নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছাইয়ের নেই আগুনের ভয়

জুলিয়ান সিদ্দিকী

জগতের সব কাজই আমি পারি না। অনেক কাজে অলস হলেও লিখতে কখনও ক্লান্তি বোধ করি না। এতে করে আমার সময়গুলো ভালো কাটে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

খেলা

০১ লা জুন, ২০১৩ রাত ২:৫৫

নিহারকে এ জীবনে পাওয়া হলো না রিমার। যে ফুল এতকাল সযত্নে রক্ষিত ছিল বেড়া দেওয়া সুরক্ষিত বাগানে, সেখান থেকে ছিঁড়ে এনে চায়ের কাপের তোলা জলে ভাসিয়ে রেখে বাঁচানোর এক দুশ্চেষ্টায় জড়িয়ে পড়েছে শাহিন।



কৈশোর থেকে যে নিহারকে মনে মনে ভালবেসে এসেছে। আর একটু বড় হলে ভেবেছে যে, তার বুকের ওমে প্রতিটি রাতকে ফুটিয়ে তুলবে স্বর্গের মহিমায়। সে স্বপ্নকে দলে-মুচড়ে দিয়ে শাহিন তাকে দখল করে নিয়েছে বিত্ত আর বৈভবের অহংকারে। বিত্ত আর বৈভবের লোভে যে নারী বিয়েতে সম্মত হয়, তার স্থান হয়তো একজন পতিতারও নিচে। পতিতার যে স্বাধীনতা আছে, খদ্দেরের অবস্থান বা আসা যাওয়া নিয়ন্ত্রিত হবে তার ইচ্ছেতে। কিন্তু যে নারী কেবল লোভে পড়ে কিংবা ভাল খাবে, পরবে আর ভাল অবস্থানে থাকবে বলে, তার ইচ্ছে-মূল্য থাকবে কি থাকবে না তা তার নিয়ন্ত্রণে কখনওই আসবে না। প্রতিটি রাত যদি তার জন্যে বয়ে নিয়ে আসে একরাশ অপমান, লাঞ্ছনা আর চোখের জলের উল্লাস, তবু তাকে সয়ে যেতে হবে। সইতে হবে সবই পাছে তার জীবনে লব্ধ আয়েশে ঘাটতি পড়ে বা কোনো ক্রমে নিচু হয়ে যায় সামাজিক অবস্থান, দুর্বিসহ না হলেও দারিদ্রের ছোবলে নীল হতে হবে কম বেশি। তার চেয়ে কি ভাল না অন্ধকারের কষ্ট আর অপমানকে অন্ধকারেই লুকিয়ে রাখা?

রিমার তাই প্রচণ্ড রাগ শাহিনের ওপর। কিন্তু বাবা-মায়ের সদিচ্ছার অবমূল্যায়ন হবে কিংবা আত্মীয়-স্বজনের কাছে পুরো পরিবারকে ছোট হতে হবে বলে অনেকটা মেনে নিয়েছে শাহিনকে। তবু তার মন থেকে কিছুতেই দূর হয় না ক্ষমতার জোরে তাকে প্রায় ছিনিয়ে আনা বা দরিদ্র বাবা-মায়ের চোখে মেয়েটা সুখে থাকবে ধরনের স্বপ্নের প্রলেপ দিয়ে সে ভেঙে দিয়েছে এক কিশোরীর দীর্ঘকালীন তপস্যাকে।



