| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভোর পাঁচটায় গল্প বেরিয়ে পড়ল নুরুল আমিনের কথামত ওদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। রওনা দেবার আগে অবশ্য সে সুজনকে ফোন করে বলেছে যে সে মোনাকে আনতে যাচ্ছে ____ উপজেলা থেকে। তবে সে বারবার বারণ করে দিয়েছে যেন সুজন কাউকে কিছু না বলে। কিন্তু যদি আগামী ১৬ ঘণ্টার মাঝে গল্প সুজনের সাথে যোগাযোগ না করে তাহলে যেন সে পুলিশকে ইনফর্ম করে। সুজন নীলার বেপারে কিছুই জানেনা, কে গল্পকে বলল যে মোনা কোথায় আছে তাও জানেনা। সে মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝলনা তবে রাজি হল।
গল্প এরপর ওর চাচাতো ভাইয়ের বাসায় গিয়ে তাঁর মোটরসাইকেলটা ধার নিয়ে বেরিয়ে গেল। চাচাতো ভাই এত ভোরে এই কাণ্ড দেখে বিরক্ত হলেও মোটেই অবাক হলেননা কারণ এর আগেও গল্প এইভাবে হটাত করে বাইক ধার নিয়ে গেছে। জানতেও চাইলেননা গল্প কোথায় যাচ্ছে। গল্পর বাবা-মা নীলাকে মেনে না নেয়ার পর গল্প আর বাসায় থাকতে চাইতনা, বাইক নিয়ে সারাদিন ঘুরত নইলে সারাদিন ভার্সিটিতে বসে থাকত। চাকরি পাওয়ার পর এখন তাও বাড়িতে বেশি সময় থাকে। গল্পর এই ভাইটি ওকে আপন ভাইএর মত স্নেহ করেন, নীলার বিষয়টায় গল্পকে একমাত্র উনিই সাপোর্ট করেছিলেন। নীলার মৃত্যুর পর পুলিশি ঝামেলা সামলানোর সময়ও তিনিই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। গল্প একবার ভাবল তাঁকে খুলে বলে বিষয়টা উনি কি উপদেশ দেন শুনার জন্য। পরক্ষণে ভাবল না যত কম মানুষ জানবে তত ভাল। কে জানে যদি ভাই ওকে আটকে দেন।
নীলার বাড়ি পৌঁছতে সকাল সাড়ে সাতটা বেজে গেল। বাড়ির সামনে বিশাল বাগান, যদিও বাগান তেমন পরিচর্যা করা নেই। তিনতলা একটা বাড়ি। তার সাথে লাগোয়া একটা একতলা ঘর। গল্প জানে এই দালানের পিছে আরো খানিকটা জমি পড়ে আছে যদিনা নীলার বাবা ঘর তুলে থাকেন। জায়গাটা শহর হয়ে উঠেনি এখনো, তাই দমবন্ধ করা দালান-কোঠার ভিড় নেই।বাড়ির সামনে রঙের বালতি রাখা, সামনের দেয়ালটা কিছুটা রঙ করা। মনে হয় পুরো বাড়িই রঙ করার কাজ চলছে। মানুষজন তেমন দেখা যাচ্ছেনা।
গল্প খোলা একটা লোহার গেট পেরিয়ে বাইকটা দেয়ালের গা ঘেঁষে রাখল। ওখানে আরো দুটো বাইক রাখা। নুরুল আমিনের একটা জীপ থাকার কথা, কোথায় রেখেছে কে জানে। গল্প একটা বড় করে নিঃশ্বাস নিল। তারপর পকেট থেকে ফোনটা বের করে নুরুলকে কল দিল। দুইটা রিং বাজতেই বাড়ির পিছন দিক থেকে আর গল্পর পিছন দিক থেকে গোটা চারেক লোক এসে হাজির হল। একটা সাড়ে ৫ ফিটের কালো মুশকো জোয়ান, একটা ঢ্যাংঢ্যাঙ্গে লম্বা, বাকি দুজন সাউথ ইন্ডিয়ান মুভির মোচওয়ালা গূন্ডাদের মত দেখতে । গল্পর গলা শুকিয়ে আসল।
মোনা এদিকে সকাল ছয়টা থেকেই জেগে বসে আছে। আশেপাশে বাসন-কোসনের শব্দ অনবরত হয়েই যাচ্ছে। এই ঘরটা মনে হয় রান্নাঘর সংলগ্ন অথবা বাসন-পত্র ধোয়ার স্থান এইটাই। এর মাঝে একটা মহিলা ওকে রাত্রে একবার চোখ বেঁধে বাথরুমে নিয়ে গেছিল। চোখ খুলে বাথুরুমের অবস্থা দেখে ওর গা গুলিয়ে গিয়েছিল। ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ার ট্যুরেও এত বাজে বাথরুম দেখেনি সে। সেই রাত্রে কয়টা খই মুখে দিয়েছে। পানির বোতলটাও শেষ হয়ে গিয়েছে অথচ কেউ ওর খোঁজ করতেই আসছেনা। মোনা একবার ভাবল উঠে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দেয়। লম্বু পালোয়ানের ঝারি খাবার কথা চিন্তা করে আর উঠলনা। জানলা আছে একটা, সেখান দিয়ে আলো-হাওয়া দুটোই ঘরের ভিতরে ঢুকছে। ঘুম ভেঙ্গে উঠে মোনা জানলা দিয়ে বাইরেটা দেখার চেষ্টা করেছিল, তেমন কিছুই দেখতে পায়নি। কেবল একটা বড় আমগাছ জানলার সামনে। তবে একটা লোককে কাপড়ের বোঁচকা নিয়ে যেতে দেখেছিল, লোকটা ওর দিকে একবার তাকিয়েই আবার মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে হাঁটা দিয়েছিল। মনে হয় এখানে সবাই জানে যে ওকে কেন আনা হয়েছে শুধু মোনাই জানেনা।
