নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছাইয়ের নেই আগুনের ভয়

জুলিয়ান সিদ্দিকী

জগতের সব কাজই আমি পারি না। অনেক কাজে অলস হলেও লিখতে কখনও ক্লান্তি বোধ করি না। এতে করে আমার সময়গুলো ভালো কাটে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: অন্ত্যজ

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

ঝোঁকের মাথায় ঘর থেকে বের হবার সময় খেয়াল ছিল না ওয়ালেটের কথা। অফিস থেকে ফিরে পোশাক পালটে ট্রাউজার আর টিশার্ট পরেছিলেন সাব্বির খন্দকার। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সিগারেটের তেষ্টা পেতেই পকেট হাতড়ে দেখলেন সঙ্গে কিছু নেই। এমন কি এটিএম কার্ড, মাস্টার কার্ড, ন্যাশনাল আইডি কার্ড সবই ওয়ালেটে রয়ে গেছে। ফোনটা চার্জে দিয়েছিলেন। হয়তো সেটা খাটের কিনারায় ওভাবেই আছে।

সাব্বির খন্দকার হাঁটতে হাঁটতে হাতির ঝিল ফ্লাইওভারে উঠে পড়েন। মাঝামাঝি এসে রেলিঙের ওপর ঝুঁকে পড়ে নিচের দিকে একবার তাকান। তেমন একটা উঁচু মনে হয় না। এখান দিয়ে তাকে প্রায় সময়ই এয়ারপোর্ট যাতায়াত করতে হয়েছে। আশপাশের তেমন কোনো দৃশ্যই বলতে গেলে চোখে পড়েনি। যদিও সুবর্ণা অনেকবার নিষেধ করেছিল গাড়িতে বসে ছোটলোকের মতো মাথা চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে। কিন্তু গাড়ির ভেতর থেকে আশপাশে তাকানোর অভ্যাসটা ছাড়তে পারেননি কখনওই। তবু কেন যেন আজকের মতো দৃশ্যগুলো এতকাল চোখে পড়েনি তার। দুর্নামগ্রস্ত ঢাকা শহরটাকে নিয়ে একধরনের হিনম্মন্যতায় ভুগেছেন এতকাল। অথচ আশপাশে যেদিকেই তাকাচ্ছেন ফুরফুরে মেজাজে থাকলে এসব দৃশ্য দেখেই মুগ্ধ হতেন সন্দেহ নেই। এখন কিছুতেই আর মুগ্ধ হবার মতো মন মানসিকতা নেই। জগতের সব কিছুই তার কাছে এখন পানসে আর একঘেয়ে।

যারা বিবাগী হয়, সন্ন্যাসী বা গৃহত্যাগী হয়, তারা তো সঙ্গে টাকা পয়সা নিয়ে বের হয় না। তবু তাদের জীবন কাটে। না খেয়ে মরতে হয় না তাদের। এমন কি অনেককেই বিনা চিকিৎসায়ও মরতে হয়নি। সেই একই ঘর। একই বিছানা। একই চেহারা। একই খাবার। একই রুটিন। কোনো বৈচিত্র্য নেই। অতশত জায়গায় ঘুরে বেড়ালেন তবু মুগ্ধ হতে পারলেন না। আকর্ষণ বোধ করতে পারলেন না কিছুতে। সুবর্ণার সন্দেহ তার মাথায় গণ্ডগোল দেখা দিয়েছে। ভালো সাইকিয়াট্রিস দেখানো জরুরি। লক্ষণগুলো পরিষ্কার ফুটে না উঠলেও লক্ষণটা পুরোপুরিই মিলে যাচ্ছে। তার দাদার এমন হয়েছিল শেষ বয়সে। এ নিয়ে সাব্বির খন্দকারের কোনো দুর্ভাবনা হয়নি কখনও। মাথায় পুরোপুরি গোলমাল দেখা দিলেই বা মন্দ কী এমন হতো? অন্তত নিজের অস্তিত্বকে বিস্মৃত হয়ে থাকা যেতো কিছু কাল।

এই যে মানুষ বলে, স্ত্রী-সন্তান, টাকা-পয়সা, সহায়-সম্পদ সবই মায়া। একবার জুটে গেলে তার মায়া কাটিয়ে একা হবার আর সুযোগ থাকে না। তাই হয়তো ব্রহ্মচারী হতে হলে গৃহধর্ম আর দাম্পত্যে জড়ানোর আগেই তাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। কিন্তু এমন কথা কে বা বিশ্বাস করবে যে, পঁচিশ বছর সংসার ধর্ম পালন করেও মন সংসারমুখি হলো না। একই সময় কালে স্ত্রীকে আঁকড়ে ধরে ঘুমালেও তার সঙ্গে খুব সুন্দর একটা সমঝোতা থাকলেও এক মিনিটের জন্যেও তার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করেননি। পঁচিশ বছরের ভেতর ভুল করেও কোনো আকর্ষণ বোধ করেননি স্ত্রীর প্রতি। যদিও শরীরের জন্যে শরীর সাড়া দিয়েছে, তবু তাতে ছিল না কোনো পরিতৃপ্তির ব্যাপার। কিন্তু ব্যাপারটা হয়তো কখনও বুঝতে পারেনি সুবর্ণা। স্বামীর কাছ থেকে না চাইতেই প্রয়োজনীয় সব কিছু পেয়ে যাওয়াটাকেই হয়তো ধরে নিয়েছে ভালোবাসা। তা ছাড়া দুটো সন্তান শান্ত আর শান্তা। যাদের বয়স তেইশ আর একুশ। ভালোবাসা না থাকলে ও দুজন এলো কী করে? সহজ সমাধান। তবু সাব্বির খন্দকারের মতে ওরা হচ্ছে বাই-প্রোডাক্ট।

ভালোবাসার সৃষ্টি নয়। আর তেমনটি না হলেই বা কী আসে যায়? এ নিয়ে তাদেরও কোনো নিজস্ব ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। এ নিয়ে কোনো জিজ্ঞাসাও তাদের কারো মুখে শোনা যায়নি। ভালোবাসা-স্নেহ-মমতা বর্জিত একটি মানুষ দিনরাত খেটেখুটে কেন ব্যাঙ্কে টাকা জমাবে? কার বা কাদের সুখের জন্যে বাড়ি-গাড়ি-বীমা করাবে? স্ত্রী-সন্তানের জন্যেই তো! ভালোবাসা না থাকলে অত কিছু করবার মানসিকতা হলো কী করে?
মানুষকে অত কিছু বোঝানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া মানুষের বোধ-বিবেচনারও একটি সীমাবদ্ধতা আছে। সে না বুঝেও অনেক সময় ভান করে। উত্তর দেয় ভাসা ভাসা। অক্ষমতা গোপন করতেই সহজ-সরল বক্তব্যের বদলে জটিল বাক্যের আঁক কষে। এক অন্ধকারকে চাপা দিতে চেষ্টা করে আরেক দুর্বোধ্যতার অন্ধকার ঢাকনায়।

কারো চোখে পড়বার ভয়েই হয়তো তিনি ফ্লাই ওভার থেকে নেমে পড়েন দ্রুত পায়ে। রাস্তার পাশ ঘেঁষে চলেন সতর্ক হয়ে। যেখানে ফুটপাত থাকে সেখানে ফুটপাত দিয়েই চলেন। চলতে চলতে এক সময় তার পায়ের তলা ব্যথা হয়ে যায়। ব্যথা হয় দু ঊরু। এমন কি হাঁটু দুটোও। তার মনে হয় কোথাও বসে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু তার থামতেও ইচ্ছে করছিল না। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন যে, থেমে যাওয়া মানেই ফুরিয়ে যাওয়া। এর সঙ্গে মৃত্যুরও একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে যেন। ব্যাপারটাকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে না পারলেও আবাল্য বিশ্বাসে এখনো ফাটল ধরেনি।

