নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছাইয়ের নেই আগুনের ভয়

জুলিয়ান সিদ্দিকী

জগতের সব কাজই আমি পারি না। অনেক কাজে অলস হলেও লিখতে কখনও ক্লান্তি বোধ করি না। এতে করে আমার সময়গুলো ভালো কাটে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

তালাক

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:১৯

সম্পর্কের চেয়ে জীবনে টাকা-পয়সাটাই জরুরি। মান-মর্যাদা আসলে ফাঁপা আর অসার বিষয়। এটা তেমন কোনো কাজে আসে না। খাদ্য-বস্ত্র-আশ্রয়ের ব্যবস্থা যা করতে পারে না, তার অস্তিত্ব নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছুই নেই। অথচ এত কিছু থাকতে কোনো কোনো মানুষ এই অর্থহীন বিষয়টাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আর তা করতে গিয়েই দীর্ঘ সতের বছর পর আমিনা এই একটি বিষয়ই খুব ভালোভাবে অনুভব করতে পারছে। আর তা হলো টাকা



হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে ওঠা মানুষের মতোই ভাবনাটি তার মনের কোনো এক গহিনে জন্ম নিয়ে পঙ্গপালের মতোই দ্রুত ছড়িয়ে যেতে থাকে মস্তিষ্কের কোষে কোষে। অথচ প্রায় কয়লার মতো দেখতে ফোরকানের সঙ্গে মতের বিরুদ্ধে বিয়ে হওয়ার আগ মুহূর্তে বাবা শামসুল হক শিকদার বলে উঠেছিলেন, মা, আল্লা আল্লা কর। এহানে তর বিয়া হইলে থাকবি রাজরানীর মতন।



বাবার বড় মুখ করে বলা কথাগুলোর কোনো রকম প্রতিফলন দেখতে পায়নি নিজের জীবনে। মা রোশনারার ভাষ্য মতে অনেক কৌশলে ছুটিয়ে আনা পাত্র সম্পর্কিত নানা কল্পিত ঠাট-বাট আর প্রচলিত গাল-গল্পের সবই যেন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছিল দিনদিন। আর ক্রমশ ম্রিয়মাণ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকা ছাড়া যেন আর কিছুই করবার ছিল না আমিনার। এবং শেষ পর্যন্ত সব স্বপ্ন-আশা-ভরসার কংকালের ওপর দাঁড়িয়ে মেরুদণ্ড সোজা করতে চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু কোনো একটি ভুল পদক্ষেপ বা অসময়ের অসতর্কতার কুফল হিসেবেই আজ তাকে ছুটে আসতে হয়েছে সব আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বিমুখ হয়ে।



একটি সুষ্ঠু উপায় করে দেবে আশ্বাস দিয়েই তাকে অফিসে আসতে বলেছিল হেলাল চেয়ারম্যান। আর চেয়ারম্যানের আসবার অপেক্ষায় সে বিগত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন আজানের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে উঠে পরে প্রাত্যহিক ক্রিয়া-কর্মের পরেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে ছেলে-মেয়ের মুখে কিছু একটা তুলে দেবার আয়োজনে। তারপরই সে প্রায় নির্জন পথ ধরে হেঁটে আসে গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে। ততক্ষণে নানা প্রয়োজনে লোকজন আসতে আরম্ভ করে দেয় দু একজন করে।



অফিসের পাকা উঁচু বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসে অপেক্ষায় অপেক্ষায় তার সময় কাটে আর বিক্ষিপ্ত মনের আনাচে কানাচে বিতাড়িত সংসারের নানা ঘটনা রোমন্থনের বিরতিতে উপস্থিত লোকজনের কাউকে কখনো বা সরাসরি হেলাল চেয়ারম্যানের সহকারীকে জিজ্ঞেস করে জানতে চায় তার আসবার সম্ভাব্য সময়। কিন্তু কেউই নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারে না কিছু। কেউ কেউ এও জানায় চেয়ারম্যানকে গত সপ্তাহে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে রাতের অন্ধকারে। কেউ বা জানায় মানুষটা খারাপ মানুষদের সঙ্গে মিশে গিয়ে কোনো দুষ্কর্ম করতে গিয়ে মারা গেছে ক্রস ফায়ারে।



সব মানুষের জীবনেই কিছু না কিছু স্বপ্ন থাকে। কিন্তু আশৈশব লালিত স্বপ্নগুলো যখন দেয়ালের গায়ে লেগে থাকা আলগা বালির মতো কঠিন সময়ের উত্তাপে বিযুক্ত হতে থাকে তখন কোনো কিছুর ওপরই বিশ্বাস বা ভরসা রাখার দুঃসাহস হয় না। একটি স্বপ্ন বা চাওয়া আংশিক পূরণ হতে গিয়েও কখনো দেখা গেছে খসে পড়া শুকনো পাতাদের মতোই হাওয়ার দাপটে উলটে পালটে চলে যায় নাগালের বাইরে। মোটামুটি খ্যাতিমান কোনো টিভি অভিনেতার এক তুতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়েটা হতে হতেও এক সময় ভেঙে গিয়েছিল তুচ্ছ কারণে। তখন থেকেই বলতে গেলে বিয়ের সম্ভাব্যতার প্রতি তার কোনো রকম ঔৎসুক্য ছিল না।

