ছহিবুত তাক্বওয়া, ছহিবুল ঈমান, কারিহুল কুফরী, আস সাবিকু, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খলীফা মনোনীত হওয়ার সঠিক ইতিহাস

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৩৪

আজ অতিবাহিত হলো পবিত্র ১৮ই যিলহজ্জ ১৪৩৪হিজরী তারিখ। এই দিনে ইসলাম উনার তৃতীয় খলীফা ছহিবুত তাক্বওয়া, ছহিবুল ঈমান, কারিহুল কুফরী, আস সাবিকু, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিছাল (ওফাত মুবারক) শরীফ গ্রহণ করেন।

অথচ আমাদের জন্য আফসুস! আমরা ক'জন মুসলমান এ বিষয়টি জানি? উচিত ছিলো এ পবিত্র দিনটিতে মাহফিলের আয়োজন করা, উনার জীবনী মুবারক আলোচনা করা, মীলাদ শরীফ পাঠ করা, তাবারুকের ব্যবস্থা করা। সত্যিই আমাদের জন্য আফসুস!



খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খলীফা মনোনীত হওয়ার ইতিহাস নিয়ে অনেক রকম বক্তব্য প্রচলিত রয়েছে, এখানে আমরা দলীল সহকারে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশা'আল্লাহ।



আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করার পূর্বে অর্থাৎ আহত অবস্থায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা আরজ করলেন উনার পরবর্তী খলীফা মনোনীত করার জন্য। তখন তিনি বললেন, আমি ছয় জনের নাম মুবারক ঘোষণা করে যাচ্ছি। উনাদের মধ্য হতে যে কোনো একজনকে তিন দিনের মধ্যে খলীফা হিসেবে মনোনীত করতে হবে।

উল্লেখিত ছয়জন হচ্ছেন- হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

স্মরণীয় যে, উপরোক্ত ছয়জনই ছিলেন, “আশারায়ে মুবাশশারার” অন্তুর্ভুক্ত। উল্লেখিত ছয় জনের নাম মুবারক ঘোষণা করে ফারূক্বে আ’যম হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দায়িত্ব দিলেন তিন দিনের মধ্যে যে কোনো একজনকে খলীফা মনোনীত করার জন্য।

যেহেতু সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পর খলীফা হবেন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, অতঃপর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম। যেমন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,

ان حضرت ابا بكر عليه السلام يلى من بعدى ثم حضرت عمر عليه السلام من بعده ثم حضرت عثمان عليه السلام من بعده ثم حضرت على عليه السلام من بعده

অর্থ: “আমার পবিত্র বিছাল শরীফ মুবারক উনার পর প্রথমে খলীফা হবেন ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম, অতঃপর ফারূক্বে আ’যম হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম, তারপর হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, অতঃপর হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।” (গুনিয়াতুত ত্বলিবীন ১ম খ- ১৫৯ পৃষ্ঠা, মাকতুবাত শরীফ)

তাই উনারা উল্লেখিত পাঁচ জনের মধ্য হতে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে খলীফা হিসেবে মনোনীত করেন।

আর দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনোনীত হন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। যার ফলশ্রুতিতে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করার পর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি খলীফা হিসেবে সম্মানীত খিলাফত মুবারক গ্রহণ করেন।

দশম হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘তারীখুল খুলাফাতে’ এবং দ্বাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘ইযালাতুল খফাতে’ উল্লেখ করেন, ফারূক্বে আ’যম হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার দাফন মুবারক সম্পন্ন করে উল্লেখিত ছয়জন পরামর্শে বসে গেলেন।

