নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছাইয়ের নেই আগুনের ভয়

জুলিয়ান সিদ্দিকী

জগতের সব কাজই আমি পারি না। অনেক কাজে অলস হলেও লিখতে কখনও ক্লান্তি বোধ করি না। এতে করে আমার সময়গুলো ভালো কাটে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতীতচারী

২১ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:০৬





বৃষ্টি পড়ছে আর সেই বৃষ্টির জল অঙ্গের সামান্যতম ছুঁয়ে যায় নি বা ঠাণ্ডা আর অদ্ভুত এক শিহরণ মেশানো সে জলে কখনো হাত বাড়ায় নি এমন কোনো ঘটনার কথা মনে করতে পারে না সিতিমা। এখনও তার মন বলছিল এক ছুটে গাছের তল থেকে বেরিয়ে গিয়ে ঝুম বৃষ্টির ভেতর চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। মাথা থেকে অথবা চোখ গাল বেয়ে ঝরতে থাকা সে জলের কিঞ্চিৎ দু ঠোঁটের ফাঁকে আটকে গেলে সুরুৎ করে মুখের ভেতর টেনে নিয়ে তার স্বাদ নিতে বড্ড উতলা হয়ে উঠতে থাকে মনে মনে। কিন্তু হাতের কাগজে মোড়ানো প্যাকেটটার কথা ভেবে অনেক কষ্টে দমিয়ে রেখেছিল নিজের ইচ্ছেটুকু। মনে মনে ভাবছিল প্যাকেটটা কোথাও নিরাপদে রাখতে পারলে হয়তো ইচ্ছেটুকু অপূর্ণ থাকতো না। এমন অবিরাম ধারা কি আর সব সময় বর্ষিত হয়? যেন ঈশ্বর তার ঝাঁঝরিটার নল পুরোটাই আজ কাত করে দিয়েছেন পৃথিবীর ওপর।



মাথার ওপরকার বিশাল বর্ষাতি গাছটা এভাবে অঝোর বৃষ্টি কতক্ষণ ঠেকাতে পারবে বা কতক্ষণ নিজেকে বা হাতের প্যাকেটটিকে শুকনো রাখতে পারবে তা নিয়ে খানিকটা উদ্বিগ্নও ছিল সিতিমা। ঘণ্টা খানেকের ভেতর বাড়িতে পৌঁছুতে না পারলে অনেক কথা শুনতে হবে। তা ছাড়া এমনিতেই বেশ বিরক্ত ছিল সে নিজের ওপর। যে মেয়ের আজ বিয়ে হবে কোন মা তাকে কাজে পাঠায়? তাও আশপাশ নয় একেবারে চল্লিশ কিলোমিটার দূরের আত্মীয় বাড়ি। আসতে যেতে পথে কত সমস্যা হতে পারে। গাড়ির রাস্তায় হতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। আচ্ছা সে না হয় দৈবের হাতে আছে বলে নিয়ম করে ঘটে না। এই যে এখন এমন একটা বৃষ্টির দিনে পাথরের মতো জমে দাঁড়িয়ে আছে গাছের মোটা ডালের নিচে, তার ইচ্ছেটাকে কি এভাবেই নিয়তির হাতে ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার মানে হয়? এখন যদি আশপাশে কোথাও থাকতো গুণ পুরের শাহিন অথবা সেই কৈশোরের দিনগুলোতে যেমন প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সেঁটে থাকতো ছায়ার মতো তাহলে তাকে মোটেও ভাবতে হতো না। অনায়াসে প্যাকেটের দায়ভার তার ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে নিজের কাজ করতে পারত। ছেলে না হওয়ার এই একটি অসুবিধা। মন মতো অনেক কিছুই করা যায় না। আবার মন না চাইলেও বাধ্য হয়ে করতে হয় অনেক কিছু। আহা, শাহিন আজকাল কেমন আছে? কথাটা মনের ভেতর নড়ে উঠতেই যেন বর্তমান থেকে হঠাৎ সে খসে পড়ে অতীতের গহ্বরে। যে শাহিন প্রায়ই বলত, দেখিস বড় হলে আমিই তোকে বিয়ে করব। মাকেও বলেছি এ কথা। অথচ তার প্রথম বিয়ের জীবন অতীত হয়ে দ্বিতীয়বার বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন হতে চলেছে তবু শাহিন যেন আজও সুদূরের মরীচিকা।