কিন্তু ভাইয়ের কাঁধের বোঝা হয়ে থেকে ভাই-পো ভাই-ঝিদের আয়ার মতো কাল কাটিয়েও বিন্দুমাত্র সহানুভূতি অর্জন করতে পারেনি ভ্রাতৃজায়ার। দিনদিন তিক্ত থেকে তিক্ত হচ্ছিল জীবনের যাবতীয় অভিজ্ঞতা। এক সময় বেশ শক্ত-পোক্ত সিদ্ধান্তই নিয়ে নিয়েছিল যে, নিজের হাতেই সমাপ্তি টানবে জীবনের। নিজের ভার নিজের কাছেই হয়ে উঠেছিল অসহ্য।



প্রাচুর্যে ভরা জীবনের আশ্বাস দিয়ে প্রবাসী আর তুতো ভাইয়েরা লুটেপুটে প্রায় নিঃশেষ করে দিয়েও আর খানিকটা চেখে দেখতে ফিরে এসেছে বারবার। যদিও বোনেরা দিনরাত সতর্ক থেকেছে গোপনীয়তা যাতে কিছুতেই লঙ্ঘিত না হয়। কিন্তু পরের ছেলের কাছে কতক্ষণই বা গোপন রাখা যায় অন্যায় সৃষ্ট দাবানলের উত্তাপ কিংবা ধোঁয়া? শেষাবধি গোপন তো রইল না কিছুই। বরঞ্চ তাদের হামবড়া ভাব আর অসার বুলি জীবনের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়াবে তার কিঞ্চিৎ যদি ঘুণাক্ষরেও অনুমান করতে পারতো তাহলে কারো কোনো আশ্বাস বা ভরসার প্রতি নির্ভর করতো না বিন্দুমাত্র। বিষ খেয়ে বিষ হজম তাকে কখনোই করতে হয় নি স্বামীর সংসারে। খাওয়া-পরা তো চলতোই। আর খানিকটা রঙ চড়ানোর প্রত্যাশাই তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো শেষ পর্যন্ত। অথচ আগুনের দিকে ঠেলে দিতে দিতেও বোনেরা বলেছিল, মাসে মাসে এমন দশ-বিশ হাজার ট্যাকা দিয়া তর মতন এক-দেড়টা মানুষ পালতে কোনো গণা-বাছি করতে হইবো নাকি?



কিন্তু কথা শুনে লোকটা সত্যি সত্যিই বেঁকে বসেছিল। অবশেষে গৃহ ছাড়া। দুঃসময়ে বোনেরা নানা অজুহাত দেখিয়ে সরে গেছে ধীরে ধীরে। ঘরের আসবাব গয়না গোপনে বেচে দিয়ে শহরের মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে চেষ্টা করছিল আর অপেক্ষায় দিন গুনছিল, মানুষটার সঙ্গে যদি একটিবার দেখা হতো, তাহলে যে করেই হোক চেষ্টা করতো সুদিনের সন্ধান যদি পাওয়া যায়। কিন্তু কোথায় বা কতদূর সেই সুদিনের রেলগাড়ি তার সন্ধান জানা ছিল না তার। সময় মতো বেতন পরিশোধ করতে না পারার কারণে স্কুল থেকে নাম কাটা গেছে বড় ছেলেটার। ছোটগুলো পরীক্ষাতেও বসতে পারেনি। জীবন সত্যিই জটিল। এখানে কারো পা একবার হড়কে গেলে টেনে তুলবার মানুষ তেমন একটা নেই। আর নিজের দোষে যদি ঘর ভাঙে সে ঘরের ছাউনি মেলেনা সহজে। তাই হয়তো ছোট-বড় সব শ্রেণীতেই ন্যায়-অন্যায়ের বাছ-বিচার না করে একটা প্রাণপণ চেষ্টা থাকে সংসারটাকে টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু সে কী করেছে। পেছনের দিকে তাকালে ইচ্ছে হয় আধলা ইট দিয়ে আঘাত করে নিজের মাথাটিকেই দুভাগ করে দিতে।



মাসে মাসে বিশ হাজার টাকার আশ্বাস দিলেও রেহানাকে বলেছিল আমিনা, তোরা না হয় কয়দিন চালাইলি আমারে। কিন্তু পরের পোলার লগে বিশ্বাস কী যে, এত কথা হুইন্যাও আমারে তোলা তোলা করবো?

পরের পোলাগরে সব সময় ফাটা বাঁশে আটকাইয়া রাখন লাগে! বলে, বড় বোন রেহানা ফের বলে উঠেছিল, দেখস না আমারটারে দিনরাইত কেমনে চিপি, রাও করতে হুনছস?



-তগো জামাইরা তো বিচি ছাড়া! খানিকটা রুক্ষ কণ্ঠেই বলে উঠেছিল আমিনা, নাইলে এত চোপা কইরাও বাদশাহি করতাছস!



আরে বুঝলি না? বলে হেসে উঠেছিল মেজ বোন নাইমা। তারপর দু হাতে একটি বিশেষ ভঙ্গি করে আবার বলে উঠেছিল সে, ব্যাডারা এইটা পাইলেই সব ভুইল্যা যায়!



