অপর দুই সদস্য হলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব একেএম মনোয়ার হোসেন আকন্দ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মীর শহীদুল ইসলাম। ইতিমধ্যে কমিশনের মেয়াদ শেষ হলে ২৬ এপ্রিল ২০১১ পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তদন্ত কাজ শুরু করে তদন্ত কমিশন। সচিব বলেন, প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিবেদন সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুস সোবহান শিকদার বলেন, প্রতিবেদনটি তৈরিতে কোনো বিষয় রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদেরই শনাক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদন দাখিলের পর কমিটির সদস্য উপ-সচিব একেএম মনোয়ার হোসেন আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, ৫ খণ্ডের প্রতিবেদনের প্রথম খণ্ডে রিপোর্ট ও সুপারিশ পাতা সংখ্যা ১-১২১। দ্বিতীয় খণ্ডে ভোলা জেলার বিবরণ, পাতা ১ থেকে ২৭৫ পৃষ্ঠা। তৃতীয় খণ্ডে বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর জেলার বিবরণ, পাতা সংখ্যা ১-১৬৩। চতুর্থ খণ্ডে খুলনা বিভাগের বিবরণ, পাতা সংখ্যা ১-১৬৩। পঞ্চম খণ্ডে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেটের বিবরণ, পাতা ১-৩৫৬। মোট পাতার সংখ্যা ১ হাজার ৭৮টি। তিনি বলেন, ৫ হাজার ৫৭১টি ঘটনার মধ্যে ৩৫৫টি খুনের ঘটনা। ধর্ষণ, লুটপাট, অগি্নসংযোগসহ গুরুতর অপরাধের সংখ্যা ৩ হাজার ২৭০টি। আর এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ২০০১ থেকে ২০০২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে।
সূত্র জানায়, প্রতিবেদনে অভিযোগকারী, ঘটনার বিবরণ ও আসামিদের নাম-ঠিকানা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ছবি সংযুক্ত রয়েছে। এ প্রতিবেদন বাংলাদেশের বৃহত্তম তদন্ত প্রতিবেদন।
সূত্র জানায়, কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে ৫ হাজার ৫৭১টি। কমিশনের তদন্ত করা এসব ঘটনায় ১৮ হাজারেরও বেশি লোক জড়িত। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর হিন্দু সল্ফপ্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অনেক ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়। হত্যা, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, লুটপাটের এসব ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় বিএনপি-জামায়াত জোটকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবতী সহিংস নির্যাতনের ঘটনার বেশিরভাগ কমিশনের পক্ষে তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। এসব ঘটনা তদন্তের জন্য কমিশন প্রতি জেলায় একটি করে স্বল্পমেয়াদি কমিটি বা কমিশন গঠন করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। কমিশনের তদন্তের ভিত্তিতে নতুন মামলা দায়ের, পুরনো মামলা পুনরুজ্জীবিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিতেও সরকারকে সুপারিশ করা হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী দলের শীর্ষ নেতার নির্দেশে দেশে কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি উলেল্গখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এভাবে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা যদি সচেষ্ট থাকেন, তাহলে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতার কথা উলেল্গখ করে বলা হয়েছে, নির্বাচিত না হওয়ায় এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিতা না থাকায় তারা যা খুশি তাই করে থাকেন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটাই হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই নির্যাতনটা শুরু হয়। দলীয় আনুগত্যের কারণে ওই সরকার সংখ্যালঘু বা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন প্রতিরোধ বা বন্ধ করতে প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
প্রশাসনিক রদবদলের মধ্য দিয়ে তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা ২০০১ সালে নির্যাতনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
এ তদন্ত কমিশন ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সেন্ট্রাল সার্কিট হাউসে কার্যক্রম শুরু করে। একই বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে সহিংস ঘটনা হত্যা, লুট, অগি্নসংযোগ, ধর্ষণ, বসতবাড়ি উচ্ছেদ, জমি দখল ইত্যাদি মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-উপাত্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রদানের জন্য একটি 'গণবিজ্ঞপ্তি' পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করে। এরপর থেকেই কমিশন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক অভিযোগ ও আবেদনপত্র পেয়েছে।
এছাড়াও কমিশন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তার জন্য রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠনের কাছে অনুরোধ করে চিঠি পাঠায়। কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন ও সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করে। এছাড়াও কমিশনে প্রাপ্ত অভিযোগ ও ঘটনার বিবরণ যাচাই-বাছাই করে কমিশনের সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘটনাস্থল সরেজমিন পরির্দশন করেন।
১৫| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:৪৯
নাভদ বলেছেন:
2001 Post-Polls Violence: Focus on serious crimes
Offences include 3,270 rapes, 355 murders by BNP-Jamaat cadres; probe report handed over to govt
Staff Correspondent
The judicial commission probing the 2001post-polls violence has found evidence of over 3,625 incidents of major crime including killing, rape, arson and looting by cadres of the then ruling BNP-Jamaat alliance in 15 months since October that year.
"The commission considered a total of 3,625 major offences. Of these, 355 are politically motivated murders while 3,270 are incidents of rape, arson, looting and such other atrocities,” said Monwar Hossain, member-secretary of the commission, while handing over the report to Home Minister Sahara Khatun yesterday.
The 1,078-page report has five parts describing atrocities committed in Rajshahi, Khulna, Chittagong, Sylhet, Barisal, Bhola, Mymensingh, Jhalokathi, Jessore and other areas of the country.
The report was not made public yesterday.
Commission sources said the probe found a number of BNP and Jamaat-e-Islami leaders were behind the oppression on minorities and the then opposition Awami League activists. They (leaders) included Delawar Hossain Sayedee, Altaf Hossain Chowdhury, Major (retd) Hafiz Uddin Ahmed, Ruhul Quddus Talukdar Dulu, Hafiz Ibrahim and Zahir Uddin Swapon.
The Daily Star had run a series of reports on the post-polls criminal incidents.
The judicial commission had also received over 14,000 complaints of post-polls violence during 2003 to 2006 but it did not consider those as its time-frame did not include this period, the sources said.
It has recommended bringing those involved in the post-polls violence to book, and changes in political culture.
The recommendations include trying the culprits, resuming cases against them if those were withdrawn and giving financial aid to the victims of violence and taking steps to stop recurrence of such incidents.
Seeking anonymity, a member of the commission said they also recommended creating a congenial atmosphere for practising democracy and changing the mindset to accept polls results both in cases of victory and defeat.
The commission members visited the spots of atrocities, collected evidence, took photographs and collected details of the accused and the victims with help from the local authorities.
Asked about the report, the home minister told journalists, “We will surely make it public within a day or two.”
A commission member told journalists they heard about brutalities which are beyond imagination. Citing an example, he referred to an AL activist in Jessore whose legs were severed as he slaughtered a cow and entertained people after the candidate he had backed won the election.
He also spoke of an incident in which a girl was gang raped and then brutally tortured. In another incident, a girl in Bagerhat was raped by a gang ignoring request from her father.
Besides, all the fingers of an AL activist at Gafforgaon in Mymensingh were cut off, he added.
Sahara Khatun said all those accused of violence are leaders and activists of BNP and Jamaat. Legal action will be taken against them on the basis of the probe report.
She also said, if necessary, they will seek High Court directives in this regard.
Asked about the allegations, Hafiz Uddin said, “Those are politically motivated. No violence took place in my area after the polls.”
He however admitted that a minority family fell victim to violence, and said he immediately informed police who arrested those responsible and brought them to book.
But this incident was not a politically motivated one, he added.
Zahir Uddin Swapon said some incidents of violence occurred in his area following the polls but those were not retaliation of the violence resorted to by AL activists after the 1996 polls.
He claimed he tried utmost to defuse the violence in his constituency in 2001.
Altaf Hossain Chowdhury said not a single incident of repression on AL leaders or minority people took place in his area following the 2001 polls.
The former air force chief resented that said no member of the commission took his version on the allegations.
He also said incidents of violence took place in different char areas in his region during the period of harvesting paddy but those were not linked to polls or politics.
The other leaders concerned could not be contacted.
The three-member commission was formed on December 27, 2009, to probe the atrocities against minorities and supporters of opposition parties after the 2001 polls.
Headed by retired district judge Mohammad Sahabuddin, the commission includes Deputy Secretary of the Home Ministry Monowar Hossain Akand and Special Superintendent of Criminal Investigation Department Mir Shahidul Islam.
The HC had directed the government to form a judicial commission following a writ petition filed on behalf of Human Rights and Peace for Bangladesh on May 6, 2009.
১৬| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:৫২
নাভদ বলেছেন:
মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধ্বংস করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য
লেখক: ইত্তেফাক রিপোর্ট | রবি, ২৪ এপ্রিল ২০১১, ১১ বৈশাখ ১৪১৮
রাজনৈতিক দর্শনগত ভিন্নতা, সামপ্রদায়িক ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতাকেই ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সমপ্রদায় ও তখনকার বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন। কমিশন গতকাল রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুনের কাছে ১ হাজার ৭৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সুপারিশ অনুযায়ী সরকার শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। দোষীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশও করা হবে। সহিংস ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যদি এখন মামলা করতে চান, সরকার তাদের সহযোগিতা করবে।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই নির্যাতনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো মুক্তিযুদ্ধ ও অসামপ্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংস করে একটি উগ্র-সামপ্রদায়িক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করা। ঘটনার প্রায় সাড়ে ৯ বছর এবং কমিশন গঠনের প্রায় সোয়া এক বছর পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়লো। ৫ খণ্ডের ওই প্রতিবেদনে লেখচিত্রসহ সহিংসতার ধরন ও প্রকার, সহিংস ঘটনার কিছু উদাহরণ, কারণ ও পটভূমি, সারসংক্ষেপ, প্রাসঙ্গিক মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। কমিশন প্রতিবেদনে সারাদেশে সংঘটিত ওইসব নির্যাতনের ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ কয়েকজন নেতার প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। কমিশনের তদন্ত করা ৩৬২৫টি ঘটনায় ১৮ হাজারেরও বেশি লোক জড়িত।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর হিন্দু সমপ্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অনেক ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়। হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের এসব ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় বিএনপি-জামায়াত জোটকে। একটি মানবাধিকার সংগঠনের আবেদনে ২০০৯ সালের ৬ মে ২০০১ সালের নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপর ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এ কে এম মনোয়ার হোসেন আকন্দ তদন্ত প্রতিবেদনটি গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাখিল করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সহিংস নির্যাতনের ঘটনার বেশিরভাগ কমিশনের পক্ষে তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সূত্র থেকে কমিশন জানতে পেরেছেন ওই সময় সংঘটিত সহিংস ঘটনার সংখ্যা ১৮ হাজারেরও বেশি। কমিশনের কছে অভিযোগ জমা পড়ে ৫৫৭১টি। এর মধ্যে থেকে ৩৬২৫টি সহিংস ঘটনা তদন্ত করে কমিশন। এসব ঘটনা তদন্তের জন্য কমিশন প্রতি জেলায় একটি করে স্বল্প মেয়াদি কমিটি বা কমিশন গঠন করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। কমিশনের তদন্তের ভিত্তিতে নতুন মামলা দায়ের, পুরানো মামলা পুনরুজ্জীবিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিতেও সরকারকে সুপারিশ করা হয়েছে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী দলের শীর্ষ নেতার নির্দেশে দেশে কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এভাবে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা যদি সচেষ্ট থাকেন, তাহলে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব। বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নির্বাচিত না হওয়ায় এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিতা না থাকায় তারা যা খুশি তাই করে থাকেন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটাই হয়েছিলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই নির্যাতনটা শুরু হয়। দলীয় আনুগত্যের কারণে ওই সরকার সংখ্যালঘু বা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন প্রতিরোধ বা বন্ধ করতে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
প্রশাসনিক রদবদলের মধ্য দিয়ে তত্কালীন প্রধান উপদেষ্টা ২০০১ সালে নির্যাতনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বিরোধী আন্দোলন, দ্বি-জাতি তত্ত্ব, ভারত-পাকিস্তান বিভক্তি, পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্মীয় ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা, ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস, উগ্র ধর্মীয় নীতি প্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং জঙ্গিবাদের উত্থানের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। ইসলামের নামে সারাদেশে জঙ্গিবাদি হামলা থেকে শুরু করে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় গ্রেনেড হামলা একই সূত্রে গাঁথা বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংস ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন নেয়ার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সংখ্যালঘু সমপ্রদায় ও সাধারণ মানুষের ওপর সহিংস ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জাতির সামনে শিগগির পেশ করা হবে। তিনি বলেন, তদন্ত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী দোষী ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। এ সময় স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান শিকদার উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটায়। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের খুন করে। সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ এবং বসতবাড়ি উচ্ছেদ, জমি দখল করে। নারী ধর্ষণসহ অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়ন চালায়। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সংখ্যালঘুদের এ দেশ থেকে বিতাড়িত করতে যা করা দরকার, তাই করেছিল।
স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান শিকদার বলেন, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংঘটিত সহিংস ঘটনার কারণ উদঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে একটি মানবাধিকার সংস্থা হাইকোর্টে রিট (পিটিশন নম্বর-৭৪৯/২০০৯) দায়ের করে। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে সরকার তিন সদস্যের একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন করে। কমিশনের প্রধান সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। এছাড়া অপর দুই সদস্য হলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনোয়ার হোসেন আকন্দ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মীর শহীদুল ইসলাম। প্রতিবেদনে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের বিবরণ আলাদাভাবে পাঁচ খণ্ডে উপস্থাপন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিশনের সদস্য মনোয়ার হোসেন আকন্দ বলেন, এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকালে সারাদেশ থেকে পাঁচ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ৩৫৫টি এবং লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তিন হাজার ২৭০টি। এছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ১৪ হাজারের মতো সহিংস ঘটনা ঘটেছে।
১৭| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:৫৪
নাভদ বলেছেন: তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন: ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের পর ১৮ হাজার সহিংস ঘটনা ঘটেছে
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় ১৮ হাজার সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে খুন, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, লুট ইত্যাদি রয়েছে। এ ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের কাছে ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। কমিশন ৩ হাজার ৬২৫টি অভিযোগ তদন্ত করেছে। তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্ত কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তদন্ত কমিশন গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে। কমিশনের সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনোয়ার হোসেন আখন্দ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ১ হাজার ৭৮ পৃষ্ঠাব্যাপী এ প্রতিবেদন জমা দেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান শিকদার ও ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মীর শহীদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। তবে ক্ষমতা গ্রহণের পর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নানা ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ সময় নির্যাতনের অনেক ঘটনা সংবাদ মাধ্যমেও প্রকাশ হয়। সে সময় হত্যা, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ঘটায় বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসব ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করা হয়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ সালে ৬ মে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী ঘটনায় বিচার দাবি করে হাইকোর্টে রিট করেন। সে রিটের প্রেক্ষিতে এ নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপর ২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে কমিশন প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
তদন্ত কমিশন গঠনের একবছর চার মাস পর গতকাল তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে। ১ হাজার ৭৮ পৃষ্ঠাব্যাপী এ তদন্ত প্রতিবেদনটি ৫ খ-ে বিভক্ত। প্রথম খ-ে (১ থেকে ১২১ পৃষ্ঠা) রিপোর্ট ও সুপারিশ রয়েছে। দ্বিতীয় খ-ে (১ থেকে ২৭৫ পৃষ্ঠা) ভোলা জেলার বিবরণ। তৃতীয় খ-ে (১ থেকে ১৬৩ পৃষ্ঠা) বরিশাল, ঝালকাঠী, পিরোজপুর জেলার বিবরণ। চতুর্থ খ-ে (১ থেকে ১৬৩ পৃষ্ঠা) খুলনা বিভাগের বিবরণ। পঞ্চম খ-ে (১ থেকে ৩৫৬ পৃষ্ঠা) রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের বিবরণ।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের সহিংস নির্যাতনের ঘটনার বেশিরভাগ কমিশনের পক্ষে তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে কমিশন জানতে পেরেছে সে সময় প্রায় ১৮ হাজার সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা তদন্তের জন্য কমিশন প্রতি জেলায় একটি করে স্বল্পমেয়াদি কমিটি বা কমিশন গঠন করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। এছাড়া কমিশনের তদন্তের ভিত্তিতে নতুন মামলা দায়ের, পুরনো মামলা পুনরুজ্জীবিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিতেও সরকারকে সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশনের প্রতিবেদনে খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অগি্নসংযোগ ইত্যাদি তথ্য উঠে এসেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী দলের শীর্ষ নেতার নির্দেশে দেশে কোন সহিংস ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এভাবে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা যদি সচেষ্ট থাকেন তাহলে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই নির্যাতনটা শুরু হয়। দলীয় আনুগত্যের কারণে ওই সরকার সংখ্যলঘু বা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন প্রতিরোধ বা বন্ধ করতে প্রশাসনিকভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে নির্বাচনের পর সহিংস ঘটনা আরও বৃদ্ধি পায়।
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের বিচার করা হবে। তিনি বলেন, তদন্ত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে তা সবারই জানা। সে সময় নির্বাচনের পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে অগি্নসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট এমনকি বাড়ির ইটও খুলে নেয়া হয়েছিল। এছাড়া তারা নারী নির্যাতন ও ধর্ষণেরও শিকার হয়েছে। তদন্ত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ওই সময় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ক্যাডাররা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর যে বর্বর নির্যাতন করেছে তার দৃষ্টান্ত বিশ্বের ইতিহাসে কমই আছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনটি অনেক বড়। তবে খুব শীঘ্রই প্রতিবেদনটি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। তখন নির্যাতনের প্রকৃত ঘটনা সবাই জানতে পারবে।
এ সময় তদন্ত কমিশনের সদস্য মনোয়ার হোসেন আখন্দ বলেন, তদন্ত কমিশন সব অভিযোগ তদন্ত করতে পারেনি। এছাড়া এসব অভিযোগের বাইরেও আরও ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন-পরবর্তী প্রায় ১৮ হাজার সহিংস ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
১৮| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:৫৮
নাভদ বলেছেন:
তদন্ত রিপোর্টে তথ্য প্রকাশ : ২০০১ সালে নির্যাতনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা
আমারদেশ (!)
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সহিংস ঘটনা তদন্তে গঠিত বিচারবিভাগীয় তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক রদবদলের মধ্য দিয়ে তত্কালীন প্রধান উপদেষ্টা ২০০১ সালে নির্যাতনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই নির্যাতন শুরু হয়। ওই সরকার সংখ্যলঘু বা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন প্রতিরোধ অথবা বন্ধ করতে প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতে একটি রিট করে। রিটের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত রিপোর্ট গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিশনের সদস্য এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এ কে এম মনোয়ার হোসেন আকন্দ গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে রিপোর্টটি জমা দেন।
রিপোর্ট পাওয়ার পর সচিবালয়ের অফিসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের বিচার করা হবে। এজন্য প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের মতামত নেবে সরকার। এসময় স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুস সোবহান শিকদার উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, অত্যাচার, খুন, লুটপাট, ধর্ষণ, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, বাড়িঘর দখলসহ নানা নৈরাজ্য চলে। ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সহিংস ঘটনার কারণ উদঘাটন এবং সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার জন্য ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতে একটি রিট করে। রিটের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন।
তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে কিনা—এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, প্রতিবেদনটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করার পর শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনায় রয়েছে, দোষীদের বিচারের বিষয়ে উচ্চ আদালতের মতামত নেয়া যেতে পারে। অভিযুক্তদের বিচারের জন্য সরকার উচ্চ আদালতের মতামত নেবে।
তদন্ত কমিশনের সদস্য এ কে এম মনোয়ার হোসেন আকন্দ রিপোর্ট প্রসঙ্গে বলেন, তদন্ত রিপোর্টে ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫৫টি অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, সংঘর্ষের। এক হাজার ৯৪৬টি অভিযোগ অস্পষ্ট থাকায় প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। ২০০৩-০৬ সাল পর্যন্ত ১৪ হাজার সহিংস ঘটনা ঘটেছে। ২০০১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ১৮ হাজার সহিংস ঘটনা ঘটেছে বলে মনোয়ার হোসেন জানান। তদন্ত কমিশনের রিপোর্টটি এক হাজার ৭৮ পৃষ্ঠার। এর ৫ খণ্ডে রয়েছে : খ-১. রিপোর্ট ও সুপারিশ, খ-২. ভোলা জেলার বিবরণ, খ-৩. বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর জেলার বিবরণ, খ-৪. খুলনা বিভাগের বিবরণ এবং খ-৫-এ রয়েছে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের বিবরণ।
মানবাধিকার সংগঠনের আবেদনে ২০০৯ সালের ৬ মে ২০০১-এর নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রধান করে তিন সদস্যের বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনোয়ার হোসেন আখন্দ ও ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মীর শহীদুল ইসলাম।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সালে নির্বাচনী সহিংস ঘটনার বেশিরভাগ কমিশনের পক্ষে তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সূত্র থেকে কমিশন জানতে পেরেছে, ওই সময় সহিংস ঘটনার সংখ্যা ১৮ হাজারেরও বেশি। কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে ৫ হাজার ৫৭১টি। এর মধ্যে থেকে ৩ হাজার ৬২৫টি ঘটনার তদন্ত করে কমিশন। এসব ঘটনা তদন্তের জন্য কমিশন প্রতি জেলায় একটি করে স্বল্পমেয়াদি কমিটি বা কমিশন গঠন করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। কমিশনের তদন্তের ভিত্তিতে নতুন মামলা দায়ের, পুরনো মামলা পুনরুজ্জীবিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থিক সহায়তা দিতেও সরকারকে সুপারিশ করা হয়েছে। ঘটনার প্রায় সাড়ে ৯ বছর এবং কমিশন গঠনের প্রায় সোয়া এক বছর পর তদন্ত রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হলো।
১৯| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০০
নাভদ বলেছেন: ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা: প্রশাসনিক দুর্বলতাকে দায়ী করেছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন
মানবজমিন: সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০১১
স্টাফ রিপোর্টার: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতাকেই নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুনের কাছে ২০০১ সালের ১লা এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিশন। ১০৭৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ঘটনার নির্মমতার সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে।
একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ বিবেচনায় এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। শিগগির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করা না হলেও কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জমা হওয়া ৫ খণ্ডের প্রতিবেদনে লেখচিত্রসহ সহিংসতার ধরন ও প্রকার, নির্মম বেশ কিছু ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা, কারণ ও পটভূমির সারসংক্ষেপ ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এ সব নির্যাতনের ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীসহ ১৮ হাজারেরও বেশি লোক জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়। এ নির্বাচনের পর দেশব্যাপী রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটে। এসব ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের। একটি মানবাধিকার সংগঠনের আবেদনে ২০০৯ সালের ৬ই মে ২০০১-এর নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদের বেঞ্চ মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া এক রায়ে এ নির্দেশ দেন। ৬ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের সময় বেঁধে দেন আদালত। এরপর ওই বছরের ২৭শে ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। নির্ধারিত সময়ে তদন্ত শেষ না হওয়ায় চার দফা সময়ও বাড়ানো হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশের আগে কমিশনের তরফে এর সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনায় পাঠানো হয় বলে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সহিংস ঘটনার বেশির ভাগ কমিশনের পক্ষে তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সূত্র থেকে কমিশন জানতে পেরেছে ওই সময় ঘটা সহিংস ঘটনার সংখ্যা ১৮ হাজারেরও বেশি। কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছিল ৫৫৭১টি। এর মধ্য থেকে ৩৬২৫টি তদন্ত করে কমিশন। সব ঘটনা তদন্তের জন্য জেলায় জেলায় কমিশন গঠন করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশনের তদন্তের ভিত্তিতে নতুন মামলা দায়ের, পুরনো মামলা পুনরুজ্জীবিত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিতেও সরকারকে সুপারিশ করা হয়েছে। ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নির্বাচিত না হওয়ায় এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি না থাকায় তারা যা খুশি তা-ই করে থাকেন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটাই হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই নির্যাতনটা শুরু হয়। দলীয় আনুগত্যের কারণে ওই সরকারবিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন প্রতিরোধ বা বন্ধ করতে প্রশাসনিকভাবে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতের মত নেয়া হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন বলেছেন, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংস ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনে আদালতের মতামত নেবে সরকার। গতকাল সচিবালয়ে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালায়। তারা খুন, লুটপাট, ধর্ষণ, বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড, দখল সহ নানা নৈরাজ্য চালিয়েছিল। এসব ঘটনার কারণ উদঘাটন ও এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার জন্য হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ উচ্চ আদালতে একটি রিট করে। রিটের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করার পর শিগগিরই জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। অভিযুক্তদের বিচার করা বিষয়ে তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনায় রয়েছে দোষীদের বিচারের বিষয়ে উচ্চ আদালতের মতামত নেয়া যেতে পারে। অভিযুক্তদের বিচারের জন্য সরকার উচ্চ আদালতের মতামত নেবে।
এ সময় তদন্ত কমিশনের সদস্য সচিব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব একেএম মনোয়ার হোসেন আকন্দ প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন।
২০| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০২
নাভদ বলেছেন:
Judicial probe blames caretaker admin
* Commissions advised in districts for further probe
* Filing fresh cases advised
* Case revival recommended
(নিউ এইজ)
Mustafizur Rahman
A judicial inquiry commission held responsible ‘political ideology’ of the then BNP-Jamaat alliance government and also the ‘administrative weakness of the caretaker regime’ for post-election violence that had taken place between October 1, 2001 to December 31, 2002.