সামান্য আসবাবের স্বল্প আলোর ছোট ঘর থেকে আসা রিমার দম বন্ধ আসে শ্বশুর বাড়ির বিশাল ফ্লাটের হল রুমের মতো ঘর আর আরো দামি আসবাবের ভিড়ে। এখানে যেন সে দর্শনীয় কোনো প্রাণী মাত্র। যাকে ধরা-ছোঁয়া যাবে না। অযথা কথাও বলা যাবে না তার সঙ্গে। আবার এমনও হতে পারে যে, ছোট ঘর থেকে উঁচু ঘরে উঠে আসবার খেসারত হিসেবেই যেন এ বাড়ির মানুষগুলো তেমন আপন হয়ে উঠতে পারল না তার। তবে মানুষগুলোর আন্তরিকতা থাক আর না থাক আনুষ্ঠানিকতার বাহার আছে বেশ। শাশুড়ি ননদের হাসি-মাখা মুখ দেখে আর ভদ্র ভিক্ষুকদের মতো মিষ্টি কথা শুনতে শুনতে যারপর নাই ক্লান্ত সে। যদিও সে সবের কৃত্রিমতা বা আন্তরিকতা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারেনি সে। যা নিয়ে তার মনে এক ধরনের অবহেলার মতোই সূক্ষ্ম একটি কষ্ট জেগে থাকে দিনরাত। এক মানুষ অন্য মানুষকে না ছুঁলে ঠিক ঠিক হয়তো বোঝা যায় না আন্তরিকতা বা হৃদ্যতা কতখানি। কোনো শিশুকে কোলে নিলে কখনো সে শিশু গলা জড়িয়ে ধরে কিংবা কাঁধে মাথা বা গাল পেতে দিয়ে বুঝিয়ে দেয় আন্তরিকতার মূল্য বা গুরুত্ব। কিন্তু দূর থেকে আন্তরিকতার প্রকাশ কতটা সম্ভব? তবু সে চেষ্টা করে চলেছে এখানকার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে। মন থেকে কিছুতেই তাড়াতে পারে না যে, এখানকার পরিবেশের চেয়ে নিহারদের টিনের ঘরটাই যেন আরো বেশি আপন ছিল। আরো বেশি আপন নিহারের মা আর বোন। সেই পরিবেশ আর আন্তরিকার মূল্য পরিশোধ করতে পারে অতটা বিত্ত আর বৈভবের অধিকারী নয় শাহিনের পরিবার। মাঝে মাঝে বুকের ভেতর যেন আছড়ে পড়ে জলোচ্ছ্বাসের বিশাল বিশাল ঢেউ। তার চোখের পানি বা বিষণ্ণ মুখ যাতে অন্যদের দৃষ্টিগোচর না হয় তা আড়াল করতে তার আপন হয়ে ওঠে গোসলের সময়টা। তাই হয়তো ধীরে ধীরে নিজের কষ্টকে হালকা করতে অথবা সমান কষ্টে শাহিনকে ভেতরে ভেতরে পুড়িয়ে মারার এক অদ্ভুত খেলায় মেতে ওঠে রিমা।



শাহিন যেদিন খুব করে সাজতে বলে বা কোনো বন্ধু বা অফিসিয়াল পার্টিতে যেতে বলে, সেদিনই বমির বেগ সামলাতে সামলাতে সে ছুটে যায় ওয়াশ রুমের দিকে। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে এসে দু হাতে মাথা চেপে বসে পড়ে সোফায়, নয়তো বা সাজগোজ হয়ে গেলে বেরোবার মুখেই কোনো একটা অজুহাত তৈরি করে যাওয়াটা বন্ধ করে দেয়। অবশ্য এক একদিন এক একটা অজুহাত তৈরি করে বলে শাহিন তার চাতুরী তেমন বুঝতে পারে না। শাহিন যেদিন খুব ভালো মেজাজে থাকে সেদিন তার মুড অফ করাতে না পারলে যেন তার শান্তি হয় না কিছুতেই। সব সময় যে সে তার সব উপরোধ ঠেলে ফেলে দেয় তা কিন্তু নয়, মাঝে মধ্যে ছোটখাটো অনুষ্ঠানে যায়। আসলে বড় অনুষ্ঠানে যেতে ভেতরে ভেতরে খানিকটা অস্বস্তিও বোধ করে বলে ছোটখাটো অনুষ্ঠানগুলোতে মোটামুটি স্বচ্ছন্দ থাকতে পারে। কখনো বা এক আধবার বলার পরও সে সম্মত হয়ে যায়। দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে জানায় যে, বিউটি পার্লার থেকে একেবারে সেজে গুজেই বের হবে।