কিন্তু সব মানুষ যে এক রকম নয় তা কে বোঝাবে তাদের? টাকার পেছনে ছুটতে থাকা মানুষের লাজ-লজ্জা, বোধ-বিবেচনা আর নৈতিকতা খুব একটা থাকে বলে মনে হয় না। যে কারণে সংসার কুরুক্ষেত্র হয়ে থাকলেও বিছানায় গিয়ে তারা বদলে যায় অনায়াসে। অন্যদিকে স্বামীদের অতীত বা বাইরের জীবন যেমন জানে না তার অন্যান্য বোনেরা, সেদিক দিয়ে তার মানুষটা বলা যায় ভিন্ন রকম। মেয়েদের মতোই পেটে কথা রাখতে পারে না। গোপন বলতে গেলে কিছুই ছিল না লোকটার। সে সব ঘটনাবলীর ভেতর নারী সংক্রান্ত ব্যাপার-স্যাপারও ছিল। আর সেগুলোকে ব্রহ্মাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে একবার বলে উঠেছিল, বিয়ার আগে তো তোমার বুড়িগো লগেই সমন্ধ আছিলো। চরিত্রে জোর পাও কেমনে?



এমন কথা শুনলে ছেলেরা কিছুটা হলেও থমকে যায়, কেউ কেউ রেগে ওঠে আরো। তখনই আরো ভালো মতো তাদের শায়েস্তা করা যায়। অথচ আমিনার ক্ষেত্রে ঘটেছিল একেবারেই উলটো ঘটনা। নিজেই ফাঁদে পড়ে গিয়েছিল সে। আসলে তার জীবনের এ অন্ধকার পর্যায়ের সূত্রপাত বলতে গেলে তখনই।



লোকটি নিজের অপকর্মের কথা শুনে মোটেও ক্ষেপে ওঠেনি। বরং শান্ত স্বরে বলে উঠেছিল, মানুষ তার বদমাশি আর পাপ গোপন রাখে। যেমন তুই খালাতো ভাইয়ের লগে এদিক ওদিক দৌড় পাইরা সতী থাকনের বড়াই করস। তর ভইনেরা ঢোল পিডাইয়া মানুষেরে জানান দেয় তর তাহাজ্জদ পড়নের কথা। আরে নষ্ট মাইয়া মানুষ, এইডা কি জানস না যে, মক্কায়ও বেশ্যা আছে, তারাও হজ করে বছর বছর?



লোকটি এক চড়ে যদি তার কোনো একটি কান ফাটিয়ে দিতো বা গালের চামড়া তুলে ফেলতো তারপরও অতটা অবাক হতো না। যে কথা কেউ জানবার কথা ছিল না তা লোকটির কানে যায় কীভাবে? এমন কথা তার ভাই বোনেরাও জানবার কথা নয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে টের পেয়ে গিয়েছিল যে, সংসারটাকে আর কিছু দিয়েই রক্ষা করতে পারবে না। তারপরই লোকটি বলে উঠেছিল, তোর থাইক্যা দৌলদিয়ার বেশ্যারাও অনেক ভালা মনে করি। তারা জানে যে, তারা বেশ্যা। আর তুই জানস না তুই কতডা খারাপ তাগো থাইক্যা!



ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠেছিল আমিনা। লোকটা কাদের সঙ্গে তাকে তুলনা করে আরো হীন বানিয়ে দিতে চেষ্টা করছে, ভাবতেই মাথার ভেতরে যেন আগুন ধরে গিয়েছিল তার। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার করে উঠেছিল, ওই নডি মাগির পুত, কথাডা কইলি কি তুই শুয়োরের বাচ্চা!

নিজের কণ্ঠস্বরই নিজের কানে বিশ্রী শোনাচ্ছিল আমিনার।



আরে বদমাইশ মাইয়া মানুষ, একটা বেশ্যা দিনরাইত কাস্টমার বিছনায় তুইল্যা ট্যাকা-পয়সা কামাই করে। তারপরে মাথায় কাপড় দিয়া জায়নামাজে বইলেও হেই কথা কারুরে জানায় না, সতী সাজনের চেষ্টা করে না নিজের কর্ম লুকাইয়া রাইখ্যা। কিন্তু তুই সবই করছস!



ফোরকান যতটা শান্তস্বরে কথা বলে, সে তুলনায় আমিনার কণ্ঠ আরো উচ্চকিত হয়। বলে, আমি কি চোদাইছি খালাতো ভাইয়েগো লগে, নাকি প্যাট বানাইয়া কোনোখানে খালাস কইরা আইছি?



-তরে দিয়া সবই সম্ভব। নাইলে এত বড় একটা ঘটনা তুই চাইপ্যা যাইতে পারতি না। জামাইর কাছে যদি কথাই লুকাইতে পারলি, তাইলে অন্যের লগে চোদানের বাকি রাখলি কী আর? আমি যহন কামে বাইর হই, তহন তোর খালাতো ভাইয়েরা কি তোর উকুন বাইছা দিতে আইয়া বইয়া থাকে, নাকি তর ছিঁড়া ক্যাঁথা সিলাই করতে বয়? আমি ঘরে থাকন অবস্থায় তো দেখলাম না কেউ ফুসি দিয়া দেখতে আইছে কোনোদিন!



