নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
সময় পেরিয়ে যায়, সুখস্মৃতি থেকে যায়..
স্মৃতি বিবর্ণ হয় না বলেই কি মনে লেগে থাকে।
ঘর, অরণ্য, মেঘ, পাহাড়, সমুদ্র আমাকে বারবার টেনেছে বাইরের দিকে। কত স্মৃতি এমন করেই আমাকে বিবশ করে রেখেছে।
আমার আব্বার বেশ কয়েকটি ঘড়ি ছিলো। সেখান থেকেই ঘড়ির প্রতি ছেলেবেলা থেকে আমার দুর্বলতা। আমি ঘড়ি পরতে চাইতাম। কিন্তু ঘড়ি পরার নাকি মিনিমাম সময় হচ্ছে মাধ্যমিকের গন্ডি টপকানো। মানে বড় হয়ে। মাধ্যমিক মানে বড় হওয়া। আসলে কেউ কেউ বড় হয়না। অন্য কারোর চেয়ে ছোটই থেকে যায়। বড় হওয়াটা আপেক্ষিক।
আমার যখন ছেলেবেলা, তখন ঘড়ি হাতে দেওয়া মানুষ খুব বেশী ছিলো না। তারউপর ক্যাডেট কলেজে ঘড়ি হাতে দেওয়া অলিখিত ভাবে নিষিদ্ধ ছিলো। প্রেয়ার, পিটি, ড্রিল, গেম, ক্লাস, রিডিং, ডাইনিং সবকিছুই ঘন্টার শব্দে করতে হয়। তবে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার সময় ঘড়ি হাতে দেওয়া যেতো(যদিও ঘড়ি হাতে দেওয়ার আর্থিক সংগতি সম্পন্ন মানুষ খুব বেশী ছিলো না)। আমি এসএসসি পাশের আগেই বড়ো হয়ে গেলাম! অর্থাৎ এসএসসি পরীক্ষার আগে আব্বার ব্যবহার করা বেশ কয়েকটি মধ্য থেকে আমার হাতের শেপে মানায় তেমন একটা ঘড়ি বুবু আমার হাতে পরিয়ে দিলেন। ঘড়ির ব্রান্ড নাম Favre Leuba Sea King, Ultra Slim,18K Gold. Water Resistance, Made in Switzerland. পুরনো কিন্তু কি তার জৌলস! অনেক দামী ঘড়ি....লাইফটাইম সার্ভিস গ্যারান্টি!
হোক পুরোনো তাতে কি, আমার নতুন হাতে পরে সেতো নতুনই! আমি এখন একটা ঘড়ির মালিক। ঘড়ি আমি হাতছাড়া করিনা, প্রায় ফুল টাইম ঘড়ি হাতে পরে থাকি। ঘড়ি হাতে ঘুমাই, কতক্ষণ পরপর হাত উল্টে সময় দেখি। ঘড়িতে চোখ রাখি, মুহুর্তগুলো রঙিন হয়ে আমার 'বড়' হওয়ার চিহ্ন রেখে যায়। প্রতিদিন ঘড়িতে দম দেওয়ার আকাংখা তখন দুর্দম কিন্তু একদিন দম দিলে ৫/৭ দিন চলে। ঘড়িতেই সকাল হয়, দুপুর হয়, সন্ধ্যে হয়, আর গভীর রাতের অন্ধকারে আমার ঘড়িতে যখন রেডিয়ামের আলো জ্বলে তখন আমার মনেও আলো জ্বলে। বড় হওয়ার আলো। ঘড়ি হাতে যখন হাঁটি তখন যেন মনেহয়- আমি হাঁটি না, সময় হাঁটে। কেউ সময় জিজ্ঞেস করলে ঘন্টা-মিনিট-সেকেন্ড বলি!
সময় এখনো হেঁটে চলেছে আমার সাথে অবিরাম। অথচ সময়কে আমি ছুঁতে পারিনি। এখন মনেহয়, হাতের ঘড়ির কাঁটা কতো বার আমাকে সময়ের মূল্য টিকটিক করে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে, আমি তা দেখেছি হাতের কবজি ঘুরিয়ে। আমি ভেবেছি 'অনেক সময় আছে'। অথচ সময় বয়ে গেছে, কতো কাজ 'পরে করবো' বলে ফেলে রেখেছি, পরে সেই কাজই আর শেষ করতে পারিনি। ঘড়িটা নিশ্চই তা দেখে নীরব হেসে আমাকে ব্যঙ্গ করে গেছে। আমি শুধু ঘড়িতে সময় দেখেছি, কিন্তু ঘড়ি আমার হাতে নিজেকে বেঁধে রেখেও সময় বেঁধে আমাকে দিয়ে কিচ্ছু করাতে পারেনি!
