নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আপনার ‘আমি’ কি প্রতিদিন মরে যায়? অভিশপ্ত রহস্য নাকি দার্শনিক যুদ্ধ?

১৬ ই মে, ২০২৫ রাত ২:১২



আমার মত ‘পাইরেটস্‌ অব ক্যারিবিয়ান (Pirates of the Caribbean)’ সিনেমা সিরিজ ভক্ত কে কে আছেন? বিখ্যাত কিংবা কুখ্যাত, বোকা কিংবা চতুর ক্যাপ্টেন ‘জ্যাক স্প্যারো’ কে ভুলে যাওয়া কি এত সহজেই সম্ভব? আর জনপ্রিয় সেই ‘ব্ল্যাক পার্ল (Black Pearl)’ জাহাজ! কি মনে আছে?

আমার আজকের আলোচনা ব্ল্যাক পার্ল জাহাজ নিয়ে না হলেও একটি কাল্পনিক জাহাজ নিয়ে। আমি ধরে নিচ্ছি, আপনার কাছে একটি জাহাজ আছে। ব্ল্যাক পার্লের মত অভিশপ্ত নয়, বরং আপনাকে উপহার দেয়া আশীর্বাদপুষ্ট একটি জাহাজ। কে উপহার দিলো? ধরুন, অপরিচিত একজন গুণীজন; বৃদ্ধ। তার চেহেরায় বিজ্ঞতার ঝলক ছিলো। তার মৃত্যুর সময় তিনি এই জাহাজের মালিকানা আপনাকে দিয়ে গেছেন। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, এই জাহাজের একমাত্র মালিক হবার যোগ্য শুধু আপনি।

এই জাহাজের নাম ধরে নেওয়া যাক ‘মুক্তা (Pearl)’। মুক্তা শুধু নামে নয় গুণেও। এই জাহাজ নিয়ে যখনই আপনি সমুদ্রে যান, তখনই একটি কালো মুক্তা পেয়ে যান। প্রায় অবিশ্বাস্য ব্যাপার! কারণ প্রায় ১০ হাজার ঝিনুকের মধ্যে এমন একটি ঝিনুক থাকে যার মধ্যে মাত্র একটি কালো মুক্তা পাওয়া যায়। আর একটি কালো মুক্তা গঠন হতে সময় লাগে প্রায় ৮-১৫ বছর। তারচেয়ে বড় বিষয় হলো, এই জাহাজ থেকে আপনাকে শুধু একটি বিশেষ জাল সমুদ্রে ২০-৪০ মিটার গভীরে নিক্ষেপ করতে হয়।

দিনশেষে যখন জাল তুলে আনেন তখন অন্তত ১টি কালো মুক্তা পেয়ে যান; প্রায় প্রতিদিনই। তাও যা-তা ধরণের মুক্ত নয়, ‘ব্ল্যাক-লিপড ওয়েস্টার’ ঝিনুকের ‘তাহিতি কালো মুক্তা (Tahitian Black Pearls)’।

প্রতিটি ঝিনুকে একটি কালো মুক্তা থাকে এবং তার বাংলাদেশী বাজার মূল্য অন্তত ৫-৬ লাখ টাকা। মানে হলো আপনি প্রতিদিন ৫-৬ লাখ উপার্জন করে থাকেন। তাও আবার বঙ্গোপসাগরে! শুধুমাত্র এই ‘মুক্তা’ জাহাজের কল্যাণে।

মুক্তা সংগ্রহ করে আপনি তা দেশ-বিদেশে রপ্তানি করেন এবং প্রচুর টাকা উপার্জন করতে থাকেন। কিন্তু ১ বছর পর আপনি খেয়াল করলেন আপনার জাহাজ আগের মত আর অত শক্তিশালী নাই, জাহাজের পাটাতন থেকে জাহাজের সেই বিখ্যাত জাল আস্তে আস্তে অনেক ক্ষয়ে গেছে। একদিন তো মুক্তা জাহাজের একটি পাটাতন ভেঙ্গে কিছু জল প্রবেশ করতে লাগলো। আপনি চিন্তায় পড়ে গেলেন।

একসময় আপনার মনে হলো, জাহাজের ঐ পাটাতন পরিবর্তন করলে কেমন হয়? এতে করে মুক্তা কি আর পাওয়া যাবে না?

আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন মুক্তা জাহাজের ঐ নির্দিষ্ট পাটাতন শুধু পরিবর্তন করতে। তাই আপনি অনেক টাকা ব্যয় করে একজন দক্ষ শিপবিল্ডার দিয়ে পুরোপুরি নতুন একটি পাটাতন জাহাজে যুক্ত করলেন। তারপর খেয়াল করে দেখলেন, আপনি এখনো প্রতিদিনই প্রায় একটি করে মূল্যবান কালো মুক্তা পাচ্ছেন। এখনও আগের মতই ভালো উপার্জন হচ্ছে।

এরপর আপনি ক্রমান্বয়ে মুক্তা জাহাজের মেইন ডেক, আপার ডেক, লোয়ার ডেক, পোয়োপ ডেক, ফরেক্যাসল ডেক এবং টুইন ডেক সহ সবধরণের ডেক আস্তে আস্তে পরিবর্তন করলেন। ফলাফল হচ্ছে, এখনও আপনি প্রতিদিন একটি করে মূল্যবান কালো মুক্তা পাচ্ছেন। আপনার উপার্জনে বিশেষ কোনো পরিবর্তন আপনার চোখে পড়লো না। আপনি দেখলেন সবকিছু আগের মতই আছে।