তার দাদু। বাবা। মা। সবার বেলাতেই দেখেছেন যে, তারা যখন হাঁটা-চলা করতে না পেরে শয্যাশায়ী হয়েছেন, তারপর থেকেই কেমন যেন বিছানার সঙ্গে লেপটে গেছেন ধীরে ধীরে। সে অবস্থা থেকে আর উঠতে পারেননি। মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করেছেন সেখানেই।

তাকে পাশ কাটিয়ে হুসহাস চলে যাওয়া গাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে ছোটবেলা স্কুল থেকে ফেরার পথে চলতি বাস বা রিকশার পেছনে উঠে পড়তেন। বাড়ির কাছাকাছি রাস্তায় বাঁক নেবার সময় গতি কমলে চট করে নেমে পড়তেন। এতে মজাটা যেমন হতো, পথটাও ফুরিয়ে যেত চট করে। এখন তার ইচ্ছে করছিল কোনো একটা বাসের পেছনে বাম্পারে উঠে পড়তে।

বেশ কদিন ধরেই এক ধরনের অবসাদ তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলছিল ধীরে ধীরে। কোনো কিছুতেই মন লাগাতে পারছিলেন না। অফিসে যাওয়া আসা করেছেন যন্ত্রের মতো। যেখানে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে তার প্রথম কাজ ছিল শেভ করা। তাতেও যেন রাজ্যের বিরক্তি জন্ম নিল। এ নিয়ে সুবর্ণা একদিন কটকটে স্বরে বলে উঠেছিল, মুখটা তো আরাকানের জঙ্গল হয়ে উঠছে দিনদিন। কোনোদিন দেখা যাবে চিনতে না পেরে কেয়ারটেকার বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না।

নিরাসক্ত কণ্ঠে সাব্বির খন্দকার বলেছিলেন, তোমরাও যদি চিনতে না পার তো ফিরে যাব। কোনো প্রমাণ পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করব না।

-আচ্ছা, আমি কি কোনো মন্দ কথা বলেছি তোমাকে?

অবাক কণ্ঠে বলে উঠেছিল সুবর্ণা। তারপর কেমন হতাশা মিশিয়ে আবার বলেছিল, সামান্য একটা কাজের কথাও হজম হলো না তোমার, অমনি অভিমান হয়ে গেল?

এরপর সুবর্ণা আরও অনেক কথা বললেও তিনি কোনো কথার মারপ্যাঁচে যাননি। তাচ্ছিল্য বা বিরক্তি বুঝতে পেরে চুপ থেকেছিলেন ইচ্ছে করেই। তার তখন মনে হচ্ছিল আসলে সুবর্ণা, শান্ত বা শান্তা সবার কাছেই তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। টাকা-পয়সার দরকার হলে আজকাল তার কাছে হাত পাততে হয় না তাদের। অপেক্ষায় থাকতে হয় না কোনো কিছু অনুমোদনের জন্যেও। নিজেদের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অধিকার পেয়ে গেছে তারা। কাজেই সাব্বির খন্দকারকে এখন কেনই বা তোয়াজ করতে হবে তাদের?

প্রকৃতপক্ষে তখন থেকেই ভেতরটা ভাঙতে আরম্ভ করেছিল তার। নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করেছিলেন বারবার, তাহলে কী করতে ঘরে ফেরেন প্রতিদিন? তার এই ফিরে আসা কি একটু নির্ভার ঘুমের প্রয়োজনে, নাকি নিদারুণ ক্ষুধায় ভরপেট খাওয়ার জন্যে? আর মাঝে মধ্যে খুব বেশি ধৈর্য হারা হলে সুবর্ণাকে নিজের মতো পেতে?

অবশ্য নিয়ম করে রাত দশটায় ঘুমিয়ে পড়বার আগে দেখতে পেতেন হয় টিভি নয়তো ফোন নিয়ে ব্যস্ত আছে সুবর্ণা। ছেলে-মেয়ে দুটো আদৌ ঘরে থাকে বা থাকে না টের পেতেন না কখনওই। অনেকদিন হয় তাদের কারো সঙ্গে তার দেখা-সাক্ষাৎ বা ফোনেও কথাবার্তা হয়নি। এমন তো নয় যে, এ বাড়ির আশ্রিত বা দূর সম্পর্কের আত্মীয় সে বা এমনও কেউ না যে, দিন কয়েক ভালোমন্দ খেয়ে বিদায় হয়ে যাবে। ঘর যদি ঘুম আর খাওয়ার জায়গা হয়ে থাকে, তাহলে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের ঘর নেই। বিছানা নেই। তবু তারা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। তিন বেলা ভালো খাবার না পেলেও অনেকেই বেঁচে আছে ভালো মতো। ব্যক্তিগত গাড়ি না থাকলেও তাদের চলা থেমে নেই। কোথাও যাতায়াতের ব্যাপারগুলোও আটকে থাকছে না। আচ্ছা দেখা যাক, এভাবে বেঁচে থাকা যায় কিনা। তারপরই কোন ফাঁকে তিনি বেরিয়ে পড়েছিলেন নিজেই বুঝতে পারেননি।
পথ চলতে চলতে সন্ধ্যার আবছা আলোটুকুও নিভে যায়। কিন্তু তার আগেই শহরের স্ট্রিট লাইট জ্বলে উঠে তাকে পথ দেখালেও ক্লান্তির মোড়কে ঢাকা পড়ে যায় দৃষ্টি। শাহজাদপুর এসে নিতান্তই বাধ্য হয়ে বসে পড়তে হয় ফুটপাতের ওপর। ক্ষুধা-তৃষ্ণা তো ছিলই। কিছুক্ষণ পর ধাতস্থ হতেই তার চোখে পড়ে আমেরিকান কনস্যুলেট অফিস।

প্রথমবার তিনি যখন আমেরিকায় যান, তার আগে সাক্ষাৎকার দিতে নাম নিবন্ধন করাতেই লেগে গিয়েছিল পুরো একটি সপ্তাহ। তখন তার মনে হয়েছিল বাংলাদেশ কোন দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েছে? পিছিয়ে পড়া জাতি কি আমেরিকায় যেতে অমন দীর্ঘ লাইন দেয়? সকালের দিকে এসে লাইনে দাঁড়ালে ফিরে যেতে হয়েছে সন্ধ্যার দিকে। পুরোটা দিনই খাওয়া হতো না তেমন কিছু। আজও কিছু খাওয়া হবে কিনা সন্দেহ। সঙ্গে টাকা-পয়সা নেই যা দিয়ে কিছু কিনে খাবেন। ঠিক তখনই তাকে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় কোনো পথচারী তার কোলের ওপর একটি তেলতেলে কাগজের প্যাকেট ফেলে দিয়ে যায়।

ব্যাপারটা ভুল করেই ঘটেছে কিনা ভাবতে ভাবতেই প্যাকেট খুলে দেখতে পান ভেতরে আরও দুটো চৌকো বাক্স। চেনাজানা মিষ্টির দোকানের চিহ্ন প্যাকেটের গায়ে। এগুলো সাধারণত শহর এলাকায় মিলাদ বা কোনো মিটিঙে উপস্থিত লোকজনের জন্যেই করা হয়। দুটো বাক্সে দুটো করে নিমকি, একটি করে লাড্ডু আর সন্দেশ। ব্যাপারটা তার ভালোই লাগে। খেতে খেতে আপন মনে হাসতে হাসতে ভাবেন, লোকটির নিশ্চয় ডায়াবেটিস আছে তার ওপর নিঃসঙ্গও। ঘরে খাওয়ার মতো কেউ থাকলে অমন করে ছুঁড়ে দিয়ে যেত না।