হঠাৎ মাথার তালু বরাবর সর সর করে কিছু পড়তেই খানিকটা লাফিয়ে সরে যায় সিতিমা। আর তখনই আরো কিছু জল তার মাথা হয়ে গড়িয়ে পড়ে নাকের ওপর। মুহূর্তেই ঘোলা হয়ে যায় চশমার কাচ। অসাবধানে মাথার ওপরকার আচ্ছাদনের বাইরে বেরিয়ে এলে পিঠের কাছে বেশি কিছু অংশ ভিজে যায় বৃষ্টির ছাঁট এসে। হাতের প্যাকেটটা আঁচলের নিচে লুকিয়ে ফেলার মতো ধরে রেখে সে একবার মাথা তুলে তাকায় ওপরের দিকে। কিন্তু পরিষ্কার কিছুই দেখতে পায় না। চোখে চশমা রেখেই সে একবার চেষ্টা করে আঁচলের প্রান্ত দিয়ে কাচ পরিষ্কার করতে। ফল তেমন একটা সুবিধার না হলেও সে দেখতে পায় অনেকটা। একটা রিকশা বা অটো হলেও সে চলে যেতে পারত বাড়িতে। এমন ধুম বৃষ্টির সময় রিকশা বা অটো কিছুই দেখতে পায় না সে। অন্যান্য দিন এখানেই কত রিকশা বা অটোঅলা ডাকাডাকি করে। সামনের চায়ের দোকানে দুটো মাঝ বয়সী লোক দেখা যাচ্ছে। তার মাঝে একজন চেয়ারের ওপর দু পা তুলে হাঁটু মুড়ে জবুথবু হয়ে থাকার ভঙ্গিতে বসে আছে। সিতিমা আগেও অনেকবার দেখেছে লোকটিকে। কখনো রিকশা কখনো বা অটো চালাতে। আজ লোকটার যেন কিছুই করার নেই। দৃষ্টিতে একরাশ হতাশা বা বিষণ্ণতা উপচে পড়ছে মনে হয়। এমন মন খারাপ করা চেহারা পছন্দ নয় সিতিমার। তাই ইচ্ছে করেই সে দৃষ্টি ফেরায় সেদিক থেকে। তখনই যেন লোকটির দৃষ্টি পড়ে সিতিমার ওপর। অবাক করা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ দেখে তাকে। হয়তো বা দূর বলে তাকিয়ে থেকে চিনতে চেষ্টা করে। হয়তো বা চিনতে পারে বা এমনিই বৃষ্টিতে আটকে পড়া নারী ভেবেই হাত তোলে তাকে উদ্দেশ্য করে। লোকটির হাত নড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা ক্ষীণ স্বর ভেসে আসে, আম্মা!



সিতিমা নিশ্চিত হতে তাকিয়ে থাকে লোকটির দিকে। হ্যাঁ। তার উদ্দেশ্যেই হাত নাড়ছে। আম্মা বলে ডাকছেও। লোকটির ডাকাডাকিতে একেবারে চুপচাপ থাকা সম্ভব হয় না তার। কিছু একটা তারও বলা উচিত। নারী বলেই নয় কেবল, ছোটবেলা থেকেই তার কণ্ঠস্বর বেশ নিচু। লোকটির ডাকের জবাব দেবার মতো জোরালো স্বর তার কণ্ঠ চিরে বের হবে না। শাহিন বলতো, তুই বউ হলে খুব সুবিধা হবে আমাদের। গলা তুলে কখনো ঝগড়া করতে পারবি না! আমাকে খারাপ কিছু বললেও অন্য কেউ শুনতে পাবে না।



কথাটি মনে পড়তেই হাসি হাসি হয়ে ওঠে সিতিমার মুখ। সে অবস্থাতেই একটি হাত তুলে আঙুল নাচায় সে লোকটির উদ্দেশ্যে। তখনই হাতে ছাতা নিয়ে বের হতে দেখা যায় লোকটিকে। মাথায় গামছা দিয়ে তার ওপর মেলে ধরে ছাতাটি। প্রায় দৌড়তে দৌড়তে কাছে এগিয়ে এসে লোকটি বলল, নেন আম্মা। ছাতাটা মাথায় দিয়ে দোকানে চইলে আসেন। বৃষ্টি কইমে গেলি বাড়িত চইলে যায়েন। পরে এক সোমায় গিয়ে ছাতাডা নিয়ে আসবোনে।



সিতিমার ইতস্তত করার সময়টুকুও অপেক্ষা করে না লোকটি। ছাতাটা তার মাথার ওপর ধরেই বলল, ধরেন!



