নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
অন্ধকার থেকে আলোয়....
'গুরু' শব্দটি 'গু' এবং 'রু' এই দুটি সংস্কৃত শব্দ দ্বারা গঠিত। 'গু' শব্দের অর্থ অন্ধকার এবং 'রু' শব্দের অর্থ যা অন্ধকারকে দূরীভূত করে। অর্থাৎ গুরু হলেন যিনি অন্ধকারকে দূর করেন।
তাইবলে গুরু আর শিক্ষকের অর্থ কিন্তু একই না।
গুরু হলেন তিনি, যিনি আমাদের তৃতীয় নয়ন অর্থাৎ "উপনয়ন" উন্মোচন করেন। আমি অক্ষয়কুমার সেন বাংলা পদ্যে "শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ-পুঁথি" পড়ে জেনেছিলাম, "আমি ততক্ষণ পর্যন্ত মাতৃদর্শন লাভ করিনি, যতক্ষণ না আমার গুরু তোতাপুরি আমার তৃতীয় নয়ন উন্মোচন করেছিলেন"।
পৃথিবীর বাকি জীবজগতের সাথে মানুষের পার্থক্যই ঠিক এই জায়গাটিতেই। মানুষই একমাত্র ষড়রীপুকে জয় করে "আমি"কে জানতে সক্ষম। আর "আমি"কে জানা মানেই ঈশ্বরকে জানা। বাইরে কোথাও খোঁজা বৃথা। 'আমি' সম্পর্কে ইমাম গাজ্জালী (রঃ) তার কিমিয়ায়ে সাদ'ত গ্রন্থে লিখেছেন- "আমি মানে একজন মানুষ নয়, প্রতিটি মানুষের আত্মা হচ্ছে আমি"।
গুরু আমাদের জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলনের পথ দেখান। তিনি শুধু বয়ে যাওয়াটা শেখান। বয়ে যাওয়ার পথটি শিষ্যকে নিজেকেই তৈরি করতে হয়। যে গুরু অহংবোধে শিষ্যের থেকে সাবমিশন চান, তাঁর গুরু হয়ে ওঠা হয় না। আবার যে শিষ্য সেই আত্মসমর্পণে দ্বিধাগ্রস্ত হন, সে আদর্শ শিষ্য হতে পারেন না।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, গুরুলাভ না করলেই বা ক্ষতি কি? না ক্ষতি নেই, অসংখ্য বিষয় আছে, ক্ষেত্র আছে, বই আছে নিজেকে উন্নত করার জন্য।
একটি উদাহরণের সাহায্যে বলিঃ
আমি, আপনি বা আমরা অনেক বই পড়ে (এখানে জানার মাধ্যম হিসাবে বইকে নিলাম) অনেক কিছু জানলাম। জানার পরেই যে অনুভূতিটি পাঠকের মধ্যে প্রাথমিকভাবে দেখা দিল, আমরা অর্থাৎ পাঠক যে জানি- সেটা তো অপরকে জানাতে হবে। যথারীতি সেই পথেই এগোলাম। দেখলাম আমার পান্ডিত্যে পৃথিবীর নব্বই ভাগ মানুষ বাহ্ বাহ্ করলেন, কিন্তু দশভাগ সে ভাবে তো প্রশংসা করলেন না। ঠিক এই জায়গাটা থেকে জন্ম নিল দুঃখ এবং সেই পথেই ক্রোধের সৃষ্টি। ষড়রীপুর একটি মোক্ষম রীপু এই ক্রোধ। সেই পথেই অহংবোধ হুঙ্কার ছাড়তে লাগলো (সশব্দে নাও হতে পারে)। আমার এই এতো জানা-বোঝার নেট রেজাল্ট হলো BIG ZERO । তার কারণ অহংবোধ এসে আত্মদর্শনে বাধা সৃষ্টি করলো, এই আমিত্বকে অতিক্রম না করলে "আমি" কে দেখা যায় না!
মানুষ-জনের মধ্যে আধ্যাত্মিকবোধ জাগিয়ে তোলার কোনরকম মহৎ উদ্দেশ্যে এই লেখা নয়। দিনমান যে বা যারা কাউকে "আমার গুরু" বলে মাতম করেছেন, তাঁদের সশ্রদ্ধভাবে আমার তরফ থেকে এইটুকু জানালাম।
পরিশেষে বলি, ফ্যাসিবাদের দোসর, সমর্থক হয়ে শিক্ষক কিম্বা গুরু হওয়া লজ্জার। গুরুর চাইতে মানুষ হওয়া শ্রেয়। লোকজনের তৃতীয় নয়ন উন্মোচন হোক্ না হোক্, মানবিক দৃষ্টি যেন সদা জাগ্রত থাকে। তাহলেই তো লোকজনদের "মানুষ" বলে সম্বোধন করলে ভালো লাগবে। আপনার সম্মান বাড়বে।
©somewhere in net ltd.