![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজকে সারাদেশে ছাত্ররা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিতিলে যে আন্দলোন শুরু করেছে তা মুক্তিযোদ্ধাদের কিছুটা হলেও প্রাপ্প ছিল। মুক্তিযোদ্ধা যারা নিজেরাই বিভক্ত বিচ্ছিন্ন, যাদের নিজেদের মধ্যে একতা বলতে কিছু নাই তাদের এটাই প্রাপ্প। তারা আজ ঐক্যবদ্ধ হতে না পারার কারনে বুক ফুলিয়ে কিছু মানুষ নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে ফেলেছে। দিব্যি ভাতা খাচ্ছে, সুবিধা নিচ্ছে, মোটরসাইকেলের নম্বোর প্লেটে মুক্তিযোদ্ধা লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বানিজ্য করছে। আর আসল মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের কিছুটা অভিমান, কিছুটা ক্ষোভ, কিছুটা হিংসা কিছুটা দম্ভ মিলিয়ে নিজেদের কারনে সম্মান হারাচ্ছে। এতটা অভিমান ক্ষোভ হিংসা একে অপরের প্রতি যে এখন তাদের অস্তিত্ব প্রায় সংকটাপন্ন।
এ অবস্থা এর আগেও একসময় হয়েছিল বাংলাদেশে। তখন তাদের অপপ্রচারের কারনে অতিষ্ট হয়ে সাধারন মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের উপেক্ষা করতে ও ভুলে যতে শুরু করেছিল। ততকালিন সরকারের পক্ষ থেকে দমন অভিযান চালান হয়। লূকিযে যায় বহু মুক্তিযোদ্ধারা অনেকে পালিয়ে বেড়ায়। যারা ধরা পড়েছিল তাদের প্রায় খোঁড়া করে ছেড়েছিল তখনকার সামরিক বাহিনি। দেশের মানুষ প্রায় ভুলতে বসেছিল মুক্তিযুদ্ধ এবং তার প্রকৃত ইতিহাস। এই সুযোগে সুবিধাবাদি বহু মানুষ নিজেদের নামের সামনে গোপনে মুক্তিযুদ্ধা লাগিয়ে ফেলে এবং পরবর্তি বিভিন্ন সরকারের আমলে তাদের নামের সামনে মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি হালাল হয়ে যায়। দেখে লজ্জা করে, আজ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের সরকারি চাকরি হচ্ছে, সরকারি সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধা ভাতা উত্তলোন করছে, আবার গার্ড অফ অনার নিয়ে কবরে যাচ্ছে।
বার্ধক্য জনিত কারনে মৃত্যু হয়ে দেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কমে যাবার কথা। অথচ বাংলাদেশে দিন দিন যেন বেড়েই চলছে তাদের সংখ্যা। একটা কথা না বললেই নয় বিগত বিএনপি সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা যত না বেড়েছে তারচেয়ে দ্বিগুন বেড়েছে আওমী সরকারের আমলে। কিছু আসল তবে বেশীর ভাগই ভুয়া। সরকারের কিছু প্রতিশ্রুতি, কিছু উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্ত এর জন্য দায়ি। ভাতা হিসেবে যত টাকা দিচ্ছে এবং পরবর্তিতে দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে তাতে করে যে কোন মৃত ব্যক্তি কবর থেকে চিৎকার করে বলবে আমিও মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। বর্তমান সরকারের প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধা যাচাই বাছাই এর যে কার্যক্রম শুরু করেছেন তা কতটুকু সফল হবে সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে অনেক মুক্তিযোদ্ধার। কারন আসল মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কোন একতা নেই। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সংগ্রাম বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্তিত্বে উপর এবার আরও একবার আঘাত করা হলো।
বাংলাদেশে আসলে মুক্তিযোদ্ধা কতজন, তাদের সন্তান কতজন, তাদের মধ্যে কতজন লিখাপড়া করছে, কতজন চাকরি উপযোগি হচ্ছে বা হবে এসবের হিসেব নিকেশ বিবেচনা না করে দুম করে কোটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বুদ্ধিমানের পরিচয় হয়নি। এ এমন একটা সিদ্ধান্ত যা সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের মনে বিরুপ প্রভাব ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধা যে নামটা এ দেশে সম্মানের সাথে নেওয়ার কথা ছিল, ভূয়া মুক্তিযুদ্ধা ও কিছু অসাধু মুক্তিযুদ্ধার আচরন ব্যবহার বানিজ্যের কারনে তা অসম্মানে পরিনত হয়েছে। এদের সংখ্যা নেহাত কম নয়, অথচ প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধারা তাদের বিরুদ্ধ আপত্তি তুলছে না। কোথাও কোথাও আপত্তি তুললেও তা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। সরকারি পুকুর, সরকারি গাছ, চেয়ারম্যান পদ, মেম্বার পদ, রিলিফের চাল-কম্বল এমনকি মুক্তিযুদ্ধা মুক্তিযুদ্ধার টাকা আত্মসাৎ করছে এমনও খবর কানে আসে। সত্যি হোক বা মিথ্যা এমন খবর ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র বাংলাদেশে। তাহলে মুক্তিযুদ্ধাদের অস্তিত্ব এদেশে টিকে কি ভাবে?