The three-member commission, led by retried district judge Mohammad Sahabuddin, recommended institution of a commissions/committees in each of the 64 districts for further investigation of the incidents of killings, rape, looting, arson attacks, forcing people to leave homesteads and repression against minorities committed across the country in 15 months after the October 2001 general elections.
Commission member Monwar Hossain Akond, also a deputy secretary at the
home ministry, handed over the 1,078-page report in five volumes to the home minister, Sahara Khatun, at the ministry on Sunday.
The report named some top political leaders of the BNP-Jamaat alliance and many grass-roots workers of the then ruling parties (2001–2006) responsible for the crimes. It said that the caretaker government’s administration was too weak to check the violence.
The commission also recommends filing fresh cases and reviving the cases in which the accused were acquitted for lack of evidence and formation of a monitoring cell at the home affairs ministry to look after the post-election violence cases.
A member of the commission said that the inquiry body had recorded 5,571 complaints of serious crimes that include 355 incidents of killing. At least 3,000 fresh cases can be filed in connections with the violence, he added.
‘We have recommended filing cases against the persons involved in serious crimes including killing, rape, arson attacks and repression against minorities after the general elections in October 2001,’ Sahabuddin told New Age.
He said that some cases were filed in connection with the violent incidents but either the police later gave final reports or the accused were finally acquitted of charges for lack of evidence.
Many victims of the post-election violence were forced not to file any case during the BNP rule, said the report that added that more than 18,000 people were involved in the post-election violence.
‘We have recommended further investigation in such cases. And either the victims or the government can file criminal cases any time as per the law,’ said the commission chief, now appointed a commissioner of the Anti-Corruption Commission.
Most of the atrocities took place immediately after the elections during the caretaker government and many victims later could not file any case as the ‘Bangladesh Nationalist Party-led government had ignored the crimes and also patronised those involved in the crimes against humanity,’ according to the report.
‘Many more incidents of violence took place after the October 2001 elections which are not mentioned in the report…. We will take legal action against the people who were behind the violence,’ Sahara Khatun said.
Replying to a query, she said BNP-Jamaat alliance government was responsible for the repression on minorities and attacks on Awami Leaders and workers for political reason.
She said that the report would be published soon and measures would be taken in keeping with the recommendations the commission has put forth.
The Awami League-led government in December 2009 formed the judicial commission for inquiry of post-polls violence on a directive of the Supreme Court in a public interest litigation writ petition filed by the Human Rights and Peace for Bangladesh, a human rights organisation, in 2009.
‘We will seek directives of the High Court as to how the cases relating to the post-election violence could be disposed of,’ the home minister said.
The commission was initially given six months to find out the reasons and the people behind the post-polls violence through inquiries and later the deadline was extended two times up to April 26, 2011.
The commission found the number of incidents of atrocities and repression against minorities, particularly the Hindus, was much high in the districts of Bhola, Barisal and Khulna.
‘Committees should be formed in every district to motivate the victims to file cases. The committees to be led by the public prosecutors will also look after the cases filed by the government in this connection,’ said the report, which also mentioned that around 14,000 more incidents of political violence took place between 2003 and 2006.
The report mentioned that around 300 women/girls of minority communities took shelter at ‘Vendor Bari’ (house of a well-off family) where 60–70 of them were raped by a gang and no case was filed in this connection.
The commission recommended bringing about changes in political culture and retaining the secular spirit of the constitution to check such crimes against humanity in future.
২১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৩
নাভদ বলেছেন:
Judicial probe blames caretaker admin
* Commissions advised in districts for further probe
* Filing fresh cases advised
* Case revival recommended
(নিউ এইজ)
Mustafizur Rahman
A judicial inquiry commission held responsible ‘political ideology’ of the then BNP-Jamaat alliance government and also the ‘administrative weakness of the caretaker regime’ for post-election violence that had taken place between October 1, 2001 to December 31, 2002.
The three-member commission, led by retried district judge Mohammad Sahabuddin, recommended institution of a commissions/committees in each of the 64 districts for further investigation of the incidents of killings, rape, looting, arson attacks, forcing people to leave homesteads and repression against minorities committed across the country in 15 months after the October 2001 general elections.
Commission member Monwar Hossain Akond, also a deputy secretary at the
home ministry, handed over the 1,078-page report in five volumes to the home minister, Sahara Khatun, at the ministry on Sunday.
The report named some top political leaders of the BNP-Jamaat alliance and many grass-roots workers of the then ruling parties (2001–2006) responsible for the crimes. It said that the caretaker government’s administration was too weak to check the violence.
The commission also recommends filing fresh cases and reviving the cases in which the accused were acquitted for lack of evidence and formation of a monitoring cell at the home affairs ministry to look after the post-election violence cases.
A member of the commission said that the inquiry body had recorded 5,571 complaints of serious crimes that include 355 incidents of killing. At least 3,000 fresh cases can be filed in connections with the violence, he added.
‘We have recommended filing cases against the persons involved in serious crimes including killing, rape, arson attacks and repression against minorities after the general elections in October 2001,’ Sahabuddin told New Age.
He said that some cases were filed in connection with the violent incidents but either the police later gave final reports or the accused were finally acquitted of charges for lack of evidence.
Many victims of the post-election violence were forced not to file any case during the BNP rule, said the report that added that more than 18,000 people were involved in the post-election violence.
‘We have recommended further investigation in such cases. And either the victims or the government can file criminal cases any time as per the law,’ said the commission chief, now appointed a commissioner of the Anti-Corruption Commission.
Most of the atrocities took place immediately after the elections during the caretaker government and many victims later could not file any case as the ‘Bangladesh Nationalist Party-led government had ignored the crimes and also patronised those involved in the crimes against humanity,’ according to the report.
‘Many more incidents of violence took place after the October 2001 elections which are not mentioned in the report…. We will take legal action against the people who were behind the violence,’ Sahara Khatun said.
Replying to a query, she said BNP-Jamaat alliance government was responsible for the repression on minorities and attacks on Awami Leaders and workers for political reason.
She said that the report would be published soon and measures would be taken in keeping with the recommendations the commission has put forth.
The Awami League-led government in December 2009 formed the judicial commission for inquiry of post-polls violence on a directive of the Supreme Court in a public interest litigation writ petition filed by the Human Rights and Peace for Bangladesh, a human rights organisation, in 2009.
‘We will seek directives of the High Court as to how the cases relating to the post-election violence could be disposed of,’ the home minister said.
The commission was initially given six months to find out the reasons and the people behind the post-polls violence through inquiries and later the deadline was extended two times up to April 26, 2011.
The commission found the number of incidents of atrocities and repression against minorities, particularly the Hindus, was much high in the districts of Bhola, Barisal and Khulna.
‘Committees should be formed in every district to motivate the victims to file cases. The committees to be led by the public prosecutors will also look after the cases filed by the government in this connection,’ said the report, which also mentioned that around 14,000 more incidents of political violence took place between 2003 and 2006.
The report mentioned that around 300 women/girls of minority communities took shelter at ‘Vendor Bari’ (house of a well-off family) where 60–70 of them were raped by a gang and no case was filed in this connection.
The commission recommended bringing about changes in political culture and retaining the secular spirit of the constitution to check such crimes against humanity in future.
২২| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:৪৩
নাভদ বলেছেন: 2001 Post-polls Violence: Over 200 minority women rapedrobe finds links of several top BNP-Jamaat leaders
Over 200 minority women were gang raped by the then ruling BNP-Jamaat alliance cadres in 15 months since October 2001. The barbarous act was intended to force them leave the country.
They were, in the eyes of the culprits, enemies as they voted for Awami League.
The judicial commission probing the 2001 post-polls violence has also found involvement of some BNP and Jamaat leaders in the oppression on minorities and then opposition Awami League activists.
Of the leaders, commission sources mentioned Salauddin Quader Chowdhury, Abdul Wadud of Khagrachhari, Joynal Abedin alias VP Joynal of Feni, Nadim Mostafa, HM Selim of Bagerhat, Maulana Shakhawat Hossain of Keshabpur in Jessore, Abdus Sobhan of Pabna and Jamaat leaders Maulana Matiur Rahman Nizami and Abu Taher of Comilla.
Earlier on Sunday, some other commission sources told The Daily Star that Delwar Hossain Sayedee, Altaf Hossain Chowdhury, Maj (retd) Hafiz Uddin Ahmed, Ruhul Quddus Talukdar Dulu, Hafiz Ibrahim and Zahir Uddin Swapon were among the leaders of the then government who led the oppression.
Talking about some incidents in Bhola, commission sources said Maj (Retd) Hafiz Uddin Ahmed and his men picked up one of their rivals and shot him dead.
In another incident, witnesses said Hafiz along with his men tore off clothes of another rival and made him walk around a local market.
Family members of the deceased and witnesses of the killing incidents gave depositions to the commission. Some people also appeared before the commission with witnesses of the atrocity and brutality they faced.
Asked, Hafiz refuted the allegations and challenged the commission.
"People know my family well. I was voted
her three times," he said.
Khagrachhari BNP leader Abdul Wadud said the inclusion of his name among the ones involved is politically motivated.
He added "I made lots of contributions to mosques and temples of Hindus and other tribal communities in my area, which testify to the fact that I did not oppress them."
VP Joynal and Nadim Mostafa, however, could not be reached over the phone for their statements.
A high official of the home ministry said they identified most of the rape victims on the basis of newspaper reports of that time.
Many victims and their family members across the country contacted the commission when it was conducting the probe.
Rapists in 22 incidents out of the 200 grabbed the victims' residences, he added.
Fearing social stigma, majority of the victims had not done any forensic test following the incidents.
"Many victims described their horrific experiences before the commission but denied lodging complaints against the rapists."
The victims believe that declaring their names as rape victims will worsen their life in society, said the official.
The probe commission found that most of the gang rapes occurred on the country's southern part-- Bhola, Barisal, Agoiljhara and Gaurnadi.
The accused were acquitted for not having any witnesses or police in some cases gave final reports while the names of the accused were dropped in over 500 cases out of the 3,625 major crime incidents.
For the cases presently running, it was found that police were compelled to drop the names of the perpetrators as they have good connection with ruling AL men.
The commission recommended that the government should form district committees comprised of a magistrate, public prosecutor and some others of the district authorities to carry out further investigation into the incidents.
It, however, apprehended that it would be tough or, to some extent, impossible to continue the probe into the rape allegations as the victims themselves are not willing to do the legal battle.
In case of arson attacks, investigators will hardly get any evidence. The victims of the attacks over the last few years built new structures in place of the damaged ones.
The judicial commission has made a report of the 2001 post-polls violence mentioning over 3,625 incidents of major crimes including killing, rape, arson and looting by cadres of the then ruling BNP-Jamaat alliance.
Of the incidents, the commission described 355 as politically motivated murders while 3,270 were incidents of rape, arson, looting and other atrocities.
Member secretary of the commission Monwar Hossain, deputy secretary of the home ministry, handed over the report to Home Minister Sahara Khatun on Sunday
২৩| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:৫৫
নাভদ বলেছেন:
নির্যাতিতরা এখনো বিচারের অপেক্ষায় - সংখ্যালঘুদের উপর বিএনপি জামাতিদের পাশবিক নির্যাতন
প্রথম আলো (২৬/৪/২০১১ - পৃস্ঠা ৯ - বিশেষ প্রতিবেদন)
‘বাবার ইচ্ছা ছিল আমাকে লেখাপড়া শিখিয়ে চাকরি করাবে। কিন্তু তাঁর ইচ্ছা আমি পূরণ করতে পারি নাই। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আমার জীবনের সব আশা শেষ হয়ে গেছে। সরকার আমাকে থাকার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর দিয়েছে। কিন্তু আমি কি সেখানে হাঁস-মুরগির মতো শুধু মাথাগুঁজে থাকতে পারব? কে আমার নিরাপত্তা দেবে।’
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ধর্ষণের শিকার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্বদেলুয়া গ্রামের সেই মেয়েটি গত মঙ্গলবার এভাবেই আক্ষেপ করে বলছিলেন কথাগুলো। তাঁর চোখ আর কণ্ঠ দুটিতেই ঝরে পড়ছিল হতাশা আর অনিশ্চয়তার শঙ্কা।
এই মেয়েটির মতো সেই দুঃসহ সময়ের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন আরও অনেক সংখ্যালঘু নারী। ওই নির্বাচন-উত্তর সহিংসতা বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনকে তাঁদের মতো ভুক্তভোগীরা স্বাগত জানালেও এতেই সন্তুষ্ট নন। তাঁরা এখন চান বিচার।
২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর নরক নেমে এসেছিল দেশের অনেক সংখ্যালঘু পরিবারের নারীর জীবনে। কেবল নারীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন নয়, বিজয়গর্ব আর প্রতিশোধপরায়ণতায় মত্তরা নির্বাচনের পর দেশজুড়ে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের শত শত ঘটনা ঘটিয়েছিল। সংখ্যালঘুদের জন্য সৃষ্টি হয়েছিল বিভীষিকাময় এক পরিস্থিতি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু ২০০১ সালের ১ থেকে ২৭ অক্টোবর সময় পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৭ জন খুন হন। ধর্ষিত হন ৬১ জন। যৌন নিপীড়নের শিকার হন ৬৪ জন। হামলায় আহত হন সাড়ে ৬০০। অপহূতের সংখ্যা ১৩। এ ছাড়া হিন্দুদের অসংখ্য দোকানপাট ও বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করা হয়। কিছু স্থানে আদিবাসী ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনও হামলার শিকার হন। প্রায় সব ঘটনাতেই নির্বাচনে জয়ী বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। বেশির ভাগ স্থানেই থানা মামলা নেয়নি। আবার মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।
২০০২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ মাসজুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এর কারণ উদ্ঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে একটি রিট করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে ২০১০ সালে গঠিত হয় তদন্ত কমিশন। এ কমিশনের প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা ও ফরিদপুরের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা।
নিরাপত্তা চান লর্ড হার্ডিঞ্জের সংখ্যালঘুরা
১ অক্টোবরের নির্বাচনের পরদিন ভোলার লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের চর অন্নদাপ্রসাদ, পিয়ারীমোহন ও ফাতেমাবাদ গ্রামের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্বিচারে হামলা চলে। হামলা থেকে বাঁচতে ভেণ্ডরবাড়ী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন হিন্দু নারীরা। বিএনপির সমর্থকেরা সেখানেও হানা দিয়ে রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত নিপীড়ন ও লুটপাট চালায়।
চর অন্নদাপ্রসাদ গ্রামের আট বছরের যে মেয়েটি ধর্ষিত হয়েছিল সে এখন আর বাড়িতে থাকে না। বাড়িতে ছিলেন ৮০ বছরের বৃদ্ধা ঠাকুরমা অবলা রানী বালা। প্রথম আলোর প্রতিবেদককে বললেন তিনি, ওই ‘কালিমার কতা’ ভুলতে পারবেন না তারা কোনো দিন।
লর্ড হার্ডিঞ্জের সব নির্যাতিত সংখ্যালঘু পরিবারের মনোভাবই এ রকম। তাঁরা একটি নিরাপদ, আশঙ্কামুক্ত জীবন দাবি করেছেন সরকারের কাছে। অনেকেই এলাকাছাড়া। এলাকাবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী কেউ দেশ ছেড়েছেন, কেউ পাড়ি জমিয়েছেন অন্য জেলায়। অন্নদাপ্রসাদ গ্রামের মেন্টর বাড়ির বিনোদ চন্দ্র দাস (৬০) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি আবার যদি ২০০১ আসে। আবার যদি...।’ কান্নায় গলা বুজে আসায় কথা শেষ করতে পারেননি বৃদ্ধ। একটু সামলে নিয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় এই এলাকার অনেক হিন্দুকে জীবন দিতে হয়েছে। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ দাঙ্গার সময়েও হামলা হয়েছে। ২০০১ সালে গেছে নারীর সম্ভ্রম।’
বিনোদ চন্দ্র দাস আক্ষেপ করে বলেন, লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে ৪০ বছর হিন্দু চেয়ারম্যান ছিলেন। এখন সেই ইউনিয়নে একজন হিন্দু ইউপি সদস্য হিসেবেও নির্বাচনে দাঁড়াতে ভরসা পান না, কারণ সংখ্যালঘু ভোটারই নেই। অনেকেই পৈতৃক ভিটা পরিচিত মুসলমানের হেফাজতে রেখে চলে গেছেন।
গতকাল সোমবার ইউনিয়নের অন্নদাপ্রসাদ, ফাতেমাবাদ ও পেরীমোহন গ্রামে ঘুরে জানা যায়, ২০০১ সালের ২ অক্টোবর রাতে একটি হিন্দু পরিবারও নির্যাতনের হাত থেকে বাদ যায়নি।
অন্নদাপ্রসাদ গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা বকুল রানী দাস বলেন, ‘আমরা নেতা-নেত্রীগো কইয়্যা দিছি, বাবা! আইজ বাদে কাইল মইর্যা জামু । নিজের দ্যাশোত্ মরতাম চাই। আমরা কাউরে ভোট দিমু না। আমনারা য্যারে খুশি আমাগো ভোট দিয়া লইয়েন। তবুও আমরা নৌকায় ভোট দেই কইয়্যা আমাগোরে মাইরেন না।’
লর্ড হার্ডিঞ্জের পরে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের হিন্দুরা। এখানকার সরকারবাড়ি ও তার আশপাশে ২ অক্টোবর রাত নয়টায় দুর্বৃত্তরা আক্রমণ করে। এ ছাড়া ভোলা সদরের উত্তর দিঘলদীর জয়গোপী, আলীনগরের ঠাকুরবাড়িসহ একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়।
বরিশাল: নির্বাচনের পরদিন থেকেই বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে হামলা চলে। অনেকেই ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যায়। দুই থানার ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নেয় গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার রামশীল গ্রামে।
গৌরনদী উপজেলার বিল গ্রামের ধর্ষণের শিকার ৩০ বছরের এক নারী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি কালীয়াদমন গুহর রাইস মিলে কাজ করতেন। নির্বাচনের পরে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা চাঁদার দাবিতে মিলটি বন্ধ করে দেয়। কর্তৃপক্ষ মিল চালু করতে গেলে যুবদলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় এবং তাঁকে ধর্ষণ করে। তাঁকে পরে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। নির্যাতিত এ নারী বলেন, পুলিশ তখন তাঁর জবানবন্দি রেকর্ডসহ ধর্ষণের আলামত উদ্ধার করলেও ১০ বছরেও এর বিচার হয়নি।
আগৈলঝাড়া উপজেলার সুতারবাড়ি গ্রামের পঙ্গু সঞ্জীব জানান, ওই নির্বাচনের পর তাঁর বাড়িতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালায়। তাঁকে ও পরিবারের নারী ও শিশুদের গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে আহত করে। সঞ্জীব অভিযোগ করেন তিনি এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা ১২০ শতাংশ দীঘির প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ লুট করে।
চাঁদশী গ্রামের নির্যাতিত কৃষ্ণ কান্ত দে অভিযোগ করেন, ৩ অক্টোবর জোট সরকারের সমর্থক ক্যাডাররা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামটিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা হামলা চালিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নারীদের ধর্ষণ করে। হুমকির মুখে বা লোকলজ্জায় কেউ মামলা করেনি। কৃষ্ণকান্ত বলেন, হামলার পরের দিন তিনি ছোট ভাইকে নিয়ে বোরকা পরে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে পাশের রামশীলে আশ্রয় নেন।
ইল্লা গ্রামের নির্যাতিত প্রণবরঞ্জন ওরফে বাবু দত্ত জানান, ক্যাডাররা তাঁকে না পেয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে কুপিয়ে জখম করে ও বাড়িতে লুটপাট চালায়। পরের দিন রান্না করে খাবার মতো কোনো হাঁড়ি-পাতিলও ঘরে রেখে যায়নি সন্ত্রাসীরা। তারা বাড়ির মন্দিরেও আগুন দেয়। গৌরনদীর উত্তর চাঁদশী গ্রামের রিপন বাড়ৈ, গৌরাঙ্গ দাস, হরিপদ বিশ্বাস, মন্জু রানী এবং আগৈলঝাড়া উপজেলার পতিহার গ্রামের নিতাই রঞ্জন, বাকাল গ্রামের সুধীর বালা, নলচিড়া গ্রামের অভিজিৎ, রাজিহার গ্রামের কমলা রানীসহ
নির্যাতিত আরও অনেকেই জানান, তাঁরা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন।
ফরিদপুর:
ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলার হিন্দু সমপ্রদায়ের ওপর নেমে এসেছিল অমানিশার অন্ধকার। বাড়িতে হামলা, লুটতরাজ, নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো মামলা হয়নি।
নগরকান্দা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
ফুলসুতী ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের সবিতা মণ্ডল, কাননবালা মণ্ডল, আনন্দ মণ্ডল, শেফালী মণ্ডল ও অসীম মণ্ডল জানান, সে সময় গ্রামের ৮৫টি হিন্দু পরিবার প্রায় এক মাস সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে বাড়িতে থাকতে পারেনি। সন্ত্রাসীরা দলবদ্ধভাবে ওই গ্রামে হামলা চালিয়েছে।
এ ছাড়া তালমা ইউনিয়নের মানিকদি, চর যশোরদি ইউনিয়নের চাঁদেরহাট বাজার, পুরা পাড়া ইউনিয়নের মজলিসপুর, মাজারদিয়া ইউনিয়নের আইনপুর বাজার ও মাজারদিয়া গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর সে সময় এ তাণ্ডব বয়ে গেছে।
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র সুব্রত মণ্ডলের বাড়ি বাউতিপাড়া গ্রামে। তিনি জানান, ২০০১-এর তাণ্ডবের পর অনিল মণ্ডল, দিলীপ বাড়ৈ, বাসুদেব বাড়ৈ, রসো মণ্ডল, সুনীল মণ্ডল, সুশীল বাড়ৈ ও লক্ষ্মীকান্ত বিশ্বাসের পরিবার দেশ ছেড়ে চলে গেছে। একই গ্রামের শেফালী রায় জানান, তাঁর বাবা মুকুন্দ রায় এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দুই মাসের মধ্যে মারা যান।
মাঝারদিয়া ইউনিয়নের আইনপুর বাজারে তপন দাসের দোকানের সব মিষ্টি নির্বাচনের তিন দিন পর লুট করে নিয়ে যায় এলাকার সন্ত্রাসীরা। একই এলাকার মাধব চন্দ্র বিশ্বাস নির্বাচনের দুদিন পর ১৫ মণ পেঁয়াজ হাটে নিয়ে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীরা তা লুট করে। মাধব বলেন, ‘আমি ভয়ে মামলা করতে সাহস পাই নাই।’
তালমা ইউনিয়নের মানিকদি গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জিত মণ্ডল বলেন, ৭ অক্টোবর সকালে পাশের শাকপালদিয়া ও মানিকদি গ্রামের ৩০০-৪০০ লোক রহমান খাঁ, ইউনুস মোল্লা, চান মোল্লা, দবিরউদ্দীন মোল্লা ও শামসু খলিফার নেতৃত্বে সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর ওপর হামলা চালায়। সঞ্জিত বলেন, এ ব্যাপারে তিনি বাদী হয়ে মামলা করলেও ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ তা খারিজ হয়ে যায়।
সিরাজগঞ্জ:
সিরাজগঞ্জের সদর, শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের ঘটনা ঘটে। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় নির্যাতিত সিরাজগঞ্জের সেই মেয়েটি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যেখানে থাকি সেখানে প্রায়ই আসামিদের আত্মীয়স্বজনকে ঘোরাফেরা করতে দেখি। সে কারণে আমি বেশির ভাগ সময় বোরকা পরে চলাফেরা করি। কারণ, আমাকে কে নিরাপত্তা দেবে’? মেয়েটি জানান, দীর্ঘ ১০ বছর পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাঁর ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা হবে। মেয়েটি বলেন, ‘আমার মতো আর কোনো বোন যেন এ রকম নির্যাতন ও ভোগান্তির শিকার না হয়। কাউকে যেন বিচার পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে না হয়।’
এ প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন সিরাজগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক এনামুল হক, ফরিদপুরের পান্না বালা, ভোলার নেয়ামত উল্যাহ এবং বরিশালের গৌরনদী প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম।
২৪| ১২ ই মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৭
নাভদ বলেছেন:
Rape and torture empties the villages
John Vidal
The Guardian, Monday 21 July 2003 01.37 BST
Article history
Purnima Rani, a 12-year-old Hindu girl, is terrified and breaks down frequently as she describes what happened 18 months ago in the village of Perba Delua in Bangladesh.
