| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পর মাথায় একটা ভোঁতা যন্ত্রণা হচ্ছে। ও বুঝতে পারছেনা যে কি করবে। সুজনকে বলে দিয়েছে পুলিশকে খবর দিতে। এদিকে কামরুল আর মোনা বাঘের ডেরাতে গিয়েই হাজির
হয়েছে ফের। ছোঁড়াটা আর লুকানোর জায়গা পেলনা! আর একটা চীজ হল এই মিলা। ওর কোন টেনশনই নেই যে ওর বয়ফ্রেন্ড আরেকজনের গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে বিপদের মধ্যে
আছে। একমনে তখন থেকে নখ খুঁটছে।
'এই মেয়ে, আমরা এখন কি করব? তোমার বাপের বাড়ি যাব?'
'আরে কি বলেন! ওখানে গেলে আপনি আস্ত থাকবেন না আমাকেই আস্ত রাখবে আমার ভাই? অবশ্য মায়ের কল্যাণে আমি বেঁচেও যেতে পারি তবে আপনার হাড্ডি গূড়া হয়ে যাবে।'
'আরে কি আজব! বলি এটা কি মজা করার সময়?'
মিলা এবার সোজা হয়ে দাঁড়াল। এতক্ষণ বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। 'গল্প ভাই আমি বুঝতে পারছি আমরা কি বিপদে পড়েছি। কিন্তু এত মাথা খারাপ করে লাভ আছে?
একটু থামুন। সুযোগ পেলেই কামরুল কল করবে বলেছে।'
'আর যদি কল না করে?!'
মিলার মুখটা কঠিন হয়ে গেল। 'আর ১০ মিনিটের মাঝে যদি ও কল না করে তাহলে আপনি আমাকে নিয়ে আমার বাড়ি ফেরত যাবেন। আমি সব দোষ আমার ঘাড়ে নিয়ে নেব।
ঠিক মত সিন ক্রিয়েট করলে নিশ্চয় উনারা মেনে নিবেন আমার কথা।'
'আচ্ছা! তা আগে করনি কেন?'
'চেষ্টা করেছিলাম লাভ হয়নি। আর তখন মোড়ক ভাইও ছিল সাথে, মরিয়া হয়ে ট্রাই করিনি। এখন তো উনিও কিছু করতে পারবেননা।'
'আমার মনে হয় আমাদের পুলিশের কাছে যাওয়া উচিত। থানাটা কতদূর?'
'আপনি তো পুলিশে খোঁজ দিতে বললেনই আপনার বন্ধুকে। অযথা থানায় গিয়ে সময় নষ্ট করবেন? তাছাড়া এখানকার থানায় ভাইয়ার বন্ধু আছে কয়েকজন। রিস্কি ব্যাপার।'
গল্প একটু দমে গেল। বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,'আমার ভাল লাগছেনা, মোনা না জানি কেমন আছে। চল মিলা বাড়ি চল। যা থাকে কপালে।'
মিলার মুখটা কেমন সাদা হয়ে গেল। 'গল্প ভাই আমরা একসাথে গেলে ওরা যদি আমাদের বিয়ে পড়িয়ে দেয়! এককাজ করি চলেন। আমি আগে একা একা বাড়িতে ঢুকি। সবাইক আমাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে তখন আপনি গিয়ে কামরুল আর মোনা আপুকে উদ্ধার করে আনবেন।'
'কাজটা এত সহজ নয়, তবে আমাদের আলাদা ঢুকাটাই বেটার অপশন। এতক্ষণে ওরা ধরা না খেয়ে থাকলেই হয়।'
'কে ধরা না খেলেই হয় !'
দুজনেই ভুত দেখার মত করে চমকে উঠল। ওরা খেয়ালই করেনি যে আরেকটা বাইক ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। যে সে বাইক নয়, পুলিশের বাইক। আর বাইকের উপর যিনি বসে তাকে দেখে গল্পর মনে হল সে দুনিয়ার সেরা সুদর্শন পুলিশটাকে দেখছে। বুকের ভিতর একটা মিশ্র অনুভূতি হল ওর। এই লোক ওদের সাহায্য করবে তো?