হঠাৎ মুখ তুলতেই তিনি দেখতে পান কটি উৎসুক চোখ তাকে দেখছে। দৃষ্টি ফিরিয়ে খাবারের দিকে মনোযোগ দিতেই শুনতে পান তাদেরই কেউ একজন বলছে, মনে হয় ভালা পয়সাঅলা ঘরের মানুষ। মাথা আউলাইছে বেশিদিন হয় নাই।

এবার আর হাসি আসে না সাব্বির খন্দকারের। কেমন একটা জেদ কাজ করে ভেতরে ভেতরে। রাত বাড়লে আর কিছুই দেখতে পাবেন না। চশমাটা অন্তত সঙ্গে রাখা উচিত ছিল। খানিকটা আক্ষেপ থাকলেও ভালো লাগছিল এই ভেবে যে, রাতের খাওয়ার ভাবনা আর নেই। এখন ঘুমের কোনো একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে নিশ্চয়। এক গ্লাস পানি খেতে পারলে ভালো হতো। ভাবতে ভাবতে মাথা ঘুরিয়ে আশপাশে তাকান তিনি। দেয়ালের পাশে একটি পিঠার দোকান চোখে পড়ে। হাড্ডিসার দেহের এক মহিলা বসে বসে চিতই পিঠা বানাচ্ছে। পাশের জগ থেকে একজনকে পানি ঢেলে দিতে দেখতে পেয়ে উঠে পড়ে পিঠার দোকানের সামনে গিয়ে বললেন, এক্সকিউজ মি, এক গ্লাস পানি দেয়া যাবে?
কথা শুনে মহিলা বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকালেও প্লাস্টিকের হলুদ গ্লাস ভরে পানি এগিয়ে দেয়।

মহিলার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে কয়েক ঢোকে পানি পান শেষ করে গ্লাস ফেরত দিতে দিতে বলেন, থ্যাঙ্ক ইউ!

শূন্য গ্লাস ফেরত নিয়ে বিভ্রান্তি কাটাতেই হয়তো মহিলা নিজে নিজেই বলে ওঠে, পড়া-ল্যাহা জানা মানুষ পাগল অইলে কীরাম লাগে!

সাব্বির খন্দকার কথাগুলা খেয়াল করেন না বা শুনতে পেলেও অনুচ্চ শব্দের কারণে হয়তো বুঝতে পারেন না। ক্লান্তি আর অবসাদ মিলে মিশে অবাধ্য ঘুম চেপে বসেছে তার দু চোখের পাতায়। অনেক দিন হয়ে গেল এমন গভীর ঘুমের বোধে আক্রান্ত হন না। সার্টার নামানো একটি বন্ধ দোকানের সামনে হেলান দিয়ে বসলেও তার ইচ্ছে হচ্ছিল শুয়ে পড়তে। বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থেকেই হয়তো ঠাণ্ডা হাওয়া বইছিল। ওপর দিককার ফ্লোরে উঠবার সিঁড়ির পাশেই অনেকগুলো বাক্স স্তূপ করে রাখা। ঠেলে ঠুলে সেগুলোর ফাঁকে একটির ওপর শুয়ে পড়লেন কিছু না ভেবেই। সে সঙ্গে উপলব্ধি করতে পারছিলেন যে, ঘুম যখন আসে, তখন সময়-অসময় আর স্থানের ভেদ ঘুচিয়ে দিয়েই আসে। এমন এক ঘুমের তীব্রতার প্রত্যাশায় ছিলেন অনেকদিন ধরেই।

মাস খানেকের ভেতরই সাব্বির খন্দকারের চেহারা বদলে যায়। গোসল-ধোওয়ার অভাবে পরনের পোশাক ময়লা হতে হতে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। খালি মেঝেতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বা রাতের শীতল বাতাস অথবা কুয়শার কারণে বুকে কফ জমাট বেধে গেছে। সব সময় একটু একটু কাশি থাকলেও মাঝে মাঝে কাশির দমকে সামনের দিকে বাঁকা হয়ে যান। সকাল থেকে পেটে কিছুই পড়েনি। ফুটপাতের ওপর চুপচাপ বসেছিলেন তিনি। এরই মাঝে দুজন ভিখিরি বা তাদের দলের কেউ তাকে এলাকা ছেড়ে যেতে নয়তো ভিক্ষা নিতে বারণ করে দিয়েছে। তবু কেউ কেউ তার সামনে এক দু টাকা থেকে আরম্ভ করে পাঁচ দশ টাকা ছুঁড়ে ফেলে যায়।

নিজেকে নিয়ে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা ঢের হয়ে গেছে। শরীরে তেমন রোগ ছিল না। এখন অনেক ধরনের রোগই বাসা বেঁধেছে। তবে বড় লাভ যেটা হয়েছে তা হলো- ঘরে বা জিমে গিয়ে ব্যায়াম করে করেও মেদমুক্ত হতে পারছিলেন না। এখন শরীরে কোনো মেদ নেই। পেটের অবস্থান প্রায় পিঠের দিকে ঢালু হয়ে গেছে। ইচ্ছে করে না খেয়ে থাকা আর খাবারের অভাবে উপোস থাকা ব্যাপারটি এক নয়। অভাবী জীবন যাপন আর অভাব থেকে বেরিয়ে আসবার লড়াইটাতেও বিস্তর প্রভেদ। তবে স্নেহ-ভালোবাসাটা সব অবস্থাতেই তার কাছে একই রকম মনে হয়েছে।

প্রতিদিন কাজে যাবার সময় গার্মেন্টসের শ্রমিক আকলিমার ভালবাসায় কোনো ফাঁকি-ঝুঁকি বা স্বার্থের গন্ধ পাননি তিনি। তার একটাই সান্ত্বনা- লোকটা দেখতে বাবার মতো। সেদিন হঠাৎ তাকে ফুটপাতে আবিষ্কার করে চমকে উঠেছিল মেয়েটা। দুটো হাত ধরে বলে উঠেছিল, আপনেরে দেখলে খুব মায়া লাগে আমার। বাসায় চলেন। আপনের খেদমত করমু আর বাবা ডাকমু। প্রতিদিনের অনুরোধে সাড়া না পেয়ে আরো দুজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে প্রায় জোর করে তাকে ধরে নিয়ে গেছে বস্তিতে। তেমন জোর করেই গোসল করিয়েছে নতুন সাবান দিয়ে। জমানো টাকা থেকে লুঙ্গি-গামছা কিনে দিয়েছে। কিনে দিয়েছে একটি পাঞ্জাবি। নামাজ পড়বার জন্যে একটি টুপিও। সেই সঙ্গে নিয়মিত কাশির ওষুধ তো আছেই। বস্তির লোকজনের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বাবা বলে। বাড়তি হিসেবে জানিয়েছে, মাথাডা বেশি গরম। সায়েবগো মতন কথা কয়।

হাসনুর মা পাশ থেকে বলে উঠেছিল, আসর, আসর! শিক্ষিত আর সায়েব কিসিমের কেউ আসর করছে।

সাব্বির খন্দকার পকেট থেকে টাকাগুলো বের করে এক ফাঁকে গুণে দেখেছিলেন সব মিলিয়ে হাজার দশেক হবে। এক হাজার আর পাঁচশ টাকার নোটই আছে কয়েকটা। কখন কে দিয়ে গেছে খেয়াল না করেই সামনে পড়া মাত্রই তুলে পকেটে ঢুকিয়েছিলেন। এখান থেকে ইস্টার্ন গার্ডেন খুব বেশি দূর হবে না। রিকশা বা সিএনজি নিয়ে চলে যাওয়া যাবে অনায়াসে। অচেনা আর রক্ত-সম্পর্কহীন মেয়ের কাছ থেকে যতটা ভালোবাসা –যত্ন আর সম্মান পাওয়া গেছে, জন্ম দিয়ে লালন-পালন করেছেন যাদের তাদের কাছে এর সিকি পরিমাণও পাওয়া যায়নি। তবু শেষবারের মতো তাদের সঙ্গে দেখা করা প্রয়োজন। নয়তো একটা দায় থেকে যাবে চিরকাল।