"Nearly 30 people came to our house. I recognised many of them as my neighbours. They beat my mother almost senseless. I begged them to stop. They dragged me outside. I resisted but they hit me with sticks. I shouted to my sister to save me but they beat her too. I cannot tell you what happened next."
Purnima was gang-raped and her family found her unconscious three hours later in a field a mile from the village. Four young men, all supporters of the government and its coalition partner, the fundamentalist Jamaati-e-Islami party, were arrested but have not been charged.
But the ordeal did not stop there. The family's hairdressing business was twice looted, her elder brother was beaten and is expected to lose his sight, and they have now all fled the village after threats that they would be killed.
Her father has been offered bribes to drop the case and Purnima, one of the few victims of Bangladeshi sectarian violence who is prepared to talk openly, is now in hiding. "I want justice, not money," she says.
Serious attacks on and persecution of religious minorities by Islamic fundamentalists are increasing, and despite a detailed dossier on 18 months of persecution of religious minorities, and women in particular, the British government calls Bangladesh a "generally safe" country. Amnesty International says this makes "no sense".
Thousands of Bangladeshis are fleeing, a few wealthy ones applying to go to Britain and continental Europe. Those who arrive in Britain will almost certainly be sent back. But the Guardian has uncovered compelling evidence that in declaring Bangladesh in effect free of internal problems Britain is turning a blind eye to atrocities committed by fundamentalists.
Evidence is emerging that the oppression of minorities is becoming systematic. Bangladesh, which is 85% Muslim but has a long tradition of tolerance to religious minorities, is, say local organisations, being pushed towards fundamentalism by the Jamaat-e-Islami, which is growing rapidly in rural areas with the deepest poverty and runs two key ministries.
"This is like a silent revolution. We are returning to the dark ages," a leading lawyer said, asking not to be named.
"I think the backdrop is being created for the introduction of strict sharia laws. You see extremist rightwing fundamentalists infiltrating every professional area, in the appointment of the judiciary, the law, medicine and in education. They are capturing key positions in government, the universities and institutions."
Britain has seen the dossier of human rights abuses, which is backed by evidence from local and international development groups.
In the village of Fhainjana, a mob of 200 fundamentalists recently looted 10 Christian houses, allegedly assaulting many women and children. Christians were seriously beaten and others molested after refusing to give money to thugs in the village of Kamalapur, near Dhaka. In Deuatala Bazaar, gangs of young men with knives told Hindus to leave. Hundreds fled.
Many villages are said to be now empty of minorities. Elsewhere, Hindus have been burned alive and gangs have desecrated temples.
Rosaline Costa, director of the human rights group Hotline Bangladesh, says that the British government is well aware of the situation. "They must think we are stupid. It says there is communal harmony, but this is a lie. Documents showing the scale of the atrocities on minorities have been sent to all governments. There are many genuine asylum seekers."
Thousands of Bangladeshis are thought to have crossed the border to India in the past two years. It is impossible to verify numbers because New Delhi will not release records, but Dhaka's statistics show the Muslim majority increasing dramatically and the Hindu, Buddhist, Christian and other minorities declining.
In western Bangladesh, where the Jamaat-e-Islami is particularly strong, many villages have been deserted by minorities. "In my village of Sri Rumpur, near Khulna, there are no Hindus left," said a man who asked not to be named. "They have all been driven out by people threatening to torture them or demanding money. People who raise their voices are threatened. It's a kind of systematic ethnic cleansing."
Toab Khan, editor of the independent newspaper the Daily Janakantha, said: "Repression of people who publicise human rights violations is growing. We have reported communal violence from the beginning. Our head office has been bombed, our agents have been threatened and beaten up. The government has withdrawn all its advertising and is pressurising and harassing reporters and the owner."
Attacks on press
Last month three newspaper editors were arrested after publishing a letter critical of the government's human rights record. BBC and Channel 4 film-makers have been detained. Shariar Kabir, a film-maker and human rights activist, was charged with treason and jailed for 59 days for writing about torture and interviewing Hindu families who told him they were fleeing the country.
The Bangladeshi government, which has admitted that some atrocities have taken place, argues that the violence is not religiously motivated. But it has directly attacked western-funded NGOs working to increase women's rights and strengthen the voice of the poor in minority communities.
In the past 18 months British and European aid to five main NGOs has been frozen, ostensibly pending an investigation but almost certainly because they have worked with the poor to strengthen women's rights. The UK Department for International Development's office in Bangladesh has protested.
"Up to £40m in grants directed at relieving poverty for 2.8m families is affected. Millions of the poor are being denied help for ulterior motives," Kabir Choudhury, president of the South-East Asia Union against Fundamentalism, said.
Leading Islamic scholars are appalled by the repression and the rise of fundamentalism. "What we are seeing is the Talibanisation of Bangladesh," Maolama Abdul Awal, former director of the Bangladesh Islamic Foundation, said. "If we allow them to continue ... [minorities] will be eliminated. Bangladesh will become a fascist country."
An NGO director said: "I am being called a terrorist. They telephone me personally demanding money, saying they will push me out of the country and that my children will be killed ... They intend to wipe us out. I do not understand why the British government is turning a blind eye to what is happening."
২৫| ১৩ ই জুন, ২০১১ রাত ১:৩১
নাভদ বলেছেন: মূল পাতা » পুরাতন সংখ্যা » ১২ জুন ২০১১ » প্রথম পাতা »
পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে নিথর দেহ ভাসিয়ে দেয় নদীতেমানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ (১)
তপন বিশ্বাস ॥ ২০০১ সাল, নির্বাচন পরবর্তী ঘটনা বাংলাদেশে নতুন কলঙ্কের জন্ম দেয় । সারা দেশে একযোগে সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি লণ্ড ভণ্ড, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তির নারকীয় তাণ্ডব, হত্যা, ধর্ষণ, উচ্ছেদ, লুণ্ঠন, জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, নির্যাতন ও অগি্নসংযোগসহ এমন কোন হীন কাজ নেই যা ঘটেনি। পাশবিক। জান্তব আক্রোশ। হিংস্রতা। প্রতিটি ঘটনা যেন মথিত হৃদয়ের বেদনার্থ সমগ্রতা নিয়ে জীবন্ত অসহায় চিৎকারে বলেছিল_ এই কি আমাদের জন্মভূমি।
আসলে কি ঘটেছিল ওই সময়ে। এই ঘটনা তদন্তের লক্ষে গঠিত তদন্ত কমিশনের অনুসন্ধানে তার চিত্র ফুঁটে উঠেছে। ধারাবাহিক পর্বে চাঞ্চল্যকর এ সব ঘটনার বর্ণনা থাকছে।
অবশ্য ইতোমধ্যে ওই সময়ের ঘটনা তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পেশ করেছে কমিশন। অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রধানকরে গঠিত তিন সদস্যের কমিশন মর্মস্পর্শী তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার পর দেড়মাস মাস অতিবাহিত হলেও রহস্যজনকভাবে সরকার রয়েছে নীরব। সরকারের রহস্যজনক এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ এ ঘটনা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে মানবতা হয়েছিল লাঞ্ছিত। সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি হয়েছিল ল-ভ-। মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনাবিরোধী শক্তি বাংলাদেশজুড়ে শুরু করে নারকীয় তা-ব। এদের সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ, সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ, সম্পদ লুণ্ঠন, জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, শারীরিক নির্যাতন ও অগি্নসংযোগের মতো অসংখ্য ঘটনা মানবতা ক্রন্দনরত। বিদীর্ণ বাংলাদেশ। নির্মম। পাশবিক। জানত্মব আক্রোশ। হিংস্রতা। প্রতিটি ঘটনা যেন মথিত হৃদয়ের বেদনার্থ সমগ্রতা নিয়ে জীবন্ত অসহায় চিৎকারে বলছে: এই কি আমাদের জন্মভূমি। এই প্রতিবেদন অশ্রম্ন, আর্তনাদ, নীরব বেদনা, হৃদয়ানুভূতি ও উপলব্ধির বিবেক যন্ত্রণায় বিদ্ধ রম্নদ্ধকালের ঘটনাপঞ্জি।
তদনত্ম কমিশন ৮ম জাতীয় সংসদ ২০০১ নির্বাচনোত্তর খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, অগি্ন সংযোগসহ সকল মানবতাবিরোধী সহিংসতায় আক্রানত্ম নিরীহ ব্যক্তি ও পরিবারের শোক, দুঃখ ও বেদনার কাহিনী তুলে ধরেছে। এ সময় চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীরা সারা দেশে যে সহিংসতা চালিয়েছে তা মধ্যযুগীয় নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে।
তদনত্ম রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাত অর্থাৎ ২০০১ সালের ১ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শুরম্ন হয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাচন। সংখ্যালঘুর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ওপরও শুরম্ন হয় এই নির্যাতন। নৌকা মাকর্ায় ভোট দেয়ার অভিযোগে নির্যাতন শুরম্ন হলেও মুহূর্তে এতে নতুন মাত্রা যোগ হয় অসহায় সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণ। যুবদল-ছাত্রদলের এই মিশন থেকে রেহাই পায় না বৃদ্ধা। গর্ভবতী মহিলারাও এমনকি সম্ভ্রম রৰা করতে গিয়ে পাট ৰেতে বাচ্চা প্রসব করার ঘটনাও ঘটে এ সময়। জোট সরকারের পৈচাশিক চেহারা মুহূর্তে প্রকাশ পায় তাদের অনুসারীদের কর্মকা-ে। রাতভর ধরে চলে ধর্ষণ। গ্রাম ঘিরে ধর্ষণে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে এই নরপিচাশরা। এ সময়ে বাগেরহাটে এক কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণকালে তার মা উচ্চস্বরে বিলাপ করতে করতে বলেছিল, বাবারা তোমরা একজন করে আস, আমার মেয়ে ছোট। এতেও ৰানত্ম হয়নি নরপিচাশরা। কিশোরী মেয়ের ওপর হায়নার দল যেন আছড়ে পড়ে।
একই পরিবারের তিন থেকে পাঁচ সংখ্যালঘু নারী এক সঙ্গে ধর্ষিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। কোথাও মা মেয়ে এক সঙ্গে, কোথাও মা মেয়ের সঙ্গে পুত্রবধু এবং পুত্রবধুর মাও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আবার কোথাও স্বামীকে বেঁধে তার ও সনত্মানদের সামনে মাকে ধর্ষণ করেছে তারা। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী থেকে ডিগ্রী পড়ুয়া সংখ্যালঘু মেয়েদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সংখ্যালঘু পরিবারের মেয়েদের তুলে নিয়ে এরা মদ খেয়ে পালক্রমে ধর্ষণ করে। ভোলার লাল মোহনে অন্নদাপ্রসাদ গ্রামের চার পাশের ধানৰেত ও জলাভূমি পরিবেষ্টিত ভেন্ডার বাড়িতে অর্ধশতাধিক মহিলারা তাদের সম্ভ্রম রৰার লৰ্যে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সে বাড়িটিও এই নরপিচাশদের নজর এড়ায়নি। শত শত বিএনপি সন্ত্রাসীরা ৮/১০টি দলে বিভক্ত হয়ে অত্যনত্ম পরিকল্পিতভাবে ওই রাতে হামলা চালায়। মহিলারা তাদের সম্ভ্রম রৰা করতে পারেনি। সম্ভ্রম রৰায় অনেকে, প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ে আশেপাশের ধানৰেত ও জলাশয়ে। কিন্তু তাদের শিশুদের পানিতে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়ে পানি থেকে ওঠে আসতে বাধ্য করায়। সেখানে ধর্ষিত হয় ৮ বছরের শিশুও। মা, মেয়ে, পুত্রবধূকে ধর্ষণ করা হয় এক সঙ্গে। ছেলের চেয়েও ছোট বয়সী সন্ত্রাসী কর্তৃক মায়ের বয়সী নারী ধর্ষিত হয়। এদের কবল থেকে রৰা পায়নি পঙ্গু, অন্ধ, প্রতিবন্ধী নারীরাও। কোন কোন ৰেত্রে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়াসহ লোমহর্ষক অনেক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে এতে ।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করায় যশোরের চৌগাছায় এক আওয়ামী লীগ ভক্ত আব্দুল বারিক ম-লকে তার বাড়িতে এনে গাছের সঙ্গে বেঁধে দিনে দুপুরে রামদা দিয়ে কোপ দিয়ে দুপা কেটে ফেলে। বড় ছেলে বাধা দিতে গেলে তার দুপায়ে গরম রড ঢুকিয়ে দেয়। এর পর তার বাড়িতে তারই গরম্ন জবাই করে ভোজের আয়োজন করে। নির্বাচনের পর কয়েকদিন ধরে চলে এই নারকীয় অত্যাচার। কিন্তু প্রশাসন থাকে নীরব। কোথাও কোথাও বরং এই নরপিচাশদের সহযোগিতা করেছে। তদনত্ম কমিটির রিপোর্টে এ বিষয়গুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
তদনত্ম প্রতিবেদনে সহিংস ঘটনার প্রকৃতি অনুযায়ী ছয়টি সুপারিশ করে। এর মধ্যে ওই সময়ের অনেক ঘটনা রয়েছে, যা মামলা দায়ের করা সম্ভব হয়নি। এ জাতীয় সকল বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের করা, কোন কোন মামলা পুনরম্নজ্জীবিত করা, তদনত্ম না করে যে সকল মামলা চূড়ানত্ম রিপোর্ট প্রদান করা হয়, সে সকল মামলার পুনর্তদনত্ম করা, কিছু মামলা রিভিউ করা, কিছু মামলা আপীল করা এবং সহিংস প্রতিটি ঘটনা তদনত্ম করে বের করতে প্রতিটি জেলায় ছোট আকারে তদনত্ম কমিশন বা কমিটি গঠন করা।
পরবর্তী করণীয় কী এমন এক প্রশ্নের জবাবে তদনত্ম কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, যে রায়ের আলোকে তদনত্ম কমিশন গঠন করা হয়েছে, সে রায়ের আলোকে পরবর্তী পদৰেপের জন্য সরকারই উপযুক্ত কর্তৃপৰ। এ ব্যাপারে নতুন করে আদালতের নির্দেশনা নেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে সরকার কোন ৰেত্রে প্রয়োজন মনে করলে আদালতের কাছে পরবর্তী নির্দেশনা চাইতে পারে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেছিলেন, কিছু কিছু ৰেত্রে আদালতের নির্দেশনার প্রয়োজন হতে পারে। ২০০১ সালের অনেক ঘটনায় তখন মামলা দায়ের করা হয়নি বা করতে পারেনি। এ ঘটনার প্রেৰিত্রে এখন মামলা দায়ের করতে আদালতের নিদের্শনার প্রয়োজন হতে পারে। তবে আমরা বিষয়টি পরীৰা-নিরীৰা করে দ্রম্নত বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কিন্তু তদনত্ম কমিশন রিপোর্ট প্রদানের পর ৪৯ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও কোন প্রকার উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
কমিশনের সদস্য মনোয়ার হোসেন আখন্দ জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংস ঘটনার তদনত্ম করতে গিয়ে দেখতে পাই জনকণ্ঠ পত্রিকা দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছে। জনকণ্ঠ পত্রিকার রিপোর্ট আমাদের সহায়ক হয়েছে। রিপোর্টে যে ঘটনাগুলো তুল ধরা হয়েছে, তদনত্ম করতে গিয়ে প্রতিটি ৰেত্রে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই সময়ের প্রতিদিনের নির্যাতনের চিত্র জনকণ্ঠের পাতায় ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, এ ছাড়া দায়িত্বশীল একটি ইংরেজী পত্রিকাতে মাত্র দুটি লেখা ছাপা হয়েছে। এ সময় বাকি মিডিয়া রহস্যজনকভাবে নীরব ছিল। তবে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রচার না করলেও তাদের ধারণকৃত দুটি ফুটেজ পেয়েছি। কমিশনের সভাপতিও একই কথা বলেছেন জনকণ্ঠ সম্পর্কে। তিনি বলেন, কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, জনকণ্ঠ কতবড় দায়িত্বলীল পত্রিকা। পত্রিকাটি সকল সময়ে নির্যাতিত মানুষের পার্শে দাঁড়ায়। অপর এক কর্মকর্তা বলেন, জনকণ্ঠ নির্যাতিত সংখ্যালঘু এই জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছিল বলে তাকেও কম মাসুল গুনতে হয়নি। এতে রীতিমতো সরকারের রোষানলে পড়তে হয়। তৎকালীন সরকার পত্রিকাটির সকল বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েই ৰানত্ম হয়নি। কোম্পানির সকল ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় সংখালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি কিছু আওয়ামী নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসে মধ্যযুগীয় বর্বরতা। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের বাড়ি লুট, মায়ের সামনে কন্যাকে ধর্ষণ, স্বামীকে বেঁধে তার সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ, কোন কোন ৰেত্রে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়াসহ লোমহর্ষক অনেক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে এতে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর একের পর এক হামলা হতে থাকে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া, বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, জমি দখল করা, হাত-পা কেটে নেয়া এবং খুন-ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
দলীয় আনুগত্যের কারণে সে সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্যাতন বন্ধ করতে প্রশাসনিকভাবে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে উলেস্নখ করা হয় প্রতিবেদনে। আবার জনগণের কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন জবাবদিহি না থাকায় খেয়ালখুশিমতো প্রশাসন চালিয়েছে। বিশেষ করে, ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রশাসনে রদবদলের মাধ্যমে সহিংস ঘটনার জন্য পথ সৃষ্টি করে গেছেন।
এ ধরনের নৃশংস ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে 'হিউম্যান রাইট ফর পিস' নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদনত্মের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন আদালত। এরপর ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রধান করে তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদনত্ম কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের দুই সদস্য হলেন উপসচিব মনোয়ার হোসেন আখন্দ ও ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মীর শহিদুল ইসলাম।
তদনত্ম কমিশনের সুপারিশে ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর ঘটনার জন্য দায়ী অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। অপরাধীদের বিরম্নদ্ধে দ্রম্নত মামলা করারও সুপারিশ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই যেসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে রাজনৈতিক সংশিস্নষ্টতা ছিল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসার কারণেই এসব ঘটনা ঘটেছে।
পাঁচ খ-ের তদনত্ম প্রতিবেদনটি এক হাজার ৭৮ পৃষ্ঠার। তদনত্মকালে কমিশন মোট অভিযোগ পেয়েছে পাঁচ হাজার ৫৭১টি। ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যনত্ম পাওয়া অভিযোগের সংখ্যা তিন হাজার ৬২৫। এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাকা-ের ঘটনা ৩৫৫টি এবং লুটপাট, অগি্নসংযোগ, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, পঙ্গুত্ব, গুরম্নতর আঘাত, সম্পত্তি দখল ও অন্যান্য গুরম্নতর অভিযোগ তিন হাজার ২৭০টি। অভিযোগ বাতিল করা হয়েছে এক হাজার ৯৪৬টি। কমিশনের তদনত্ম করা তিন হাজার ৬২৫টি ঘটনায় ১৮ হাজারেরও বেশি লোক জড়িত। কমিশনের প্রতিবেদনে সহিংস ঘটনার কিছু উদাহরণ, কারণ ও পটভূমি, সহিংসতার ধরন, সারসংক্ষেপ, প্রাসঙ্গিক মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের বিবরণ আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেতাকর্মীদের পাঁচ হাজার ৮৯০টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে উলেস্নখ করে তদনত্ম কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। রাজনৈতিক আক্রোশের কারণে কারও হাত-পা কেটে ফেলা হয়, কারও চোখ তুলে ফেলা হয়, অনেক নারীকে ধর্ষণ করা হয় মায়ের সামনেই।