মিলা কাচুমাচু মুখে বলে উঠল,'আনোয়ার ভাইয়া আপনি এখানে?'
কাম সেরেছে। এ নির্ঘাত নুরুল আমিনের বন্ধু। গল্প পুরাই দমে গেল।
'তো কোথায় থাকব? সকালবেলা নুরুল ফোন করে তোমার বিয়ের দাওয়াত দিল। সময় করে বিয়ে খেতে যাব বলে কথাও দিলাম। অফিস থেকে বেরুতে যাব তোমার বিয়ে খেতে, শুনি যে তোমার বাড়িতে নাকি বোম ফুটছে! অকুস্থলে গিয়ে দেখি বোমও সেই টাইপের, খামোখাই সব ভয়ে অস্থির। আগুন লেগেছে শুনলাম। আগুনের চেয়ে ধোঁয়াই বেশি। মাঝখান থেকে লোকজন পানি ঢেলে দোতলার কিছু ঘর ভাসিয়ে দিয়েছে। তার উপর তুমি লাপাত্তা, বরও নাকি লাপাত্তা! এটাই ঠিক বুঝলামনা। বরযাত্রী নেই বর আসল কোত্থেকে?'
মিলা ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কোনওমতে গল্পর দিকে ডান হাতের তর্জনীটা তাক করল, 'ভাইয়া এইটা হল বর যাকে নুরুল ভাই ধরে এনেছে। আমি উনাকে বিয়ে করবনা।'
আনোয়ার হাঁ করে তাকাল একবার গল্পর দিকে ফের একবার মিলার দিকে। ' পরিবারের পছন্দের বিয়ে করতে না চাইলে মেয়েরা প্রেমিকের হাত ধরে পালায়, এই প্রথম দেখছি যার সাথে বিয়ে ঠিক তাকে বিয়ে করতে না চাওয়ায় তারই হাত ধরে মেয়ে পালাচ্ছে! তা বাবা তুমি কি বিয়েতে রাজি ছিলা, নাকি তুমিও রাজি নও বলেই পালাচ্ছ?'
গল্প একটা কাষ্ঠ হাসি দিল। তারপর আনোয়ারকে সব খুলে বলল। কেন জানি মনে হল আনোয়ার ওদের সাহায্য করবে।
সব শুনে আনোয়ারের হাসি আর থামেনা, এই প্রথম গল্পরও একটু একটু হাসি পেল। হাসি থামিয়ে আনোয়ার বলল, 'খুব সম্ভবত কামরুল আর মোনা ধরা পড়ে গিয়েছে। তবে যেহেতু আমার লোক আছে ওখানে, নুরুল বেশি পাকামো করবেনা। গত সপ্তাহেই ওকে বলে দিয়েছি যে আমি ওর হয়ে আর ওকালতি করতে পারবোনা। হতচ্ছাড়ার যখন যা ইচ্ছা তাই করবে! চল তোমরা, এই মিলা আমার বাইকে উঠ, আর তুমিও লক্ষ্মী ছেলের মত আমাদের সাথে চল।'
গল্প মাথা নাড়ল।'আমার ওখানকার পুলিশও আমাদেরকে খুঁজছে। অবশ্য ভুল ঠিকানায় গেছে। তবে তাড়াতাড়ি চলে আসবে আশা করছি।'
'হ্যাঁ একটা নিউজ পেয়েছিলাম বটে, কিন্তু সেটা একটা মেয়ে কিডন্যাপিং এর। মনে হয় মোনাই হবে, তবে আমাদের কাছে কেউ কোন খোঁজ নেয়নিতো তাই মাথা ঘামাইনি। এখন বুঝছি ভুল থানায় খুঁজাখূঁজি চলছে। যাক গে ভয়ে পেয়োনা। সব ঠিক হয়ে যাবে।'
গল্প একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। দু'খানা বাইক রওনা হল নীলার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.