তা ছাড়া যেদিন রিমার শূন্যতায় বা স্ত্রী ছাড়া যাওয়ার কারণে কোনোভাবে পার্টিতে বন্ধুদের কাছে হেনস্থা হয় সে রাতে যেমন দেরি করে ফেরে তেমন ঘুমিয়েও পড়ে যেখানে সেখানে। রাতভর মশার কামড় খেয়েও ঘুম ভাঙে না তার। পরদিন সকালে মুখ ধোবার সময় বা দাড়ি কাটার সময় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চেঁচামেচি আরম্ভ করে দেয়। রিমাকে দেখতে পেলে গাল বা হাতের কোথাও মশার কামড়ে ফুলে থাকা জায়গাগুলো দেখিয়ে গোমড়া মুখে বলে, এ জন্যে তুমিই দায়ী!



ম্লান মুখে স্যরি বলতে বলতে এগিয়ে যায় রিমা। ফোলা অংশগুলোর কোনোটাতে তর্জনী ছুঁইয়ে মুখে বার কয়েক চুক চুক শব্দ করে বলে, আহা, সোনাটার ঘুমটা মোটেও ভাল হয় নি। ইশ, আমি সঙ্গে থাকলে... আর তুমি আমাকে ডাকতে পারতে। ডাকলে কি আমি জাগতাম না? ইশ, কী করেছে দেখ তো!



শাহিন আরো বেশি গম্ভীর হয়ে উঠবে। নাস্তা সেরে চুপচাপ অফিসের উদ্দেশ্যে সিঁড়ির দিকে এগোলে খানিকটা তরল কণ্ঠে পেছন থেকে রিমা বলে উঠবে, এই আজ কাজের চাপ না থাকলে চলে এসো। লাঞ্চটা এক সঙ্গেই করব।



হয়তো সত্যি সত্যিই কোনো জরুরি মিটিং থাকলে শাহিন জানাবে, আজ মিটিং আছে। অফিসেই লাঞ্চ সারতে হবে।



তখন মনে মনে হেসে উঠবে রিমা। ঠিক মিটিঙের সময়টাতেই ফোন করে জানাবে কোনো খারাপ খবর কিংবা ব্যথাতুর কণ্ঠে জানাবে মনটা ভাল নেই। পুরো বাড়িটাই ফাঁকা। সে কি সত্যিই আসতে পারবে না? বড্ড একা লাগছে!



তার সেই যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচতে বা মিটিঙে উপস্থিত লোকজনের কৌতূহলী দৃষ্টি থেকে নিস্তার পেতেই হয়তো শাহিন বলে উঠবে, তাহলে কোথাও ঘুরে এসো। আর সেই সুযোগেই সে চলে যাবে বাবার বাড়ি। রিকশায় চড়ে। খোলা হাওয়ায় রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। বাবা মায়ের সঙ্গে কথা হয়ে গেলে এক ফাঁকে দেখা করে আসবে নিহারের মায়ের সঙ্গে। নিহারের সঙ্গে দেখা হবে না জানা কথা। তবে তার বোন কচি কোনো কারণে ঘরে থাকলে দেখা হয়ে যাবে তার সঙ্গেও। জানা হবে নিহার কেমন আছে। যদিও নিহার জানে না রিমার অনুরাগের কথা। তাতে কি? সে তো নিজেই নিহারের প্রেমে পড়েছে। নিহারের জানার অপেক্ষায় তার প্রেম বসে বসে ঝিমোবে না। বা পানসেও হয়ে যাবে না।

কিন্তু প্রতিদিন আর কত নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করবে সে? সেগুলো দিয়ে তো জব্দ করা যাচ্ছে না শাহিনকে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে তাকিয়ে ছিলো দূরে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া তুরাগ নদীর দিকে। পাড়ের কাছ থেকে বালু ফেলে কেউ হয়তো চালু রেখেছে দখল প্রক্রিয়া। কোনো কালে যে নদী ছিল দেখে মোটেও বিশ্বাস হতে চায় না রিমার। বড় জোর একটি খাল বা গাঙ ছিলো চওড়া আকৃতির। নয়তো এতটা সরু হয় কী করে? নাকি সবাই দখল করে নিয়েছে যার যতটা প্রয়োজন? আর তখনই তার মনের ভেতর ভিন্ন আরেকটি ভাবনা জমাট বাঁধতে শুরু করলে ঠোঁট দুটো এক দিকে কেমন বেঁকে যায়।