কমিশন জানায়, ২০০১ সালে নির্বাচনোত্তর সহিংসতার ঘটনায় যেসব ব্যক্তির ওপর আক্রমণ করা হয়েছিল, লুটপাট চালানো হয়েছিল, গণধর্ষণ করা হয়েছিল, তাঁরা থানায় বা আদালতে অভিযোগ দায়ের পর্যনত্ম করতে পারেননি। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করতে পারলেও রাজনৈতিক কারণে তদনত্ম করা হয়নি।
কোন মামলা হয়ে থাকলে দ্রম্নত বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে। অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে এ ধরনের সহিংস ঘটনা তদারকি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি সেল গঠন করা, ক্ষতিগ্রসত্ম ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা করা, রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে পরিবর্তন আনা, নির্বাচনে জয়লাভের পর পরাজিতদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব, জয়লাভের পর তাৎক্ষণিক বিজয়োলস্নাস পরিহার করা, জনগণের রায়কে স্বীকৃতি দেয়া, স্থানীয় প্রশাসনকে দলীয়করণ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা, এ সব ঘটনা তদন্তের জন্য প্রতিজেলায় একটি করে স্বল্পমেয়াদি কমিটি বা কমিশন গঠন করা ইত্যাদি।
২৬| ১৩ ই জুন, ২০১১ রাত ১:৩৪
নাভদ বলেছেন: মূল পাতা » পুরাতন সংখ্যা » ১৩ জুন ২০১১ » প্রথম পাতা » বিস্তারিত
ভোলার 'ভেণ্ডারবাড়ী' এক অভিশপ্ত রাতের ভয়াবহ সাক্ষীমানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ (২)
তপন বিশ্বাস ॥ ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে যত্রতত্র। খুন, লুণ্ঠন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, অগ্নিনসংযোগসহ সব মানবতাবিরোধী সহিংসতায় আক্রান্ত নিরীহ ব্যক্তি ও পরিবারের শোক, দুঃখ ও বেদনা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তারই কিছু কাহিনী তুলে ধরা হলো ধারাবাহিকের এ পর্বে।
৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংস ঘটনা ঘটলেও সকল মাত্রা ছাড়িয়ে শীর্ষে অবস্থান করে ভোলা জেলার লালমোহন থানার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের অন্নদা প্রসাদ গ্রামের ভোন্ডারবাড়ীর ঘটনা। নির্বাচনের পর পরই শুরু হয় দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থক বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ এবং ভেন্ডারবাড়ী থেকে থানা প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের লোকজন এমনকি সংবাদকর্মীরাও নির্বাচনে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। বাড়িঘর লুটপাট, চাঁদা দাবি, এমনকি নারী ধর্ষণের অজস্র ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে অধিকাংশ ঘটনাই পুলিশের নথিভুক্ত হয়নি।
তদনত্ম কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১ অক্টোবর রাতে হামলা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগি্নসংযোগ ইত্যাদি ঘটনায় লালমোহনের বিভিন্ন এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। নির্বাচনের পরদিন ২ অক্টোবর অন্নদা প্রসাদ গ্রামের আশপাশের গ্রামের সংখ্যালঘু মহিলারা নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছিল গ্রামের চার পাশের ধানৰেত ও জলাভূমি পরিবেষ্টিত ভেন্ডারবাড়ী। অর্ধশতাধিক মহিলা তাদের সম্ভ্রম রৰার জন্য সেখানে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সে বাড়িটিও সন্ত্রাসীদের নজর এড়ায়নি। নরপিশাচদের আগুনে আত্মাহুতি দিল শত নারী। শত শত বিএনপি সন্ত্রাসী ৮/১০টি দলে বিভক্ত হয়ে অত্যনত্ম পরিকল্পিতভাবে ওই রাতে হামলা চালায়। একের পর এক দল হামলা চালিয়ে অসহায় সংখ্যালঘু পরিবারের মেয়ের ধর্ষণ করতে থাকে। শত চেষ্টা করেও মহিলা তাদের সম্ভ্রম রৰা করতে পারেনি। অনেক সম্ভ্রম হারানোর ভয়ে, প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ে আশপাশের জলাশয়ের ধানৰেতে। মহিলারা পানিতে ঝাঁপিয়ে সম্ভ্রম রৰার চেষ্টা চালালে রাজনৈতিক মদদপুষ্ট এ সন্ত্রাসীরা তাদের সনত্মানদের পানিতে ফেলে দেয়ার হুমকি দিলে সনত্মানের জীবন রৰায় তারা উঠে আসতে বাধ্য করে। আর উঠে আসলেই তারা গণধর্ষণের শিকার হয়। এভাবে ধর্ষিত হয় আট বছরের শিশু, লাঞ্ছিত হয়েছে ৬৫ বছরের বৃদ্ধা, মা, মেয়ে, শাশুড়ি, পুত্রবধূকে ধর্ষণ করা হয়েছে এক সঙ্গে। এ সময় ছেলের চেয়েও ছোট বয়সী সন্ত্রাসী ধর্ষণ করেছে মায়ের চেয়েও বেশি বয়সের নারীকে। সন্ত্রাসীরা ছাড়েনি পঙ্গু নারী শেফালী রানী দাসকেও। পঙ্গু হওয়া সত্ত্বেও অন্যদের মতো সন্ত্রাসীদের কবল থেকে সম্ভ্রম বাঁচাতে শেফালী রানীও পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস। পঙ্গু শেফালী পালানোর চেষ্টাকালে পুকুর পাড়ে হলুদ ৰেতে পড়ে যায়। তখন দুই সন্ত্রাসী তাকে ধরে ফেলে এবং তার পরনের কাপড় ছিঁড়ে তাকে বিবস্ত্র করে দুই সন্ত্রাসী পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সন্ত্রাসীদের পাশবিক অত্যাচারে এক পর্যায়ে শেফলী জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে পলফ্যাশন হাসপাতালে তার চিকিৎসা করানো হয়। সম্ভ্রম হারিয়ে অনেকেই লজ্জায়, ভয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যায়।
তদনত্ম রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভেন্ডারবাড়ীতে নারকীয় এ পাশবিক ঘটনার বিএনপি সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্যতম ছিল অন্নপ্রসাদ গ্রামের আবু, সেলিম, দুলাল, জাকির পিং আঃ খালেক। এছাড়া ওই সন্ত্রাসীদের মধ্যে ছিল দুলাল পিতা-কব্বর আলী সাং চাঁদপুর, আলমগীর পিতা- আঃ মুন্নাফ সাং অন্নদাপ্রসাদ, সোহাগ মিয়া সাং অন্নদাপ্রসাদ, নজরম্নল পিতা- মৃত বদিউজ্জামান সাং চাঁদপুর, মোঃ আক্তার পিতা-আঃ হাই সাং ফাতেমাবাদ গং জোর পূর্বক গংগাচরণ দাস পিতা- মৃত বৈকুন্ঠ কুমার দাস সাং অন্নপ্রসাদের বাড়িতে প্রবেশ করে তার বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। আসামিরা তার স্ত্রী শেফালী বালা দাস ও কন্যা সুষমা রানী দাসকে ধর্ষণ করে। ওই গ্রামের অনেকে এখন ভারতে অবস্থান করছে। এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে আশ্রয় নেয়া ৬০/৭০ মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়।
তদনত্ম কমিশন লালমোহনের ভেন্ডারবাড়ী নারকীয় পৈশাচিক ঘটনায় জড়িত কিছু সন্ত্রাসীদের নাম উলেস্নখ করেছে তাদের প্রতিবেদনে। এর মধ্যে ১. দুলাল, পিতা- আলী আকবর, সাং চাঁদপুর। ২. ইব্রাহিম খলিল, পিতা-মৃত মৌলভী মোহাম্মদ, সাং অন্নদাপ্রসাদ। ৩. আকতার (৩৫) পিতা-জাফর উল্যাহ, সাং চাঁদপুর। ৪. সাইফুল (৪০) পিতা-ওসমান গনি, সাং-অন্নদাপ্রসাদ। ৫. শাহাবুদ্দিন পিতা- আঃ হাই সাং-চাঁদপুর। ৬. মোতাহার (৩৫), পিং- সামছুল হক, সাং-ফাতেমাবাদ, ৭. ভুট্টো, পিতা- মোসত্মফা, সাং-অন্নদাপ্রসাদ, ৮.নান্নু (৩৭), পিতা- লুৎফর রহমান, সাং ফাতেমাবাদ। ৯. আলমগীর, পিতা-আবুল হাশেম, সাং-সৈয়দাবাদ, ১০ সেলিম, পিতা-ইয়াসিন মাস্টার, সাং-অন্নদাপ্রসাদ। ১১. জাকির, পিতা- আঃ মালেক। ১২. নজরম্নল, পিতা বদিউজ্জামান, ১৩. আবু, পিতা- জলিল, ১৪. মিজান, পিতা-ইসহাক, ১৫. ইদ্রিস, পিতা-আঃ কাদের ১৬. মোশারফ, পিতা- শাহাবুদ্দিন মিয়া, ১৭. বাবলু, পিতা-নুরম্নজ্জামান, ১৮. কামরম্নল, পিতা-নুরম্নজ্জামান, সর্ব সাং অন্নাদপ্রদান লালমোহন বোলা। অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন যাদের নাম ঠিকানা তদনত্মের সময় কেউ বলেনি বা বলতে পারেনি।
অনত্মঃসত্ত্বা জয়নত্মী-সংগ্রামের কাহিনী ॥
৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন ২ অক্টোবর অষ্টাদশী গ্রাম্য গৃহবধূ জয়নত্মী যখন প্রথম সনত্মানের জন্মমুহূর্তে প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে, ঠিক সে সময় দিন দুপুরেই বেলা আনুমানিক ৩টায় ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার সাত নন্বর পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের জাহাজমারা গ্রামে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তদনত্ম রিপোর্টে বলা হয়, স্থানীয় বিএনপি নেতা ইলিশা কান্দি গ্রামের জাহাঙ্গীর মাতবরের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী দা, ছুরি, লাঠি ও বলস্নমসহ তাদের কুঁড়েঘরে হামলা চালায়। হামলায় গ্রামবাসী ভয়ে পালিয়ে যেতে থাকে। গ্রামের বিভিন্ন ঘরে ঢুকে সন্ত্রাসীরা হামলা চালাতে থাকে। জয়নত্মীর শাশুড়ি মুক্তিরানী একজন স্থানীয় ধাত্রীকে দিয়ে তার শিশু প্রসব করাচ্ছিল। শিশু প্রসবের মুহূর্তে সন্ত্রাসীরা দা ও ছুরি দিয়ে জয়নত্মীর কুঁড়ে ঘরের বেড়ায় কোপ মারতে থাকে। ধাত্রী সন্ত্রাসীদের ভয়ে ও আতঙ্কে পালিয়ে যায়। ঘরে শুধু অসহায় জয়নত্মী ও তার শাশুড়ি। সন্ত্রাসীরা তখনও ঘরের বেড়া ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ মুহূর্তে জন্ম নেয় একটি পুত্র সনত্মান। হতবুদ্ধি মুক্তিরানী কোন উপায় না দেখে জয়নত্মীকে ভালভাবে জড়িয়ে ধরে নবজাতককে পরনের শাড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে ঘরে নিয়ে অপর দিকের বেড়া ভেঙে জয়নত্মীকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনে। পরবর্তীতে ওই অবস্থায় দৌড়ে পালায় পাশের ধানৰেতে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায়। সদ্যপ্রসূতি মা জয়নত্মীর তখন দৌড়ে পালানোর মতো অবস্থা ছিল না। কিন্তু মৃতু্য ভয়ে ভীত মুক্তি রানী তাকে জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তখনও পর্যনত্ম সদ্যজাত শিশুটিকে মায়ের নাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন করার সময় পায়নি মুক্তি রানী। তাদের মতো অনেকেই সেই ধানৰেতের মধ্যে অপেৰাকৃত উঁচু একটি জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় এসে জড়ো হয়েছিল। সেখানে একজনের কাছ থেকে একটি বেস্নড নিয়ে শিশুটির নাড়ি কাটে মুক্তি রানী। রাত নয়টা পর্যনত্ম সেখানে থেকে সন্ত্রাসীদের চলে যাওয়ার খবর নিশ্চিত করে তারা পুনরায় ঘরে ফিরে যায়। এ ঘটনার কারণে সদ্য ভূমিষ্ঠ সনত্মানের নাম রাখা হয় সংগ্রাম।
গ্যাং রেফ ॥ নির্বাচনের পরদিন বিভিন্ন স্থানে চলে গ্যাংরেফ। ঝালকাঠির নলছিটিতে একই পরিবারের চম্পা রানী, পুতুল রানী, মিনতী রানী, মালতী রানীকে এক সঙ্গে ধর্ষণ করে এ নরপিশাচরা। বিএনপির সন্ত্রাসীরা নৌকা মাকর্ায় ভোট দেয়ার অপরাধে রাতে বাড়িতে এসে লুটপাট চালায়। পরবর্তীতে দল বেঁধে একই পরিবারের চার মা-মেয়ে ধর্ষণ করে।
দুই সনত্মানের সামনে মাকে ধর্ষণ ॥ ঘটনাটি ঘটে সাতৰীরার আশাশুনিতে। গ্রামের নাম খালিয়া। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পৰে প্রচারে অংশ নেয়ায় একই গ্রামের বিএনপি ক্যাডার শাহাজাহান, বটু, ইসমাইল ও সোবহানের লোলুপ দৃষ্টি থেকে সম্ভ্রম রৰা করতে পারেনি তারামন বিবি। ১৫ অক্টোবর রাতে স্বামী ও পুত্র-কন্যার সামনে গণধর্ষণের শিকার হয়।
মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণ ॥ নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার অপরাধে ফরিদপুরের ভাংগায় আজিমনগর গ্রামে একটি সংখ্যালঘু পরিবার বর্বরতম নির্যাতনের শিকার হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি মৌলবাদী সমর্থকরা ওই পরিবারের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করেই ৰানত্ম হয়নি। ঘরের মধ্যে সারারাত মদ খেয়ে পৈশাচিক উলস্নাসে মায়ের সামনেই নকুল মালোর কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণ করে। কমিশনের রিপোর্টে বলা হয় ২০০১ সালের ৬ অক্টোবর রাত ৯টায় ভাংগায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের ভাই পলাশ, মোঃ সেকেন, জামাল, এসকেন, কামাল ও টেক্কা নামে সাত বিএনপি সমর্থক ও সন্ত্রাসী আজিমনগর গ্রামে ওই সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা নৌকায় ভোট দেয়ার মজা দেখাচ্ছি বলে পরিবারের কর্তাকে খুঁজতে থাকলে প্রাণভয়ে তিনি ঘরের পেছনের দরজা খুলে পালিয়ে যায়। এসময় সন্ত্রাসীরা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় মায়ের সামনেই ওই পরিবারের কলেজ পড়ুয়া কন্যাকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ধর্ষণ করতে শুরম্ন করে। মা সন্ত্রাসীদের হাতে পায়ে ধরে মেয়ের ইজ্জত ভিৰা চাইলে সন্ত্রাসীরা তাকেও বেদম মারপিট করে। রাত ১টা পর্যনত্ম এ পৈশাচিক নির্যাতন শেষে সন্ত্রাসীরা ঘরের দামি জিনিসপত্র লুট করে কলেজ পড়ুয়া ওই মেয়েকে অন্যত্র তুলে নিয়ে পুনরায় ধর্ষণ করে এবং ভোরে তাকে গুরম্নতর আহত অবস্থায় বাড়ির সামনে ফেলে যায়। ভোরে ওই পরিবারটি ধর্ষিতা মেয়েসহ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পালিয়ে যায়। ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ গোপালগঞ্জ থেকে পরিবারটিকে এলাকায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। লোকলজ্জার ভয়ে মেয়েটিকে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সন্ত্রাসীরা ঘটনার পর থেকে ওই পরিবারসহ অন্যান্য সংখ্যলঘু পরিবারকে হুমকি দেয় এবং এ ঘটনা কাউকে না বলার হুমকি দেয়।
২৭| ১৮ ই জুন, ২০১১ রাত ১০:২৮
নাভদ বলেছেন: মূল পাতা » পুরাতন সংখ্যা » ১৫ জুন ২০১১ » প্রথম পাতা » বিস্তারিত
কমলার ক্ষতচিহ্ন সেদিন চূর্ণ করে দেয় আলতাফ চৌধুরীর দম্ভ
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ (৪)
তপন বিশ্বাস ॥ ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিহিংসার রাজনীতি। আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার অপরাধের দায় মেটাতে হয়েছে অসংখ্য সংখ্যালঘু নারীকে ইজ্জত দিয়ে। এ আঘাত সইতে না পেরে কেউ অপ্রকৃতস্থ হয়েছে সারা জীবনের জন্য। কেউ অত্মহনন করেছে। কেউ কেউ মুখ বুজে সহ্য করলেও তাদের দীর্ঘ নিশ্বাসে আজও স্মরণ করে ২০০১-এর সেই নির্বাচনকে। এই নারকীয় ঘটনায় অনেকে হাত-পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছে। এ জাতীয় আরও কিছু ঘটনা থাকছে ধারাবাহিকের এই পর্বে।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর মুহূর্তেই খুন, লণ্ঠন, অগি্ন সংযোগ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি ধর্ষণ শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোটের নরপিশাচরা। আবাল-বৃদ্ধা-বনিতা, প্রতিবন্ধী কেউ এদের হাত থেকে রৰা পায়নি। হায়নারা যেন দল বেঁধে নামে ধর্ষণে। ৯ বছরের শিশু কাজলীও ধর্ষণের শিকার হয়েছে এই নরপশুদের হাতে। মদ খেয়ে ধর্ষণে মাতোয়ার হয়ে ওঠে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। এ সময়ে ঘটনা শুধু মধ্যযুগীয় নয়, যে কোন সময়ের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।
গোটা বাঙালী জাতি এ নারকীয় ঘটনার ধিক্কার জানিয়েছিল, জানিয়ে যাচ্ছেও। জাতি চায় মানুষরূপী এই নরপশুদের দৃষ্টানত্মমূলক বিচার হোক। রাজনীতি করা বা বিশেষ কোন দলকে সমর্থন করা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। মানুষের গণতান্ত্রিক এই অধিকারকে নস্যাত করতে নারকীয় এই ঘটনা করে উলস্নাস করে এরা । গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কাছে বাংলার মানুষের অনেক প্রত্যাশা। ভিন্ন মত থাকবে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ তাঁকে পছন্দ করে, তাঁকে চায় বলেই তো ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ এবার ৰমতায় এসেছে। জাতির আকাঙ্ৰা গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী এই অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। এদের দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মি দেবেন, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ জাতীয় ঘৃণ্য অপরাধ করতে সাহস না পায়।
নির্বাচনের দিন রাতে অর্থাৎ ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বরিশালের গৌরনদীর চানসি গ্রামে সাবিত্রী দাস গণধর্ষণের শিকার হয়। মধ্যরাতে ১০/১২ সন্ত্রাসী সাবিত্রী রানী দাসের ঘরে দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে। এ সময় তার স্বামী বাধা দিলে তাকে মারধর করে ঘরে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখে। স্বামী চোখের সামনে স্ত্রী সাবিত্রীকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে একে একে ধর্ষণ শুরম্ন করে। পালাক্রমে রাতভর চলে এই ধর্ষণ প্রক্রিয়া। ভোরে সন্ত্রাসীরা তাদের ফেলে চলে যায়। এ ঘটনায় সাবিত্রী রানী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ঘটনার ১০ বছর পর তদনত্ম কমিশন গিয়ে তাকে অপ্রকৃতস্থ দেখতে পায়।
নির্বাচনের পরদিন অর্থাৎ ২০০১ সালের ২ অক্টোবর রাতে যুবদল ও ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ফরিদপুরে ডিগ্রী পড়ুয়া এক সংখ্যালঘু মেয়ের প্রতি। সবেমাত্র এইচএসসি পাস করে ডিগ্রীতে ভর্তি হওয়া সংখ্যালঘু পরিবারের এই মেয়েটির প্রতি তাদের লোলুপ দৃষ্টি আগে থেকেই ছিল। নির্বাচনের পর দেশজুড়ে খুন, ধর্ষণ, লুটপাট শুরম্ন হলে রাতের অাঁধারে তারাও বাসনা মেটাতে ছুটে আসে মেয়েটির বাড়িতে। মেয়েটিকে তার বাড়িতে ফেলে মা-বাবার চোখের সামনে গণধর্ষণ করে নরপিশাচরা। ১০ বছর পর তদনত্ম কমিশন ফরিদপুরে তাদের বাড়ি গেলে মেয়েটির মা-বাবা কমিশনের সদস্যদের পা জড়িয়ে ধরে। এ সময় কমিশনকে তারা জানায় ঘটনাটি তারা ভুলে যেতে চায়। মেয়েটিকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। কোন কারণে এ ঘটনা যাতে প্রকাশ না পায় তারা সে অনুরোধ জানায়।
নাবালিকা কাজলী ধর্ষণ ॥
২০০২ সালে ২১ মার্চ রাতে রাজশাহীর বাগমারা থানার কোন্দা গ্রামে মোঃ রজব আলী রাতের খাওয়া শেষে তার স্ত্রী অলকজান একটি ঘরে এবং তার ছেলে জুয়েল ও মেয়ে রজুফা ওরফে কাজলী (৯) অপর একটি ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে বিএনপি সমর্থিত ১. আশরাফুল আলম, ২. ইসরাফিল, ৩. রহিম উদ্দিন, ৪ মকলেছুর (মকে), ৫ জাকিরম্নল ওরফে সান্টু, ৬. আসকান ওরফে আমিনুল ও আমজাদ হোসেন সর্ব সাং কোন্দা, বাগমারা তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে নাবালিকা মেয়ে কাজলীকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। এ সময় বাধা দিতে এতে কাজলীর ভাইয়ের গলায় এক সন্ত্রাসী চাকু ধরে। অপর এক সন্ত্রাসী চাকু দিয়ে কাজলীর যৌনাঙ্গের কাছে পাজামা কেটে তাকে ধর্ষণ করে। পাজামা কাটার সময় চাকুর আঘাতে কাজলীর যৌনাঙ্গের অংশ বিশেষ কেটে রক্তাক্ত জখম হয়। নরপশুরা ওই অবস্থায় কাজলীকে ধর্ষণ করে। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা কাজলীর চিৎকারে তারা মা-বাবা অন্য ঘর থেকে ছুটে এলে সন্ত্রাসীরা তাকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় মুমূষর্ু অবস্থায় তাকে প্রথমে স্থানীয় ডাক্তারের কাছে পরে ডাক্তারের পরামর্শে রাজশাহীতে সেবা ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা করায়। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বাগমারা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন/২০০০ এর ৯(১)/৩০ রজু হয়। মামলাটি তদনত্ম শেষে সকল আসামির বিরম্নদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলা চার আসামির যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করে আদালত।
তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর দম্ভোক্তি ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশজুড়ে ভয়ঙ্কর রূপে চলছে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা। খুন, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, সম্পদ লুট, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত সশস্ত্র ক্যাডার। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী নির্দ্বিধায় অস্বীকার করছেন এ সকল ঘটনা। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর ও জনমতের চাপে সরকারী কর্মকর্তা ও দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারযোগে বরিশালের আগৈলঝড়ায় যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে আয়োজিত এক মঞ্চে স্থানীয় সংসদ সদস্য
জহিরউদ্দিন আহম্মেদ স্বপন বলেন, 'সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কোন নির্যাতন না হওয়া সত্ত্বেও পত্রিকায় মিথ্যা প্রতিবেদন ছাপিয়ে সরকারকে হেয় করা হচ্ছে।' স্বপনের এই উক্তির সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সামনে হাজির হয় রাজিহার ইউপি সদস্য কমলা রানী ওরফে কালা বউ। কমলা রানী মঞ্চে উঠে উপস্থিত জনতার সামনে শাড়ি খুলে তার ওপর বিএনপি সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। পিনপতনের সত্মব্ধতা ভেঙ্গে উপস্থিত জনতা ধিক্কার ধ্বনি দিয়ে মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করে। কমলা রানী স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পৰে পোলিং এজেন্ট ছিল বলে নির্যাতন করে তার বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত করে দেয়া হয়।
২৮| ১৮ ই জুন, ২০১১ রাত ১০:৩০
নাভদ বলেছেন: মূল পাতা » পুরাতন সংখ্যা » ১৭ জুন ২০১১ » প্রথম পাতা » বিস্তারিত
ছাত্র শফিক, অধ্যক্ষ গোপাল মুহুরীকে প্রাণ দিতে হয় সন্ত্রাসীর বুলেটে
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ (৬)
তপন বিশ্বাস ॥ ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশজুড়ে শুরম্ন হয় প্রতিহিংসার রাজনীতি। আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার অপরাধের দায় মেটাতে হয়েছে অসংখ্য সংখালঘু নারীকে ইজ্জত দিয়ে। ছাত্রলীগ করার অপরাধে পালিয়েও প্রাণ বাঁচাতে পারেনি অনেকে। পথের কাঁটা সরিয়ে দিতে নাজিরহাট কলেজের অধ্যৰ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে খুন করা হয়েছে দিনে দুপুরে। জাতির পিতার নামে নামকরণ করায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মহাবিদ্যালয় লুট করে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয় এবং তাতে আগুন লাগিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। এ আঘাত সইতে না পেরে কেউবা অপ্রকৃতিস্থ হয়েছে সারা জীবনের জন্য। কেউবা অত্মহনন করেছে। কেউ কেউ মুখ বুঁজে সহ্য করলেও তাদের দীর্ঘ নিঃশ্বাস আজও স্মরণ করে ২০০১-এর সেই নির্বাচনকে। এই নারকীয় ঘটনায় অনেকে হাত-পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছে।