চলতে চলতে থেমে থাকা একটি গাড়ির সাইড মিররে নিজের মুখটা একবার দেখে নিলেন সাব্বির খন্দকার এবং কিম্ভূত একটি চেহারা দেখতে পেয়ে নিজের অজান্তেই হেসে উঠলেন হাহা করে। পথ চলতি মানুষের সচকিত অবাক দৃষ্টি দেখে নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে, তাকে আর কিছুতেই সাব্বির খন্দকার বলে মনে হচ্ছে না। একটি কল সেন্টারে ঢুকে পড়ে বললেন, একটি কল করবার দরকার ছিল।
দায়িত্ব পালন রত কম বয়সী ছেলেটি সন্দিহান চোখে তাকে দেখে বলল, ফোন করবা লগে ট্যাকা আছে?

ছেলেটির কথা শুনে হঠাৎ করেই যেন কাণ্ডজ্ঞান লোপ পায় সাব্বির খন্দকারের। স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে বলে ওঠেন, তোর দোকানের দাম কত?

তারপরই নিজের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হয়ে হেসে ওঠেন হাহা করে। তেমন অবস্থাতেই পকেট থেকে মুঠো ভরতি টাকা বের করে ছেলেটিকে দেখান। কিন্তু তাকে মোটেও বিচলিত মনে হয় না। স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলে, নাম্বার কও।

-আমার কাছে দে।

সাব্বির খন্দকারের কথা শুনে হয়তো বিশ্বাস হয় না ছেলেটির। বলে, নাম্বারটা কও আমি লাগাইয়া দেই। ওই পারের নাম্বার খোলা না বন্ধ বুঝমু কেমনে?

সাব্বির খন্দকারের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। বলেন, আচ্ছা লাগা। তারপর স্পষ্ট উচ্চারণে নাম্বার বললে ছেলেটি রিঙ দিয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফোন এগিয়ে দেয়।

সাব্বির খন্দকার কানে ফোন লাগিয়ে ওপাশের কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে বললেন, হ্যালো ফাহিম, কেমন আছ?

-স্যার, আপনি কোত্থেকে? এদিকে তো সব বন্ধ হতে চলল।

-একটি জরুরি কাজে আটকা পড়ে আছি। আচ্ছা দেখ তো আমার ওয়ালেটটা ড্রয়ারে আছে কি না?

-না স্যার। বাড়িতে ফেলে গেছিলেন সব। ম্যাডাম অফিসে দিয়ে গেছেন।

-সুবর্ণা কি দেশে আছে, ছেলে-মেয়ে দুটো?

-দিন দশেক হলো ওরা চলে গেছেন।

-যাবার আগে থানা-পুলিশ করেনি তো?

-মনে হয় না স্যার। থানা থেকে কেউ আসেনি এ পর্যন্ত।

-গুড। একজনকে চিঠি দিয়ে পাঠাচ্ছি। তার কাছে আমার ফোন, ওয়ালেট, চাবি সব দিয়ে দিও।

-আচ্ছা স্যার।

-আর কাজের প্রগ্রেস কতদূর হলো?

-সবই রেডি। শুধু আপনি দেখে সাইন করে দিলেই হয়ে যায়।

-আচ্ছা, আসবো খুব শীঘ্রিই। লোকটার হাতে সব দিয়ে দিও। কিছু জানতে চেয়ো না।

-আচ্ছা স্যার।

-ভালো থেকো। বাই!

সাব্বির খন্দকার ফোন কেটে দিয়ে ছেলেটির সামনে সেটটা রেখে দিয়ে বললেন, কত দিতে হবে রে?

সাব্বির খন্দকারের কথাবার্তা শুনে হয়তো সত্যিই বিভ্রান্ত হয়েছে ছেলেটি। বলল, দশট্যাকা।

পঞ্চাশ টাকার একটি নোট এগিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, বাকি টাকা তোর। লোকজন আমাকে ভিক্ষে দিয়েছে অনেক!

ছেলেটি দাঁত বের করে হাসে। মনে হয় কথাগুলো এবারও তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।

কল সেন্টার থেকে বের হয়ে ফের বস্তিতে ফিরে আসেন সাব্বির খন্দকার। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে তিনি ডাকলেন, আকলিমা। ঘুমাইছিস?

-না বাবা। আস।

আকলিমার পাশে বসে তিনি জানতে চাইলেন, এখন কেমন আছিস?

-কিছুডা ভালো।

-ওষুধ আছে তো সব? কোনটা যেন শেষ হয়ে গেছিল।

-আনাইয়া নিছি।

-আমাকে বললেই পারতিস।

-তোমারে কষ্ট দিতে মন চায় নাই।

-আচ্ছা যে জন্যে এসেছি। একটা কাজে যাবো, ফিরতে দেরি হবে কিছুটা।

তখনই হঠাৎ আকলিমা সাব্বির খন্দকারের একটি হাত আঁকড়ে ধরে বলল, সত্যি আইবা তো?

সাব্বির খন্দকার হেসে উঠে বললেন, কেন এমন মনে হচ্ছে তোর?

-ফিরা আইলে বলমু।

-আচ্ছা বলিস।

-কই যাইবা কইবা না?

-আমার অফিসে যাচ্ছি। কী অবস্থা দেখে আসি।

-দাড়ি-মোচ কি কাটতে হইবো?

সাব্বির খন্দকার দাড়ি-গোঁফে হাত বুলিয়ে বললেন, নাহ। যেমন আছি আর বদলাবো না। আচ্ছা, ওষুধ খাস ঠিক মতন। আমার দেরি দেখলে দুশ্চিন্তা করিস না।

-আইচ্ছা।

বলে, সাব্বির খন্দকারের হাত ছেড়ে দেয় আকলিমা।

বস্তি থেকে বের হতে হতে সাব্বির খন্দকারের মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে ওঠে। দশ-বারো বছর বয়সে মেয়েটা জীবন সম্পর্কে যতটা অভিজ্ঞ, সুবর্ণার ছেলে-মেয়ে দুটো সে তুলনায় এখনো শিশু। আকলিমার দেয়া লুঙ্গি-পাঞ্জাবি আর টুপি পরিহিত সাব্বির খন্দকার সিএনজি থেকে অফিসের সামনে এসে নামেন। ভাড়া মিটিয়ে গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই সিকিউরিটি গার্ড হামিদ দাঁড়িয়ে স্যালুট দিতেই অবাক হয়ে তাকান তিনি। হয়তো তার অবাক দৃষ্টি লক্ষ্য করেই হামিদ বলে ওঠে, ভালা আছেন স্যার?

-চিনেই ফেলবে যদি তাহলে বেশ পালটে কী লাভ হলো আমার?

হামিদের মুখটা হাসিতে ভরে ওঠে। চুল-দাড়িতে মানুষ বদলাইলেও চিনন যায়। আপনের দাড়ি তো আগেও দেখছি স্যার!

-হুম।

বলে, গম্ভীর মুখে সাব্বির খন্দকার অফিসের দিকে হেঁটে যান। কিন্তু ফাহিমের চোখেও কোনো পরিবর্তন ধরা পড়ে না। তবে, কণ্ঠে খানিকটা ভয় মিশিয়ে বলল, বড় কোনো সমস্যা হয়েছিল স্যার?