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনারা মিলে এ ব্যাপারটি তিন জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে নিন। হযরত যুবায়ের ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি আমার দায়িত্ব হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার অনুকূলে পরিত্যাগ করলাম। হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি আমার দায়িত্ব হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার অনুকূলে ছেড়ে দিলাম। হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি আমার দায়িত্ব হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর অর্পণ করলাম। তখন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অপর দু’জনকে অর্থাৎ হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম এবং হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদেরকে বললেন, আপনাদের দু’জনের কে সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার দাবি ছেড়ে দিতে পারেন, যাঁর হাত মুবারক-এ আমি খলীফা মনোনীত করার দায়িত্ব দিতে পারি? তিনি আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি দৃষ্টি রেখে উত্তম ব্যক্তিকে খলীফা মনোনীত করবেন। হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম এবং হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনারা উভয়ই চুপ থাকলেন। (কারণ উনারা চেয়ে ছিলেন, যেহেতু হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি স্বয়ং হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে খলীফা মনোনীত করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তাই হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিই যেন খলীফা মনোনীত করেন। আর হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এই বিষয়টিও জানা রয়েছে যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পর খলীফা হবেন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম। অতঃপর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তখন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার দাবি ত্যাগ করলাম। আপনারা আমার উপর বিষয়টি ছেড়ে দিন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে সাক্ষী রেখে আপনাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত হকদার ব্যক্তিকে খলীফা মনোনীত করবো। তখন উনারা দু’জন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রস্তাব মেনে নিলেন। সাথে সাথে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক ধরে বললেন, আপনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটাত্মীয় এবং আপনি প্রথম পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনাকে সাক্ষী রেখে আমি আপনার কাছ থেকে এ প্রতিশ্রুতি মুবারক নিচ্ছি যে, আমি যদি আপনাকে খলীফা মনোনীত করি, তাহলে আপনি তা পবিত্র ইনসাফ উনার সাথে সম্মানিত খিলাফত মুবারক পরিচালনা করবেন। আর যদি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে খলীফা মনোনীত করি তাহলে আপনি অবশ্য অবশ্যই উনার কথা মতো চলবেন এবং উনাকে ইতায়াত তথা অনুসরণ-অনুকরণ করবেন। জবাবে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই আমি তা করবো। অতঃপর তিনি হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক ধরে একই প্রতিশ্রুতি মুবারক নিলেন। যখন উভয়ের প্রতিশ্রুতি মুবারক নেয়া শেষ হলো, তখন তিনি বললেন, হে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম! আপনি আপনার হাত মুবারক প্রসারিত করুন। হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হাত মুবারক বাড়ালেন। প্রথমে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার হাত মুবারক-এ বাইয়াত হলেন। (যেহেতু সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পর খলীফা হবেন হযরত যুন নূরাইন আাইহিস সালাম)।

অতঃপর হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বাইয়াত হলেন। অবশেষে সব মুসলমানগণ উনারা দলে দলে এসে বাইয়াত গ্রহণ করলেন। (ইযালাতুল খফা, তারীখুল খুলাফা ১০৭ নং পৃ

ষষ্ঠ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, হযরত বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘গুনিয়াতুত ত্বলিবীন’-এ উল্লেখ করেন, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম এবং হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদেরকে প্রস্তাব করলেন। তিনি বললেন, আমি মহান আল্লাহ পাক, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সমগ্র মুসলমানদের দিকে চেয়ে আপনাদের কোনো একজনকে খলীফা মনোনীত করবো। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক নির্দেশ মুবারক মুতাবিক, উনাদের ইচ্ছা অনুযায়ী আপনাদের দু’জনের একজনকে খলীফা মনোনীত করবো। (কেননা সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পরে খলীফা হবেন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, অতঃপর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম)।

একথা বলেই তিনি প্রথমেই হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক ধরে বললেন, হে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম! আপনার উপর মহান আল্লাহ পাক প্রদত্ত জিম্মাদারী ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিম্মাদারীর রক্ষণাবেক্ষণ করা অবশ্য কর্তব্য। আমরা আপনার হাত মুবারকে বাইয়াত হওয়ার পর আপনাকে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি এবং মুসলমানদের ভালাই ও কল্যাণ কামনায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। আর আপনাকে নূর মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাদের চরিত্র মুবারক অবলম্বন করতে হবে। (যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুতি মুবারক নিয়েছিলেন যে, উনার পবিত্র বিছাল শরীফ মুবারক উনার প্রথমে খলীফা হবেন হযরত ছিদ্দীক্ব আকবর আলাইহিস সালাম, তারপর হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম, অতঃপর হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, তারপর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম।) (গুনিয়াতু ত্বলিবীন)

তাই হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার দায়িত্ব মুবারক এড়িয়ে যাওয়ার কোশেশ করলেন। অতএব, তিনি হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রস্তাবে সাড়া প্রদান করা থেকে বিরত থাকলেন। অতঃপর হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক ধরে অনুরূপ প্রস্তাব পেশ করলেন। (যেহেতু সম্মনিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পর হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি খলীফা হবেন। তাই) তিনি উক্ত প্রস্তাব মুবারক কবুল করলেন এবং হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সঙ্গে সঙ্গে উনার হাত মুবারক-এ বাইয়াত মুবারক গ্রহণ করলেন। পরের দিন বাইয়াতে আম অনুষ্ঠিত হলো।

হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ করেন, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করার পর মুসলমানগণ উনারা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফ-এ প্রবেশ করতঃ সংবাদ দিলেন যে, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করা হয়েছে। এখন মুসলমান উনাদের জন্য খলীফা উনার প্রয়োজন আমাদের মতে আপনি ছাড়া অপর কোনো দ্বিতীয়জন নেই যে, বর্তমানে খলীফা হবেন। হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনারা আমাকে খলীফা মনোনীত করার খেয়াল ত্যাগ করুন। আমি খলীফা হওয়ার চেয়ে আপনাদের জন্য পরামর্শদাতা হওয়া ভালো মনে করি।

দশম হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব “তারীখুল খুলাফাতে” উল্লেখ করেন, হযরত আবূ ওয়াইল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললাম, আপনারা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে বাদ দিয়ে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে খিলাফত মুবারক উনার বাইয়াত গ্রহণ করলেন? তিনি বললেন, এখানে আমার ত্রুটি কোথায়? এখানে আমার কোনো ত্রুটি নেই। আমি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দ্বারাই শুরু করেছিলাম। আমি উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলাম, আমি কি কিতাবুল্লাহ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সীরাতে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম ও হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম অনুযায়ী আপনার হাত মুবারক-এ সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার বাইয়াত মুবারক গ্রহণ করবো? জবাবে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যখন আমার পক্ষে তা সম্ভব হবে। (অর্থাৎ এখন নয়, এখন আপনারা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক-এ খিলাফত মুবারক উনার বাইয়াত গ্রহণ করুন। কেননা আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট এই প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন যে,

اِنَّ حَضْرَتْ اَبَا بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَـــلِـىْ مِنۢ بَعْدِىْ ثُـمَّ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنۢ بَعْدِهٖ ثُـمَّ حَضْرَتْ عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنۢ بَعْدِهٖ ثُـمَّ حَضْرَتْ عَلِـــىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنۢ بَعْدِهٖ.

অর্থ: “আমার বিছাল শরীফ মুবারক গ্রহণ করার পর প্রথমে খলীফা হবেন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম, অতঃপর ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম, তারপর হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, অতঃপর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।” (গুনিয়াতুত ত্বলিবীন ১/৫৯, াকতুবাত শরীফ)}

অতঃপর আমি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট অনুরূপ আরজ করলাম। তিনি জবাবে বললেন, হ্যাঁ। অর্থাৎ আপনি সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার বাইয়াত মুবারক গ্রহণ করুন। (তারীখুল খুলাফা/১২২, আহমদ)

সুতরাং উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে এই বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, তৃতীয় খলীফা, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনিসহ হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা কেউ গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে খলীফা নির্বাচিত হননি; বরং উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক খলীফা মনোনীত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! এরপরেও কেউ যদি উনাদের প্রতি এরূপ কুফরী অপবাদ দেয় যে, উনারা কাফিরদের প্রণীত গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে খলীফা নির্বাচিত হয়েছেন, তাহলে সেটা কাট্টা কুফরী ও চিরজাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে। তাই তাদেরকে খালিছ তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।

আর তৃতীয় খলীফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনিসহ হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক খলীফা মনোনীত হয়েছেন এবং সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করেছেন, তাই প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা উনাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে কাফিরদের প্রণীত গণতন্ত্র এবং নির্বাচন বাদ দিয়ে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে অনুসরণ করে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক উনার জন্য কোশেশ করা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমাদের উপর আমার সুন্নত মুবারক এবং আমার হিদায়েতপ্রাপ্ত হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র সুন্নত মুবারক লাজিম বা আবশ্যক করে দেয়া হলো। তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধরো।” (আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ, মিশকাত)

যদি এই দেশবাসী দেশের চলমান সঙ্কট ও সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে চায়, তাহলে তাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে- কাফিরদের প্রণীত গণতন্ত্র এবং নির্বাচন বাদ দিয়ে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে অনুসরণ করে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক উনার জন্য কোশেশ করা এবং খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারক-এ জমায়েত হওয়া ও উনার সম্মানিত হাত মুবারক-এ সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক উনার বাইয়াত গ্রহণ করা। তবেই তারা দেশের চলমান সঙ্কট ও সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে চির মুক্তি লাভ করতে পারবে। অন্যথায় কস্মিনকালেও তা সম্ভব হবে না।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের এদেশবাসীকে ছহীহ সমঝ দান করুন। (আমীন!)

০ টি +০/-০