২০০১ সাল, নির্বাচন পরবর্তী ঘটনা বাংলাদেশে নতুন কলঙ্কের জন্ম দিয়েছে। সারা দেশে একযোগে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ল-ভ-, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তির নারকীয় তা-ব, হত্যা, ধর্ষণ, উচ্ছেদ, লুণ্ঠন, জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, নির্যাতন ও অগি্নসংযোগসহ এমন কোন হীন কাজ নেই যা ঘটেনি। পাশবিক, জানত্মব আক্রোশ, হিংস্রতা। ঘটনার ৯ বছর পর হলেও সরকার তদনত্ম কমিশন করেছে। ইতোমধ্যে কমিশন তাদের প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। কিন্তু তার পরও সরকার রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছে। সরকারের এই ভূমিকায় জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, তা হলে কিী লোকদেখানোর জন্য এই তদনত্ম কমিশন গঠন করা হয়েছে।
পালিয়ে বাঁচতে পারেনি ছাত্রলীগ নেতা বুলেট ॥
২০০১ সালের ১ অক্টোবর ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় সংখ্যালঘু নারী-পুরম্নষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই তখন পালিয়ে বেড়ায়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি গৌরনদী কলেজের ছাত্রলীগ নেতা শফিকুর রহামন বুলেট বেশ কিছুদিন পালিয়ে থেকে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়িতে ফিরে দেখে তার মা ভীষণ অসুস্থ। অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে সে বাড়ি থেকে বের হয়। এ সময় গৌরনদী গোপাল শীলের সেলুন থেকে বিএনপি ক্যাডার কালু, সেলিম, মাসুদ, সুমন, রম্নবেল, স্বপন, বাবুসহ ১০/১২ জন তাকে ধরে শহরের খাদ্য গুদামের পাশে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালাতে শুরম্ন করে। প্রাণে বাঁচার লৰ্যে এক পর্যায়ে বুলেট পার্শ্ববর্তী খালে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিএনপি ক্যাডাররা তাকে পানিতে চুবিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। শফিকুর রহমান বুলেট বাড়িতে দু'দিন চিকিৎসা নেবার পর তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃতু্য হয়। এ ব্যাপারে গৌরনদী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-০৬, তারিখ ২৬-১১-২০০১। ধারা ৩০২/৩৪ দ. বি.। তদনত্ম শেষে আসামি ১. মাসুদ ওরফে হকার মাসুদ, পিতা- মধু মিয়া হাওলাদার, সাং-চরগাধাতলী, ২. রম্নবেল, পিতা- আব্দুর রহিম, ৩. স্বপন ওরফে ছোট স্বপন, পিতা-সেকান্ডার কুলি ওরফে কুদ্দা ওরফে সেকান্দার আরী বয়াতী, সাং-চরগাধাতলী, ৪. সজল, পিতা-মধু মিয়া হাওলাদার, সাং-চরগাধাতলী, ৫. সুমন কর্মকার, পিতা-অজ্ঞাত, সাং চরগাধাতলী, ৬. বাবু ওরফে শামীম মোলস্না, পিতা- মৃত হাতেম মোলস্না,, সাং-টিকাসার, ৭. জুয়েল, পিতা-মৃত বদিকুল ইসলাম খলিফা, সাং-কাশেমাবাদ, ৮. শাহ আলম খান, পিতা-জসিম উদ্দিন খান, সাং-টিকাসার, সর্ব থানা-গৌরনদী, বরিশাল। এদের বিরম্নদ্ধে গৌরনদী থানার অভিযোগপত্র নং-১৫, তারিখ-২৬-০১-২০০২ আদালতে দাখিল করা হয়।
অধ্যৰ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যাকাণ্ড ॥
২০০১ সালের ১৬ নবেম্বর, শুক্রবার। সকাল সোয়া ৭টার দিকে চার অজ্ঞাত পরিচয় অস্ত্রধারী যুবক ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যসত্মতম জামাল খান রোডের বাসায় হাটহাজারী কলেজের অধ্যৰ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে (৬০) মাথায় স্বয়ক্রিয় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে। সন্ত্রাসীরা সকলেই জামায়াত শিবিরের ক্যাডার। জামায়াত শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা সুপরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকা- ঘটায়। এই হত্যাকা-ের প্রতিবাদে ১৬ নবেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরীর জামাল খান, মোমিন রোড এলাকায় অঘোষিত হরতাল পালিত হয়। রাসত্মাজুড়ে ছিল প্রতিবাদ মিছিল।
জামায়াত শিবিরের অবৈধ অস্ত্রধারীদের গুলিতে নিহত নাজিরহাট ডিগ্রী কলেজের অধ্যৰ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর নৃশংস হত্যাকা-ের ব্যাপারে তাঁর স্ত্রী রেলওয়ে অডিক কর্মকর্তা উমা মুহুরী বাদী হয়ে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। কোতোয়ালি থানার মামলা নং-৪২ তাং ১৬-১২-২০০১ ধারা ৩০২/১২০(খ)। মোট ১১ আসামির বিরম্নদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। বিচার শেষে গিট্টু নাসির, তসলিম উদ্দীন ওরফে মন্টু, আজম ও আলমগীর কবির ওরফে বাইজা আলমগীরের ফাঁসির আদেশ হয়। পরবর্তীতে গিট্টু নাসির ক্রস ফায়ারে মৃতু্য বরণ করে। আসামি মহিউদ্দিন ওরফে মাইন উদ্দীন, হাবিব খান, শাজাহান এবং সাইফুল ওরফে ছোট সাইফুলসহ ৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদ-ের আদেশ দেয় আদালত।
নাজিরহাট কলেজের অধ্যৰ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী ছিলেন একজন আওয়মী লীগ ভক্ত। এছাড়া তিনি সকল ধরনের অন্যায়, অনিয়ম ও অবৈধ চাপের বিরম্নদ্ধে সোচ্চার থেকে কলেজ পরিচালন করতেন। এ কারণে জামায়াত-শিবিরের স্বার্থান্বেষী ক্যাডাররা তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়। হত্যাকা-টি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। পরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্রবার বন্ধের দিনকে সন্ত্রাসীরা বেছে নিয়েছে।
অধ্যৰ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর মৃতু্যর পর পরই চট্টগ্রামবাসী এ হতাকা-ের বিরম্নদ্ধে বিৰোভে ফেটে পড়ে। কালো পতাকা উঁচিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়কে মিছিল বের হয়। বিৰুব্ধ জনতার সকল মিছিল এসে জামাল খান রোডে জড়ো হয়। হত্যাকা-ের পর থেকে জামাল খান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রতিবাদ আর মিছিলের জনপদে পরিণত হয়।
শিৰা প্রতিষ্ঠানে অগি্নসংযোগ ॥
৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট ৰমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা ২, ৩, ৪, ৫, ৬ অকক্টোবর/২০০১ পর্যনত্ম বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল ও স্কুল-কলেজের ফার্নিচার, রিঙ্া, ভ্যান, নছিমন করিমন লুটপাট করে নিয়ে যায়। তারা বুড়ি-ভৈরব নদীর ওপর কাঠের ব্রিজটি ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় যাতে কেউ প্রতিরোধ করতে না পারে। সন্ত্রাসীরা ওয়াজেদ আলীকে দোকান থেকে বের করে টাকাসহ মালামাল লুট করে। ওয়াজেদ আলীর ওই বাজারে একটি মুদি দোকান, ১টি সার ও কীটনাশকের দোকান এবং ডেকোরেটরের দোকান ছিল। এ ছাড়া শাহজাহানের ১টি সাইকেল পার্টসের দোকানও লুটপাট করে। সন্ত্রাসীরা তাদের সঙ্গে আনা রামদা, চাইনিজ কুড়াল, সাবল, হাতুিড়, লাঠ, লোহার রড দিয়ে দোকান পাট ভাংচুর করে। সন্ত্রাসীরা মোঃ শাহাদাত খাঁ, পিতা-ওসমান খাঁ, সাং-মাতগাছিয়া, থানা-কালীগঞ্জের বাড়িঘর ভাংচুর ও তাকে মারধর করে। সন্ত্রাসীদের আক্রমণে বাজারটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা বঙ্গবন্ধু নামের কলেজ থাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মহাবিদ্যালয় ভেঙ্গ গুঁড়িয়ে দেয় এবং তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
২৯| ১৮ ই জুন, ২০১১ রাত ১০:৩২
নাভদ বলেছেন: Click This Link
ইজ্জতের মূল্য ১৯ হাজার টাকা, ভাঙ্গা হয় সোহেল তাজের বাড়ি
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ-৭
তপন বিশ্বাস ॥ ২০০২ সালের ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে মাতুভুঞা ইউনিয়নের উত্তর চানপুর গ্রামের আবুল হোসেনের পুত্র অসংখ্য অভিযোগের আসামি সন্ত্রাসী হারুনের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের বিএনপি-জামায়াতের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল মহেশপুর গ্রামে সংখ্যালঘু দাসপাড়াতে ধর্ষণ, হামলা ও লুটপাট চালায়। রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের নারকীয় তা-বে জয়বিহারী দাসের বাড়ি, ডাক্তারবাড়িসহ বিভিন্ন বাড়ির লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এ সময় সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ তিন সন্তানের জননী পুতুল রানী দাসকে (৩২) ঘরের দরজা বন্ধ করে তার স্বামী-পুত্রের সামনে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তদনত্ম কমিশনের কাছে পুতুল বলে, ইজ্জত রৰার জন্য আমি সন্ত্রাসী হারম্ননের হাতে এক হাজার টাকা ঘুষ দেই। কিন্তু তাতেও আমার ইজ্জত রৰা হয় না। নরপিশাচরা আমাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এই রাতে চানপুর গ্রামের ফারম্নক, শাহআলম ও মোঃ ইউনুস হেমনত্ম কুমার দাসের স্ত্রী আলো রানীকেও পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
সাকা চৌধুরীর তাণ্ডব ॥
সংখ্যালঘু নির্যাতনে কোন দিনই পিছিয়ে ছিলেন না সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকাচৌ)। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সারাদেশে যখন চলছে আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নানা নির্যাতন, তখন তিনিও শরিক হলেন এ কর্মকাণ্ডে। জাতীয় সংসদের এই নির্বাচনে বিজয়ী হন সাকাচৌ। এরপর তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা নির্বাচিত হন। উপদেষ্টা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তাঁর নিজ গ্রাম গহিরায় যান। গ্রামে যাওয়ার পর তাঁর সন্ত্রাসী ক্যাডার ফজল হক, আবু তাহের ও বিধান বড়ুয়াকে হুকুম দেন নির্বাচনে তাঁর বিপৰে প্রচারে অংশ নেয়া মহিলা মেম্বার রত্না ঘোষের বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করার। সন্ত্রাসীরা সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় গিয়ে মহিলা মেম্বারের বাড়িতে আগুন দিলে এই আগুন পাশর্্ববর্তী আরও তিনটি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় রত্না ঘোষের বাড়ির সঙ্গে চন্দন ঘোষ, সনজিত ঘোষ ও অজিত ঘোষের বাড়িও আগুনে ভস্মীভূত হয়। এভাবে সাকাচৌর ক্যাডাররা বাড়িঘরসহ ৩৭টি স্থাপনা ধ্বংস করে। নির্বাচনে বিপৰে কাজ করার অপরাধে শতকাতুল ইসলামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন ফার্নিচার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর হুমকির মুখে বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
ইজ্জতের মূল্য সাড়ে ১৯ হাজার টাকা ॥ ২০০১-এর নির্বাচন-পরবর্তী ৯ অক্টোবর রাতে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার সবদালপুর ইউনিয়নের নহাটা গ্রামের পালপাড়ার পাশের গ্রামের বাকি মিয়ার নেতৃত্বে মিজানুর রহমান, জাহাঙ্গীর, বাবলু, আবু সাইদ, কেনালসহ ২০-২৫ জন বিএনপি সন্ত্রাসী একই গ্রামের অনিল পাল, নিখিল পালসহ কয়েকজনের বাড়িতে ভাংচুর, মারপিট ও লুটপাট করার একপর্যায়ে কলেজ ও স্কুল পড়ুয়া দুই তরম্নণীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী মাঠে রাতভর পাশবিক নির্যাতন চালায়। পরের দিন সংশিস্নষ্টদের বিরম্নদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন ধারায় মামলা হয়। তদনত্ম শেষে আসামিদের বিরম্নদ্ধে চার্জশীট দাখিল করা হয়। ২০০২ সালের ১২ এপ্রিল পাশর্্ববর্তী আমতৈল দাখিল মাদ্রাসায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ঘটনাটি আপোস মীমাংসা করার জন্য এক সালিশ বৈঠকে বসে। ওই সালিশ বৈঠকের মোড়লগণ গণধর্ষণের শিকার হওয়া দুই তরম্নণীর ইজ্জতের মূল্য ১৯ হাজার ৫শ' টাকা নির্ধারণ করে
সোহেল তাজের বাড়ি ভাংচুর ॥
৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০০১ সালের ১ ডিসেম্বর জননিরাপত্তা আইন বাতিলের প্রেৰিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার ৰতির আশঙ্কায় তৎকালীন প্রাধনমন্ত্রী (বর্তমানে বিরোধীদলীয় নেত্রী) বেগম জিয়ার বিরম্নদ্ধে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ (এমপি) এবং রহমত আলী (সাবেক প্রতিমন্ত্রী) (এমপি) যথাক্রমে কাপাসিয়া এবং শ্রীপুর থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ওই ডায়েরির বিষয় প্রকাশ পেলে স্থানীয় বিএনপি নেতা মাওলানা রম্নহুল আমীনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিস, সাবেক প্রতিমন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য রহমত আলীর বাড়ি এবং শ্রীপুর থানা অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে, এমনকি বিএনপির এই সন্ত্রাসীরা শ্রীপুর থানা অফিসে ঢুকে ভাংচুর করে। থানা পুলিশ অসহায় অবস্থায় পালিয়ে আত্মরৰা করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অর্ধবেলা হরতাল আহ্বান করে এবং ময়মনসিংহ রোডে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যনত্ম অবরোধ করে রাখে।
৩০| ১৮ ই জুন, ২০১১ রাত ১০:৪৮
নাভদ বলেছেন: মূল পাতা » পুরাতন সংখ্যা » ১৪ জুন ২০১১ » প্রথম পাতা » বিস্তারিত
পূর্ণিমা ছবিরানী মহিমা_এভাবেই সেদিন বাড়ে সম্ভ্রমহারাদের সারি
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ (৩)
তপন বিশ্বাস ॥ ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের নরপিশাচরা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ধর্ষণে মেতে ওঠে। প্রতিহিংসার রাজনীতিতে মানবতা লাঞ্ছিত হয়। এদের সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ, সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ, সম্পদ লুণ্ঠন, জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, শারীরিক নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের মতো অসংখ্য ঘটনায় মানবতা ক্রন্দনরত। এ জাতীয় আরও কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো ধারাবাহিকের এই সংখ্যায়।
২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনোত্তর খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, অগি্নসংযোগসহ সব মানবতাবিরোধী সহিংসতায় আক্রান্ত নিরীহ ব্যক্তি ও পরিবারের শোক, দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন। অনেকে তদন্ত কমিশনের সামনে এসে বর্ণনা করেছে লোমহর্ষক কাহিনী। আবার কেউবা ভয়ে এখনও মুখ খুলতে সাহস পায়নি। নাম প্রকাশ না করেও কেউ কেউ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে তদন্ত কমিশনের সামনে।
এক পরিবারের তিন সংখ্যালঘু নারীর সম্ভ্রমহানি ॥
বরিশাল সদর থানার চরমোনাই ইউনিয়নের রাজারচর গ্রামে তিন সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণ করে নরপিশাচরা। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজারচর গ্রামের পবিত্র কুমার মিস্ত্রি হোগলাপাতার ব্যবসা করত। দুই ছেলে, দুই মেয়ে, বোন আর স্ত্রীকে নিয়ে সে বসবাস করত। নির্বাচনের পর গ্রামে সন্ত্রাসীদের দাপট বেড়ে যাওয়ায় বড় মেয়ে গৌরীকে শহরে পাঠিয়ে দেয়। এতে বড় মেয়ে রৰা পেলেও সম্ভ্রম রৰা করতে পারেনি পরিবারের অন্য নারীরা। ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে বিএনপি সন্ত্রাসী বজলু, পিতা- মকবুল হাওলাদার, আতাহার তালুকদার, পিতা অজ্ঞাত উভয় সাং রাজারচর, থানা-কোতোয়ালি, বরিশালসহ ১০-১২ অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী পবিত্র কুমারের বাড়িতে এসে তাকে না পেয়ে স্ত্রী-সনত্মানদের পরনের কাপড় ছাড়া বাকি মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং পবিত্রকে দেখা করতে বলে। কিন্তু প্রাণভয়ে পবিত্র দেখা না করলে সন্ত্রাসীরা ১৩ অক্টোবর রাত সোয়া ১টার দিকে সিঁধ কেটে তার ঘরে প্রবেশ করে দরজা ভেঙ্গে ফেলে। এ সময় সন্ত্রাসীরা ঘরে ঢুকে পবিত্রর স্ত্রী পারম্নল বালা (৪০), মেয়ে প্রিয়ঙ্কা রানী মিস্ত্রি (পুষ্প) (১৪), চাচাত বোন সোমা রানী মিস্ত্রিকে গণধর্ষণ করে। ঘটনার দীর্ঘ ৯ বছর পর ভিকটিমরা তদনত্ম কমিশনের কাছে এ ঘটনা প্রকাশ করেছে। ঘটনার সময় থানায় মামলা দায়ের করা হলেও আসামিরা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
কিশোরী পূর্ণিমাকে গণধর্ষণ ॥
পনেরো বছর বয়সের দশম শ্রেণীর ছাত্রী পূর্ণিমা গণধর্ষণের শিকার হয়ে অনেকটা বাকরম্নদ্ধ হয়ে পড়েছিল। সিরাজগঞ্জের উলস্নাপাড়া থানার দেলুয়া গ্রামের অনিল কুমার শীলের পরিবারের ওপর ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী অক্টোবর মাসের ৮ তারিখ রাতে চালানো হয় বর্বরতম অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন। রাতে জোরপূর্বক বাড়িতে ঢুকে অত্যাচার-নির্যাতনের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা অনিল শীলের ছোট মেয়েকে তুলে নিয়ে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ঘটনার ৩/৪ দিন পর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ধর্ষিত ছাত্রী ও তার পরিবারকে সাংবাদিদের সামনে হাজির করলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালের ৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী মোঃ খলিল মিয়া, মোঃ আঃ জলিল মিয়া, মোঃ লিটন মিয়া, মোঃ আলতাফ হোসেন, মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোঃ রেজাউল হক, মোঃ আঃ মালেক, মোঃ হোসেন আলী, মোঃ ছাবেদ আলী, মোঃ আঃ রউফ, মোঃ আঃ মান্নান, মোঃ মজনু, মোঃ ইউসুফ আলী মোঃ মমিন হোসেন, মোঃ মনসুর আলী, মোঃ জহুরম্নল ইসলাম, মোঃ মেভেন মিয়া, মোঃ ইয়াসিন আলী, মাঃ আব্দুল মিয়া, মোঃ বাবুল মিয়াসহ ২৫-৩০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল রাতের অাঁধারে অনিল শীলের বাড়িতে হানা দেয়। তারা অনিলের ছোট মেয়ে পূর্ণিমা রাণী শীলকে অপহরণ করতে গেলে তার স্ত্রী বাধা দিতে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের হামলায় পূর্ণিমার মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। বাড়ির সবাইকে মারধর করে তারা পুর্নিমাকে তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
উলস্নাপাড়া হামিদা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীৰার্থিনী পূর্ণিমা ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন নিজ গ্রাম দেলুয়া ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রাথর্ী আব্দুল লতিফ মির্জার নির্বাচনী এজেন্ট ছিল। তার মা বাসনা অন্য ভোটকেন্দ্র মহিলা আনসারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পৰে কাজ করার কারণে এই পরিবারের ওপর নেমে আসে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীদের এই পাশবিক অত্যাচার। অবশ্য এ ঘটনায় কয়েকজনের শাসত্মিও হয়েছে।
ছবি রানী ধর্ষণ ॥
তদন্ত কমিশন সরেজমিন তদনত্ম করতে গেলে বাগেরহাট সার্কিট হাউসে এসে নির্মম নির্যাতনের কাহিনী বর্ণনা করে গণধর্ষণের শিকার হওয়া ছবি রানী। ধর্ষণের সময় তার বয়স ছিল ২০ বছর। ছবি রানী কমিশনের সামনে বলে, ২০০২ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি নেতা মলিস্নক মিজানুর রহমান ওরফে মজনু ও বাশার কাজীর নির্দেশে সন্ত্রাসী মজনু রহমান (বিএনপি থানা আহ্বায়ক), আবুল বাসার, তায়েব নুর, কামাল শিকারী, কামাল ইজারাদার, বজলুর রহমান, পলাশ, মাঝে শিকদার, ইল ফরাজী, হিমু কাজী, জিন্না নুর প্রহরী, ইমদাদ, এমএ মান্নান, হারম্নন মলিস্নক, মোসত্মাফিজুর রহমান, হাফিজ উদ্দিন, আলতাফরা সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা থেকে সাড়ে ৭টায় তাকে বিএনপি অফিসে ডেকে নিয়ে গণর্ধষণ করে। পরে মাথার চুল কেটে দেয়। পরে নগ্ন ছবি করে যৌনাঙ্গে বালু ও কাঁচের গুঁড়া ঢুকিয়ে দেয়। পানি খেতে চাইলে প্রসাব করে তা খেতে দেয়। জবানবন্দী দেয়ার সময় তার শরীরের কয়েকটি চিহ্ন কমিশনের সদস্যদের দেখান। এ সময় ছবি রানী তদনত্ম কমিশনকে জানায়, বাগেরহাট আদালতে এ মামলা চলাকালে বিএনপির তখনকার সভাপতি ও বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম তাঁর বাগেরহাটের বাড়িতে ডেকে নিয়ে জোর করে মামলা মীমাংসাপত্রে স্বাৰর করিয়ে নেয় এবং সন্ত্রাসীর হুমকির মুখে সাৰী হাজির করতে না পারায় বাধ্য হয়ে মামলাটি প্রথমে ঢাকা, পরে খুলানা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনালে স্থানানত্মর করে।
ধর্ষিত কিশোরী মহিমার আত্মহনন ॥
ঘটনাস্থল রাজশাহীর পুঠিয়া। কাঁঠালবাড়ীয়া গ্রামের আঃ হান্নানের ১৪ বছরের মেয়ে মোছাঃ মহিমা খাতুন। ২০০২ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি বিকেলে নিজ বসতবাড়ির পূর্বপাশ্বের একটি কাঁঠাল গাছ থেকে পাতা পেড়ে ছাগলকে খাওয়ানোর সময় বিএনপি সমর্থিত সন্ত্রাসী ফরিদ, পিতা- সেকেন্দার, ফরম্নক, পিতা-মোতালেব, সেলিম, পিতা- খলিল, সাং সেনবাগ, উজ্জল, পিতা-মোশারফ, সাং-পীরগাছা, মোশারফ হোসেন, পিতা-জবেদ আলী, সেকেন্দার আলী, পিতা- মৃত মাহাতাব, আঃ মোতালেব, পিতা- মৃত সৈয়দ আলী উভয় সাং কাঁঠালবাড়ীয়া ও খলিল, পিতা- লোকমান, সাং বড় সেনবাগ পুঠিয়া তাকে জোরপূর্বক পাশর্্ববর্তী আবু বক্করের আখৰেতে নিয়ে যায় এবং আসামিরা তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে সন্ত্রাসীরা মহিমা খাতুনের বিবস্ত্র অবস্থায় ছবি তোলে। ঘটনাটি প্রথমে আপোস মীমাংসার চেষ্টা চলে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে আপোস মীমাংসা না হওয়ায় মহিমা খাতুন সম্ভ্রমহানির অপমানে ঘটনার চারদিনের মাথায় ১৯ ফেব্রম্নয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিষপান করে । সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