-আরে নাহ। একটু দূর থেকে নিজেকে বুঝতে চেষ্টা করছি।

তারপর ফাহিমের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ভেবো না কষ্টে আছি বা খারাপ আছি। জীবনটা অদ্ভুত সুন্দর। এতকাল বুঝতে পারিনি। বলতে বলতে হাত বাড়ালেন সাব্বির খন্দকার।

ফোন আর ওয়ালেট এগিয়ে দিয়ে ফাহিম বলল, কিছুক্ষণ কি বসবেন স্যার, দুটো পেপার সাইন করবার সময় হবে?

-খুব জরুরি হলে দাও।

-অবশ্যই জরুরি। কন্টেইনারগুলো শুধু শুধু আটকে আছে।

-সিলিন্ডারগুলো ঠিক আছে তো?

-দুটো খালি পাওয়া গেছে।

-আচ্ছা।

ততক্ষণে দুটো ফাইল এনে সামনে রাখে ফাহিম।

নিজের চেয়ারে বসে সাব্বির খন্দকার ফাইলের পাতা উলটিয়ে অভ্যাস মতো ড্রয়ার টেনে চশমাটা হাতে নিয়ে চোখে দিয়ে অভ্যস্ত ভঙ্গিতে ফাইল পড়েন। তারপর চটপট দুটো সাইন করে বললেন, নেক্সট উইক থেকে রেগুলার আসবো।

তারপরই আবার বললেন, ক্যাশ কত আছে এখন?

-একলাখ তের হাজার।

-পঞ্চাশ হাজারের একটা ভাউচার বানাও আমার নামে।

সাইন হয়ে যাওয়া ফাইল দুটো জায়গা মতো গুছিয়ে রেখে, পিসিতে একটি ভাউচার রেডি করে ঝটপট প্রিন্ট আউট নিয়ে সাব্বির খন্দকারের সামনে রাখে ফাহিম। তিনি সেটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ বোলানোর ফাঁকে পাশের রুমে যায় সে। পাঁচশত টাকার একটি বান্ডিল নিয়ে ফিরে এসে দাঁড়ায় টেবিলের সামনে। তারপর সাইন করা ভাউচার আর টাকা বিনিময় হয়ে যেতেই সাব্বির খন্দকার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, চলি। অনেকটা পথ হাঁটতে হবে।

অফিস থেকে বের হয়ে একটি খালি সিএনজি দেখতে পেয়ে হাত তোলেন সাব্বির খন্দকার। ভাড়া নিয়ে দরকষাকষি করতে গিয়ে বলেন, দেখ মিয়া, গরিব মানুষকে এভাবে মারতে হয় না।

কথে শুনে হেসে ফেলে সিএনজি চালক। বলে, আংকেল, আপনেরে যে গরিব দেখে, তার চোখ দুইটাই গরিব!

সাব্বির খন্দকারের সাহস হয় না তর্ক করতে। পাছে তাকে লোকটি চিনে ফেলে সেই ভয়ে। হতে পারে এ পথেই তার আসা যাওয়া। কম বেশি দেখতে পাওয়া বিচিত্র কিছু নয়।

বস্তিতে ঢুকবার মুখেই রাস্তার পাশে ফলের দোকান। তিনি দেখে শুনে আকলিমার জন্যে মালটা আর আঙুর কিনে নেন। দুটো প্যাকেটে দু পদের ফল দেখে কেঁদে ফেলে মেয়েটা।
বস্তির মানুষদের সঙ্গে তেমন একটা কথাবার্তা হয় না তার। বেশির ভাগ লোকজনই তাকে এড়িয়ে থাকতে পছন্দ করে বলে মনে হয়। তবে ব্যতিক্রম দুজন আছে। হাসনুর মা বলে পঁয়ত্রিশ-চল্লিশের এক মহিলা। দেখতে বেজায় রাগি মনে হলেও কথাবার্তা ভালো। তার মতে সাব্বির খন্দকার মরে যাওয়া হাতি। মাঝে মাঝে দু-চারটা সান্ত্বনার কথাও বলে। মানুষের দুখ একদিন না একদিন দূর হইবই।

আরেকজন বিল্লাল হোসেন। টাইলস মিস্ত্রি। তার মতে সাব্বির খন্দকারের খারাপ সময় বেশিদিন থাকবে না। মানুষের জীবনে ভালোমন্দ সময় আসতেই পারে।

আকলিমার কান্না শুনতে পেয়েই হয়তো পাশের ঘর থেকে বের হয়ে হাসনুর মা উঁকি দিয়ে বলে, কান্দস ক্যারে মাইয়া, কী হইল আবার?

-আরে, খুশিতে কান্দে!

বলে, সাব্বির খন্দকার ফের বলেন, হাসনুর মা আস তো! দা নয়তো ছুরি নিয়া আস একটা।

তারপর নিজেই উঠে গিয়ে ঘরের কোণ থেকে একটি থালা নিয়ে এসে বিছানায় আকলিমার পাশে রেখে ফের বসে প্যাকেট দুটো মেলে ধরেন।

শৈশবে একবার প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আকলিমার মতোই এভাবে বিছানায় পড়েছিলেন তিনি। কামরাঙ্গার খেতে চেয়েছিলেন। অভাবী সংসারে একমাত্র ছেলের জন্যে মা কোথায় কোথায় ঘুরে অসময়ে কামরাঙ্গা নিয়ে এসেছিলেন দুটো। সেগুলোই বিছানার পাশে বসে কেটে কেটে লবণ মাখিয়ে দিচ্ছিলেন তাকে। দৃশ্যটা যেন হঠাৎ করেই জীবন্ত হয়ে ওঠে তার স্মৃতিতে। এমনই আকলিমার বয়সেই তিনি মাকে হারিয়েছিলেন। ভোলার কাছে কোথাও ছিল তাদের গ্রাম। নদীর ভাঙন মা-বাবা আর পূর্বপুরুষের কবর সহ পুরো গ্রামটিকেই গ্রাস করে ফেলেছিল। একজন উদ্বাস্তু আর নিঃস্ব হিসেবে তিনি এসে নেমেছিলেন সদরঘাটে। তারপর হাঁটতে হাঁটতে আরমানিটোলা। বেচু সর্দারের দয়ায় তার ঘোড়া দুটোর দেখাশোনার বিনিময়ে পড়ালেখা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল। সাব্বির খন্দকার কখনওই বিস্মৃত হননি নিজের অতীতকে। ছেলেমেয়েদের শুনিয়েছেন সে কাহিনী অনেকবার। কিন্তু তারা ঘটনাগুলোকে মনে রাখতে পারেনি কোনোবারই।

ফলগুলো হাসনুর মায়ের চোখে পড়তেই সে বলে ওঠে, মাশাল্লা কইরা কই, এই মাইয়া জীবনেও এত ফল চোখে দেখে নাই। আমার সারা জীবনে খাইছি কি না সন্দ আছে।

সাব্বির খন্দকার বিরক্ত হলেও শান্ত স্বরে বললেন, আমরা সবাই মিলেই খাবো, সমস্যা কি?

-সাবে অনেক খরচ করলেন, খুশির বিষয় আছেনি?

-আছে।

-তাইলে ট্যাকা-পয়সার কষ্টডা দূর হইবো আপনের?

সাব্বির খন্দকার হাসিমুখে বললেন, দোয়া কইরো।

-আকলিমারে দেখতে আইয়া আপনেরে ঘরে না দেইখ্যা জিগাইলাম সাবে কই? মাইয়া কইল অপিসে। তহনই বুচ্ছি!

হাসনুর মা মালটা ধুয়ে বটিটাও ধুয়ে আনে। দুটো মালটা কেটে থালায় রেখে বটি হাতে উঠে পড়লে সাব্বির খন্দকার বললেন, আরে উঠলে কেন? আরও কাট। অন্তত পাঁচ-ছটা।

হাসনুর মা অবাক হয়ে বলে, অত কাটলে খাইবো কে? মাইয়ায় কয় টুকরা আর খাইবো!

