![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি স্বাধীনচেতা, নিজের যা মনে হয় করি। কিন্ত আমার কথায় যে অন্য কেও কষ্ট পাবে এইটা কখনো ভাবি না।
বেশ পুরোনো কথা, হটাৎ মনে পরলো।
যদিও ঘটনাটির স্বার্থক নায়ক আমি নই, তবুও বুকের কোনো এক কোনে যেনো গাথা সেই স্মৃতি আজও ব্যাথা দেই।
অনেক আগের কথা আমি তখন এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে কলেজ এ প্রবেশ করলাম। মেরুদন্ডের দুপাশ দিয়ে যেন অদৃশ্য দুটি পাখা গজিয়ে উঠলো। আমি তখন আকাশে বিচরন করি, ডালে ডালে পাখির সন্ধান করি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চড়ুই পাখির সন্ধান মিলতো আর ময়না পাখি গুলো ছিলো অন্যের খাঁচায় বন্দি। তবুও কবি বলেছেন “একবার না পারিলে দেখো শতবার”।
আগাগোরাই ইংলিশ বিষয়ে আমি ছিলাম অতিব দূর্বল। সেই সুত্র ধরেই আমার পিতা আমাকে বাসার অদুরে এক ইংলিশ শিক্ষকের সন্ধান দিলেন এবং আগামী দিন থেকে সেখানে পড়তে যেতে কড়া আদেশ করলেন। আমিও সেই আদেশ সবিনয়ে পালন করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করতে শুরু করলাম। যথারীতি আগামী দিনে শিক্ষকের বাসায় উপস্থিত হয়ে পিতার আদেশ পালন করলাম।
পরদিন আবার পড়তে গেলাম। পড়ার টেবিলে বসে হা করে এপাশ ওপাশ দেখছি। প্রায় দশ মিনিট পরে দরজার ওপাশ থেকে এক মিষ্টি সুরেলা কন্ঠ ভেসে আসলো “সার, ভেতরে আসতে পারি”। আমার দৃষ্টি ওই দরজার দিকেই রয়েছে, প্রবেশ করলো এক অপরূপা কন্যা। আমি শুধুই চেয়ে রইলাম। ভালবাসার দেবতা যেন একটা নয় দশ দশটা তীর আমাকে উদ্দেশ্য করে ছুরে বললো “তোর সময় হয়ে এসেছে, আর অপেক্ষা নয়”
এর পরদিন থেকেই আমি পুরোনো রেকর্ড ভেঙ্গে নিয়মিত পড়তে যাওয়া শুরু করলাম, বাবা-মা খুব খুশি... পড়তে যাই আর সেই মেয়ের দিকে শুধুই চেয়ে থাকি, সারারাত তাকে নিয়েই ভাবি। এভাবেই রাত-দিন কাটতে থাকে আর পরিক্ষার সময় ও ঘনিয়ে আসতে থাকে। পরিক্ষার দিন গুলো অনেক কষ্টে কাটাই, সে সময়ে তাকে দেখার আকুলতা যে কি তীব্র ছিলো তা শুধু আমিই বুঝতাম।
পরিক্ষা শেষ, আমি তো মহা খুশি যে তাকে আবার দেখবো। যথাসময়ে সার এর বাসাই উপস্থিত হলাম। কিছুক্ষন পরেই আমার স্বপ্নের রাজকন্যা আসলো। আজ প্রথম সে আমার দিকে তাকালো। আমার বুকের ভেতর যেনো সাইক্লোন বয়ে যাচ্ছে। এভাবে পুরো সময়টা জুড়েই চললো দৃষ্টি আদান প্রদান। পড়া শেষ করেই সার এর বাসার প্রধান ফটকের বাইরে যেতেই পেছন থেকে কে ডাকলো মনে হোলো। আমি পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি সে দাঁড়িয়ে,
বলে “তোমাকে ডাকছি শুনতে পাও না?” আমি নির্বাক হয়ে শুধু চেয়ে রইলাম।
সেঃ আমি অধরা, তুমি নিশ্চয় কিন্নর?
আমিঃ হ্যা, তুমি আমার নাম জানো কিভাবে?
অধরাঃ নাম জানাটা অসম্ভব কিছু না, যেনেছি কোনোভাবে।
আমিঃ তোমাকে আগে কখনো দেখিনি, কোন স্কুলে ছিলে তুমি?
অধরাঃ আমরা তো সিলেটে থাকতাম, আব্বু এখানে ট্রান্সফার হয়ে এসেছে তাই........
আমিঃ ও এই জন্য........... !!!! আমি তো ভেবেছিলাম তুমি অনেক ভাবিস্ট। কারো সাথে কথা বলো না।
অধরাঃ আরে না না। আমি একটু সমস্যায় ছিলাম তাই কথা বলতে পারিনি এ ক’দিন। আচ্ছা আজ আসি, আগামিদিন পড়তে এসো কিন্তু।
আমিঃ অবশ্যই।
এ ছিলো আমাদের প্রথম কথোপকথন তাই উল্লেখ করলাম আর কি...............