রাত আটটার আগেই ঘরে ফিরে আসে শাহিন। যেদিন সে এ সময়টাতে ঘরে ফেরে মনটা হয়তো বেশ চনমনে থাকে তার। সোফায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখে আর পা নাচায়। আধঘণ্টা অন্তর চা খায় এক কাপ করে। সেই চা আবার শাহিদাকে দিয়ে হবে না। কাজের মেয়েরা চা বানানোটা বোঝে না বলেই শাহিনের ধারনা। চায়ের কাপ হাতে দিতেই রিমার একটি হাত টেনে পাশে বসায় সে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উঠে পড়ে রিমা বলল, শাহিদা কী করছে দেখে আসি।



কিন্তু শাহিন এক হাত টেনে ধরতেই তাকে আবার বসে পড়তে হয়। আর তার পাশে একবার বসলেই হল, মাঝ রাতের জন্য সলতে পাকানো আরম্ভ হয়ে যায়। ব্যাপারটা যদিও বেশ উপভোগ করে রিমা। তবু আজ মনে মনে ঠিক করে রেখেছে, শাহিন যত সলতেই পাকাক, আজ কিছুতেই তা জ্বালাতে দেবে না। মাঝ পথে বাধা পড়লে বা হঠাৎ উদ্যম হারিয়ে পুরুষটার কী হয় তা দেখবার এক কুটিল বাসনা জেগে উঠেছে মনের ভেতর। এ নিয়ে বেশ কয়েকটা কৌশলের কথাও ভেবে রেখেছে সে।

বেশ ফুরফুরে মনে নানা ইঙ্গিত দিচ্ছিল শাহিন। রাত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই তার মুখটা বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠতে থাকে। আর যেদিন তাকে এমনটা দেখা যায় সেদিন, কোনো না কোনো নতুন দুষ্টুমি নিয়ে মেতে উঠতে দেখা যায়। এ নিয়ে অবশ্য কোনো অভিযোগ বা বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করে না রিমা। কারণ অনেক অমিলের পাশাপাশি এই একটি দিক দিয়ে নিজের পছন্দ অপছন্দের বেশ কিছু মিল পেয়েছে। কিন্তু আমে দুধে মিশে গেলে তো প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। ভালবাসা গাঢ় হয়ে গেলে শত্রু-মিত্র ভেদ থাকে না।



সবাই শুয়ে পড়তে পড়তে আজ কিছুটা দেরি হলেও বাইরের হাওয়া ছিল বেশ ঠাণ্ডা। বৃষ্টি হচ্ছিল থেকে থেকে। রিমার ইচ্ছে হচ্ছিল বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বেশ করে ঠাণ্ডা বাধায় নয়তো জ্বরে ভোগে। কিন্তু শাহিনের টানাটানিতে তা আর হয়ে ওঠে না। সে নিজেই টেনে টেনে ভেজা কাপড় বারান্দায় স্তূপ করে ঘরে নিয়ে আসে। যত্ন করে শরীর মাথা মুছিয়ে দেয়। আর এতে করে যেন মনের ভেতরকার প্রতিশোধ স্পৃহাটা কেমন মিইয়ে আসতে চায়। তবু চোখ বুজে রিমা খানিকটা সময় নিয়ে উপভোগ করে নতুন ব্যাপারটি। ভেতরে ভেতরে তার কাতরতা বেড়ে গেলেও সিদ্ধান্তে অটল থাকে সে। শাহিন এক সময় বেশ কিছুটা অস্থির আর আগ্রাসী হয়ে ওঠে টের পেয়ে তখনই হঠাৎ সিদ্ধান্তটা নেয় রিমা। শাহিন আরো এগিয়ে আসে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়লেও আরো খানিকটা সময় নেয় রিমা। শাহিনের অবস্থা অনুমান করে হঠাৎই পেট চেপে ধরে কুকরে-মুকরে গুঙিয়ে ওঠে রিমা।



আর আকস্মিক বাধা পেয়ে কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে ওঠে শাহিনের মুখ। ব্যর্থতা নাকি স্ত্রীর প্রতি সমবেদনা হেতু এমন ঠিক বোঝা যায় না। তবু এক পাশে সরে গিয়ে রিমার পেটে হাত রাখে সে। কি হয়েছে? সে অবস্থাতেই সে ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার টিপতে আরম্ভ করলে রিমা চেপে ধরে শাহিনের হাত। কী করছ?