-যে কয় টুকরা খায় খাবে। তুমিও খাও। আরও অনেক বাচ্চাই আছে এখানে। তোমার হাসনুও তো একটু পর ঘেমে-নেয়ে ফিরে আসবে স্কুল থেকে। সেও খাবে।

কথা শুনে হাসনুর মায়ের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আরও।

আকলিমার কান্না থামলেও চোখ কেমন ভেজা ভেজা দেখায়। সে অবস্থাতেই সে মালটা খেতে খেতে বিষণ্ণ কণ্ঠে বলে, অসুখ ভালো হইলেও আমার চাকরিডা আর ফিরা পামু না।

সাব্বির খন্দকার দেখলেন হাসনুর মা একটুকরো মালটা হাতে নিয়ে বসে আছে। তাকে তাড়া দিয়ে তিনি বললেন, হাতে নিয়ে বসে আছ, খেতে লজ্জা পাচ্ছ নাকি?

-রুগীর জিনিস ভালা মানষ্যে খাইলে কীরাম লাগে!

-তুমিও তো কম রুগী না। মোটা হওয়াও একটা রোগ।

হাসনুর মায়ের মুখে সলজ্জ হাসি ফুটে ওঠে। বলে, আপনেও ঘুরাইয়া আমারে মুটকি কইলেন?

-আরে নাহ। তুমি আর বিল্লাল ছাড়া আমাকে কে পোছে?

হাতের মালটা শেষ করে আরেকটি টুকরো তুলে নিতে নিতে হাসনুর মা আবার বলে, অন্যেরা আপনেরে ডরায়। কয়, বড় মানুষ। ভেশ ধইরা রইছে। ডিবির লোক হইতে পারে। এর আগেও এমন ঘটনা হইছে। এক হুজুররে ধরবার লাইগা ডিবির কয়জন বস্তির ঘর ভাড়া লইছিল চটপটি, চানাচুরের কারবার করবো কইয়া।

-তাই নাকি?

তারপরই প্রসঙ্গ পালটাতে সাব্বির খন্দকার বললেন, আমি যখন ছিলাম না, তখন জ্বর বাড়ছিল?

আকলিমা কিছু বলবার আগেই হাসনুর মা জানায়, নাহ। হাত গতর মুছাইয়া ভাত দিছি করল্লার ঝোল দিয়া।

-ভালো করছ। আমি ভাবতেছি অফিসে যাওয়া শুরু করলে আকলিমার চাকরির দরকার নাই। কী বল হাসনুর মা?

-ঠিকি তো। বাপ থাকতে মাইয়া চাকরি করবো কোন দুঃখে! হাসনুর ইশকুলে পড়বো। সাপ্তায় সাপ্তায় চাইল, ডাইল, আলু, পিয়াইজ পাইবো।

আকলিমা হঠাৎ বলে ওঠে, নিচের কেলাসে পড়মু না। হাসনুবুর ইশকুলে চাইর কেলাশ। আমি তো পড়তাম ফাইভে।

-আচ্ছা, ভালো স্কুলেই দেবো তোকে। কিছুদিন পর ভালো আর বড় দেখে একটা বাসাও ভাড়া নিয়ে নেবো।

হাসনুর মায়ের শ্যামলা মুখের ছায়া আরও গাঢ় হয় যেন। বলে, আমাগোরে ভুইল্যা যাইবেন তাইলে?

-বলো কি! তোমাকে আর বিল্লালকে ভুলতে যাবো কেন? তোমরা না থাকলে আমাকে দেখত কে? দুজনে মিলে আমাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে সাফ-সুতরো না করলে, প্রথম দিন তুমি খেতে না দিলে হয়তো আরও খারাপ কিছু হতে পারতো আমার। মারাও যেতে পারতাম। তোমাদের কাছেই তো আমার বড় ঋণ।

-দিন ফিরলে কি আর এইসব কথা মনে থাকব?

-থাকবে। থাকবে। বড় দেখে ফ্লাট নেবো। তুমি থাকবে। বিল্লাল থাকবে। তোমার কাজ রান্নাঘরে। বিল্লাল বাজারটা দেখবে। আকলিমার কাজ পড়াশুনা।

-হাসনু কই থাকবো, আমার লগে না?

-ও আবার থাকবে কি, ওকে বিয়ে দিয়ে দেবো।

-বাপ মরা ফকিন্নির মাইয়ার কী আর এমন বিয়া হইব!

হাসনুর মায়ের দীর্ঘশ্বাস পড়ে।

-ভালো বিয়েই দেবো। এ নিয়ে ভেবো না কিছু।

হাসনুর মা হঠাৎ নাক টানে। সাব্বির খন্দকারের দু হাঁটু চেপে ধরে বলে, সত্যি সত্যিই বলতাছেন তো?

-আমাকে কি এসব নিয়ে মজা করবার লোক মনে হয়?

-না। তা কই নাই। খোয়াব দেখতে ডরাই। যেদিকে চোখ পড়ে খালি আন্ধার হইয়া যায়।
-আর হবে না। আমি লাইট নিয়ে এসেছি।

তারপর আকলিমার দিকে ফিরে সাব্বির খন্দকার বললেন, এবার বল দেখি, আমার হাত ধরে কী বলবি বলেছিলি?

-কী বলতে চাইছিলাম?

আকলিমা অবাক হয়ে তাকায়।

-ওই যে, আমি বাইরে যাবার সময় বলেছিলি ফিরে এলে বলবি।

আকলিমা হাসিমুখ করে মালটার টুকরো চোষে। তারপর বলে, কমু না। এখন শরম করতাছে।

সাব্বির খন্দকার হেসে উঠে বলেন, ফিরে আসবো না ভেবে ভয় পেয়েছিলি?

আকলিমা মাথা নাড়ে।

- নাহ, তোকে ছেড়ে যাবো না আর।

সাব্বির খন্দকারের মনে হয় আকলিমার মতো একটি শিশুর কাছে তিনি যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে তুলনায় স্ত্রী-সন্তানের কাছে তেমন কিছুই ছিলেন না।

(সমাপ্ত)

মন্তব্য ৬৮ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (৬৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২২

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: চমৎকার গল্প , ভাললাগা জানবেন ।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ পরিবেশ বন্ধু।

ভালো থাকবেন সব সময়।

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪০

সুমাইয়া আলো বলেছেন: সুন্দর, গল্পে ভালবাসা, ভাল লাগা রইল।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ সুমাইয়া আলো।
ভালো থাকেন সবসময়।

৩| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৯

ঢাকাবাসী বলেছেন: বেশ বড় গল্প, ভাল লাগল ।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ। ধৈর্য ধরে রাখতে পারছেন।
ভালো থাকেন সব সময়।

৪| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৯

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
জুলিয়ান,
আছেন কিরাম ? খুব ব্যস্ত সময় যাচ্ছে, সময় করে পড়ার ইচ্ছে রাখি।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪১

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ অন্ধবিন্দু।
সময় হলেই আসুন। ভালো থাকুন সব সময়।

৫| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অসাধারন!!!!!!!!!