এভাবে প্রতিদিন আমাদের কথা হতো, আস্তে আস্তে আমরা অনেক ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। একে অন্যের খবর নিতাম, পড়ার সময় টেবিলের নিচে চলতো আমাদের লেগ-ফাইট। কেটে গেলো চারটা মাস।
মনে মনে তাকে ভালোবেসে ফেললাম, কিন্তু বলতে পারি না। সারাদিন ভাবি কিভাবে বলবো। সামনে যাই আর সব ভুলে যাই। সাহস পাই না, যদি সে বন্ধুত্ব শেষ করে দেয়। সব সময় একটা ভয় কাজ করে। শেষ পর্যন্ত একদিন হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে......
আমিঃ অধরা......
অধরাঃ বলো।
আমিঃএকটা কথা বলবো
অধরাঃ বলো শুনি।
আমিঃ আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি।
অধরাঃ ভালো তো। কে সেই দুর্ভাগ্যবতি
আমিঃ এই ব্যাগটার ভেতরে তার ছবি আছে, তুমি প্লিজ আমাকে একটু হেল্প করো।
অধরাঃ আরে দেখি তো আগে সে কে তারপর না হয় যা করার করা যাবে।
ব্যাগটা সে হাতে নিয়ে ফ্রেমটা বের করে।
অধরাঃ এই! এটা তো একটা আয়না। ছবি কোথায়।
আমিঃ ছবি তো এই আয়নাতেই দেখতে পাচ্ছো।
অধরাঃ এখানে তো আমি আমাকে................
বলে সে উঠে চলে যায়।
তারপর সে সার এর বাসায় আসা বন্ধ করে দেয়। আর আমি তার অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকি। অনেক দিন হলো আর সে আসে না।আমি হতাশ হয়ে যাই এটা ভেবে, যদি তার আমার কথা খারাপ ও লাগে সে আমাকে বলতে পারতো। আমি তাকে জোর করতাম না নিশ্চয়। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম বলে বোঝানো সম্ভব না।
অনেক দিন কেটে গেল। কলেজের মাঠে বসে আছি। একটা মেয়েকে দেখলাম আমার দিকেই আসছে। হ্যা সে ঠিক আমার দিকেই আসছে। আমার সামনে এসে সে দাড়িয়ে, “ভাইয়া, আপনি কি কিন্নর?”
-হ্যা, আমি কিন্নর, জি বলুন।
-ভাইয়া, আসোলে আমাকে অধরা পাঠিয়েছে, সে আপনাকে দেখা করতে বলেছে।
-কোথায়?
-তার বাসায়।
-তাকে বলো আমি তার সাথে দেখা করতে পারবো না।
-না, ভাইয়া। সে খুব অসুস্থ্য। সে আপনার সাথে দেখা করতে চায়।
আমি আর নিজেকে বাধা দিতে পারলাম না বলেই ফেললাম.............
-আচ্ছা ঠিক আছে, কাল যাবো।
-আচ্ছা ভাইয়া আসি।
-হুম।
পরদিন তার বাসাই গেলাম, কলিং বেল এ চাপ দিতেই দরজা খুললো অধরার বাবা। জানতাম মেয়েদের বাবাদের সামনে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। অবাক হলাম এরকম কিছুই আমার সাথে হলো না।
আমিঃ অধরা বাসাই নেই, আমি অধরার বন্ধু কিন্নর।
অধরার বাবাঃ হ্যা, তোমার কথা সে সব সময় বলে। সে তো খুব অসুস্থ্য, পাশের ঘরেই আছে। যাও দেখা করো।
আমি কিছুটা অবাক হলাম, আজকাল এমন পরিবার খুব কম দেখা যায়।
অধরার ঘরে প্রবেশ করলাম, দেখি সে শুয়ে আছে। আমাকে দেখে তার মুখে মৃদু হাশি দেখে সুখ অনুভব করলাম।
আমি দাড়িয়ে ঠিক তার বিছানার পাশেই। আমাকে সে পাশে বসতে বললো।
আমিঃ বন্ধুকে ভুলেই গেছো, তাই না?
অধরাঃ আমি তোমাকে ভুলিনি, ভুলবো না কখনো।
আমিঃ অসুস্থ্য হয়েছো, একবার তো জানাতে পারতে। আমি তো ভেবেছিলাম...........
অধরাঃ কি? আমি তোমার সাথে দেখা করবোনা তাই এমন করেছি?
আমিঃ তা নয়তো কি.........
মান-অভিমান চললো।
আমিঃ কি হয়েছে তোমার?
অধরাঃ তেমন কিছু না, জ্বর।
আমিঃ ঠিক মত ওষুধ খেয়ে তারাতারি সুস্থ্য হও, তোমার সাথে আমার হিসেব-নিকেষ আছে।
অধরাঃ কিন্নর, আমার হাতটা একটূ ধরবে।
আমি তার হাত ধরলাম, হাতদুটো শিতল হয়ে আছে। তার চোখে বেয়ে অশ্রু নেমে আসতে দেখে আমি নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। কেঁদে ফেললাম।
অধরাঃ এই পাগল, কাঁদছো কেনো?