হাতঘড়ির দিকে একবার তাকালো মোনা, আটটা বাজে প্রায়। বন্ধু-বান্ধবীরা অনেকেই ঘড়ি পরা ছেড়ে দিয়েছিল মোবাইল আসার পর, মোনা ছাড়েনি। এখন এর সুবিধা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। মোবাইল আর হাতব্যাগ যে এরা কোথায় কব্জা করে রেখেছে নাকি অফিসেই রেখে এসেছে কে জানে। সময়টাও টের না পেলে মোনার আরো দম আটকে আসত। হিসেব করল কয়ঘণ্টা হয়েছে ওর কিডন্যাপিং এর, প্রায় তের ঘণ্টা ! না জানে আব্বু-আম্মুর কি অবস্থা! অফিসে গল্প আর সুজন ছিল, এরা কি জানে যে মোনা কিডন্যাপ হয়েছে, নাকি ভাবছে কাউকে কিছু না বলে মোনা বাড়ি চলে গেছে। হয়তো গল্প এখনো ভসভসিয়ে ঘুমোচ্ছে। মোনার চরম অভিমান হল গল্পর উপর, কেন কে জানে।
হটাত পায়ের শব্দ শুনা গেল। মোনা ধড়মড়িয়ে উঠল। দরজাটা খুলে গেল, সামনে সেই লোকটা যে ওকে বিরাশি সিক্কার চড় মেরেছিল। সাথে আরো কয়েকজন। ওরা একটা লোককে মুখে কাপড়ের ব্যাগ চাপা দিয়ে পিছমোড়া করে নিয়ে এসেছে। মোনা যতনা ভয় পেল তার চেয়েও বেশি কৌতূহলী হল কে এই অভাগা !
নুরুল ধাক্কা দিয়ে ওর বন্দীকে মাটিতে ফেলে দিয়ে বলল 'থাক চুপচাপ এখানে, কোন গণ্ডগোল নয়, আমি খানিক পরে আসছি। এই তোরা দাঁড়িয়ে কেন, গাড়ির ব্যবস্থা কর।'
সবাই বেরিয়ে গেলে, গল্প আস্তে আস্তে মাথা থেকে কাপড়ের ব্যাগটা সরাল, হতচ্ছাড়া নুরুল ওকে দুই গালে এমন চড় মেরেছে যে চোখে এখনো আন্ধার দেখছে। একটা মেয়ে যে ওকে হাঁ করে দেখছে কম গিলছে সেটা টের পেতেই ওর বিশ সেকেন্ড লেগে গেল।
'গ-গল্প !!!!!'
'জ্বি! আপনি আমাকে .... মোনা !!! তুমি !! আমি তোমাকেই খুঁজতে এসেছি !!'
মোনা হাঁ করে আরো কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল গল্পর দিকে। তারপর হটাত ছোট বাচ্চার মত লাফিয়ে উঠে তালি দিল।
'ওয়াও !! একদম সিনেমার মত !! আমি ভাবিওনি তুমি আসবে, আমিতো ভেবেছিলাম তুমি নাক ডাকিয়ে ভসভস করে ঘুমাচ্ছ। '
'এই আমি মোটেও নাক ডাকিনা'
'গুড ফর মি' বলে মোনা ফিক করে হেসে দিল। গল্প অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল মোনাকে । এই সেই মোনা ! যে মেয়ে গল্পর একটু কড়া কথাতেই ভেউভেউ করে কাঁদতে শুরু করে, আজ এই অবস্থাতে মশকরা করছে !
কেন জানি মোনাকে অনেক ছোট দেখাচ্ছে নাকি গল্পই ভুল দেখছে ! মোনাকে ঠিক যেন সেই ফার্স্ট ইয়ারের মোনা মনে হচ্ছে। মোনাও অদ্ভুতভাবে গল্পকে দেখছিল। ওর দু'চোখ ভরা ভরসা আর আনন্দ। এই পরিবেশে গল্পর উপস্থিতি ওর সব আশঙ্কা-ভয় দূর করে দিয়েছে।
তারপর কি যে হল দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরল। অবাক হয়ে গল্প আবিষ্কার করল সে কাঁদছে, মোনাও।
(চলবে)
০৬ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:১৮
জগা বলেছেন: আমার নিকটাও জগাখিচুড়িই রাখতে চেয়েছিলাম, দূর্ভাগ্যবশত জগাটুকু লিখতেই রেজিষ্টার হয়ে যায়
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:১০
পংবাড়ী বলেছেন: সিরিজের ১২ নং পোস্ট পড়ে সবকিছু জগা-খিচুড়ি হয়ে গেলো, পরে ঠিক করে নেবো।