নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমরা সবাই পাগল.....

জগা

কি লিখুম?

জগা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি ওকে দেখেছিলাম সেই ছোট্টবেলায়-৮

২৫ শে মে, ২০১৪ সকাল ৭:২৩



'মামণি, এবার তো একটু বড় হতে হয়', মোনার বাবা মেয়েকে সকালবেলা ঘুম থেকে টেনে তুলতে তুলতে বললেন। আগেরদিন মেলা দেরী করে বাড়ি ফিরেই মোনা নিজের ঘরে সেই যে ঢুকেছে আর বের হয়নি। রাতে খেতেও চায়নি।



ওর মা রাগে গজগজ করতে করতে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। সকালে বাবাকে পাঠিয়েছেন মোনাকে ডাকতে। মোনার ঘরের লাগোয়া বারান্দার দরজাটা শুধু ভেজানো ছিল, বাবা সোজা ওর ঘরে ঢুকে গেলেন। মোনা আর গল্পের ঘটনা উনাদের অজানা নয়, তবে পুরো কাহিনির খুব কমটুকুই জানেন আর এটাই উনাদের চিন্তার কারণ। এদিকে মেয়েকে সারাজীবন আগলে রেখেছেন, কিন্তু এই একটা সময়ে এসে মেয়েকে কিছুটা ছাড় দিতে চাচ্ছেন । কারণ প্রথমত, এটা মোনার নিজের জীবন; দ্বীতিয়ত, মোনা সবসময় বাবা-মাকে মানতে গিয়ে নিজেকে অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত করেছে সেটা উনারা ভালভাবেই বুঝেন।



এখন মোনা একটা আবেগী হতাশ চরিত্রে পরিণত হয়েছে যেটা উনাদের কলিজাতে ছুরি বসায়।



'মামণি ! কি হয়েছে খুলে বলবি?'

মোনা এবার চোখ মুছতে মুছতে উঠে বসল, 'কিছু হয়নি বাবা'



'সত্যি ?'



'হুম', মোনা ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ, তারপর বাবার দিকে তাকাল। মানুষটাকে হটাত প্রচণ্ড বয়স্ক লাগছে। একটা অনুশোচনা জাগল ওর মনে। উঠে বসে বলল,' বাবা একটা কথা বলি?'



'বল'



'বড়দের দুনিয়া এত বাজে কেন? ছোট ছিলাম ভালোই ছিলাম', শেষের দিকে মোনার গলা ভারী হয়ে আসল। ওর বাবা হেসে ফেললেন।



'শুন, এটা নির্ভর করছে যে তুই ছোট থাকতে চাস নাকি বড় হতে চাস তার উপর। ছাত্রজীবন শেষ হবার পর সবারই এরকম মনে হয়। তাও তো তুই অনেক ভাল আছিস। তোর ওই বন্ধুগুলোর কথা ভাব দেখি যারা বেকার বসে আছে এখনো।'



'আমার প্রব্লেম বেকারত্ব নিয়ে না'



'জানি, আমি শুধু এই জন্য কথাটা তুল্লাম যেন তুই বুঝিস দুনিয়াতে হতাশাজনক ঘটনা আরো আছে। আমরা তোকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সবসময় উতসাহ দিয়েছি কারণ আজকের দুনিয়ায় যার ক্যারিয়ার নেই তার পায়ের নিচের মাটি সরতে বেশিক্ষণ লাগেনা। তাওতো তোর পাশে আমরা আছি।'



'আব্বুউউ , আমার সমস্যা আমার চাকরি নিয়ে নয়'

'কোন এক সহকর্মী নিয়ে এই তো ! হয়ত তোদের সময় দরকার, সঠিক সময়ের আগে কিছুই হয়না। আর ছেলেরা অর্থনৈতিক ভাবে থিতু না হলে কোন বড় সিদ্ধান্ত নিতে চায়না।'



'ও মাসে ২৫ হাজার টাকা বেতন পায়।'



'যথেষ্ট নয়, ওর বাসায় কয়জন মানুষ আছে এটা জানিস? হয়ত ওকে এখনও সংসারের মূল উপার্জকের ভুমিকায় আসতে হয়নি, কিন্তু বিয়ে করলে নিজের সংসার নিজেকেই চালাতে হবে। তুই তো এখনো নিজে সংসার করিসনা, কি বুঝবি?'



'তারপরো, টাকা কি এতই ইম্পর্ট্যান্ট? '



'হাসালি আমাকে। অবশ্যই। আর ছেলেদের চিন্তা মেয়েদের সাথে মিলেনা। তোর বান্ধবী মুনা আর বন্ধু অমল দুজনেই পাগলের মত চাকরি খুঁজছে। মুনা একমাত্র সন্তান, বাবা অবসর নিবেন কিছুদিন পরেই। অমলের বড় ভাই আছে বাবার ব্যাকআপ হিসেবে, কিন্তু বেশি হতাশ হয়ে আছে কে?'



'অমল, সারাক্ষণ বেজার মুখে ঘুরে।'



'কারণ একটা ২৫ বছরের বেকার মেয়ে যত সহজে বাবার কাছে হাত পারতে পারে, একটা ২৫ বছরের বেকার ছেলে পারেনা, ইগোতে লাগে। এটাই সমাজের প্রেক্ষাপট।'



'বাজে !' মোনা বেজার মুখে বলল যদিও সে ভাল করেই ব্যাপারটা ধরতে পারল। কিন্তু গল্পর সাথে প্রেক্ষাপটটা ঠিক পুরোপুরি মেলানো যাচ্ছেনা। ব্যাপারটা পুরোপুরি বাবাকে খুলে বলতেও মন চাচ্ছেনা।



'বাজে হোক আর যাই হোক মানতে হবে, আমরা সামাজিক জীব। এখন উঠ, মুখ ধুয়ে নাস্তা খেতে আয়।'



বাবা উঠলেন, বেরিয়ে যাবার মুখে ঘুরে দাঁড়ালেন। মোনা তাকাল উনার দিকে। আরো বয়স্ক লাগছে বাবাকে।



'আরেকটা প্রেক্ষাপট মনে রাখিস, গল্পর হাতে প্রচুর সময় আছে, তোর অত নেই। সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়।'



মোনা মুখ নিচু করে ফেলল। একটা অভিমান চাপা কান্নায় রূপ নিল। মুখ তুলে দেখে বাবা বের হয়ে গেছেন।





(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.