-আজমকে ফোন করছি।



-লাগবে না।



-তোমার অবস্থাটা জানাতে হবে না?



-কাল জানালেও চলবে। আর কোনো গাইনোকলোজিষ্টের কাছে যেতে হবে।



তারপর রিমা শাহিনের বুকে এক হাত রেখে বলল, স্যরি। মন খারাপ করো না, প্লিজ!



হঠাৎ হাত-পা ছেড়ে দিয়ে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে শাহিন।



রিমার খুব হাসি পেলেও মুখটাকে ম্লান করে রেখে পাশ ফিরে শুয়ে জানায়, তুমি ওয়াশ রুমে গেলে ফেরার সময় কিচেনটা দেখে এসো শাহিদা ভেতর থেকে দরজা আটকেছে কি না।



সেদিনের পর থেকে নতুন খেলাটি বেশ উপভোগ করতে থাকে রিমা। শাহিনের ঝুলে পড়া মুখ আর ন্যাতানো সলতেয় আগুন জ্বালানোর ব্যর্থ চেষ্টা দেখে ভেতরে ভেতরে বিশ্বজয়ের আনন্দ উপভোগ করে যেন। আর এভাবেই ক্রমশ এক নিষ্ঠুরতা চেপে বসে তার মনের ভেতর। নানা ছল চাতুরী করে সে শাহিনের আগ্রহকে এমন একটা পর্যায়ে এনে স্থবির করে দেয় যা নিয়ে তার আত্মতৃপ্তির পরিমাণ প্রায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলে।



এ পর্যন্ত চারবার ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েছে রিমা। শাহিন প্রতিবারই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব কিছু জানতে চায় আর তাকেও বানাতে হয়েছে নতুন নতুন গল্প। কিন্তু দুটি মাস খুব বেশিদিন বলে মনে হয় রিমার কাছে। এক ধরনের অস্থিরতা যেন তাকেও চেপে ধরছিল ক্রমশ। তাই সে নিজ থেকেই শাহিনকে টানে। কিন্তু সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সে জানতে চায়, তুমি কি নিশ্চিত যে, আর অমন হবে না? ডাক্তার কী বলল শেষ পর্যন্ত?



শাহিনের কাঁধে মুখ ডুবিয়ে রিমা বলল, তেমন কঠিন কিছু না। মানসিক দিক দিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল, এখন নাকি স্বাভাবিক হয়ে গেছি।

কিন্তু রিমা আশ্বাস দিলেও শাহিনের আগ্রহ দেখা যায় না তেমন। যেন অনুভূতিহীন হয়ে গেছে এই স্বল্প সময়ের ভেতরই। চিত হয়ে শুয়ে থাকা শাহিনের বুকের ওপর উঠে পড়লেও তার মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে পায় না রিমা। শাহিনের দেহ যেন মাঝ নদীর চরে পড়ে থাকা শ্রান্ত কোনো কচ্ছপ অথবা চরের দ্বিধান্বিত ফাটল, যে অপেক্ষায় আছে কোনো উত্তাল ঢেউ এসে তাকে টেনে নিয়ে যাবে জলের গভীর অন্ধকারে।



(সমাপ্ত)



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৩ রাত ৩:১৭

অন্য পুরুষ বলেছেন: +++

০১ লা জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ অন্যপুরুষ।

২| ০২ রা জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৫১

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: ভালো লেগেছে গল্পটা।

০৩ রা জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৩১

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: গল্পটি পড়ার জন্যে ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.