জীবনকে চেনার গল্প। জীবনকে বোঝার গল্প। জীবনকে অনুভব করার গল্প।

দারুন তুলে এনেছেন বোধ টুকুন---
"মানুষের বোধ-বিবেচনারও একটি সীমাবদ্ধতা আছে। সে না বুঝেও অনেক সময় ভান করে। উত্তর দেয় ভাসা ভাসা। অক্ষমতা গোপন করতেই সহজ-সরল বক্তব্যের বদলে জটিল বাক্যের আঁক কষে। এক অন্ধকারকে চাপা দিতে চেষ্টা করে আরেক দুর্বোধ্যতার অন্ধকার ঢাকনায়।"

++++++++++++++++++++++++++++++++++++

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৫

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ বিদ্রোহী ভৃগু।

জীবনকে অনুভব করার গল্পই। ব্যাপারটা ধরতে পেরেছেন।
ভালো থাকুন সব সময়।

৬| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: জুলিয়ান সিদ্দিকী ,





সুন্দর লিখেছেন । ছোটগল্পের ঈঙ্গিত দিলেও ব্যাপ্তি বিশাল ।

বিদ্রোহী ভৃগুর কথাতেই বলতে হয় -
জীবনকে চেনার গল্প। জীবনকে বোঝার গল্প। জীবনকে অনুভব করার গল্প।


শুভেচ্ছান্তে ।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০১

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ আহমেদ জী এস।

ভালো থাকেন সব সময়।

৭| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৭

মামুন রশিদ বলেছেন: অসাধারণ! আকলিমার কাছ থেকে নিখাঁদ ভালোবাসা পেয়ে খন্দকার সাহেবের নিজের স্ত্রী-সন্তানের ব্যাপারে বোধদয়ে গল্পটি শেষ হয়ে যেতে পারতো । কিন্তু এতে ঘটনাটিকে খন্দকার সাহেবের হঠাৎ খেয়ালি আচরণ হিসাবে বিচার করারও সুযোগ থেকে যেত । তাই গল্পটাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে পাঠককে একটা সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে । খন্দকার সাহেবের এই পরিবর্তন, এই বোধদয় অকৃত্রিম পিতৃত্ববোধের কাছে নিজেকে সমর্পণের এক চিরন্তন অভিলাস হিসেবে বিবেচিত হবে ।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১৭

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন রশিদ।

শুরুতে সাব্বির সাহেবের খেয়ালীপনা হলেও বাস্তবতার কাছে মার খেয়ে শিখেছেন যে, ইচ্ছে করে উপোস থাকা আর অভাবের কারণে উপোস থাকা দুটোই ভিন্ন ব্যাপার। আর স্নেহ মমতা আরো নাজুক ব্যাপার। এর কাছে আরো অনেক বড় স্বার্থও মাথা নত করে, আর সাব্বির সাহেব তো এ দিক দিয়ে কাঙাল বলা যায়। :p

তার জীবনে কী একটা অবলম্বন দরকার নাই? তাই ব্যবস্থা করে দিলাম। :d

বিশ্লেষণাত্মক মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগল। সেই সঙ্গে রইল শুভ কামনাও।

৮| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫১

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: যাক এতদিনে তাহলে লগইন সমস্যার সমাধান হল।

এই গল্পটা আগেই পড়েছিলাম। অসাধারণ একটি গল্প।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:১০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ প্রবাসী পাঠক।

আহা, সামু যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক সে নিজে যদি বুঝতো। সামু তো নিজে লেখে না, অন্যের লেখা দিয়া নিজের উদর পূর্তি করে। তাই লেখা পোস্ট করতে না পারার আক্ষেপ তার নাই। :)

অন্য একটা ল্যাপটপ দিয়া কাজ চালাইতাছি।

ভালো থাইকেন সব সময়।

৯| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫২

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: অসাধারন হয়েছে ভাই। :)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৭

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ নিয়ামুল ইসলাম।
আমার ব্লগে স্বাগতম।
সেই সঙ্গে রইল শুভ কামনা।

১০| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৪

খেলাঘর বলেছেন:



সুন্দর; তবে, সব সময় মানসাংক দিয়ে মাপি

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ খেলাঘর।

আসলে মানসাংক আপনাকে অভিভূত করেছে বেশি। এর চেয়েও ভাল গল্প আছে কিন্তু আমার। তবু ভালোলাগাকে যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করা যায় না। সেই চেষ্টাও করবো না। আমার চেষ্টা থাকবে সেই মানের আরেকটা গল্প লেখা।

ভালো থাকুন সব সময়।

১১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৮

ডি মুন বলেছেন:
কমেন্ট করতে যেয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছি।
সামু যে কবে ঠিক হবে :(


দারুণ গল্প জুলিয়ান ভাই
+++++

অবশেষে ব্লগে আসতে পারলেন।
অভিনন্দন :)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ ডি মুন।

সামু মশকারি করলে আমরা কী আর করতে পারি। :)

ভালো থাকেন সব সময়।

১২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৩৪

আবু শাকিল বলেছেন: অনেকদিন পর সামুতে আপনার গল্প পেলাম।

ভাল লাগল।গল্প চমৎকার।

শুভেচ্ছা জানবেন :)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ আবু শাকিল।
কথা তা না। সামু অনেকদিন পর আমারে ঢুকতে দিল। :)

ভালো থাকেন সব সময়।

১৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৯

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: অসাধারণ । শেষদিকে ভাললাগায় মনটা ভরে গেল ।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ মাহমুদ০০৭।
সামুতে লগিন করতে পারছি এইটাও আমার জন্য বেশ ভালো লাগার।
ভালো থাকেন এই শুভ কামনা জানাই।

১৪| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩০

ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: অনেকদিন পরে আপনার গল্প পড়লাম জুলিয়ান দা! লেখনীর গুনে চমৎকার লাগলো! শেষটাতে ভাবছিলাম সাব্বির খন্দকার কি তার নতুন জীবনে সুখি হবে নাকি আবার তাকে একটা ক্লান্তি ঘিরে ধরবে? স্ত্রী সন্তান এর দীর্ঘ অভ্যাস- আশ্রয় থেকে বের হয়ে ভাল থাকতে পারবেন? যদিও তারা তাকে সেই অর্থে আশ্রয় কখনো দিতে পারে নি!

শুভেচ্ছা রইলো!

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫৭

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ তিন চন্দ্রবিদু যুক্ত তিন খণ্ড-ত।

অনেকদিন ঠিকই। সামু ওপেন হয় নাই লগিনও করতে পারি নাই।

আসলে অভ্যাসও অনেক সময় একঘেয়ে হয়ে উঠতে পারে। তখন মানুষটা বিপরীতমুখী জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য ঘটাতে পারে।

আমার দেখা ধনী বাপের পুত্র নিজেও ধনী বউএর প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে বিচ্ছেদ, পরে অশিক্ষিত একটা মেয়েতে স্বস্তি।

মানুষের মন খুব বেশিই বিচিত্র।

ভালো থাকুন। আরো ভালো লেখার অপেক্ষায় আছি।

১৫| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৮

স্বপ্নছোঁয়া বলেছেন: চমৎকার গল্প জুলিয়ান দা।
ভাল লাগা জানবেন :)

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:২৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ স্বপ্নছোঁয়া।

ভালো থাকুন সব সময়।

১৬| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২১

জাফরুল মবীন বলেছেন: শুভ ব্লগে পুণঃপ্রবেশ :)

আপনি খুব ভাল গল্প লিখেন এটা আমার মূল্যায়ন;এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

অনেক অনেক শুভকামনা জানবেন।

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:২৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ জাফরুল মবীন।
আপনার মূল্যায়নও আমার জন্য অনেক কিছু।
শুভ কামনা আপনার জন্যেও।

১৭| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৬

কলমের কালি শেষ বলেছেন: অসাধারন গল্প । খুব ভালো লাগলো ।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ কলমের কালি শেষ।

ভালো থাকেন সব সময়।

১৮| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৯

ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: // ভালোবাসা না থাকলে ও দুজন এলো কী করে? সহজ সমাধান। তবু সাব্বির খন্দকারের মতে ওরা হচ্ছে বাই-প্রোডাক্ট। //

চমৎকার বর্ণন !