সে কথা শুনে ভেতরে ভেতরে স্তব্ধ হয়ে বসেছিল আমিনা। মনে মনে যা নিয়ে শঙ্কিত ছিল তার সব কিছুই লোকটি টেনে তুলেছিল শেকড়-বাকড় সহ। অথচ এ নিয়ে তাকে তেমন একটা যন্ত্রণা দেয়নি। সে ভেবে নিয়েছিল ট্রাক নিয়ে জেলায় জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়ানো লোকটির কোনো মনোযোগই নেই সংসারের প্রতি। আর এখন দেখা যাচ্ছে ঘরের একটি সুচের প্রতিও যেন তার সমান দৃষ্টি আছে।



কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আসন্ন সংসার বিচ্ছিন্ন দিনগুলো আরো অন্ধকারে বিলীন হয়ে যেতে দেখলেও মুখে মুখে হার স্বীকারের মতো বা নিশ্চুপ থাকার মতো দুঃসাহস হয় না তার। জিতে যাবার লক্ষ্যে সে যত কিছুই বলুক, বোনেরা যতই সাহস দিক না কেন এক দু মাসের যোগান দেবার সামর্থ্য তাদেরও থাকবার সম্ভাবনা নেই। পরের ছেলের পকেট কাটতে গিয়ে নিজের সংসার উজাড় করে দিতে চাইবে না কোনো মেয়েই। সে কথা সে নিজেও বোঝে। তবু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের দৃঢ়তার চেয়ে অন্ন-বস্ত্রের অনিশ্চয়তাই যেন পাগল করে দিচ্ছিল তাকে। তবু কখন যে নিজের অজান্তে কথার আগে ছিটকে পড়া থুতুর মতো বের হয়ে এসেছিল, মনে করছস তোর ভাত ছাড়া আমার দিন চলবো না? এহনও কোমর ব্যাকাইলে তোর মতন কত ব্যাডা দৌড় পাইরা আইবো!



-যা! যে তরে ভাত খাওয়ায় তার ভাতই খা! আমিও তরে বাইন তালাক দিলাম! যেই মুখে তুই আমারে এত বড় বড় কথা কইলি হেই মুখ আমি আর দেখুম না। বলতে বলতে সত্যিই মুখ ফিরিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল ফোরকান ।



হঠাৎ বাইন তালাকের কথা শুনতে পেয়ে তাড়া খাওয়া কুকুরের মতো রাস্তায় গিয়ে ছিটকে পড়ে কেঁদে উঠেছিল আমিনা। হাত-পা নেড়ে লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আরো জোরে জানান দিয়েছিল, আমারে বাইন তালাক দিছে গো!



যদিও পথচারী বা আশপাশের ঘর-বাড়ির লোকজনের সহানুভূতি তেমন একটা পায়নি। তবু ছুটা কাজের বুয়া পাশ কাটিয়ে আরেক বাড়ির কাজে যেতে যেতে বলে উঠেছিল, ব্যাডা মানুষের মাথা গরম হইলে কতবারই তালাক দেয়। এই তালাক হয় না।



রতনের মাকে তেমন একটা ভালোমতো না জানলেও তার কথাগুলো শুনে পায়ের নিচে যেন মাটির অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছিল আমিনা। খানিকটা আশাও যেন জেগে উঠেছিল সংসারের চৌহদ্দিতে ফিরে যাবার। আর সে ভরসাতেই ঘরের যাবতীয় মালামাল নিয়ে বাপের বাড়ি গিয়ে উঠেছিল কদিনের জন্যে। কিন্তু দিনের পর দিন পার হয়ে যেতে থাকলেও ফোরকানের মাঝে তার প্রতি প্রসন্ন হয়ে উঠবার কোনো লক্ষণ ফুটে উঠতে দেখা যায়নি। আশা আর সাহস জুগিয়ে চলা কুটিল বোনেরা একে একে দূরে সরে গেছে নানা অজুহাতে। এমন কি সুদীর্ঘকাল শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের প্রতি অবজ্ঞা অবহেলার পরিণতি হিসেবে তাদের কারো কাছ থেকেও কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি।



এদিকে চেয়ারম্যান কথা দিয়েছিল দুজনের মাঝে কোনো রকম আপস করিয়ে দিতে না পারলেও যাতে তার খাওয়া-পরার অভাবটা চলে যায় তার জন্যে কিছুটা হলেও আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করে দেবে খোর-পোষ হিসেবে। কিন্তু যেভাবে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির হার বেড়ে চলেছে এখানেও কোনো সম্ভাবনার আলো সহসা ফুটবে বলে মন থেকে কোনো রকম সায় পায় না।



ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের সামনের বারান্দায় সেই সকাল থেকেই বসে আছে সে। এপর্যন্ত এক ফোঁটা পানি পর্যন্ত পড়েনি তার পেটে। অথচ বেলা প্রায় মাথা বরাবর উঠে গেছে। চেয়ারম্যান আদৌ আসবে কি না সে কথাও বলতে পারছে না অল্প বয়স্ক সহকারী ছেলেটি। তবু বাড়ি ফিরে যাবার আগে শেষবারের মতো সে জানতে চায়, চ্যাহেরম্যান সাবের খবর পাইলেন কোনো?



-না। ফোন করছিলাম কয়েকবার। বলতে বলতে ছেলেটি হাতের কাগজগুলো ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে। তারপর আমিনার দিকে তাকিয়ে আবার জানায়, ধরলো না। মনে কয় ফোন হারাইয়া ফালাইছে নাইলে চুরি হইয়া গেছে।



সঙ্গে সঙ্গেই আরো বিমর্ষ হয়ে ওঠে আমিনার পাংশু মুখ। একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালে সহকারী ছেলেটি বলে, যাইবেন গা?