কিছু না বুঝে ছাতার ডাটটিকে মুঠোর ভেতর চেপে ধরতেই দেখা যায় লোকটি মাথার গামছা এক হাতে চেপে ধরে দোকানের দিকে ছুটে যাচ্ছে।



সিতিমা ছাতা মাথায় সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। দোকানের দিকে যেতে যেতে তার মাথাটা ছাড় শরীরের বাকি অংশ ভিজে যাবে। এখান থেকেই সে দেখতে পাচ্ছিল সেই লোকটির পিঠ ভিজে গিয়ে গেঞ্জিটা লেপটে গেছে। গামছা দিয়ে নিজের শরীর মুছতে মুছতে লোকটি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। হয়তো মনে মনে বিরূপ কিছু ভাবে তার সম্পর্কে। ভাবলে ভাবুক। দুজনের ভাবনা এক হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সিতিমা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ করেই কড়াৎ শব্দে বাজ পড়ে আশপাশে কোথাও। দোকান থেকে লোকটি একবার বাইরের দিকে মুখ বাড়ায়। হয়তো তাকেই দেখে কিংবা দেখে আকাশ আর বৃষ্টির পরিস্থিতি। লোকটি ফের দোকানের ভেতরের দিকে চলে গেলে সিতিমা একবার চেষ্টা করে ছাতা ধরা হাতটা মুক্ত করে সে হাতে প্যাকেটটা নিতে। এক সময় কাঁধ আর থুতনির সাহায্যে ছাতাটাকে আটকে রেখে হাত বদল করে প্যাকেটটা। তখনই কাঁধের দিকটা কেমন ব্যথা ব্যথা করে ওঠে।



অন্য হাতে ছাতাটা ধরে বিরক্তি মাখা চোখে তাকায় প্যাকেটটির দিকে। কী এমন আহামরি একটা জিনিস মখমলের চাদর। মেয়ে তো বিয়ে দিচ্ছে না যেন কাঁধের বোঝা তাড়াচ্ছে। বিরক্তিটা হঠাৎ করেই যেন রাগের দিকে মোড় নেয় আর তা গিয়ে পড়ে মায়ের ওপর। একবার তো বেশ ধুম ধাম করে বিয়ে দিয়েছিল, কই সে বিয়েটা তো টিকলো না। কোনো সম্পর্ক টিকাতে হলে কেবল একজনকেই ভাল হলে চলে না। দুজনকেই সমান সমান হতে হয়, নয়তো ভারসাম্য থাকে না। কয়েকবার এমন কথা সে মাকে বোঝাতেও চেষ্টা করেছিল। মা উলটো বিরক্ত হয়ে বলেছে, তুই আমার সঙ্গেও মাস্টারি দেখাচ্ছিস? হায়রে জননী, কন্যাকে গর্ভে ধরে জন্ম দিতে পারলে, অথচ কন্যাটিকে বুঝতে চেষ্টা করলে না একটিবার। কেমন মা তোমরা? আর মখমলের চাদরে বসালেই কি খারাপ মানুষ ভাল হয়ে যাবে আর পাটিতে বসালে ভাল মানুষটি খারাপ হয়ে যাবে? আর বিয়েও তো তেমন বিয়ে হচ্ছে না। দায় সারা বিয়ে বলে এবার পাত্রের চালচুলো বা বয়সের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি সিতিমা। মা তাকে বলেছিলেন, তুই একবার দেখবি না?



সিতিমা বলেছিল, দেখে কি মানুষের ভেতরটা বুঝতে পারব?



- ছাওয়াল আমাগেরই আশপাশের হলিও তোর নিজের একটা পছন্দ থাকবে না?

- থাকলে তো বলতাম। তোমরা যাকেই ঠিক কর অমত করব না। কেবল দেখে নিও লোকটা যেন কানা খোঁড়া না হয়! বলেই হেসে উঠেছিল সে।

-

ব্যাপারটা নিয়ে সে আজকাল আর ভাবতে চায় না। মানুষ যতটা আধুনিক হচ্ছে ততটাই যেন তাদের জিনগত অতীত মুখি সংস্কার চেপে ধরছে তাদের মানসিকতাকে। একটি মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়েও একা বাস করার অধিকার তার নেই। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়েও তার ব্যক্তি স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। কোনো একজন পুরুষের অধীনে না থাকলে যেন তাদের সম্মান রক্ষা হয় না। সমাজের পাঁচজন পাঁচ কথা বলে। যারা বলবার তারা তো বলবেই। ভাল মন্দ নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। তাদের মাথা ব্যথা আছে কার পায়ে পায়ে দোষ ঘুরে বেড়ায় তাকে আরো ভাল মতন প্যাঁচাও! আহা, মেয়েটার স্বামী নাই! যেন সবাই করুণার অবতার হয়ে যায় একা একা বেঁচে থাকা কোনো মেয়ে দেখলে।