তখন বুঝিনি, এখন বুঝি- ঘড়ি বাঁধা যায়, সময় বাঁধা যায়না। যখন বুঝলাম, সময় তখন অনেক বয়ে গেছে।
এখনো আমার হাতে ঘড়ি বাঁধা থাকে। এখনো আগের মতোই টিকটিক করে এগোয়। আমার মনেহয় ওই কাঁটাগুলো শুধু টিকটিক করেনা, মুচকি হাসে।
এসএসসি পরীক্ষা শেষ। আমরা পাঁচ সহপাঠী ঝিনেদা-যশোর-খুলনা হয়ে ঢাকা ফিরছি গাজী ষ্টীমারে....ভোর রাতে যখন চাঁদপুর স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে তখন অনেক যাত্রীদের মতো আমরাও ষ্টীমারের রেলিং এ দাঁড়িয়ে চাঁদপুর দেখছি। হঠাৎ তরুণ বয়সী এক ছেলে হ্যাচকা টানে আমার হাত থেকে ঘড়িটা ছিড়ে নিয়ে নদীতে ঝাপ দেয়! আমার খালি হাতের দিকে তাকিয়ে বুকের ভিতরটা ধক্ করে উঠলো। শরীর জুড়ে বেদনার শিহরণ। আমার ঘড়িটা আমার আর হাতে নেই। বুকের ভিতর শুধুই হাহাকার!
কিন্তু ভাগ্যবান আমি। ছিনতাইকারীর হ্যাচকা টানে ঘড়িটা ছিড়ে পড়ে যায় ষ্টীমারের ডেকে.... খালি হাতেই ছিনতাইকারী নদীতে ঝাপ দেয়! আমার প্রিয় ঘড়িটা আমিই ফিরে পাই।
দুই বছর পর, এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বরিশাল বেড়াতে যাই। আমার পৈত্রিক বাড়ি সংলগ্ন অক্সফোর্ড মিশন স্কুলে অসাধারণ সুন্দর বড়ো একটা পুকুর আছে। কাজীনদের সাথে সেই পুকুরে গোসল করতে যেয়ে আমার ঘড়িটা হারিয়ে ফেলি। যে কয়দিন বরিশাল ছিলাম প্রতিদিনই কাজীন এবং বন্ধুদের নিয়ে ঘড়ি খুঁজেছি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ঘড়িটা না পেয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে জানাই।
প্রায় একমাস পর মিশনারী স্কুলের এক ছাত্র ঘড়িটা পুকুরের কাদাপানিতে খুঁজে পেয়ে স্কুলের ফাদার রিগ্যান রিগভীকে জমা দেয়। ঘড়িটা তখনও সচল ছিলো। উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে ওরা আমাদের বাড়িতে ঘড়িটা পৌঁছে দেয়। অপ্রত্যাশিত ভাবে আমি ফিরে পাই আমার প্রিয় ঘড়ি!
পুরোনো মানেই তো কিছু স্মৃতি। যা কখনো ফিকে হয়না। তারপর আমার হাতে কতো ঘড়ি এসেছে, গেছে, কিন্তু কোনো ঘড়ির কাঁটাই যেন অমন মসৃণ ভাবে এগোয়নি। আমার অনেকগুলো অভিযাত ব্রান্ড ঘড়ি সংগ্রহে আছে। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে পাওয়া ওই পুরোনো Favre Leuba Sea King ঘড়িটিই আমার সবচেয়ে প্রিয়। কারণ, ওটা শুধু ঘড়ি নয়, ওর সংগে লেপটে আছে আমার বাবার ছোঁয়া, বুবুর অসীম ভালোবাসা।
০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৪৪
জুল ভার্ন বলেছেন: জ্বি।
২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৫২
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: খুবই ভাল লাগলো আপনার স্মৃতিকথা পড়ে।মনে হয় ছোটগল্প পড়ছি।
০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৫৩
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আমার।
৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:৩০
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: স্মৃতিকথন ভালো লাগলো
০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:৪৬
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:০৪
ভুয়া মফিজ বলেছেন: ঝাপ পার্টির সদস্যটা মনে হয় শিক্ষানবিশ ছিল!