-আর কত বইয়া থাকুম?



-একটা কাজ করতে পারেন। আপনের জামাইরে তালাকের নোটিশ দেন! তিনমাসের মইধ্যে হ্যায় আপনের খোঁজ-খবর না করলে দুইজনের ছাড়াছাড়ি নয়তো ব্যাডার এক বছরের জেল হইবো। আবার জরিমানাও হইতে পারে দশ হাজার ট্যাকা।



কথা শুনে আমিনার হাই ওঠে। হাই চাপতে চাপতে বলে, আইচ্ছা বাপ-মার লগে বুইঝ্যা দেখি।



তারপরই বারান্দা থেকে দু ধাপ সিঁড়ি টপকে নেমে আসে সে। শরীরে আঁচলটা ভালো মতো জড়াতে জড়াতে পথের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে তার মনের ভেতর পাক খেতে থাকে যে, তালাক হোক বা না হোক, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক থাকুক আর না থাকুক দরকার খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা। জীবন নিয়ে বাঁচতে হলে সম্পর্কের চেয়েও জরুরি টাকা-পয়সা।

মন্তব্য ৪২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:৩১

খেয়া ঘাট বলেছেন: জীবন নিয়ে বাঁচতে হলে সম্পর্কের চেয়েও জরুরি টাকা-পয়সা। - একেবারে ঠিক কথা।

অনেক ভালো লাগলো।


২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৭:৫৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ খেয়া ঘাট। কিন্তু অনেক পরিবারকে দেখবেন নিত্য অভাবের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে, তাদের কাছেও টাকা পয়সাটা হয়তো জরুরি কিন্তু সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা প্রভাব ফেলছে না বলেই মনে হয়।

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:৩২

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: বেশ মজার তথ্যবহুল পোষ্ট
শুভকামনা +

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:১৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ বন্ধু।

৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৭:০০

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: “এইডা কি জানস না যে, মক্কায়ও বেশ্যা আছে, তারাও হজ করে বছর বছর?”
-গিয়ানের কথা :P

“ব্যাডা মানুষের মাথা গরম হইলে কতবারই তালাক দেয়। এই তালাক হয় না।”
-হুম, কিন্তু তা তো সত্য হলো না আমিনার ক্ষেত্রে!

গল্পটির খুব তাৎপর্যপূর্ণ একটি ভূমিকা আপনি দিয়েছেন। গল্পের চরিত্রগুলোর জন্য যা ভবিতব্য, তা প্রথম অনুচ্ছেদে দিয়েছেন। শেষও করেছেন একই বক্তব্য দিয়ে। গল্পের ভেতর প্রচলিত গ্রাম্য কথাগুলোর ব্যবহারও মানিয়েছে গল্পের কাহিনীর সাথে।

তারপরও আমি আমিনার বিশ্বাসের সাথে একমত নই। অর্থের চেয়েও সম্পর্ক বড়। কিন্তু আমিনার যুক্তির সাথে আমি একমত। এমন পরিস্থিতিতে সম্পর্কের প্রতি বিতৃষ্ণা আসবেই।

প্রান্তিক মানুষগুলোকে নিয়ে আপনার লেখা এর আগেও একটি সুন্দর গল্প আমি পড়েছি। আপনার লেখার বিষয়টিতে আমার জোর সমর্থন আছে।

অনেক শুভেচ্ছা জানবেন, প্রিয় জুলিয়ান সিদ্দিকী ভাই :)

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:২১

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ভাইজান, খেয়া ঘাট-এর মন্তব্যেও কথাটা বলেছি, যে সম্পর্কটা অনেকেই ধরে রেখেই জীবনে সংসার সামলাতে চেষ্টা করে। যাদের কাছে সম্পর্ক নয় আর্থিক ব্যাপারটাই মূখ্য আমিনা তাদের প্রতিনিধি। আর আর্থিক ব্যাপারটা যখন মাথা তুলে দাঁড়ায় সম্পর্কটা তখনই মুখ থুবড়ে পড়ে এক সময়। সম্পর্কের চেয়ে বড় হয়ে দেখা দেয় প্রয়োজন।

আমার অন্য কোনো গল্পের প্রতি ভালো লাগা অবশ্যই আমার জন্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

ভাল থাকুন। শুভকামনা আপনার জন্যেও।

৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:১০

মামুন রশিদ বলেছেন: সব হারানো মানুষ বেঁচে থাকার আশায় খড়কুটো জড়িয়ে ধরে । সংসার হারানো স্ত্রী বেঁচে থাকার আশায় খরপোশ খোঁজে । কিন্তু আমিনা আরও একটু ভাল ভাবে বাঁচতে চায় । হারানো সংসারটাই খোঁজে সে আপন মনে ।