বেশ কিছুটা সময় হয়ে গেছে। একটা হাত মুক্ত থাকলে ব্যাগের ভেতর থেকে বের করে সেলফোনে সময়টা দেখে নিতে পারত সে। অবশ্য বাড়ি থেকে যখন সে বের হয়েছে যাওয়া আসা আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে ঘণ্টা তিনেক হয়ে যাবে। আর এরই মধ্য যদি বরপক্ষ যাত্রা করে থাকে তো এতক্ষণে এসে পৌঁছে যাবার কথা। কিন্তু সে তো বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মায়ের এত সাধের মখমলের চাদরটাকে ভিজিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে না। তারা যদি এসেই থাকে বৃষ্টির ব্যাপারটা নিশ্চয় খেয়াল করবে। আর নিতান্তই চাষাভুষো হলে এতক্ষণে হল্লা-চিল্লা বাধিয়ে দিয়েছে নিশ্চয়।



আকাশের অবস্থা দেখতে ছাতাটা পেছনের দিকে হেলাতেই সে দেখতে পায় তারই বয়সের কাছা কাছি এক ভদ্রলোক দোকানটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে সাদা পাঞ্জাবি। লোকটির দিকে তাকিয়েই হাসি চাপতে পারে না সীতিমা। পাজামা গুটিয়ে হাঁটুর ওপরে তোলা। খালি পা কাদায় মাখামাখি। এ লোক এভাবে এখানে এলো কোত্থেকে? বিস্মিত হতে গিয়েও সে ভাল মতো দেখতে চেষ্টা করে লোকটিকে। কিন্তু মুখটা আড়াল হয়ে আছে ছাতার নিচে। পুরোপুরি দেখতে পাচ্ছে না। ঠিক তখনই ঘুরল মানুষটি। সেই মুখ, সেই হাঁটার ভঙ্গি। শাহিন? ছেলেরা কি তেমন একটা বদলায় না? যত বদল যত পরিবর্তন কেবল মেয়েদের বেলায়। প্রকৃতির কী অন্যায় আচরণ নারীর প্রতি! বুকের ভেতরটা দুরুদুরু করে উঠলেও কিছুটা ঈর্ষা বোধ যেন জমাট বাঁধে তার নাকের পাটায়। অথবা অজ্ঞাত কোনো অভিমান তার দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখে অন্য দিকে। কাছাকাছি হতেই লোকটি কেমন কৌতুকপূর্ণ কণ্ঠে বলে উঠল, যার বিয়ে সেকি বিয়ের দিন বাইরে থাকে? এহানে দাঁড়াইয়ে রইছ, বাড়িত অতিথি আইসে বইসে রইয়েছে যে!



শাহিনের কথা শুনে চোখ দুটো কেমন জ্বলতে আরম্ভ করে সিতিমার। তবু সে নিজেকে যতটা পারে সংযত করে বলে, বুঝলাম তুই সাহেব হইয়ে গিয়েছিস, তাই বলে তুই আমাক তুমি করে কবি?



-ওই দেহ, ঝগড়া শুরু কইরে দিলা দেহি। কই এতকাল পরে আলাম, কেমন আছি, কেমন ছিলাম তা নিয়ে কতা কবা তা না, শালিকের মতন ক্যাঁচ ক্যাঁচ শুরু কইরে দিলা।



-আমাক তুমি করে কচ্ছিস ক্যান? আর তুই এতকাল বাদে কোয়ান থেনে আলি, এহানেই বা কী কাজে এয়েছিস?



-তোমাগের বাড়িত ওগের সঙ্গে এয়েছি। ভদ্রমহিলাক তুই করে ক্যাম্বা কই? অন্যেরা শুনলিও তো আমাক ভাল কবে না!



-ওগের সঙ্গে মানে? এতদিন কোয়ানে ছিলি তা তো কইস নি?



-কবো। সবই কবো। বাড়িত চলো আগে। লোকজন তোমাক খুঁজতিছে।



-বর আইছে?



-হয়।



-দেহেছিস?

শাহিন মাথা দোলায়।



-কেমন, বেশি বুড়ো না তো? আগের বউ আছে নাকি তালাক দেছে না মইরে গিয়েছে জানিস কিছু?



শাহিন হঠাৎ হেসে উঠে বলে, শুনিছি ব্যাটা এতকাল বিয়েই করেনি!



-বিয়ে করেনি ক্যান, বয়েস কেমন?



