স্মৃতির ঝিনুকেরা

২৭ শে জুন, ২০১৬ রাত ১:১২

কতইবা বয়স তখন, খুব সম্ভব কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। দাদার বাড়ী থেকে ঢাকা ফিরছিলাম। যথারিতী জানালার পাশে বসেছি আর আম্মা আমার পাশে। সন্ধ্যার দিকে উঠেছিলাম বাসে।একটা সময় বাসের দুলুনিতেই হোক আর ইচ্ছাকৃত ভাবেই হোক ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার কেন যেন মনে হয় জার্নি গুলো হলো সময়ের অপচয় মাত্র। রাতের বেলা বাসে বসে কিচ্ছু করার নেই,দিন হলে তাও না হয় কিছুটা সময় প্রকৃতির রুপ আস্বাদন করা যায়। তারচেয়ে ঘুমিয়ে পড়া ঢের ভালো,শরীরের বিশ্রাম হয়। তবে হে দরকারি ব্যাগ, জিনিস পত্র সেভাবে মেইনটেইন করে তবেই ঘুমানো উচিত। কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানিনা, হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলে চেয়ে দেখি, একি বিস্ময় অপেক্ষা করছে আমার জন্য!!! রাতের বিশাল কালচে ঘন নীল আকাশ নিজেকে মেলে ধরেছে আমার সামনে,আর কিচ্ছুটি নেই আশে পাশে,আমি একা। আকাশের গায়ে অযুত,নিযুত,লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রুপালি তারা,জলছে, নিভছে। কি অপূর্ব! কি অপূর্ব এই দৃশ্য! একি কোন স্বপ্নের জগৎ! নাকি আমি সত্যি দেখছি! এ কোথায় এলাম? বিষ্ময়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো হা করে চেয়ে রইলাম কিছুক্ষন। এই রুপ আমি এভাবে কখনো দেখিনি। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি কিছুটা বিহবল হয়ে পড়েছিলাম।একটু ভয় ভয়ও লাগছিল। কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো পুরো ব্যাপারখানা বুঝতে। আসলে হঠাৎ ঘুম ভাঙতেই আমার চোখ চলে গিয়েছিল বাসের জানালা দিয়ে বাইরে।আর হঠাৎ ঘুম ভাঙা মানুষের মস্তিষ্ক অনেক সময়ই সাথে সাথে কাজ করে না।বাসের ভেতরটা ছিল অন্ধকার আর বাইরে ছিল হেমন্তের ধান কাটা অবারিত দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ আর বিশাল আকাশ,দুয়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে এক বিশাল বিশালত্বের রুপ ধারন করেছিল। তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা সময় মনে হচ্ছিল আমার আশপাশে আর কিছু নেই শুধু এই আকাশ সত্যি।সে যে কি অদ্ভুত রোমাঞ্চ, বলে বোঝাতে পারব না।আস্ত আকাশখানা যেন বুকের ভিতর ডুকে গেলো, মিশে গেলো আমার আমিত্বে।আর আজো তা স্মৃতিতে বহন করছি এক অদ্ভুত সুখ স্মৃতি হিসেবে।

৪ টি +২/-০