গল্পের প্লট যথেষ্ট জটিল । বিশেষকরে বিবাহপূর্ব এবং পরবর্তি প্রণয় এবং একই সাথে তালাকের মত বিষয়কে ফুটিয়ে তোলা যথেষ্ট কঠিন । আপনি মুন্সিয়ানার সাথেই এটা করতে পেরেছেন । পাশাপাশি আন্চলিক ভাষার ব্যবহার গল্পের সৌন্দর্য অনেকটুকু বাড়িয়ে দিয়েছে । তবে স্বামীর প্রতি আমিনার নোংড়া খিস্তি একটু দৃষ্টিকটু লেগেছে । আমিনার চরিত্রকে আরেকটু মোলায়েম ভাবে উপস্থাপন করা যেত ।

সব মিলিয়ে চমৎকার একটা গল্প পড়ার অভিজ্ঞতা হল ।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:৩০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন।

আজকেই কোনো একটি পত্রিকায় গল্প পড়লাম যেখানে "খাঙ্কির পুত" গালিটা ব্যবহার করা হয়েছে। ইচ্ছে থাকলেও এ ক্ষেত্রে আমি তা ব্যবহার করতে পারিনি। অবশ্য করা যেতো।

আমিনার খিস্তি এবং চরিত্রের চেয়ে বাস্তবে আরো হীন চরিত্রের আমিনাদের দেখেছি, কিন্তু আমার অক্ষমতা তা কখনো গল্পে ফুটিয়ে তুলতে পারবো না বা যদি পারতামও পাঠকের জন্য তা হয়ে উঠতো এক ধরনের অত্যাচার।

বাস্তবের আমিনাদের জন্য সহানুভূতি আমার ততটা না থাকলেও গল্পের চাহিদা অনুযায়ী চেষ্টা করেছি যতটা রেখে-ঢেকে উপস্থাপন করা যায়। তবু ব্যাপারটা নিয়ে আমার ভাবনার আরো সুযোগ রয়েছে বলে মনে করি।

আবারও ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:৪৯

মাহবুব আলী বলেছেন: সব মানুষের জীবনেই কিছু না কিছু স্বপ্ন থাকে। কিন্তু আশৈশব লালিত স্বপ্নগুলো যখন দেয়ালের গায়ে লেগে থাকা আলগা বালির মতো কঠিন সময়ের উত্তাপে বিযুক্ত হতে থাকে তখন কোনো কিছুর ওপরই বিশ্বাস বা ভরসা রাখার দুঃসাহস হয় না।

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক থাকুক আর না থাকুক দরকার খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা। জীবন নিয়ে বাঁচতে হলে সম্পর্কের চেয়েও জরুরি টাকা-পয়সা।


গল্পের এই দুটো অংশ খুব ভালো লাগল। সবচেয়ে বড় কথা, পুরো গল্পের ফ্লো যেমন চমৎকার তেমন প্লট। একটি বিশেষ শ্রেণির জীবনযাপন এবং নানান সংঘাত আপনার দক্ষ হাতে উঠে এসেছে। শুভকামনা।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:৫৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ওহ, ধন্যবাদ ভাইজান।

আপনার নির্বাচিত অংশগুলো কিন্তু আমাকে অনেকদিন ভাবিয়েছে।
ভালো থাকুন সব সময়।

৬| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:২৫

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: সব মিলিয়েই তো জীবন!

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৪৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ঠিক। সব মিলিয়েই জীবন। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৭| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:০১

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: গল্পটা বেশ ভালো লাগল জুলিয়ান দা। আসলে মানব সম্পর্ক গুলো অতি মাত্রায় জটিল। আপনার গল্পে যে সম্পর্কগুলোর যে দন্দ এবং জীবনের প্রয়োজনে অর্থের যে গুরত্বপূর্ন ভূমিকা তা দারুন ভাবে ফুটে উঠেছে।

অনেকেই ভাবেন হয়ত সম্পর্ক বেশি জরুরী নাকি অর্থ? বর্তমান সময়ে আসলে এটা নির্ধারন করা মুসকিল। তবে আমার মতে সমসাময়িক কালে সম্পর্কগুলোর গভীরত্ব নির্ধারনে অর্থের বিশাল প্রয়োজন আছে। খুব কাছের একজন মানুষকে দেখেছি ৩ বছর প্রেম করে বিয়ে করার প্রায় ৬ মাসের মাথায় অর্থ সংক্রান্ত ব্যাপারে বিচ্ছেদ নিয়ে নিতে।

অনেক ভালো থাকবেন।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৪৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: আর্থিক সংকটের কাছে, আর্থিক চাহিদার কাছে মার খেয়ে যায় সম্পর্কের দৃঢ়তা।

ভাল থাকুন সব সময়।

৮| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৫

ঢাকাবাসী বলেছেন: টাকা থাকলেই বাকি সব আসে.. থাকে। ভাল গল্প।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:০৫

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

আজকাল আমাদের মূল্যবোধও পরিবর্তন হইয়া যাইতাছে। পরে না আম্রিকার মতন সংসার জীবন কাটাইতে হয় ক্ষণস্থায়ী ভাবে কে জানে।

৯| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: একটা শক্তিশালী গল্প।

আপনি খুঁটিনাটি কোথাও ছাড়েননি, এটা ভাল লাগল। সাবলীলভাবে চিন্তা ভাবনার অনেক অবকাশ রেখেছেন পাঠকের জন্য, বিশেষতঃ আমিনার সাইকোলজি নিয়ে অনেক সুন্দর বর্ণনা পেলাম লেখায়।