-এই ধরো গিয়ে পঞ্চান্নর কাছাকাছি। তোমাক ভালই মানাবি তার পাশে।



পাশাপাশি চলতে চলতে মাঝে মাঝে হালকা হাওয়া তাদের দুজনের ছাতাকেই পেছনের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছিল বারবার। তখনই কোনো এক ফাঁকে সিতিমার হাতের প্যাকেটের দিকে চোখ পড়ে শাহিনের। বলে, হাতে ওডা কী?



-মা আমাক পাঠায়েছেল এডা আনতি ফুপুর বাড়ি। জামাইক বসতি দিবে মখমলের চাদরে। তারপরই সেটা শাহিনের দিকে বাড়িয়ে ধরে বলে, ধরতো!



শাহিন হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিলে সিতিমা ছাতাটা এক পাশে কাত করে দিয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে মুখ ভিজিয়ে বলে, ভিজতে ভিজতে বাড়ি যাবো। কতকাল মনে হয়েছে এমন করে একদিন ভিজবো।



শাহিন কেমন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে সিতিমার ভেজা মুখের দিকে। কৈশোরের মতো সেই একই ভঙ্গিতে বলতে ইচ্ছে হয়, তোক আইজ বিয়ে কইরে নিয়ে যাতি এয়েছি। কিন্তু কথা বলে এখনই মুগ্ধতা বোধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে চায় না সে।



বৃষ্টির ফোঁটায় ঘোলা হয়ে যাওয়া চশমার কাচ ভেদ করে সিতিমার দৃষ্টি আবিষ্কার করতে পারে না শাহিনের দৃষ্টির মুগ্ধতা। তার অতীতচারী মানস দৃষ্টিতে তখন বৃষ্টির জলে ব্যাপক হুটোপুটিতে ব্যস্ত দুটো কিশোর কিশোরী।

(সমাপ্ত)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:৪৮

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: ভালো লাগলো গল্প ! প্রথম ভালোলাগা !

২২ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:১২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ অভি। ভাল থাকবেন।

২| ২২ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:২১

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: শেষাংশ সুন্দর ।
তবে শাহিন আর সিতিমার কথোপকথন আঞ্চলিক ভাষায় না দিলেও মনে হয় চলত। যেহেতু একজন শিক্ষিকা আর অন্যজনও শিক্ষিত তবে গ্রামীণ পটভূমি বলেই যে ভাষাটা অমন হবে সব সময় কিন্তু তাও না জুলিয়ান দা । আর দোকানদার এর ভাষা আঞ্চলিক থাকুক সমস্যা নাই।
বৃষ্টিস্নাত দিনের গল্প ভালো লাগছে ।

২২ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: আপ্নের কথায় ভুল নাই। তবে স্বতঃস্ফূর্ততা প্রকাশে আঞ্চলিক ভাষার বিকল্প নাই। তা ছাড়া শিক্ষক হলেও যে সে পরিশীলিত ভাষায় কথা বলবে তেমনটি হয়তো ঠিক তার আপন ভূবনে অচল। আমি অনেককেই দেখেছি সময়ে দু ধরনের ভাষা প্রয়োগ করতে।

যেহেতু একজন শিক্ষিকা আর অন্যজনও শিক্ষিত তবে গ্রামীণ পটভূমি বলেই যে ভাষাটা অমন হবে সব সময় কিন্তু তাও না

-এ দিক দিয়ে যদি ভাবেন তাহলে বলতে হয় দোকানদার নিম্নবর্গের বলে তার আঞ্চলিকতা মানান সই? আমরা কিন্তু এভাবে বিভাজন করে ফেলি আমাদের সমাজকে। তবু আপনার পরামর্শ গ্রহণ করলাম। গল্পটি নিয়ে আবার বসলে কী কতটা করা যায় দেখব।

গল্প পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৩| ২২ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ব্যাপারটা আমি সেটা বুঝাই নাই কিন্তু । আমি কি ঘরে শুদ্ধ ভাষায় সব সময় কথা বলি ? বলি না ঠিক তেমনি নতুন পরিচিত কারো সাথে ভাষার প্রয়োগ প্রথমে শুদ্ধ দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে আঞ্চলিকতা আসে। আমি গল্পটার ক্ষেত্রে বলছিলাম যে এইখানে আঞ্চলিকতা টা আমার চোখে লাগছে।

আপ্নারেও ধন্যবাদ X((

২২ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:৫১

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: বুঝলাম, কিন্তু আপনের মেজাজ বিলা হইল কেন বুঝলাম না। আপনার চোখের ব্যাপারটা মনে রাখবো। আশা করি তখনও সঙ্গে থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.