৩১| ১৮ ই জুন, ২০১১ রাত ১০:৫২
নাভদ বলেছেন: মূল পাতা » পুরাতন সংখ্যা » ১৬ জুন ২০১১ » প্রথম পাতা » বিস্তারিত
আওয়ামী লীগ করে এ অপরাধে মরদেহ ঠাঁই পায় না গোরস্তানে
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ (৫)
তপন বিশ্বাস ॥ ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সহিংস ঘটনা ভয়াবহ রূপ নেয়। ফ্রি স্টাইলে চলে খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ সহিংস ঘটনা। আওয়ামী লীগ করার অপরাধে মৃতু্যর পর গোরস্তানেও ঠাঁই মেলেনি। গাছের সঙ্গে বেঁধে দিনেদুপুরে রামদা দিয়ে দু'পা কেটে পঙ্গু করে দেয়ার মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে তখন। সরকার ও প্রশাসন ছিল নীরব।
মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনোত্তর সহিংস ঘটনা তদনত্ম কমিশন গঠন করে। ২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর এ সংক্রানত্ম গেজেট জারি করা হয়। অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের কমিশন মর্মস্পর্শী তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার পর দেড় মাস অতিবাহিত হলেও রহস্যজনকভাবে সরকার নীরব রয়েছে। সরকারের রহস্যজনক এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ এ ঘটনা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে মানবতা লাঞ্ছিত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ল-ভ-। মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনাবিরোধী শক্তি বাংলাদেশজুড়ে শুরম্ন করে নারকীয় তা-ব। এদের সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ, সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ, সম্পদ লুণ্ঠন, জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, শারীরিক নির্যাতন ও অগি্নসংযোগের মতো অসংখ্য ঘটনা মানবতা ক্রন্দনরত।
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের এই আক্রোশকে ধিক্কার জানিয়েছে মানুষ। এই মানুষ নামের নরপিশাচদের দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মির দাবি জানাচ্ছে দেশের বিবেকবান মানুষ। মহাজোট সরকারের কাছে বিভিন্ন মানুষ এই দাবি জানিয়েছে জনকণ্ঠের এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে। নির্বাচনপরবর্তী সহিংস কা- নিয়ে এরই ধারাবাহিক দেখে অনেক বিবেকবান পাঠক ফোনে প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য জনকণ্ঠকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং জনকণ্ঠের মাধ্যমে এই নরপশুদের বিচারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনকণ্ঠ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রিপোর্টটি প্রকাশ করার উদ্যোগ নিচ্ছে। পাঠকদের অভিমত, শুধুমাত্র প্রকাশ করলেই সরকারের সকল দায়িত্ব সম্পন্ন হয়ে যাবে না। এই নরপশুদের দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এ জাতীয় অপরাধ করার কথা চিনত্মাও না করে।
আওয়ামী লীগ করায় গোরসত্মানেও ঠাঁই হলো না ॥
২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ৪ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা পাবনার সুজানগরে গুপিনপুর গ্রামে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ জিয়াউর রহমান, পিতা মৃত মুজিবর রহমানের বসতবাড়ি ভাংচুর, পুকুরের মাছ ও ঘরের সোনা-দানাসহ বিভিন্ন রকমের মালামাল লুট এবং বাড়ির দু'টি টিনের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। যতৰণ পর্যনত্ম ঘরগুলো পুড়ে ভস্মীভূত না হয় ততৰণ পর্যনত্ম সন্ত্রাসীরা বাড়িতে অবস্থান করে তার বাবাকে শারীরিকভাবে অমানুষিক নির্যাতন করায় তিনি স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। গুরম্নতর অবস্থায় মুজিবর রহমানকে ওই দিনই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরবর্তী ১৪ অক্টোবর তিনি মৃতু্যবরণ করেন। পরদিন তার মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি গুপিনপুর গোরসত্মানে দাফন করার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নে তৎকালীন চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হোসেন ও তার বাহিনী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে লাশটি স্থানীয় গোরসত্মানে দাফন করতে দেয়নি। কোন উপায় অনত্ম না দেখে অনন্যোপায় হয়ে পরবর্তীতে লাশটি বাড়ির আঙ্গিনায় দাফন করা হয়। ২০০১ সালের ২২ অক্টোবর বিকেল ৩টায় কুলখানি অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মির্জা আব্দুল জলিলসহ কয়েক শ' মানুষ। কিন্তু তোফাজ্জল হোসেনের মেজ ছেলের (মোঃ রবি) নেতৃত্বে তাদের দলীয় বাহিনী অনুষ্ঠানের সব খাবার ছিনিয়ে নেয় এবং শত শত মানুষের সামনে তার কবরের ওপর প্রস্রাব করে। সন্ত্রাসীরা মৃত মুজিবর রহমানের স্ত্রী (মোসাঃ রাশেদাকে বানু) বেধকড় মারধর করে আহত করে। থানায় মামলা করতে গেলে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলা নেয়নি। কমিশন সরেজমিনে তদনত্মে গিয়ে জানতে পাওে যে স্থানীয় তৎকালীন সংসদ সদস্য সেলিম রেজা হাবীবের ইন্ধনে এই ঘটনা ঘটেছে এবং সেলিম রেজা হাবীবের প্রভাবের কারণেই থানায় মামলা নেয়া হয়নি।
আওয়ামী ভক্তের দু'পা কেটে নিল ॥
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে যশোরের চৌগাছা-ঝিকরগাছা আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করায় স্থানীয় চৌগাছার মুক্তারপুরের ভাদড়া গ্রামের জিনাত উলস্নাহ ম-লের ছেলে আওয়ামী লীগ ভক্ত আব্দুল বারিক ম-ল তার বাড়িতে গরম্ন জবাই করে ভোজের আয়োজন করে। সেই আক্রোশে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হলে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী ১. মোঃ সেলিম, পিতা-মোঃ শাছুর রহমান, ২. মোঃ মানিক, পিতা- শাহাজাহান, ৩. মোঃ তরিকুল ইসলাম, পিতা- আব্দুল বিশ্বাস, ৪. মোঃ ওবায়দুল ইসলাম, পিতা-ওয়াহেদ আলী, ৫. মোঃ মোড়ল, পিতা-ওয়াহেদ আলী, ৬. আহাম্মদ আলী, পিতা-হাতেম বিশ্বাস, ৭. আব্দুল আজিজ, পিতা-বক্ত জামাল, ৮. মোঃ আবু ম-ল, পিতা- মোঃ খালেক, ৯. মোঃ ইব্রাহিম, পিতা-জাভেদ আলী ম-ল, ১০. মোঃ আঃ রশিদ, পিতা- মাসুদ আলী, সর্বসাং ভাদড়া, চৌগাছা, যশোর দলবদ্ধ হয়ে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভিকটিমকে তার বাড়িতে গাছের সঙ্গে বেঁধে দিনেদুপুরে রামদা দিয়ে কোপ দিয়ে দু'পা কেটে ফেলে। এতে ভিকটিমের বড় ছেলে বাধা দিতে গেলে তাকেও বেঁধে দু'পায়ে গরম রড ঢুকিয়ে দেয়। এতে বাবা ও ছেলে উভয়ই পঙ্গু হয়ে যায়। তারা দু'জনই যশোর সার্কিট হাউসে এসে কমিশনের কাছে মর্মস্পশী এ ঘটনার বর্ণনা দেয়। গ্রামের লোকেরা মসজিদের লাশ বহনকারী খাটিয়ায় করে এই পিতা-পুত্রকে যশোর সার্কিট হাউসে আনে।
অকালে ঝরে গেল মেধাবী ছাত্র ইমরুল কায়েস ॥
সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা গ্রামে আব্দুর রশিদ তালুকদারের পুত্র মেধাবী ছাত্র ইমরম্নল কায়েস কনককে পাশর্্ববর্তী সোনামুখী মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে চালিতাডাঙ্গা বাজারের পাশে ওৎঁপেতে থাকা স্থানীয় ছাত্রদলের সন্ত্রাসী ১. প্রিন্স, পিতা-মোজাম্মেল, ২. খালেক, পিতা-মৃত ছুটকা ম-ল, ৩. শামিম, পিতা-সোলায়মান, ৪. শামিম, পিতা- জহিরম্নল ওরফে খোকা, ৫. শাহজামাল ওরফে শাহা, পিতা-পর্বত তালুকদার, সর্বসাং চালিতাডাঙ্গাসহ মোট ১৭ জন চাইনিজ কুড়াল, রামদা, লোহার রড, হকিস্ট্রিক ইত্যাদি দ্বারা ইমরম্নল কায়েস কনককে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এই সময় কনক বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তচিৎকার করলে প্রাণ ভয়ে কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করলে পর দিন সে মারা যায়। কনকের চাচা আনোয়ার হোসেন ঠা-ু আসামিদের বিরম্নদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ প্রাথমিক পর্যায়ে আসামিদের গ্রেফতারে তৎপর হয়ে ওঠে। সপ্তাহখানেক পরেই রহস্যজনক কারণে এই তৎপরতার ঝিমিয়ে পড়ে। আসামিরা তাদের সহযোগীসহ বাদী ও সাৰীদের ওপর নানা প্রকার হুমকি দিতে থাকে। সন্ত্রাসীদের এই হুমকির মুখে বাদী ও সাৰীরা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। মামলাটি বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলা নং এসসি ২৮/২০০৭।
৩২| ১৯ শে জুন, ২০১১ রাত ১২:৫৫
নাভদ বলেছেন: রবিবার, ১৯ জুন ২০১১, ৫ আষাঢ় ১৪১৮
ভারতে চলে গেছে অনেকে সম্ভ্রমহারা মেয়েদের নিয়ে
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ (৮)
তপন বিশ্বাস ॥ অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর চলে অবর্ণনীয় নির্যাতন। এ নির্যাতনের অনেক ঘটনা রয়ে গেছে আড়ালে, অনেকে মামলা করেছে। অনেকে সে সাহসও পায়নি। অনেকে আবার লোকলজ্জা ও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে ধর্ষণের ঘটনাও গোপন রেখেছে। এ জাতীয় অসংখ্য ঘটনা রয়ে গেছে লোকচৰুর অন্তরালে। 'মানবতার বিরম্নদ্ধে অপরাধ' শীর্ষক ধারাবাহিকের এ পর্বে থাকছে ২০০১ নির্বাচনপরবর্তী ভোলার চরফ্যাশনের সহিংসতার কিছু চিত্র।
দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় দুই মাস যাবত চলে আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থক, বিশেষে করে সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর অমানুষিক নির্যাতন। তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের লোকজন, এমনকি সংবাদ মাধ্যমও নির্যাতনের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। বাড়িঘর লুটপাট, জোরপূর্বক চাঁদাবাজি, এমনকি নারী ধর্ষণের অজস্র ঘটনা ঘটে এ সময়। এসবের অধিকাংশই পুলিশের নথিভুক্ত হয়নি। অধিকাংশ ভুক্তভোগীরা ভয়ে কোন অভিযোগ পর্যনত্ম করেনি। প্রায় প্রতিটি ৰেত্রে লোকলজ্জা ও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে পরিবারের মহিলারা ধর্ষিত হওয়ার পরও আইনের আশ্রয় নেয়নি বা বিষয়গুলো গোপন রেখেছেন। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানলেও বা অনুমান করলেও ৰতিগ্রসত্ম পরিবারগুলো অনেক ৰেত্রেই তা স্বীকার করেনি বা মৌন ছিল। ঘটনার ৯ বছর পর তদনত্ম কমিশন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে অজানা অনেক নির্যাতনের কাহিনী তুলে এনেছে। ভুক্তভোগীরা অনেকে ঘটনার কথা স্বীকার করলেও কেউ কেউ লিখিত বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেছে। এমনকি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হবেন বলে অনেকে তাদের নাম-ঠিকানা গোপন রাখতে তদনত্ম কমিশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।
অনেকে নির্যাতনের পর এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন; কেউ বা দেশ ত্যাগ করেছেন। এমন অসংখ্য ঘটনার কয়েকটি মাত্র ঘটনা তুলে ধরা হলো। চরফ্যাশনের ওসমানগঞ্জের উত্তর চরফ্যাশন গ্রামের টিকেন্দ্র চন্দ্র দাস ওরফে আইচা রাম দাসের স্ত্রী অমীয় রাণী দাস বাড়িঘর বিক্রি করে ঢাকায় অবস্থান করছে। নির্বাচনের প্রায় এক মাস পর চারদলীয় জোটের কিছু সন্ত্রাসী রাতে তাদের বাড়িতে দরজা প্রবেশ করে। এ সময় দশম শ্রেণী পড়ুয়া তার কন্যা শিল্পীকে সন্ত্রাসীরা তাদের হাতে তুলে দিতে বলে।
নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা শুরম্ন হওয়ার পর শিল্পীর পিতা-মাতা তাকে দাসকান্দি গ্রামে চাচার বাড়ি পাঠায়ে দেয় বলে সন্ত্রাসীরা তাকে সে রাতে পায়নি। তবে সন্ত্রাসীরা তার বাড়িঘর লুটপাট করে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায় এবং ময়েকে ফিরিয়ে এনে তাদের হাতে তুলে দেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর পরিবারটি দুই মাস বাড়িছাড়া ছিল। পরে ভিটেমাটি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে।
উত্তর চরফ্যাশনের রঞ্জন কুমার দাসের স্ত্রী শোভা রানী দাস তদনত্ম কমিশনকে জানায়, নির্বাচনের পরপরই কিছু সন্ত্রাসী তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে নগদ ১৭ হাজার টাকাসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং তাকে মারপিট করে ডান হাত ভেঙ্গে দেয়। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হলেও ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেন তিনি। এ ব্যাপারে তার কোন অভিযোগ নেই এবং অভিযোগ করতে রাজিও নয়। তার কথায় প্রতীয়মান হয় সন্ত্রাসীদের অনেককেই সে চেনে। কিন্তু নাম বলেনি। সে আরও বলে, আশপাশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় সকল বাড়িতে লুটপাটের ঘটনা ঘটে এবং অনেক মহিলা এ সময় ধর্ষিত হয়।
উত্তর চরফ্যাশন গ্রামের সুনীল কুমার রায়ের স্ত্রী আরতী বালা রায় জানায়, নির্বাচনের পর লুটপাট ও অত্যাচার শুরম্ন হলে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ঘরের তেমন কিছু ৰতি না হলেও ৩৫টি হাঁস সন্ত্রাসীরা নিয়ে যায়। আরতী আরও জানায়, পরিস্থিতি কিছুটা শানত্ম হলে এলাকায় ফিরে জানতে পারে শোভা রানী সন্ত্রাসী দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছিল। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, অবিনাশ কুমার দাসের স্ত্রী সুজলা রানী দাস সম্পর্কে জানা যায়, নির্বাচনের পর সন্ত্রাসী দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার কয়েক মাস পর তারা বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে চলে যায়। বর্তমানে তারা ভারতে অবস্থান করছে। তাদের বাড়ি মোট দুই দফায় আক্রমণ হয়। সন্ত্রাসীরা মহিলার নাকের নাকফুল নিয়ে যায়। প্রতিটি ঘরে ঢুকে তারা তলস্নাশি চালায় এবং সোনা-গহনা, হাঁস-মুরগি, গরম্ন-ছাগলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। উলেস্নখ্য, ওই এলাকায় নাকফুল নেয়ার অর্থ হলো মহিলার সম্ভ্রমহানি। পরিবারের অনেক সদস্য ভয়ে ধানৰেতে গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং জোঁকের কামড়ের শিকার হয়। সন্ত্রাসীরা মূলত সন্ধ্যার পর বাড়িঘরে আক্রমণ শুরম্ন করত। এ ঘটনায় পরিবারটি ৰোভে, লজ্জায় বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে চলে যায়। আর ফিরে আসেনি।
একই গ্রামের বলরাম দাসের স্ত্রী কণিকা রানী দাসের ব্যাপারে জানা যায় তাদের বাড়িতে ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর রাতে একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমণ করে মালামাল লুট করে এবং তার সম্ভ্রমহানি ঘটায়। এছাড়া স্বামী-স্ত্রী দু'জনকেও শারীরিক নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় তারা পুলিশকে কিছু জানানোর সাহস পায়নি। অমর চন্দ্র দাসের স্ত্রী কল্যাণী দাস সম্পর্কে জানা যায়, গভীর রাতে সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়িতে এসে ধান-চাল, জামাকাপড়সহ বাড়ির সকল মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। এ সময় তারা তার মেয়ের খোঁজ করে এবং মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলে। কিন্তু মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে এবং সেখানে নেই এ কথা শুনে সন্ত্রাসীরা ৰিপ্ত হয়ে স্বামীর সামনে কল্যাণীকে ধর্ষণ করে। স্বামী বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে মারধর করে বেঁধে রেখে তার স্ত্রীকে উপযর্ুপরি ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পরও ভয়ে ও লোকলজ্জার ভয়ে তারা থানায় কোন অভিযোগ করেনি। আসামিদের নাম বলতেও অস্বীকৃতি জানায়। সনত্মোষ কুমার দাসের স্ত্রী শেফালী রানী দাস সম্পর্কে জানা যায়, ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল তার বাড়িতে প্রবেশ করে। সন্ত্রাসী আক্রমণের বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের লোকজন নিকটবর্তী বাজারে অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে। সন্ত্রাসীরা বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে চলে যায়। সন্ত্রাসীরা চলে গেলে তারা বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু কিছুৰণ পর রাতে আর একদল সন্ত্রাসী আক্রমণ করে। এ সময় স্বামী-স্ত্রী দুজনকে তারা বেদম মারপিট করে এবং অবশিষ্ট মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় সন্ত্রাসীরা মুখে কাপড় বেঁধে আসে। এ ঘটনার কিছুদিন পর তারা সকলে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছে
এছাড়াও প্রকৃতি রানী দাস, স্বামী লিটন দাস; রীতা রানী দাস, স্বামী-সুব্রত দাস; শোভা রানী দাস, স্বামী নিরঞ্জন দাস; শেফালী রানী দাস, স্বামী সনত্মোষ কুমার দাস, সর্বসাং দশনাথ আলীগাঁও, উত্তর চরফ্যাশন, কর্তারহাট; ২০০১ সালের নির্বাচনের পর নির্যাতনের কারণে ৰোভে, ভয়ে, লজ্জায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে তারা ভারতে অবস্থান করছে। ঝর্ণা রানী দাস, স্বামী-সুনীল কুমার দাস, সাং-দশনাথ আলীগাঁও, বাড়িঘর ছেড়ে বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। এর কেউই বর্তমানে চরফ্যাশনে বসবাস করে না। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, নির্বাচনের পর চারদলীয় জোটের সন্ত্রাসীরা বাড়িতে ব্যাপক লুটপাট ও মারধর করে। বাড়ির মহিলারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলেও এলাকাবাসী জানায়। এলাকার অনেক পরিবারই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। কিন্তু ভয়ে কিংবা পুনরায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আক্রমণের শিকার হতে হবে মনে করে অধিকাংশ ভুক্তভোগী অভিযোগ করছে না, আগেও করেনি।
৩৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৩৯
নাভদ বলেছেন:
২০০১ এর নির্যাতন: সাকা তরিকুল নিজামী সাঈদীসহ ২৬ হাজার জন চিহ্নিত
ঢাকা, ডিসেম্বর ০১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ২০০১ সালের নির্বাচনের পর হিন্দু সম্প্রদায় ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনকারী হিসেবে ২৬ হাজার ৩৫২ জনকে চিহ্নিত করেছে সরকার।
তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে শিগগিরই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।
চিহ্নিত ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোটের ২৫ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য রয়েছেন বলে তিনি বৃহস্পতিবার মন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান।
সাবেক মন্ত্রীরা হলেন- বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, তরিকুল ইসলাম, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আব্দুস সালাম পিন্টু, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী।
তৎকালীন সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, শহীদুল হক জামাল, আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া, নাদিম মোস্তফা, জয়নাল আবেদিন (ভিপি জয়নাল), এ এইচ এম সেলিম, শহিদুল ইসলাম, ইলিয়াস আলী, ইলেন ভুট্টো, হাফিজ ইব্রাহিম, সালাউদ্দীন আহমেদ, আলমগীর হায়দার, ডা. সালেক চৌধুরী, জহিরউদ্দীন স্বপন, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন।
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সংসদ সদস্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ডা. আবু তাহের ও আব্দুস সোবহানের নামও রয়েছে। এছাড়া নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক একরামুল কবির রয়েছেন এই তালিকা।
২০০১ সালের নির্যাতনের ঘটনায় আদালতের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গত এপ্রিল মাসে প্রায় ১১শ’ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।
একটি মানবাধিকার সংগঠনের আবেদনে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপপুকে প্রধান করে তিন সদস্যের ওই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।
ঘটনার প্রায় সাড়ে ৯ বছর পর গঠিত কমিশন প্রায় সোয়া এক বছর তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে তা প্রকাশ করে সরকার।
পাঁচ খণ্ডের ওই প্রতিবেদনটি ১ হাজার ৭৮ পৃষ্ঠার। এর প্রথম খণ্ডে কমিশন গঠনের ইতিবৃত্ত, লেখচিত্রসহ সহিংসতার ধরন ও প্রকার, সহিংস ঘটনার কিছু উদাহরণ, কারণ ও পটভূমি ব্যাখ্যা করা হয়।
এছাড়াও এই খণ্ডে কমিশনের কার্যক্রম, সারসংক্ষেপ, প্রাসঙ্গিক মতমত ও সুপারিশ, কমিশন গঠনের রিট আবেদনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলা, আওয়ামী নেতাসহ ২০০৪ সালের ২১ অগাস্টে শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার মতো স্পর্শকাতর কিছু সহিংস ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়।
অন্য চারটি খণ্ডে ঘটনার নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের অভিযোগ, ঘটনার বর্ণনা এবং প্রাথমিকভাবে জড়িতদের নাম উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে সহিংস ঘটনার সংখ্যা ১৮ হাজারেরও বেশি উল্লেখ করা হলেও কমিশন ৩ হাজার ৬২৫টি ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত করে।
এর কারণ হিসাবে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার ব্যাপকতা, ঘটনার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়া, একটি মাত্র কমিশনের ওপর দায়িত্ব, লোকবল ও উপকরণ স্বল্পতা এবং নিরাপত্তার অভাবে ঘটনা শিকার হওয়া ব্যক্তিদের অভিযোগ জানাতে অনীহা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার প্রত্যক্ষ মদদে ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংস ঘটনা ঘটেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএইচএ/এমআই/১৫৩৩ ঘ.
৩৪| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৪
নাভদ বলেছেন: কে ঘুচাতে চাহে জননীর লাজ......
অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
‘দুদিন এক রকম ঘরে বন্দি অবস্থায়ই ছিলাম। ’৭১ সালের যুদ্ধ দেখিনি। তবে শুনেছি, কি বিভৎস নির্যাতন চলেছে মানুষের ওপর। মনে হচ্ছিল, আমরা যেন একাত্তর সালে ফিরে গেছি।’ কথাগুলো আমাকে বলেছিলেন ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার বোসপাড়া গ্রামের এক হিন্দু যুবক, যিনি ২০০১ সালের ২ ও ৩ অক্টোবর হিন্দু অধ্যুষিত ওই গ্রামের মানুষের ওপর বিএনপি-মৌলবাদী গোষ্ঠীর উন্মত্ত নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শী।
নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের মানিকদী গ্রামের বাসিন্দা পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা উপজেলার কেএম কলেজের প্রভাষক রঞ্জিত কুমার মণ্ডল মুক্তিযুদ্ধের শহীদ নিতাই মণ্ডলের পুত্র। একাত্তরে রঞ্জিত হারিয়েছেন পিতাকে। তারপরও ২০০১ সালের ৯ অক্টোবর তার পরিবার ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনাকে তিনি ’৭১-এর চেয়েও নারকীয় ও বিভৎস বলে বর্ণনা করেছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, ‘একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকারদের হাতেও আমরা এ রকম নির্যাতনের শিকার হইনি।’
২০০১ সালের ১ অক্টোবর রাত থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ বছর পরে যেন দেশে এসেছিল আরেকটি ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভিনদেশি পাকিস্তানি হায়েনাদের পাশে ছিল অল্প কিছু সংখ্যক এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরেরা। আর ২০০১ এর হায়েনাদের সবাই ছিল এ দেশী। নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীর পাশাপাশি একাত্তরের পরাজিত জামায়াতিদের সঙ্গে ’৭৫ পরবর্তী খুনি-মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদী সবগুলো অপশক্তি, যাদের মধ্যে ছিল না বিন্দুমাত্র মানবতাবোধ, তারাই সম্মিলিতভাবে হিংস্র উন্মত্ত আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্ত চেতনার বাঙালির ওপর।
এ কারণেই বোধ হয়, ত্রিশ লাখ বাঙালির প্রাণহানির একাত্তরের চেয়ে ২০০১ এর ভয়াবহতাকে অনেকের কাছেই বেশি মনে হয়েছে। নির্যাতিত প্রভাষক রঞ্জিত কুমার মণ্ডল ঘটনার ব্যাখ্যা করছিলেন এভাবে, ‘এবারের নৃশংসতা একাত্তরকে ছাড়িয়ে গেছে। কেননা, জামায়াতিরা বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমিনীদের মতো মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদী চক্র আর অপশক্তিগুলো।’
আর ৯ বছর পরে ২০০১ এর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা-নির্যাতন সম্পর্কিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনও একই সত্যই তুলে ধরছে। সরকারের কাছে গত বছরের ২৪ এপ্রিল দেওয়া ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের পর থেকে মাত্র ১ বছর ৩ মাসে বিএনপি-জামায়াতের ২৬ হাজার নেতা-কর্মী ও মৌলবাদী ক্যাডার সন্ত্রাসী বাহিনীর ৩৬২৫টি অপরাধের নানা প্রমাণভিত্তিক তথ্য তুলে বলা হয়েছে, প্রকৃত অর্থে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত এ ধরনের অপরাধের সংখ্যা আরো ১৪ হাজার, অর্থাৎ পরিস্থিতির ভয়াবহতা ছিল আরো ৫ গুণ বেশি।
১ অক্টোবর সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ওই রাত থেকেই সারা দেশের মতোই ফরিদপুর জেলার বিস্তীর্ণ জনপদে নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে-অভিযোগে নির্বিচার নির্যাতন শুরু হয় আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থক এবং অসংখ্য সাধারণ মানুষের ওপর। সন্ত্রাসে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষেরা। হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান, মন্দির ও ক্ষেতে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং চাঁদা দাবি ও আদায়ের সে ভয়াবহতা নেমে এসেছিল হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলের ওপরই। অনেকে পালিয়ে যান বিভিন্ন স্থানে। অনেককে চাঁদা দিয়েই এলাকায় থাকতে হয়, কেননা, চাঁদা না দিলে হত্যা বা দেশছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
তবে আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করা সহজ ও নিরীহ-অসহায় বিবেচনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চলে তুলামূলকভাবে বেশি। তাদেরকে জমি-জমা, বাড়িঘর ও এলাকা থেকে বিতাড়িত করে দখল করতে নারকীয় নির্যাতন চালানো হয়। ওই সময় বাঙালির সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে মন্দির-মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। নারকীয় এ নির্যাতনের প্রতিবাদে হিন্দু সম্প্রদায় সেবার সব ধরনের আলোকসজ্জা, বাদ্য-বাজনা, মাইক ব্যবহার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আরতি বর্জন করে অনাড়ম্বর পূজা উদযাপন করে। পাশাপাশি পূজামণ্ডপগুলোতে কালো ব্যানার ও কালো পতাকা টানিয়ে চলে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা, স্মারকলিপি পেশ, গণঅনশন, মানববন্ধন ও নীরবে প্রতিমা বিসর্জনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি।
ভোরের কাগজের ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি ও পাশাপাশি জনকণ্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা(বছর খানেকের জন্য) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম সে সময়।
স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের সঙ্গে নিয়ে অন্তত মাস তিনেক আক্রান্ত এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিএনপি-জামায়াত-মৌলবাদী গোষ্ঠীর নির্যাতন-সন্ত্রাসের সংবাদগুলো তুলে ধরেছিলাম ভোরের কাগজ-জনকণ্ঠে। মিডিয়ার মাধ্যমে বিএনপি-জামাতের রোষাণলে বিপন্ন মানবতাকে বাঁচাতে মাঠে নেমেছিলাম আমরা প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণমাধ্যমগুলোর কর্মীরা। নির্যাতনের সেসব ভয়াবহতা দেখে সাংবাদিকতার সাধারণ নির্লিপ্ততার বাইরে আসতে বাধ্য হয়ে আমরাও বিষ্ময়ে, আতঙ্কে বিমূঢ় হয়েছিলাম, ‘মানুষ মানুষের ওপর এভাবে নির্যাতন চালাতে পারে!’
১ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে রাতের অন্ধকারে মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের বোসপাড়া গ্রামের মনিশঙ্কর বোসের বাড়ির মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ৬ অক্টোবর রাতে মৌলবাদীরা ফরিদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রথখোলা সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ও বাসস্ট্যান্ড সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে নির্মাণাধীন দুর্গা প্রতিমা ভেঙে ফেলে। ১১ অক্টোবর বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের উত্তর হাসামদিয়া গ্রামের শেতলা মন্দিরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ১৬ অক্টোবর গভীর রাতে একদল মৌলবাদী সন্ত্রাসী নগরকান্দা উপজেলার চৌমুখা গ্রামের নমশূদ্র পাড়ার সার্বজনীন দুর্গামন্দিরে নির্মাণাধীন দুর্গা প্রতিমায় ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে মন্দিরটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেখে লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা ৩টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।
নির্বাচনের পরদিন থেকে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের শোভারামপুর-রঘুনন্দনপুর এলাকায় কথিত সন্ত্রাস দমন কমিটি গঠন করে বিএনপি-জামায়াতিরা এলাকার আওয়ামী লীগ সমর্থক ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যারা নৌকার পক্ষে নির্বাচন করেছেন বা ভোট দিয়েছেন তাদের তালিকা করে চাঁদাবাজি, মারপিট, হামলা ও নির্যাতন চালায়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ২৭ অক্টোবর এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জীবন করকে মারাত্মকভাবে কোপায় তারা। ২৮ অক্টোবর একই কারণে ২৮ অক্টোবর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে নেওয়া হয় আওয়ামী লীগ কর্মী জাকিরের। ওই সময়
অন্যদিকে ২ অক্টোবর সকাল থেকে লাঠিসোঠা ও অস্ত্রসস্ত্রসহ মধুখালী উপজেলার বাগাট বাজার ও বোসপাড়া গ্রামে নেমে পড়ে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের নেতৃত্বে মৌলবাদী গোষ্ঠী। বাগাট ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের চিহ্নিত রাজাকার সালাম ফকিরের ছেলে স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী কর্মী জাকির ফকিরের নেতৃত্বে ৪০ জনের বেশি বিএনপি সমর্থক এ হামলা চালায়। তারা বেছে বেছে বাগাট বাজারের আওয়ামী লীগ সমর্থক ও হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর করে। দোকানের মালামাল লুটপাট করা হয়। এদের হাতে প্রহৃত হন বাগাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কার্তিক চন্দ্র সিকদারসহ অারো কয়েকজন। পরে এ দলটিই বাগাট বাজার সংলগ্ন বোসপাড়াসহ অন্য গ্রামগুলোতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক বেলায়েত হোসেনের বাড়িসহ ৮টি হিন্দুবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর শেষে হুমকি-ধামকি দেয়। তারা মনিশঙ্কর বোসের একটি ঘরে আগুন দিয়ে সমস্ত মালামাল পুড়ে ছাই করে দেয়। পরদিন ৩ অক্টোবর সকাল থেকেই পুনরায় বিএনপি-মৌলবাদী গোষ্ঠী হুমকি দিতে শুরু করে নিরীহ গ্রামবাসীদের। এ অবস্থায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পুরো এলাকাবাসী। অনেকে ভয়ে-আতঙ্কে অন্যত্র আশ্রয় নেয়।
৫ অক্টোবর গভীর রাতে ভাঙ্গা বাজারের নিজের তেলের মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন হন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অতুল চন্দ্র সাহা। ৬ অক্টোবর রাতে ভাঙ্গা উপজেলারই অাজিমনগর গ্রামের এক হিন্দু পরিবারের ওপর নির্যাতনও ’৭১ এর বর্বরতাকে হার মানায়। ‘নৌকায় ভোট দেওয়ার মজা দেখাচ্ছি’ বলে রাত ৯টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের ভাই হাবি, পলাশ, মোঃ সেকেন, জামাল, এসকেন, কামাল ও টেক্কা নামক ৭ বিএনপি সমর্থক সন্ত্রাসী হামলা শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে পরিবারটির গৃহকর্তা পেছনের দরোজা খুলে পালিয়ে যান। বিএনপি সমর্থক সন্ত্রাসীরা ঘরের মধ্যে জোর করে ঢুকে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় মায়ের সামনেই ওই পরিবারের কলেজ পড়ুয়া কন্যাকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করতে শুরু করে। মা সন্ত্রাসীদের হাতে-পায়ে ধরে মেয়ের ইজ্জত ভিক্ষা চাইলে সন্ত্রাসীরা তাকেও বেদম মারপিট করে। রাত একটা পর্যন্ত এ পৈশাচিক নির্যাতন চালানোর পর সন্ত্রাসীরা ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে কলেজ পড়ুয়া মেয়েটিকে বাড়ি থেকে অন্যত্র নিয়ে পুনরায় ধর্ষণ করে এবং ভোররাতে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বাড়ির সামনে ফেলে যায়।
ওই তরুণী পরে অন্যত্র আত্মীয়ের বাড়িতে পালিয়ে বাঁচলেও বাঁচতে পারেননি নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গি ইউনিয়নের গোয়ালপোতা গ্রামের তরুণী বিলকিস আক্তার। পুরো পরিবার নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে বিএনপি নেতা করিম মাতবরের পুত্র সৈয়দ আলী মাতবর ও তার আত্মীয় গঞ্জের খাঁ ও আকমালের নেতৃত্বে ১৬ অক্টোবর রাতভর ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ভোরে বাড়ির অদূরে একটি বাঁশঝাড়ের বিলকিসের শরীরের চেয়ে কম উচ্চতার বাঁশের সঙ্গে উড়না পেচিয়ে বিলকিসের লাশ ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালানো হলেও ময়না তদন্তে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার আলামত মিললে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায় এবং প্রভাবশালীরা পরিবারটিকে হুমকি দিতে থাকে। হতদরিদ্র পরিবারটির বাড়িতে কবর দেওয়ারও জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশে বিলকিসের লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়।
পায়ে ধরে ‘এখন থেকে বিএনপি করবো’ বলেও দুই চোখ বাঁচাতে পারেননি নগরকান্দা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী হায়দার মোল্লা। ১ অক্টোবর রাত থেকেই মাঝারদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহীদুজ্জামান শাহীদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নারকীয় সন্ত্রাস চালিয়ে হায়দারসহ মাঝারদিয়াসহ ৫টি গ্রামের শতাধিক পরিবারকে তাড়িয়ে দিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে বিএনপির সন্ত্রাসীরা। দেড় মাস পর হায়দার বাড়িতে ফিরলে ১৯ নভেম্বর রাতে শাহীদ চেয়ারম্যানের ১৫/২০ জন ক্যাডার সন্ত্রাসী হামলা চালায়। প্রাণভয়ে হায়দার ঘরের চালে আত্মগোপন করলে সেখান থেকেই টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে প্রচণ্ড মারধর করে। পরে তাকে মাটিতে ফেলে চারজন হাত-পা পাড়িয়ে ধরে রাখে, একজন গলায় পা দিয়ে চেপে রাখে এবং দুজন বুকের ওপর বাঁশ চেপে রাখে। মোকো, ইউনুস ও ইলিয়াস- এই তিন সন্ত্রাসী চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে হায়দারের দুই চোখ তুলে নেয়। চোখ তোলার সময় হায়দার সন্ত্রাসীদের হাত-পা ধরে ‘এখন থেকে বিএনপি করবো’ বলে অনুনয়-বিনয় করলেও তাদের মন গলেনি।
এর আগে শাহীদ চেয়ারম্যানের লোকজন মাঝারদিয়া গ্রামের পাঁচটি এলাকাসহ অাশেপাশের আরো ৪টি গ্রামের শতাধিক পরিবারকে তাড়িয়ে দিলে তারা মাঝারদিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক চেয়ারম্যান হামেদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। হামেদ চেয়ারম্যানও পালিয়ে থাকতে বাধ্য হলে দীর্ঘ দু’মাস শত শত মানুষকে রেখে খাওয়ান তার স্ত্রী।
সেখানেও গ্রামের ৩ দিক থেকে হামলা চালায় কয়েক হাজার সন্ত্রাসী। ওই গ্রামে আমাদের ঢুকতে হয়েছিল পুলিশি প্রহরায়। আমরা যখন গ্রামটিতে গেলাম, তখনো চলছিলো চোরাগুপ্তা হামলা পুলিশের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও। মোটরসাইকেল পাশের মাঝারদিয়া বাজারে রেখে হাটা পথে গ্রামে ঢোকার সময় গ্রামটির মুখে পাহারায় থাকা বিএনপির সন্ত্রাসীরা আমাদের লক্ষ্য করে বলেছিল, ‘পুলিশ নিয়ে ঢোকা হচ্ছে, যাওয়ার সময় সাংবাদিকতার মজা টের পাইয়ে দেবো’। হুমকির মুখে চারপাশে পুলিশ পাহারায়ই বের হতে হলো ফের।
মাঝারদিয়া ব্রিজ এলাকার সম্ভ্রান্ত ইব্রাহিম মাতুববর পালিয়ে গেলে তার স্ত্রী রোমেছাও আশ্রয় নেন হামেদ চেয়ারম্যানের বাড়িতে। মাঝে একদিন তিনি বিএনপির সন্ত্রাসীদের দখলে থাকা নিজের বাড়িতে গিয়ে শিশু সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য রান্না করতে গেলে সন্ত্রাসীরা ভাতের হাড়িতে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে খাবার লুটপাট করে নিয়ে যায়।
সদরপুর উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নের চর চাঁদপুর গ্রামে চলা এরকমই এক নির্যাতনের খবর পেয়ে অন্য একজন সংবাদকর্মীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে ছুটে গিয়েছিলাম ওই গ্রামে। ২৭ নভেম্বর দুপুরের দিকে আমাদের মোটরসাইকেল বাজার ছাড়িয়ে চর চাঁদপুর গ্রামের পথে এগিয়ে যেতে দেখলাম, মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি খালি গায়ে কাধে গামছা দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। আমাদের দেখতে পেয়েই থেমে গেলেন এবং ঘুরে দৌঁড় দিলেন যে দিক থেকে আসছিলেন, সেদিকেই। অনেক কষ্টে তাকে থামানো গেলেও থরথর করে কাঁপছিলেন তিনি। ‘আমরা তার জন্য ক্ষতিকর কেউ নই’-অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে এটুকু আশ্বস্ত করার পর জানা গেলো, তিনি হিন্দু নমশূদ্র-শীল সম্প্রদায়ের মানুষ এবং চর চাঁদপুর গ্রামের নির্যাতিত ৮টি নিম্নবর্ণের হিন্দু পরিবারের একটির গৃহকর্তা। আগের দিনই তাদের ওপর নেমে এসেছিলো নারকীয় তাণ্ডব। নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন তাদের বাড়িঘরে এখনো বিদ্যমান। তারপরও বেঁচে থাকার তাগিদেই যাচ্ছিলেন নিকটবর্তী বাজারে।
অপরিচিত আমাদের দেখে নতুন নির্যাতনের আশঙ্কা-আতঙ্কে বাড়ির দিকে দৌঁড় দিয়েছিলেন অন্যদের খবর দিয়ে পালিয়ে রক্ষা পেতে। ২৬ নভেম্বর ভোর ৭টায় ওই হামলা শুরু হয় ‘এখন আর তোদের বাজানরা নেই- কেউ বাঁচাতে পারবে না। নমদের(হিন্দু)থাকতে দেওয়া হবে না। গাট্টি-বোঁচকা বেঁধে ওপার চলে যা’- এ হুমকি দিয়েই।
গ্রামের বিএনপি নেতা বলে দাবিদার আদেলউদ্দিন বেপারির নেতৃত্বে তার পুত্র গোলাম বেপারি, ভাই মানা বেপারি, আজগরপ প্রামাণিক, অখিল প্রামাণিক, রব বেপারি ও আক্কাস বেপারির নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঠা ও মুগুর নিয়ে হামলে পড়ে বৃদ্ধ রমেশ চন্দ্র শীল, তার বৃদ্ধা স্ত্রী হামি শীল, পুত্র সুকুমার শীল, পুত্রবধূ সবিতা, কার্তিক চন্দ্র শীল, রমেশ চন্দ্র শীল, সুরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ, তার স্ত্রী চারুবালা বাড়ৈ, নিতাই চন্দ্র বাড়ৈ, অনীল চন্দ্র বাড়ৈ, কাশিনাথ বাড়ৈ ও তার স্ত্রী শোভা রানী বাড়ৈসহ অর্ধশতাধিক মানুষকে নির্বিচার মারধর করা হলে কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মহিলা ও শিশুরাও সেদিন রক্ষা পাননি। প্রাণভয়ে পাশের বাড়িতে পালালেও টেনেহিচড়ে এনে মারধর ও মহিলাদের শ্লীলতাহানি করা হয়। বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করে সন্ত্রাসীরা।
বর্বর ওই নির্যাতনের হাত থেকে অসহায় মানুষগুলোকে বাঁচাতে এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধকালীন কমান্ডার রাজ্জাক মুন্সী, কালাম ও ইউনুসসহ অনেক মুসলমান প্রতিবেশী এগিয়ে এলে তারাও লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হন। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আমাকে মোবাইলে অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ হুমকি দিয়েছিলেন ওই আসনের বিএনপি’র প্রার্থী এবং পরবর্তীতে উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
এ ছাড়াও ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের শোভারামপুর-রঘুনন্দনপুর এলাকার পরিবহন ড্রাইভার নূরুল ইসলাম শেখ, কাঠ ব্যবসায়ী এম এ হাসান ও সোহবান শেখসহ শতাধিক মানুষ, বোয়ালমারী উপজেলার ময়েনদিয়া ইউনিয়নের সূর্যদিয়া গ্রামের গোবর্ধন ভট্টাচার্য, উত্তম ভট্টাচার্য, চতুল ইউনিয়নের উত্তর হাসামদিয়া গ্রামের দিলীপ কর, তার মা কালিদাসী কর, স্ত্রী রমা রানী, সন্ধ্যা কর, নারায়ণ সাধু, সত্য কুমার সাহা, তার পুত্র স্বরুপ কুমার সাহা, সঞ্জিব কুমার দাস, যদুনাথ চুনিয়া ও মিন্টু কুমার দত্ত, নগরকান্দা উপজেলার লস্কারদিয়া ইউনিয়নের সাকরাইল গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল ও আটাইল গ্রামের সরোয়ার মাতুব্বর, ফুলসুতি ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের কালিপদ মণ্ডল, পরেশ মণ্ডল, গোকুল মণ্ডল, যুধিষ্ঠির মণ্ডল, গৌরাঙ্গ মণ্ডল, সুশীল মণ্ডল ও ইয়াবলদি গ্রামের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল শেখ, ডাঙ্গি ইউনিয়নের চৌষাড়া গ্রামের মনিরুদ্দিন শেখ, হাশেম শেখ, মিজানুর রহমান, হাকিমুদ্দিন শেখ ও মোজাহার শেখ শতাধিক পরিবার, তালমা ইউনিয়নের শাকপালদিয়া গ্রামের আদেল মোল্লাসহ অসংখ্য মানুষ আহত বা মারধরের শিকার হন ওই সময়কার মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনে।
প্রায় প্রতিটি ঘটনায়ই সন্ত্রাসীরা নির্যাতনের ঘটনা পুলিশে বা অন্য কাউকে না জানাতে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। পুলিশ খবর পেয়ে কোনো কোনো স্থানে গেলেও নীরব ভূমিকা পালন বা সন্ত্রাসীদের সহায়তার অভিযোগ ওঠে। কেউ কেউ আরো অভিযোগ করেন, ঘটনা জানিয়ে মামলা করতে গেলে পুলিশ নেয়নি, জড়িতদের গ্রেপ্তার করেনি বা নির্যাতিতদের নিরাপত্তা দেয়নি। অনেকে লোকলজ্জা ও প্রাণের ভয়ে থানায় জানাতে বা মামলা দিতেও সাহস পাননি। নির্যাতনকারী অথবা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে-আতঙ্কে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পাননি। এমনকি নারকীয় নির্যাতনের শিকার হয়েও ‘আমাদের ওপর কোনো হামলা বা নির্যাতন করা হচ্ছে না’ মর্মে ১১ অক্টোবর মুচলেকা প্রদান করতে বাধ্য হন বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের উত্তর হাসামদিয়া গ্রামের নির্যাতিত ১৪ হিন্দু পরিবার। প্রভাবশালীরা এ মর্মে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার বরাবর আবেদনপত্র তৈরি করে জোরপূর্বক পরিবারগুলোর প্রধানদের স্বাক্ষর নিয়ে পাঠিয়ে দেন।
সবচেয়ে আতঙ্কজনক ছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক, কোনো নির্যাতন হচ্ছে না, ‘সংখ্যালঘু’ নির্যাতনের ঘটনা মিথ্যা, কাল্পনিক বা অতিরঞ্জিত প্রমাণে বিএনপি-জামায়াতের উর্ধ্বতন নেতা ও সাংবাদিকদের(!) নিয়ে জেলা বা উপজেলা সদরের পুলিশ কর্মকর্তাদের রীতিমতো গাড়ি নিয়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে টহল দিতে দেখেছি সে সময়। দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি(!) রক্ষায় তাদের করা তদন্তে ধরা পড়ে, জেলায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে! সেসব তদন্ত প্রতিবেদন চলে যায় সরকারের শীর্ষ মহলে আর ছাপা হয় দিনকাল, সংগ্রাম, ইনকিলাবসহ তাদের সমর্থক মিডিয়ায়। অার ওইসব মিথ্যা ও কল্পকাহিনী(!)প্রচার-প্রকাশকারী সাংবাদিক অর্থাৎ আমাদের বানানো হয়, যুবলীগ কর্মী এবং সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টের চক্রান্তকারী হিসেবে।
তবে সরাসরি হুমকি দিয়ে নির্যাতিতদের ঘটনা মিথ্যা বলতে বাধ্য করা, সাজানো সাক্ষী দিয়ে সাজানো তদন্ত কার্যক্রম চালানোর রিপোর্ট প্রকাশেও আমরা দেরি করিনি। আইন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও প্রকৃত সত্য ও পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি এ ‘তদন্ত জালিয়াতি’ ফাঁসে অগ্রণী ভূমিকা নেয়।
এগুলো মাত্র একটি জেলার মাত্র তিন মাসের প্রকাশ্যে আসা নির্যাতন-সন্ত্রাসের খতিয়ান, যা মানবতাকে শিউরে দেয়। আরো অসংখ্য ঘটনার কথা আমরা জানতে পারিনি। আর বিএনপি-জামায়াতের পুরো ২০০১-২০০৬ সময়কালে শুধুমাত্র ফরিদপুরেই সংঘটিত সব ঘটনা তুলে ধরতে গেলে পুরো একটি ইতিহাস বইই লিখতে হবে! সারা দেশের কথা তো বলাই বাহুল্য।
এসবও তো মানবতাবিরোধী অপরাধ। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের চেয়ে এসব অপরাধ কম কিসে? বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা একাত্তরকেও হার মানিয়েছিল। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর সরকার চূড়ান্তভাবে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত করে বিচার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছিলেন। আর এবার চিহ্নিত হয়েছে ২৬ হাজার। নির্যাতনের নানা মাত্রায় এসব অপরাধী তাই যুদ্ধাপরাধীদের চেয়েও কম অপরাধ করেননি।
ওই সব আক্রান্ত গ্রামগুলোতে গিয়েও বার বার মনে হচ্ছিলো, একাত্তরের যুদ্ধকবলিত বাংলাদেশের পাকিস্তানি হায়েনাদের নির্যাতনের শিকার কোনো গ্রামে বুঝি অলৌকিকভাবে ঢুকে পড়েছি ৩০ বছর পরে।
শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, সাকা চৌধুরী, আব্দুল আলীমদের একাত্তরে মানবতাবিরোধীদের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এদের প্রায় সবাইসহ চিহ্নিত আরো যুদ্ধাপরাধীরাও ২০০১ পরবর্তী মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে আছেন যুদ্ধাপরাধীদের নব্য দোসর ও রক্ষার ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত বিএনপি-জামায়াত-আমিনী-মৌলবাদী-জঙ্গি চক্র।
স্বাধীনতার ৪০ বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি বলেই দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিদের সিরিজ ও নানা বোমা হামলা, হরকাতুল জেহাদ, জেএমবি, জেএমজেবি, হিজবুত, বাংলাভাইমার্কা মৌলবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠির উত্থান ঘটেছে। আর এসবের নেপথ্য-প্রকাশ্য স্রষ্টা যে বিএনপি’র ঘাড়ে সওয়ার হওয়া যুদ্ধাপরাধীরা-এটাও এখন ষ্পষ্ট।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি ২০০১ পরবর্তী নির্যাতন-সহিংসতারও বিচার তাই পৃথক পৃথক ট্রাইব্যুনালে শুরু হওয়া জরুরি। না হলে তারা আবারো একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বাংলাদেশকে অন্ধকারের যুগে ফিরিয়ে নেবে, যেমনটি নিয়েছিল ২০০১-২০০৬ সময়কালে।
যখন ফরিদপুরে নাট্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মী ছিলাম, এ ধরনের দু:সময়ে বিপন্ন মানবতাকে রক্ষার লক্ষ্যে মানুষের মানবিকতার গুণগুলোকে জাগিয়ে তুলে প্রতিবাদে-প্রতিরোধে আর সাহসে-সংগ্রামে উদ্দীপ্ত করতে জড়াতাম নানা আয়োজনে-কর্মসূচিতে। এসব আয়োজনে একটি স্লোগান-বক্তব্য রাখতাম প্রায়ই, ‘কে জাগিবে আজ, কে করিবে কাজ, কে ঘুচাতে চাহে জননীর লাজ’
আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আগে-পরের সেনা ক্যু চেষ্টা, বিডিআরসহ নানা হত্যাকাণ্ড, বিএনপি-মৌলবাদী অপশক্তির সম্মিলিত সন্ত্রাস-ষড়যন্ত্র, এখনো চলমান তালেবানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জঙ্গিবাদী অপতৎপরতা সব এক সূত্রে গাথা, যা রাষ্ট্র বা সরকারের একার পক্ষে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। ’৭৫ এর পরে অন্ধকার গর্তে লুকিয়ে থাকা বিষধর সাপেদের গর্ত থেকে বীরদর্পে বেরিয়ে এসে বার বার ছোবল দিতে দেখে আমরাও তার প্রমাণ পেয়েছি। এসব সাপেদের বিষদাঁত ভেঙে দিয়ে পিষে মেরে ফেলার জন্য সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সদা জাগ্রত থাকতে হবে, যেমনটি বীর বাঙালি জেগে আছে ’৭১-’৭৫ এর খুনিচক্রের বিচার চেয়ে।
৪০ বছর ধরে চলে আসা বাংলা জননীর লাজ-কলঙ্ক ঘুচাতে কে কে নয়, সবাইই তাই জাগবেই, জাগতেই হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১২
৩৫| ০১ লা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫৪
নাভদ বলেছেন: এক মাসেও শেষ হলনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এক সপ্তাহ!
সংখ্যালঘু নির্যাতনে অভিযুক্ত বিএনপি-জামায়াতের ১৮ নেতা ‘আপাতত’ হাফ ছেড়ে বাঁচলেন
বিশেষ প্রতিনিধি, নিউজপয়েন্ট টোয়োন্টিফোর ডটকম:
৩০ দিনেও শেষ হলোনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দেয়া ঘোষনার ৭ দিন। সেই সঙ্গে দায়ের হয়নি ২০০১’র নির্বাচন পরবর্তি সময়ে সংখ্যালঘুসহ আ’লীগ নেতা-কর্মীদের উপর বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের চালানো অমানুষিক অত্যাচার নির্যাতন ঘটনাসমুহের মামলা। যেসব নির্যাতনের বেশিরভাগই হয়েছিল দক্ষিন উপকূলের বিভিন্ন জেলায়।
গত ২ অক্টোবর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ওইসব ঘটনায় মামলা দায়েরের ঘোষণা দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। এক সপ্তাহের মধ্যে মামলা দায়ের হবে বলেও সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি। তার এই ঘোষনায় আশায় বুক বেধেছিল নির্যাতিত মানুষ। দেরিতে হলেও ওইসব অত্যাচার নির্যাতনের বিচার হবে বলে ভেবেছিল সবাই। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষনার পর প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও এব্যাপারে আর কোনও অগ্রগতি হয়নি। দায়ের হয়নি অত্যাচার নির্যাতনের কোনও মামলা। ফলে আবার হতাশ হয়ে পড়েছে সবাই। ওইসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিএনপি জামায়াতের নেতা-কর্মীরাও যেন বেঁচেছেন হাফ ছেড়ে। কেননা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির দেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে প্রথম পর্যায়ের মামলাগুলো করার কথা বলেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। এদের প্রায় সবাই বিএনপি জামায়াত জোটের নেতাকর্মী। বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী এমপিও রয়েছেন। আলোচ্য ১৮ জনের মধ্যে ৬ জনের বাড়ী বরিশাল অঞ্চলে। এরা সবাই ছিলেন জোট শাসনামলের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি। এখনও আছেন যার যার দলের কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ের নানা গুরুত্বপূর্ন পদে।
শুরু থেকেই অবশ্য পুরো বিষয়টিকে বর্তমান সরকারের বিরোধীদল বিরোধী ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে আসছে বিএনপি। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি এবং নির্বাচনি প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
সময়টা ২০০১। সদ্য সমাপ্ত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। তখনও অবশ্য তাদের সরকার গঠন হয়নি। দেশ চালাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেই সঙ্গে চলছে সংখ্যালঘু আর ৪ দলীয় জোটবিরোধী নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতন। সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধুর সাথে যাই ভোলার লালমোহন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে স্ব-চোখে দেখা আর চোখের জল সম্বরনের ব্যর্থ চেষ্টা নিয়ে যখন ফিরছি তখন দুপুর। ক্যাডারদের চোখ এড়িয়ে কি করে ভোলায় এসে নিউজ আর ছবি পাঠাবো সেই চিন্তা মাথায়। লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়ন থেকে বেরুতেই চোখে পড়ে মেঠো পথে ধূলোর ঝড় উড়িয়ে ধাবমান গাড়ি আর মোটর সাইকেলের বহর। কাছে এসে বহর থামিয়ে গাড়ি থেকে নামলেন তৎকালীন সদ্য নির্বাচিত বিএনপি দলীয় এমপি মেজর (অবঃ) হাফিজউদ্দিন আহমেদ। সামনে পেছনে ২৫/৩০টি মোটরসাইকেলে তার ক্যাডার বাহিনী। কাছে এসে পরিচয় জানার পরপরই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন হাফিজ। আমাদের কারনেই সারাদেশে অরাজকতা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ তার। সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে আওয়ামী লীগের ইস্যু বাস্তবায়ন আর উল্টো-পাল্টা লিখলে ফলাফল ভাল হবে না বলে হুশিয়ারী দেন তিনি। এর এক/দু’দিন পরের ঘটনা। বেপরোয়া নির্যাতনে জীবন বাচাঁতে গোপালগঞ্জের রামশীলে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক হাজার সংখ্যালঘু। এর ঠিক পাশের উপজেলা বরিশালের আগৈলঝাড়া। এই দুই উপজেলার সীমান্তবর্তি খালে পাওয়া গেল এক সংখ্যালঘুর লাশ। সংবাদটি তাৎক্ষনিক প্রচার করে বেসরকারি একটি টেলিভিশন। সংবাদ প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেপে যান সেখানকার তৎকালীন নব নির্বাচিত বিএনপি দলীয় এমপি সাবেক বামপন্থি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন। ওই টেলিভিশনের অফিসে ফোন করে মিথ্যা সংবাদ প্রচারের অভিযোগ আর বরিশাল প্রতিনিধিকে দেখিয়ে দেয়ার হুমকি দেন তিনি।
পরবর্তি সময়গুলোতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের চাপে এব্যপারে আর তেমন কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি তৎকালীন প্রশাসন। ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া এক নির্দেশনা অনুযায়ী ২০০১ পরবর্তি নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে সেসব অত্যাচার নির্যাতন ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট উচ্চ আদালতে দাখিল করে তদন্ত কমিশন। প্রায় ১১ শ’ পৃষ্ঠার ৫ খন্ডের বিশাল তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে তখনকার সেইসব নৃশংস বর্বরতা। জমা হওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের দুটি খন্ডে ছিল সেসময় বরিশাল বিভাগের ৫ জেলার সংঘটিত অত্যাচার নির্যাতনের বর্ণনা। এর মধ্যে কেবলমাত্র ভোলা জেলার বর্ণনাই ছিল মোট ২৭৫ পৃষ্ঠা। এছাড়া ১৬৩ পৃষ্ঠা জুড়ে ঠাই পায় বরিশাল, ঝালকাঠী, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরের কাহিনী। বিশাল এই প্রতিবেদনে সারাদেশের যে’কজন প্রভাবশালী বিএনপি-জামায়াত নেতার নাম আসে তাদের সিংহভাগও এই দক্ষিণাঞ্চলেরই বাসিন্দা। মেজর (অবঃ) হাফিজ এবং জহির উদ্দিন স্বপন ছাড়াও তালিকায় ছিলেন এক সময়ের বিমান বাহিনী প্রধান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান ওমর, সাবেক এমপি ইলেন ভূট্টো, জামায়াতের সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসাইন সাঈদি এবং সাবেক হুইপ শহিদুল হক জামাল। এদের সবার বিরুদ্ধে যে সরাসরি সংখ্যালঘু কিংবা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের অত্যাচার নির্যাতনে জড়িত থাকার প্রমান মেলে তা নয়, তবে একটি ক্ষেত্রে সবার আচরণ ছিল এক। যে কোন মূল্যে নির্যাতনকারী ক্যাডারদের বিচারের হাত থেকে বাচাঁনো। এক্ষেত্রে মোটামুটি সফলও হয়েছেন সবাই। নির্যাতনের শিকার অসহায়রা বিচারতো পায়ইনি উপরন্ত হামলাকারীদের হুমকির মুখে দেশ ছাড়ে অনেকে।
এতোকিছুর পরও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে হত্যা নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনায় মামলা দায়ের করে সংশ্লিষ্টরা। ভোলার বোরহানউদ্দিনের ৮নং ওয়ার্ডের কুতুববাড়ীতে আওয়ামী লীগ সমর্থক নকিব, দৌলতখান উপজেলার জয়নগর গ্রামে আওয়ামী লীগ কর্মী জসিম উদ্দিন এবং শাহজল হককে গুলির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামী করা হয়েছিল তৎকালীন এমপি হাফিজ ইব্রাহিমকে। লালমোহন উপজেলার চর সখিনা গ্রামে আওয়ামী কর্মী খোরশেদ হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আসামী হন সাবেক মন্ত্রী মেজর (অবঃ) হাফিজ। এরকম আরও বহু মামলা দায়ের হয় সে সময়। কিন্তু সেসব মামলায় কাউকে সাজা ভোগ করতে হয়েছে এমন নজির নেই। উপরন্ত মামলার বাদীদেরকেই থাকতে হয়েছে লুকিয়ে।
সবচেয়ে বিষ্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে এসব মামলার বেশ বড় একটি অংশ রাজনৈতিক বিবেচনায় পরবর্তিতে প্রত্যাহার করে নেয় ৪ দলীয় জোট সরকার। বিভিন্ন ভাবে থামিয়ে দেয়া হয় অন্য মামলাগুলোর বিচার। লালমোহনের খোরশেদ হত্যা মামলার বিচার স্থগিত করিয়ে রেখেছেন মেজর (অবঃ) হাফিজ। উচ্চ আদালতে রিট আবেদনের মাধ্যমে করা হয়েছে কাজটি। হাফিজ ইব্রাহিমসহ অন্যান্য প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর ভাগ্যেও ঘটেছে প্রায় একই ঘটনা। বোরহানউদ্দিনে নিহত নকিবের ভাই হারুন মাতবর বলেন, ‘ক্ষমতার আমলে আমার মা-ভাইকে আটকে বহুবার মামলা প্রত্যাহারের চেষ্টা চালিয়েছে হাফিজ ইব্রাহিমের লোকজন। কিন্তু আমরা নত হইনি। এরপর ক্ষমতার প্রভাবে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করিয়ে রাখেন তিনি। অত্যাচার নির্যাতনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়া লর্ডহার্ডিঞ্জের এক বাসিন্দা বলেন, ‘জোট সরকারের ৫ বছর মামলা প্রত্যাহারসহ কারও কাছে যাতে কিছু না বলি সেজন্যে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়েছে মেজর (অবঃ) হাফিজের ভাই মার্শাল হিমু ও তার লোকজন। এক পর্যায়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হই আমরা।’
২০১১ সালের এপ্রিল মাসে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হলেও পরবর্তি প্রায় দেড় বছর বিষয়টি নিয়ে আর কোনও আলোচনা হয়নি। প্রাপ্ত তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কিনা তাও জানতো না কেউ। পরে গত ২ অক্টোবর সংবাদকর্মীদের সামনে এদের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষনা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এক্ষেত্রে বরিশাল অঞ্চলের ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলার খবর মেলে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। এরা হলেন আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অবঃ) হাফিজ, শহিদুল হক জামাল, হাফিজ ইব্রাহীম, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী এবং জহিরুদ্দিন স্বপন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একটি সূত্র তখন জানিয়েছিল, মামলার প্রস্তুতি নাকি সম্পন্ন হয়েছে। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ, ভোলার লালমোহন ও বোরহানউদ্দিন, পিরোজপুরের স্বরুপকাঠী, পিরোজপুর সদর এবং বরিশালের গৌরনদীতে দায়ের হবে এসব মামলা। সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ ছাড়াও এসব মামলায় আসামী করার কথা ছিল নির্যাতন হামলার সাথে জড়িত সন্ত্রাসী ক্যাডারদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর কিছুই হয়নি। মন্ত্রীর দেয়া ঘোষনার পর পেরিয়ে গেছে এক মাস সময়। দীর্ঘ এই সময়ে বিষয়টি নিয়ে আর কোন আলোচনা হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীও এব্যাপারে বলেননি কিছুই। ফলে পুরো বিষয়টির ভবিষ্যত নিয়ে এখন চিন্তিত নির্যাতিতরা। বিষযটি নিয়ে কথা বলার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার অনেক চেষ্টা করা হলেও ফোনের মাধ্যমে তার কাছে পৌছানো সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অন্য কেউও রাজি হননি এব্যাপারে কিছু বলতে। ###
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:১৪
নাভদ বলেছেন:
২০০১ এ সংখ্যালঘু নির্যাতন: রাজনীতিই ছিলো মূল কারণ
প্রদীপ চৌধুরী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক
ঢাকা, এপ্রিল ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- রাজনৈতিক দর্শনগত ভিন্নতা, সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতাকেই ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় ও তখনকার বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন।
কমিশন রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে ১ হাজার ৭৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সুপারিশ অনুযায়ী সরকার শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এতে বলা হয়েছে, ওই নির্যাতনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংস করে একটি উগ্র-সা¤প্রদায়িক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করা।
ঘটনার প্রায় সাড়ে ৯ বছর এবং কমিশন গঠনের প্রায় সোয়া এক বছর পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়লো। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ওই প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি পেয়েছে।
৫ খণ্ডের ওই প্রতিবেদনে লেখচিত্রসহ সহিংসতার ধরন ও প্রকার, সহিংস ঘটনার কিছু উদাহরণ, কারণ ও পটভূমি, সারসংক্ষেপ, প্রাসঙ্গিক মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
কমিশন প্রতিবেদনে সারাদেশে সংঘটিত ওইসব নির্যাতনের ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী শীর্ষ কয়েকজন নেতার প্রত্যক্ষ মদদে রয়েছে উল্লেখ করেছে। কমিশনের তদন্ত করা ৩৬২৫টি ঘটনায় ১৮ হাজারেরও বেশি লোক জড়িত।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অনেক ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়। হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের এসব ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় বিএনপি-জামায়াত জোটকে।
একটি মানবাধিকার সংগঠনের আবেদনে ২০০৯ সালের ৬ মে ২০০১ এর নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপর ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রধান করে তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের সহিংস নির্যাতনের ঘটনার বেশির ভাগ কমিশনের পক্ষে তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সূত্র থেকে কমিশন জানতে পেরেছেন ওই সময় ঘটা সহিংস ঘটনার সংখ্যা ১৮ হাজারেরও বেশি। কমিশনের কছে অভিযোগ জমা পড়ে ৫৫৭১টি। এর মধ্যে থেকে ৩৬২৫টি সহিংস ঘটনা তদন্ত করে কমিশন।
এসব ঘটনা তদন্তের জন্য কমিশন প্রতি জেলায় একটি করে স্বল্প মেয়াদি কমিটি বা কমিশন গঠন করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে।
কমিশনের তদন্তের ভিত্তিতে নতুন মামলা দায়ের, পুরানো মামলা পুনরুজ্জীবিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থিক সহায়তা দিতেও সরকারকে সুপারিশ করা হয়েছে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী দলের শীর্ষ নেতার নির্দেশে দেশে কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, "এভাবে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা যদি সচেষ্ট থাকেন, তাহলে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব।"
বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নির্বাচিত না হওয়ায় এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিতা না থাকায় তারা যা খুশি তাই করে থাকেন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটাই হয়েছিলো।
"তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই নির্যাতনটা শুরু হয়। দলীয় আনুগত্যের কারণে ওই সরকার সংখ্যলঘু বা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন প্রতিরোধ বা বন্ধ করতে প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।"
প্রশাসনিক রবদলের মধ্য দিয়ে তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা ২০০১ সালে নির্যাতনে সুযোগ করে দিয়েছিলো বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বিরোধী আন্দোলন, দ্বি-জাতি তত্ত্ব, ভারত-পাকিস্তান বিভত্তি, পাকিস্তানের পৃষ্ঠপেশকতায় ধর্মীয় ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা, '৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছে।
একই সঙ্গে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস, উগ্র ধর্মীয় নীতি প্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং জঙ্গিবাদের উত্থানের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
ইসলামের নামে সারাদেশে জঙ্গিবাদ হামলা থেকে শুরু করে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় গ্রেনেড হামলা একই সূত্রে গাঁথা বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/পিসি/এমআই/১৩৩০ ঘ.