আমিঃ তোমার চোখে অশ্রু দেখে।
অধরাঃ আমাকে খুব ভালোবাসো তাই না?
আমিঃ জানি না।
অধরাঃ আমি তোমাকে একটুও ভালোবাসি না।
আমিঃ জানি।
অধরা আবার কাঁদছে। আমি তার কান্নার অর্থ খুঁজে পেলাম না। আমি তার কান্না থামাতে পারলাম না,শুধু তার চোখ বেয়ে নেমে আসা জল মুছে দেয়া ছাড়া। আমার যাবার সময় হয়ে আসলো।
আমিঃ আমাকে যেতে হবে।
অধরাঃ হ্যা, আমি বেধে রাখবো না। এইটা নিয়ে যাও
আমিঃ কি এইটা?
অধরাঃ একটা চিঠি, এখন খুলবে না.......... কথা দাও তুমি এইটা ১৫ দিন পরে খুলে দেখবে।
আমিঃ কথা দিলাম।
বিদায় নিলাম, আমি রুম থেকে বের হওয়া পর্যন্ত সে আমার দিকে চেয়ে ছিলো আমি বুঝলাম যখন আমি পেছন ফিরে তাকে দেখলাম।
৫ দিন কেটে গেলো। অধরার কোনো খবর নাই। তার বাসাই শেষ পর্যন্ত গেলাম। গিয়ে শুনি তার বাবা ট্রান্সফার হয়ে ঢাকা চলে গেছে, সাথে পুরো পরিবার। নিজেকে সার্কাসের জোকার মনে হলো। রাগে মাথা খারাপ হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলাম, তাকে তো আর পাবো না তার বান্ধবীদের কাও কে পেলে আচ্ছা মতো অপমান করব।
২-৩দিন পর তার এক বান্ধবীকে দেখি বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছে। দৌড়ে বাসা থেকে অপমান করার প্রিপারেশন নিয়ে বের হলাম। মেয়েটাকে রাস্তায় দাড় করালাম। বলেই ফেললাম, “তুমিও কি তোমার বান্ধবীর মত?”
মেয়েটাঃ কেনো?
আমিঃ তোমার সেই বান্ধবী আমার সাথে কি করেছে তুমি জানো না, জানলে সুন্দর করে এই কেনো টা বলতে পারতে না...
মেয়েটাঃ আসোলে ভাইয়া, অধরার খবর আপনি হয়তো জানেন না।
আমিঃ কি আর জানবো, যা জানার তা তো জেনেই ফেলেছি।
মেয়েটাঃ অধরা আর নেই।
আমার আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না, বাসাই ঢুকে পরে কি করেছি আমি জানি না। পরে শুনেছি পাগলের মত আচরন করেছি সবার সাথে। ধিরে ধিরে আমি অনেক অসুস্থ্য হয়ে পরলাম।দির্ঘ্য দুই মাস পর আমি সুস্থ্য হই। চিঠিটার কথা মনে পরে, একসময় চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করি.........
(আংশিক)
কিন্নর,
আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালবাসো। সত্যি কথা বলতে আমিও তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু একটাই বাধা যা আমাকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে তোমার কাছে থেকে। তোমাকে অনেক কাছে পেতে ইচ্ছে হয়েছে, চেয়েছি আপন করে নিতে কিন্তু সব কিছুর পরেও কেনো আমি পারিনি? জানতে ইচ্ছে করছে তাই না?
আমার ব্লাড ক্যান্সার আছে। আর হয়তো বেশিদিন বাচবো না। বেচে গেলে তো আমি তোমারি হবো। তোমাকে কাউকে পেতে দিবো না। দেখো কি পাগলের মত লিখছি। জানি আমার সময় খুব কম।
ভালো থেকো।
অধরা
-------------------------------------------------------------------------------------------
অনেক দিন পার হয়ে গেছে। আজ জানি না কেনো কাঁদতে পারছি না ।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৩:৩০
অগ্নিবলয় বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৩:০৭
ধ্রুবমেঘ বলেছেন: ঘটনা কী সত্যি নাকি ভাইয়া?
সমবেদনা রইল।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৩:৩০
অগ্নিবলয় বলেছেন: জানি ঘটনাটি অনেকেই বিশ্বাস করবে না......। তবুও বলি..... এটা সত্য।
আপনাকে ধন্যবাদ
৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:১৫
তাশফিকাল বলেছেন: আপনার কাহানি সত্য না মিথ্যা জানি না, তবে সমবেদনা রইল...
আ হ্যা, আপনার লেখা কিন্তু বেশ।+
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:৫৮
অগ্নিবলয় বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:৫৭
অদ্বিতীয়া সিমু বলেছেন: +
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ২:২০
অন্ধকার বলেছেন: বেশ...