ভালো লেগেছে লেখক।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৫১

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ শঙ্কু।

অনেকদিন ধরে মাথায় ছিলো ব্যাপারটা। আর এমন ব্যাপারগুলোর সঙ্গে আমার প্রত্যক্ষ পরিচয় আছে অনেক আগে থেকেই। এবার তাই লিখে ফেললাম।

তবু আমার মনে সন্দেহ ছিল কোথাও কমতি রয়ে গেছে কি না।

ভাল থাকুন সব সময়।

১০| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: কেন যেন শুরুর দিকে গল্পটা আমাকে টানতে পারছিল না। শব্দ বিন্যাস হয়ত অন্য রকম হলে ভাল হত কিংবা উপস্থাপনার কিছু ব্যাতিক্রম। আমি ঠিক নিশ্চিত নই কেমন হলে ভাল হত। তবে এটাই সত্যি আমার ভাল লাগছিল না। তবুও পড়ছিলাম। জুলিয়ান সিদ্দিকীর লেখা বলেই – দেখি না সামনে সোনাদানা মিলতেও পারে। আমার আশা বিফল হয় নি। কিছু দূর এগোনোর পরেই গল্পের ভিতরে পুরো মাত্রায় ঢুকে গিয়েছিলাম। আর অস্বস্তি লাগে নি।

কিন্তু আশৈশব লালিত স্বপ্নগুলো যখন দেয়ালের গায়ে লেগে থাকা আলগা বালির মতো কঠিন সময়ের উত্তাপে বিযুক্ত হতে থাকে তখন কোনো কিছুর ওপরই বিশ্বাস বা ভরসা রাখার দুঃসাহস হয় না।
গল্পের এই অংশটা আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে। উপমাটা চমৎকার। কিন্তু তারপরও কথা থাকে সব কথা শেষ হয়ে গেলে। শেষ পর্যন্ত তারাই বিজয়ী হয় যারা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সঠিক স্বপ্ন দেখার দুঃসাহস দেখাতে পারে।

গল্পটা বেশ কিছু বিষয় বেশ মুনশিয়ানার সাথে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছে –
১) রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। রেগে গিয়ে কেউ জিততে পারে না। গ্রাম বাংলায় একটা কথা আছে, রাগে খোন্দ হয় না। অর্থাৎ রাগ দিয়ে ফসল ফলে না। সে জন্য চাই ধৈর্য। আমিনা যদি রেগে গিয়ে তর্ক না করত, ধৈর্য ধরে চুপ থাকত তাহলে তার সংসার হয়ত টিকে যেত।
২) আমিনার মিথ্যা অহংকারই তার দাম্পত্য পতনের মূল হয়েছে।
৩) বিচ্ছেদের পর এদেশের নারীরা সাধারণত যে প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যায় সেটাও চমৎকারভাবে লেখক ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন।
৪) বিয়ের পর অনেক সময়েই মেয়েদের বাপের দিকের আত্মীয়স্বজনেরা মেয়েদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করে।

চমৎকার একটি গল্প আমাদেরকে উপহার দেয়ার জন্য লেখককে আন্তরিক ধন্যবাদ।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ড্রিম।

আপনার দৃষ্টি-ভঙ্গি আর বিশ্লেষণ খুব ভালো লাগলো।

১১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০০

তাসনুভা সাখাওয়াত বীথি বলেছেন: একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাকার জন্য অনেক গুলো বিষয় জরুরী। সম্মান, বিশ্বাসের পাশাপাশি টাকারও প্রয়োজন। কথাটা অপ্রিয় হলেও সত্য।

অভাব মানুষকে স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা ভাবনা করতে বাঁধাগ্রস্ত করে।

গল্প ভালো লাগল ।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: বিথি চমৎকার বলেছেন।

তবু কথা থাকে যে, সংসার হচ্ছে দুটি মানুষের জীবনের চরম স্যাক্রিফাইস। টাকাটা প্রয়োজন, কিন্তু সংসার বা সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধান অনুষঙ্গ হয়তো নয়। এমন অনেক অভাবি সংসার দেখেছি যারা খুব ভালো সম্পর্কে আবদ্ধ আছেন। টাকার প্রয়োজনের কাছে সম্পর্ক তুচ্ছ হয়ে যায়নি।

ভাল থাকুন সব সময়।

১২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১২

জুন বলেছেন: মানুষে মানুষে সম্পর্ক কত যে জটিল তা শুধু দু পরিবার থেকে আসা স্বামী স্ত্রী্র মাঝেই নয় । বর্তমান সমাজে বাবা মা ভাই বোনদের মাঝেও দেখা যায় নানামুখী জটিলতা।আর অর্থনৈতিক প্রয়োজন সব শালীনতাকেই ঢেকে দেয়।
খুব সুন্দর লিখেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা ।
+

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:২২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ জুন।
অর্থনৈতিক প্রয়োজন যখন সব শালীনতাকে ঢেকে দেয় তখনই সম্পর্কের স্থায়ীত্ব কমে যেতে থাকে। মানুষ তখন দিন দিন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যায়। শুরু হয় টাকার পেছনে ছোটার পাগলামী।

ভালো থাকুন সব সময়।

১৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৩৪

মাগুর বলেছেন: মানব সম্পর্কের রহস্য উদঘাটন মনে হয় সম্ভব নয়! কারন প্রতি মুহূর্তেই নতুন নতুন মানুষ জন্ম নিচ্ছে, নতুন নতুন সম্পর্কের জাল তৈরী হচ্ছে!