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৩৩
জুল ভার্ন বলেছেন: নিশ্চয়ই।
৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: আমার বড় ভাই পাবনা ক্যাডেট কলেজে পড়েছেন।
অতীত দিনের সৃতির কথা লিখেছেন দারুন আবেগ দিয়ে। আপনি ভাগ্যবান আপনার বাবার সৃতি আপনার কাছে আছে। আমার কাছে কিছুই নাই আব্বার। শার্ট বা ঘড়ি অথবা জুতো। শুধু মাথার মধ্যে কিছু সৃতি আছে। সাড়ে তিন মাস আগে আব্বা মারা গেছে।
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৩৪
জুল ভার্ন বলেছেন: রাব্বীর হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানী ছাগীরা।
৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৪১
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: খুব সুন্দর স্মৃতিচারণ। যদিও আগে আপনার কোন একটি পোস্টে পড়েছি।
শুভেচ্ছা জানবেন।
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৩৫
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৭| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:১৭
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: কম টাকায় ক্যাসিও ঘড়ি পরতাম। আপনার ঘড়ি-ভাগ্য ভালো।
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৩৫
জুল ভার্ন বলেছেন: ক্যাসিও ঘড়ি মার্কেটে এসেই ঘড়িকে স্বার্বজনীন করে দিয়েছে।
৮| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৪০
বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: সময় নিশ্চয় তা দেখে নীরব হেসে আমাকে ব্যঙ্গ করেছে
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৩৬
জুল ভার্ন বলেছেন: সময়ের নিয়ম।
৯| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৭
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: প্রায় একমাস পর মিশনারী স্কুলের এক ছাত্র ঘড়িটা পুকুরের কাদাপানিতে খুঁজে পেয়ে স্কুলের ফাদার রিগ্যান রিগভীকে জমা দেয়। ঘড়িটা তখনও সচল ছিলো। উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে ওরা আমাদের বাড়িতে ঘড়িটা পৌঁছে দেয়। অপ্রত্যাশিত ভাবে আমি ফিরে পাই আমার প্রিয় ঘড়ি!
অবিশ্বাস্য ব্যাপার!!!
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৩৭
জুল ভার্ন বলেছেন: সচল মানে ঘড়িতে দম দেয়ার সাথে সাথেই সচল।
১০| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৯
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৩৯
জুল ভার্ন বলেছেন: সুন্দর প্রকাশ। রকমারি থেকে সংগ্রহ করবো ইন শা আল্লাহ।
১১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৫০
ওমেরা বলেছেন: কিছু সুখের স্মৃতি কখনো ভুলা যায় না , সময়ে সময়ে মনে পরেও কি যে ভালো লাগে , কত আনন্দ অনুভূতি মনে জাগে সত্যি বলার মত না ।
আপনার স্মৃতি মূলক লিখাটা পড়ে আমারও মনের গভীরে কিছু স্মৃতি নাড়া দিয়ে গেল ।
খুব ভালো লাগলো লিখাটা ।
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৩৯
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ বোন।
১২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৪১
জুন বলেছেন: এক সময়ে একটা ঘড়ির জন্য আপনার মত আমারও অনেক আকাঙ্ক্ষা ছিল, এখন আমার কত ঘড়ি কিন্তু পরা হয় না। সেই সময়কে নিয়ে খুব সুন্দর লিখেছেন।
+
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৪১
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি ঘড়ি না পরলে অস্বস্তিবোধ করি। তাই বাইরে ঘড়ি পরি।
ধন্যবাদ।
১৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৫৬
আহমেদ জী এস বলেছেন: জুল ভার্ন,
একসময় মানুষই ঘড়ি আবিষ্কার করেছিলো, এখন সেই ঘড়িই মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যে!
"স্মৃতি" মানুষের আবিষ্কার না হলেও স্মৃতিরাও তাড়িয়ে ফেরে কখনো কখনো।
বরিশাল শহরের লোক জেনে ভালো লাগলো।
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৪৩
জুল ভার্ন বলেছেন: আপনিও বরিশালের মানুষ জানতাম। অক্সফোর্ড মিশন স্কুলের সামনে একই রকম দুটো দৃষ্টিনন্দন বাড়ি ----- ওটাই আমার পৈত্রিক বাড়ি।
১৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: করোনা আসার পর থেকে আমি ঘড়ি পড়ি না। ওয়ালেট ব্যবহার করি না।
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৪৪
জুল ভার্ন বলেছেন: ঘরের বাইরে ঘড়ি আমার নিত্য সংগী।
১৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৩১
পুলক ঢালী বলেছেন: অসাধারন স্মৃতিকথন। অনেক মূল্যবান কথায় সমৃদ্ধ। সত্যিই সময় আমাদের সাথে হেটে চলে কিন্তু আমরা ব্যর্থ সময়ের সাথে হেটে চলতে পারিনা।
ভাল থাকুন জুলভার্ন ভাই।
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৪৪
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৪২
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ?