নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিস্ফোরিত চোখের অবাক দৃষ্টি .......আর ধ্বংস ধ্বংস থেকেই আমার সৃষ্টি।

মহাকালের মঞ্চ (জীসান আহমেদ অরিন)

দৃষ্টি ভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে♠

মহাকালের মঞ্চ (জীসান আহমেদ অরিন) › বিস্তারিত পোস্টঃ

হতভাগ্য এক দেশের নাম বুঝি বাংলাদেশ ,যত হতভাগা এই দেশের জনগন !!!!!

০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:০৭

হতভাগ্য এক দেশ থেকে বাস্তববাদী কবি জীবনানন্দ দাশের সাথে ঐকতানে বলতে হয়, অদ্ভুত আঁধার এক নেমেছে এ দেশে আজ; যারা অন্ধ বেশি দেখে তারা, যাদের মনে প্রেম নেই, প্রীতি নেই তাদের দখলে চলে গেছে সব কিছু। যারা মূর্খ তারা বড় বড় অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা। যাদের হৃদয়ে প্রেম আছে, প্রীতি আছে তাদের হৃদয় এখন পোকার দখলে। হায়েনারা হানা দেয় দিন-রাত। ‘ভালোর চাষাবাদ’ খুব কম চোখে পড়ে। প্রায় সবারই ভালোর চর্চায় অনীহা। রাজনৈতিক রেষারেষির মধ্য দিয়ে সামাজিক হীনদৃষ্টিভঙ্গি হতভাগ্য জাতিতে রূপান্তর করেছে আমাদের।
এ দেশে যে যা হতে চাই, তা হতে দেয়া হয় না। মা-বাবার স্বপ্ন ছেলে বা মেয়ে লেখাপড়া করে বড় চাকরি করবে। এ দেশ বিল গেটস বা মার্ক জাকারবার্গ সৃষ্টি করতে পারেনি। যারা বর্তমানে কিঞ্চিত সফলতা এবং পাহাড়সম অনীহা নিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছে, তাদের ৯৯ শতাংশ যা হতে চেয়েছিল তা হতে পারেনি বা দেশের পরিবেশ তাকে তা হতে দেয়নি। আরো সমস্যা হলো ইঞ্জিনিয়ার এখন বাজেটবিশ্লেষক, পৌরনীতির ছাত্র হয়ে যায় নগর পরিকল্পনাবিদ। ডাক্তার কৃষি বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার দায়িত্ব পায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুইপার হয়েছে চিকিৎসক (সার্জন)। ক্লাস পাস করা রাজনীতিবিদ এখন ব্যাংকের ডিরেক্টর না হলে ব্যাংক চলে না। অদক্ষ এবং দলীয় প্রভাব খাটানো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৌরাত্ম্য প্রত্যেকটি সরকারি ব্যাংককে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন করেছে ,হাতেগোনা কয়েকজন বুদ্ধিজীবী বা টকশোর বক্তা বাজেট, প্রতিরক্ষা, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, ভূ-রাজনীতি, কূটনীতিসহ এহেন কোনো বিষয় নেই যার ‘বিশেষজ্ঞ’ নন। কিন্তু সব বিষয়ের বিশেষজ্ঞ মানে, কোনো বিষয়েই পেশাদারিত্বের আঙ্গিকে পারদর্শী না হওয়া। তারা সাজেশন বা পরামর্শ দিতে পারেন কিন্তু গুণগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন না। যারা বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করছেন, তাদের প্রথম পছন্দ শিক্ষকতা নয়। তাদের যদি ফরেন বা পুলিশ ক্যাডার দেয়া হয়, তবে দু-একজন বাদে সবাই শিক্ষকতায় ইস্তফা দেবেন।আমাদের মা-বাবা, প্রতিবেশী, শুভাকাক্সক্ষীদের কাছ থেকে এ জন্য স্টিভ জবস, সুন্দর পিসাই, বিল গেটস, এডিসনদের উদাহরণ আসে না। নজির হিসেবে আনে না গুগলে কাজ করা গর্বিত কোনো বাঙালির নাম। পরামর্শ আসে জব সল্যুশন গাইড মুখস্ত করে চাকরি লাভের কিংবা সরকারি কর্মকর্তা হওয়া মানুষের নামকয়েকটি এমসিকিউয়ের বই মুখস্ত করে পরীক্ষায় প্রথম হওয়া আর নাসার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করা এক নয়। তারপরও তরুণদের অনেকের আইডল প্রশাসনের কোনো ক্যাডার। তরুণ-তরুণীরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো স্বপ্ন দেখে, আমিও সেই ক্যাডার হবো। চেম্বার হবে, টাকা কামাব, বড় ঘরে বিয়ে হবে, বাড়ি হবে, লেটেস্ট মডেলের গাড়ি হবে। গৎবাঁধা এই বৃত্তের বাইরে আমরা কেউ না। যে ছেলে ক্লাস ফাইভে এ প্লাস পায় না তার মা-বাবা হতাশ হয়ে যান। তাদের ধারণা, এই ছেলে দিয়ে বোধ হয় কিছুই হবে না। আসলে গোড়ায় গলদ আমাদের। যে মেয়ে এইচএসসিতে এ প্লাস পায় না তার জন্য বিয়ের পাত্র দেখা শুরু হয়ে যায় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিয়ে হয়েও যায়। অসংখ্য তরুণ-তরুণীকে জীবনে অসংখ্যবার শুনতে হয়, ‘তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না।’ এ কথা শুনতে হয় প্রতিবেশী, আদরের আঙ্কেল-আন্টি, সহপাঠীর কাছ থেকেও। এমন কি যে শিক্ষক হতাশায় সান্ত্বনা দেবেন এবং নতুন করে স্বপ্নের বীজ বুনতে সহায়তা করবেন, তিনিও তাচ্ছিল্য করতে দ্বিধা করেন না।
ভালো ভালো কথা যুগান্তকারী পরিবর্তনের লক্ষ্যে, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নামতে হবে। আমরা বই মুখস্ত বা প্রশ্নফাঁস করে বড় বড় ডিগ্রি বা চাকরি নেয়া মেধাহীন জাতি হয়ে যাচ্ছি। তাহলে কেন ছাত্র-জনতা আন্দোলন করে বুকের রক্ত বিকিয়ে দিয়ে ভাষার অধিকার, স্বাধীনতা অর্জন এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল?
পৃথিবীর ইতিহাসে যারা বিখ্যাত হয়েছেন, প্রাণভয় তুচ্ছজ্ঞান করে তারা বয়ে এনেছেন মানবজাতির প্রভূত কল্যাণ ও সমৃদ্ধি। টমাস আলভা এডিসনকে যখন স্কুল থেকে বের করে দেয়া হলো ‘পড়ালেখা না পারার’ অজুহাতে, তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ তার মাকে একটা চিঠি দিয়েছিলেন। তার মা চিঠি লুকিয়ে এডিসনকে বলেছিলেন, ‘তুমি এতটাই ভালো ও বুদ্ধিমান যে, তোমাকে পড়ানোর মতো যোগ্যতা ওই স্কুলে নেই।’। মায়ের সেই কথায় অনুপ্রেরণায় আমরা পরবর্তীকালে পেয়েছিলাম বিখ্যাত বিশ্ববিজ্ঞানী এডিসনকে। এই রকম মা বাংলাদেশে ক’জন আছে কী?
আমরা পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয়, তাই আমাদের ‘দর্জির দেশ’ বলা হয়। বিদেশে আমাদের মানুষগুলো মেধা বিক্রি না করে শ্রম বিক্রি করে দেশে অনেক রেমিট্যান্স পাঠায়, তাই আমাদের ‘কামলার দেশ’ বলা হয়। আমরা চামড়া ও চামড়াজাত রফতানি করি; তাই আমাদের কেউ কেউ ‘মুচির দেশ’ বলে। ফিলিপাইন আমাদের তুলনায় মাত্র ২০ শতাংশ জনশক্তি রফতানি করে তিনগুণ বেশি রেমিট্যান্স অর্জন করে। কারণ তারা তাদের শ্রমিক বা জনশক্তিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে বিদেশে পাঠায়। অথচ বাংলাদেশের শ্রমিক অদক্ষ হিসেবে বিদেশে পাঠানো হয়। । এ দেশে জর্দা ও বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক সবচেয়ে বেশি ট্যাক্স দেন, কিন্তু যাদের নাম বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় আসে তাদের কর দেয়ার তালিকায় খুঁজে পাওয়া যায় সবার শেষে। এর চেয়ে হতাশার বিষয় জাতির জীবনে কী হতে পারে?
এত প্রতিবন্ধকতার ভেতরেও স্বপ্ন দেখে চোখ, অমাবস্যায় দেখে ভরা পূর্ণিমা। তবে এইভাবে আর চলতে দেয়া ঠিক হবে না। সস্তাশ্রম, সস্তাপণ্য আর নয়। প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার এখনি সময়। শ্রম নয়, আমরা মেধা বিক্রি করতে চাই। শুধু পোশাক নয়, প্রযুক্তি বিক্রি করতে চাই। চামড়া নয়, চামড়াজাত দামি পণ্যসামগ্রী রফতানি করতে চাই। সুখের কথা এত সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার ভেতরেও ৭ শতাংশের কাছাকাছি জিডিপি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এ দেশ। প্রতিদিন বড় হচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ ২০৫০ সালে বিশ্বের ১৩তম অর্থনীতির দেশ হবে; যখন আমাদের অর্থনীতি উন্নত দেশ অস্ট্রেলিয়ার চেয়েও বড় হয়ে যাবে। এই যুগান্তকারী কাজ সম্পাদন করতে দরকার একটা ‘সামাজিক বিপ্লব’। সব দলের অংশগ্রহণে সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্য দরকার। দলীয় মতপার্থক্য থাকলেও জাতীয় স্বার্থে সবাই এক থাকতে হবে। স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচার হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল চালিকাশক্তি।
এই স্বপ্নগুলো একই সুতোই বাঁধতে আর আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ আর সবার গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজন করা এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া বিকল্প নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.