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ ইসতিয়াক অয়ন।

আমার ব্লগে স্বাগতম।
ভালো থাকুন সব সময়।

১৯| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ হামা।
ভালো থাকেন সব সময়।

২০| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫

মদন বলেছেন: ++++++++++++++++++++

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ মদন।

ভালো থাকেন সব সময়।

২১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৭

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: আগে আপনাকে অনুসরণে নিলাম। কারণ অনেক দিন ধরে আপনাকে খুঁজে পাচ্ছি না। তবে পোস্ট এখনো পড়ি নাই। এখন বাংলাদেশের খেলা দেখছি। পরে আবার পোস্টে আসবো এবং আপনার গল্পটা পড়ে মন্তব্য করবো। ভালো থাকবেন জুলিয়ান ভাই।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ বিদ্রোহী বাঙালী।

অবসরে পড়তে পারলে পইড়েন। আর মন্তব্য আশা করিই।

ভালো থাকেন সব সময়।

২২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:১০

খেলাঘর বলেছেন:


সমকালের সামাজিক ও পারিবারিক মেকানিক্যাল রিলেশানশীপ ফুটে উঠেছে।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ খেলাঘর।
ভালো থাকবেন সব সময়।

২৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১৭

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: অনেক দিন পর আসলেন মনে হচ্ছে।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ ইমতিয়াজ১৩।

অনেকদিন পর লগিনে সমস্যার কারণে আগের মতো নিয়মিত হতে পারি না।

২৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৬

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
অক্ষমতা গোপন করতেই সহজ-সরল বক্তব্যের বদলে জটিল বাক্যের আঁক কষে।

জুলিয়ান,
আপনার গল্পটিও কিন্তু ঠিক তেমনি। কেবল জটিল বাক্যের পরিবর্তে জটিল জীবন-দর্শনের কথাই বলবো ... উদ্ভট কল্পনার গল্পগুলো যতোটা সহজে বলা যায়; এহেন জীবন-কথন আঁকতে শিল্পীরা নিত্যই ব্যর্থ হওন ...

আপনি ভালো করছেন...

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৫

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ অন্ধবিন্দু।

সে ব্যর্থতা আজকাল স্বীকার করবার মতো কাউকে খুঁজে পাবেন না। আমরা আজকাল নিজেকেই নিজে নাম্বার দেই। :)

ভালো থাকুন সব সময়।

২৫| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৪

বালিকাবধু বলেছেন: যারা বিবাগী হয়, সন্ন্যাসী বা গৃহত্যাগী হয়, তারা তো সঙ্গে টাকা পয়সা নিয়ে বের হয় না। তবু তাদের জীবন কাটে। না খেয়ে মরতে হয় না তাদের। এমন কি অনেককেই বিনা চিকিৎসায়ও মরতে হয়নি। সেই একই ঘর। একই বিছানা। একই চেহারা। একই খাবার। একই রুটিন। কোনো বৈচিত্র্য নেই। অতশত জায়গায় ঘুরে বেড়ালেন তবু মুগ্ধ হতে পারলেন না। আকর্ষণ বোধ করতে পারলেন না কিছুতে।
এই যে মানুষ বলে, স্ত্রী-সন্তান, টাকা-পয়সা, সহায়-সম্পদ সবই মায়া।
উত্তর দেয় ভাসা ভাসা। অক্ষমতা গোপন করতেই সহজ-সরল বক্তব্যের বদলে জটিল বাক্যের আঁক কষে। এক অন্ধকারকে চাপা দিতে চেষ্টা করে আরেক দুর্বোধ্যতার অন্ধকার ঢাকনায়।
শূন্য গ্লাস ফেরত নিয়ে বিভ্রান্তি কাটাতেই হয়তো মহিলা নিজে নিজেই বলে ওঠে, পড়া-ল্যাহা জানা মানুষ পাগল অইলে কীরাম লাগে!
আকলিমা হাসিমুখ করে মালটার টুকরো চোষে। তারপর বলে, কমু না। এখন শরম করতাছে।

-অনেক সময় ধরে খুটে খুটে পড়ার আস্বাদই অন্যরকম।
তৃপ্তি পেয়েছি- সুখ পেয়ছি।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৫

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: -অনেক সময় ধরে খুটে খুটে পড়ার আস্বাদই অন্যরকম।
তৃপ্তি পেয়েছি- সুখ পেয়ছি।


-বালিকাবধু। ধন্যবাদ আপনাকে। সেই সঙ্গে স্বাগতম জানাই আমার ব্লগেও।

২৬| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:২৬

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
বাস্তব আর কল্পনার সমান্তরাল জীবন কথন ৷ সাবলিল প্রবাহমান তাই পড়তে ভাল লাগল ৷ ডায়লগ একটু বেশি ছিল ৷

ফ্যান্টাসিকে রূপকের আদলে জড়িয়ে শুভর দিকে ইঙ্গিত দিলেন ৷ জীবনকে আরো ভালবাসার প্রদাহ ছিল মাঝে মাঝে ৷ সহজিয়া পাঠ ৷

নতুন মলাটবন্ধি মোড়কের জন্য অনেক শুভকামনা জানবেন ৷ মঙ্গল হোক ৷

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ জাহাঙ্গীর আলম৫২।

সংলাপের কারণে বর্ণনা কমে, নয়তো আরো বড় হয়ে যেত মনে হচ্ছিল।
শুভকামনার জন্য আবারও ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সব সময়।

২৭| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:২৪

জুন বলেছেন: আপনার গল্পগুলো ভীষন জীবন ঘনিষ্ঠ, যা অনেক ভালোলাগে।
+

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। ভালো থাইকেন অনেক।

২৮| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২৩

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: দেশে যাওয়ার সুবাদে এতোদিন নেটে বসার সময় পাই নি।। জীবনের বাস্তবতা নিয়ে লেখাটা ভাল লাগলো।।
পড়া-ল্যাহা জানা মানুষ পাগল অইলে কীরাম লাগে! এরতো জবাবই নেই।।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ সচেতনহ্যাপী। কতদিন থাকবেন দেশে?
ভালো থাইকেন সব সময়।

২৯| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২৭

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: @ জুলিয়ান ভাই, অলরেডী কর্মক্ষেত্রে।। কারন ছরে ছুটির মেয়াদ মাত্র ৪০দিন। তারপরও আরো ১০দিন,without pay.
শুভেচ্ছা রইলো।।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: প্রবাসে ভাল থাইকেন।

৩০| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৪২

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: চমৎকার গল্প। আকলিমার জন্য যেন রূপকথা।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৭

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ তনিমা। ভালো থাইকেন সব সময়।

৩১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৯

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: জুলিয়ান ভাই, অনেকদিন পর খুঁজে পেলাম। কেমন আছেন? বইপত্রের কথা কি মনে আছে?

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: মনে আছে সবই। আপনারে দেখছি আরো আগেই, কিন্তু সঠিক মানুষটা কিনা খানিকটা সন্দেহ ছিল। কেমন আছেন আপনি। ওই চেয়ারম্যানরে খুব মিস করি।

৩২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ডুব দিছেন কোথায়?

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৫০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ডুব দেই নাই। পিসিতে ভ্যাজাল ছিল। ফরমেট করলাম। এখন তো আছিই। কেমন আছেন আপনে?

৩৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: দারুণ আছি :)

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ;)

৩৪| ২৩ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১০:৫৯

মুসলিম মাহমুদ বলেছেন: অসাধারণ একটি গল্প এতে বাস্তব জিবনের স্বচিত্র ফুটে উঠেছে

বিপরীত মুখি দুনিয়ায় কষ্টের মাঝেই লুকিয়ে থাকে প্রকৃত ভালবাসা, প্রকৃত সুখ

৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ১২:২৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ঠিক বলেছেন মুসলিম মাহমুদ। ভালো থাকুন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.