গল্পে অনেক গুলো প্লাস। ভালো লাগা জানবেন সম্মানিত লেখক :)

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৩৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ মাগুর ভ্রাতা।
মানুষের সম্পর্কগুলা যতটা জটিল তার চেয়ে আরো জটিলস্য জটিল হচ্ছে সংসারের সম্পর্ক।

ভালো থাকবেন সব সময়।

১৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৩৪

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: মানুষের জীবনে বিশেষত মেয়েদের জীবনে সংকট আসলে তখন বেশীর ভাগ মেয়েই হয়তো চিন্তা করে তাদের জন্য আর্থিক সংকট নিদারুণ এক অভিশাপ। মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়া জরুরী। কারণ লোভ, জেদ ইত্যাদি কাছে মাঝে মাঝে সম্পর্কের বুনিয়াদ এতো ঠুনকো হয়ে যায় যে তখন বেঁচে থাকা , এক মুঠো অন্নের চিন্তায় ক্ষুধা গলার কাছে লটকে থাকে সে সময় আরও বেশি বেশি ।

আমিনার বর্তমানে সংকটের উৎকণ্ঠিত চিত্রায়ন খুব সুন্দর হইছে। আর স্ল্যাং গুলো আরোপিত মনে হয় নাই। কাহিনীর প্রয়োজনে সংলাপের সাথে সুন্দর ভাবে মিশে গেছে।

শুভকামনা জুলিয়ান দা

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৫৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার গুছানো মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকেন সব সময়।

১৫| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:০৫

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: সম্পর্কের চেয়ে জীবনে টাকা-পয়সাটাই জরুরি।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৫২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ অভি। ভালো থাকেন সব সময়।

১৬| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:৫৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

মানুষের সম্পর্ক খুব কমপ্লেক্স। টাকা পয়সা অনেকটাই ফেক্ট। এখনতো এটাই বাস্তবতা।

গল্পে ++++ রইল

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:০৭

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: সহমত। এখন এটাই বাস্তবতা। সামনে আরো দুর্দিন আসছে।
ভালো থাকুন।

১৭| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৭:১৬

শ্যামল জাহির বলেছেন: সুখে- 'অর্থ'। আর;
শান্তিতে 'সুসম্পর্ক'!
আমিনারা পরিস্থিতির স্বীকার।
ভিন্ন হাতে মশলা দিয়ে মিনা বাজারের পান খেয়ে যে পুরুষ অভ্যস্ত; সে পুরুষের কাছে আমিনারা চিরকালই ত্রুটিপূর্ণ!
তালাকে বুয়ার মন্তব্যে একমত।
---------------
চেতনার জন্য স্যালুট!

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:২০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ শ্যামল জহির। কোনো কোনো আমিনাদের লোভ, কোনো কোনো ফোরকানদের নির্লিপ্ততাও অনেক সময় এমন ব্যাপারগুলোকে ত্বরান্বিত করে।

১৮| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪

শ্যামল জাহির বলেছেন: প্রতি উত্তরে আমার নামের 'জ' এর সাথে 'আকার'কে কিন্তু এতিম করে দিচ্ছেন জুলিয়ান ভাই! :(
তুষ্ট- স্যালুট গ্রহণ করার জন্য।
লিখা; গল্পে প্লাস! :)

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:১৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: @শ্যামল জাহির

এটা কোনো ব্যাপার্না। বাঙালিয়ানা বলে কথা। মানুষকে বলি মানু। :P

১৯| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:১১

সোমহেপি বলেছেন: আমাদের ব্যক্তিত্ব, মতামত এগুলো যখন প্রকাশ করতে চাই পুরোপুরি- তখন অবলম্বনটা ভাল থাকা দরকার হয়।প্রান্তিক জীবনের গল্পে উঠে এসেছে মানুষের যাপিত জীবন।মানুষ আসলে এভাবেই বেঁচে থাকে।বিশেষ করে দরিদ্র মানুষগুলো।তারা এত অধিকার শাস্ত্র মত জীবন যাপন করে না।

ভাল লাগা

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৫১

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: আমাদের ব্যক্তিত্ব, মতামত এগুলো যখন প্রকাশ করতে চাই পুরোপুরি- তখন অবলম্বনটা ভাল থাকা দরকার হয়।

-ঠিক, পরাশ্রয়ী আর পরাধীন হলে অনেক কিছুই হজম করতে হয়, যা থেকে তাকে উদ্ধার করতে পারে সামর্থ।

ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকুন।

২০| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:২৪

মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: সংসার নিয়ে গল্প। ভালোলাগা।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ ইসহাক খান।

ভালো থাকুন সব সময়।

২১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৬

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: চমৎকার বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন লেখায়। খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। বিশেষ করে এই জায়গায় " কিন্তু আশৈশব লালিত স্বপ্নগুলো যখন দেয়ালের গায়ে লেগে থাকা আলগা বালির মতো কঠিন সময়ের উত্তাপে বিযুক্ত হতে থাকে তখন কোনো কিছুর ওপরই বিশ্বাস বা ভরসা রাখার দুঃসাহস হয় না। "


ভালো থাকুন। শুভ কামনা রইল :)

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:২৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ মহামহোপাধ্যায়। ভালো থাকুন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.