মহান মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক হে বীর মুক্তিযুদ্ধারা আপনারা যদি আজও ঐক্যবদ্ধ না হতে পারেন, চলমান রাজনৈতিক দলগুলোর পরিচয় ছেড়ে নিজেদের পরিচয় সম্মিলিত ভাবে না দাড়াতে পারেন তাহলে সামনে আপনাদের আরও বড় বিপদের সম্মুখিন হয়তো হতে হবে। আপনারা না হলেও আমরা মুক্তিযুদ্ধা সন্তানরা নানান সমস্যার সম্মুখিন হবো। আজ দেশের কিছু বাচ্চা ছেলে-মেয়ে যাদের কোন ধারনা নেই মুক্তিযুদ্ধারা কে কি বা মুক্তিযুদ্ধ কি, তাদের মুক্তিযুদ্ধা কোটা বাতিলে আন্দলোনে গোটা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো এখন উত্তাল। এর পিছনে বড় কোন অপশক্তি থাকুক বা না থাকুক তাদের দাবিটা কিন্তু অসংগত নয়। সত্যিকার অর্থে ১০% কোটা হলেই আমাদের মত মুক্তিযুদ্ধা সন্তান খুজে পাওয়া যাবেনা সেই কোটা পূরণের জন্য।
বাংলাদেশের মানুষের অভাব নেই হয়তো, কিন্তু মানুষের লোভও কম নয়। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হিসেবে সরকার যত টাকা সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে এবং পরবর্তিতে দেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করছে বলে শোনা যাচ্ছে তাতে করে কবর থেকে মৃত ব্যক্তিও আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম বলে চিৎকার করে উঠবে। এটাকে রুখতে হবে। এসব মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই প্রতিহত করতে হবে। কারন আসল নকলের পরিচয় শুধু তারাই যানেন। নয়তো আজ মুক্তিযোদ্ধা কোটার উপর আঘাত এসেছে কাল অন্যান্য সুযোগ সুবিধা উপর যে হামলা আসবে না তার প্রতিশ্রুতি কি কেউ দিতে পারবে। না সেই প্রতিশ্রুতি আপনাদের কেউ দিতে পারবে না, কোন সরকারের পক্ষে ওই প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব না। যুদ্ধাপরাধী দমনে বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা ব্যানারটা যেভাবে ব্যবহার করছে তাতে যুদ্ধাপরাধী সমর্থিত সংগঠন গুলো আর হাত পা গুটিয়ে বসে নেই। আঘাত কেবল শুরু হয়েছে, আপনারা ঐক্যবদ্ধ না হলে এ আঘাত আরও প্রকট আকার ধারন করে আপনাদের, আমাদের এবং সারা দেশের উপর পড়বে। এখনও কি সময় হয়নি মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ হবার?
১৫/০৫/১৮ - আজাদ জয়।
©somewhere in net ltd.