এরপর আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, এই জাহাজের সমস্ত পুরাতন জিনিসপত্র হটিয়ে নতুন জিনিসপত্র লাগাতে। আপনার কাছে টাকা আছে এবং আপনি সহজেই তা করতে পারেন। তাছাড়া পুরাতন জাহাজের সবকিছু বিকল না হলেও প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সুতরাং এবার আপনি একটি পুরো টিম কে কাজে লাগিয়ে দিলেন জাহাজটির ব্যাপক পরিবর্তন আনতে।

শিপবিল্ডার, নেভাল ইঞ্জিনিয়ার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সবাই মিলে মুক্তা জাহাজে নতুন জিনিসপত্র বসিয়ে দিলেন। ফলাফল, এখনও আপনি প্রতিদিনই মূল্যবান কালো মুক্তা পাচ্ছেন। আপনার উপার্জনে বিশেষ কোন পার্থক্য নাই। এমনকি ঐ বিশেষ জাল আরো অত্যাধুনিক জাল দিয়ে পরিবর্তন করা হলো।

কিন্তু আপনি যে এই বিশাল অঙ্কের টাকা প্রতিদিন উপার্জন করেন তার রহস্য ধরে ফেলেছে আপনার বন্ধু আবদুল কুদ্দুস। সে গোপনে গোপনে আপনার পুরাতন জাহাজের ফেলে দেওয়া সমস্ত জিনিসপত্র মেরামত করে একটি নতুন জাহাজ তৈরি করেছে। শুধু তাই নয়, আবদুল কুদ্দুস খেয়াল রেখেছে একটি ছোট বা ক্ষুদ্র অংশও যেন নতুন করে ঐ জাহাজে না যুক্ত করা হয়।

মানে হলো, এখন সম্পূর্ণ নতুন একটি জাহাজ আছে আবদুল কুদ্দুসের কাছে; যা দেখতে পুরোপুরি ‘মুক্তা’ জাহাজের মত। কারণ মুক্তা জাহাজের সমস্ত খুঁটিনাটি দিয়েই তো এই জাহাজ আবদুল কুদ্দুস তৈরি করেছে।

একদিন তো আপনি ‘মুক্তা’ জাহাজের সর্বশেষ পুরাতন নেভিগেশন সিস্টেম (রাডার, জিপিএস, ইকো সাউন্ডার, অটোপাইলট) আরো অত্যাধুনিক করলেন। অন্যদিকে আপনার বন্ধু এক সুদিন দেখে এই সবগুলো জিনিস পুরাতন বাজার থেকে ক্রয় করে তার নিজের জাহাজে যুক্ত করলেন। অবশ্য এতেও আপনার কোন ক্ষতি হলো না। আপনি নিয়মিত একটি করে মূল্যবান কালো মুক্তা পেতেই থাকলেন। আপনার উপার্জনে কোনো ঘাটতি হলো না।

এখন প্রশ্ন হলো, মুক্তা জাহাজ কোনটি? যে জাহাজ আপনাকে এক বিজ্ঞ বৃদ্ধ লোক উপহার দিয়েছিলেন সেটি? নাকি আবদুল কুদ্দুসের নির্মিত পুরাতন জাহাজ? কারণ আপনার জাহাজে ওমন ঐ বৃদ্ধের রেখে যাওয়া আর কিছুই নাই। অন্যদিকে আবদুল কুদ্দুসের জাহাজে রয়েছে মুক্তা জাহাজের প্রায় সব অংশ।

এখানে মুক্তা জাহাজ অবশ্যই ২টি জাহাজ হতে পারে না। এই দুই জাহাজের মধ্যে যে কোনো একটি হলো মুক্তা জাহাজ, যা আশীর্বাদপুষ্ট! কিন্তু সেটা কোনটি? তবে কি আবদুল কুদ্দুসও এখন ঐ মূল্যবান কালো মুক্তা পাবেন? কিন্তু আশীর্বাদ ছিলো তো একজনের জন্য!

এছাড়াও আমরা জানি আমদের দেহের কোষ প্রতি ৮-১০ বছরে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত হয়। তাহলে দশ বছর আগের যে ‘আমি’ ছিলাম আজও কি সে-ই ‘আমি’-ই আছি? কিন্তু কীভাবে?

গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী, এথেন্সের রাজা থিসিয়াস ক্রীট দ্বীপ থেকে ফেরার পর তার জাহাজটিকে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। সময়ের সাথে সাথে জাহাজের কাঠের অংশগুলো (পাটাতন, বৈঠা, মাস্তুল) ক্ষয়ে যেতে থাকায় সেগুলো নতুন কাঠ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।

প্রশ্ন ওঠে:

১. সমস্ত অংশ পরিবর্তন হওয়ার পরও জাহাজটি কি থিসিয়াসের মূল জাহাজ?

২. না হলে, কোন মুহূর্তে এটি নতুন জাহাজে পরিণত হলো?

এতক্ষণ ধরে কথা বলছিলাম, ‘থিসিয়াসের জাহাজ (Ship of Theseus)’ প্যারাডক্স নিয়ে। এই প্যারাডক্স আমাদের এমন একটি ধাঁধায় ফেলে দেয় যা থেকে খুব সহজে মুক্তি মেলা অসম্ভব।

ছবি: Ship of Theseus

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: ট্রায়াঙ্গেল মুভি দেখেছেন?

২| ১৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:১২

শায়মা বলেছেন: নতুন জাহাজকে আসল মুক্তা জাহাজ বলে মানবো না।

পুরানো দিয়ে পুরানোটাই আসল জাহাজ তাতে মুক্তা পাওয়া যাক বা না যাক.... :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.