নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

“সবার সুখে হাসবো মোরা কাঁদব সবার দুখে”- এই ‘সবার’ বলতে কিন্তু ‘সবাই’ না!

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৩১

‘সবার সুখে হাসবো মোরা কাঁদব সবার দুখে...’

সবার দুখে কাঁদতে আমার আপত্তি নেই।

তবে এই ‘সবার’ মধ্যে সবাইকে ফেলতে আমি রাজি না। এমন কিছু লোক আছে যাদের দুঃখে কান্নার পরিবর্তে অটোম্যাটিক হাসি চলে আসে! :-)



‘Mechanical Design of Process Equipment ’ নামে এ সেমিস্টারে আমাদের একটা কোর্স আছে। ওপেন বুক এক্সাম। বই উঠানো এবং সেইসাথে ক্লাসে বই আনা বলতে গেলে বাধ্যতামূলক। বই নাই তো রুমে গিয়ে ডিমে তা দাও! বই থাকলে পাতা উল্টাও... পাতার পর পাতা উল্টাও... এ বই পড়ার চেয়ে পাতা উল্টালেই নাকি বেশী শেখা যায়!



যাহোক, ল্যান্ডিং কার্ড রিনিউ করার মত দুরূহ একটা কাজ সেরে কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম বই উঠাতে। ভীর দেখে মনে হল ঈদে বাসে টিকেট কাটতে এসেছি। তারওপর সেকশন অফিসারের কচ্ছপ মার্কা গতি দেখে বিরক্তিটা চরমে উঠল। দাঁড়িয়ে থাকলাম অনেক্ষণ। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হল। লাইব্রেরী কার্ডটা এগিয়ে দিলাম। টেবিলে রাখা মাত্র জিএফসি ফ্যানের বাতাস আমার অর্ধছেড়া কার্ডটিকে দু’টুকরো করে ফেলল! সেকশন অফিসার চেঁচিয়ে উঠলেন!



-এটা কার কার্ড?

-আমার। বাতাসে ছিড়ে গেল। স্কচ টেপ লাগাতে হবে।

-হবে না। ছেড়া কার্ডে বই ইস্যু হয় না। নতুন কার্ড নিয়া আসেন।

-নতুন কার্ড কই পাব? এইটাটেই ইস্যু করে দেন। বইটা খুব জরুরী।

-বললাম তো ছেড়া কার্ডে আমি বই ইস্যু করিনা!

-করবেন না কেন? আপনার সামনেই তো ছিড়ে গেল! ইস্যু করেন। টেপ লাগিয়ে নেব।

-আমি ছেড়া কার্ডে বই ইস্যু করব না!



শেষের কথাটা অনেকটা জমিদার স্টাইলে বললেন। অবুঝদের বুঝানো যায় কিন্তু বেবুঝদের বুঝানো যায় না। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। শুধু লোকটার নাক ফাটানোর ইচ্ছেটা দমাতে পারছিলাম না!



ছেড়া কার্ডটা জমা দিলাম। এখানেও সেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা! না, কার্ড এ সপ্তাহেই হবে না! অপেক্ষা করতে হবে সোমবার পর্যন্ত!



আজ রবিবার। লাইব্রেরীতে গিয়ে একটু অবাকই হলাম। আমার কার্ড হয়ে গেছে! এবার ঝকঝকে নতুন কার্ড নিয়ে হাজির হলাম ল্যান্ডিং শাখায়। ভীর নেই। অবস্থা অনুকূলে। কার্ড বাড়িয়ে দিলাম। ভদ্রলোকের নজর অন্যদিকে। দু’টি মেয়ে এসেছে। উনি আগে আপামণিদের বিদায় করবেন। ভদ্রলোক এতটাই এক্সাইটেড ছিলেন যে, আপামণিদের লাইব্রেরী কার্ড রিনিউ করা নেই উনি সেটি খেয়ালি করেন নি! ব্যাপারটা ইগনোর করলাম।



আমার ঝকঝকে নতুন লাইব্রেরী কার্ডটি জমিদার বাবুর হাতে। লাইব্রেরী কার্ডে ছবি ছিল না বলে প্রথমে আপত্তি উঠলেও আইডি কার্ড দেখাতেই তা দেবে গেছে। জমিদার বাবু হন্য হয়ে আমার ল্যান্ডিং কার্ড খুঁজছেন। কার্ডটি যেখানে থাকার কথা সেখানে নেই! বুড়ো মানুষ! কাজের চাপে ভুলে কই যে রেখেছেন কে জানে?(!)



তাতে আমার কি? আমি বই নিতে এসেছি বই নিয়েই যাব। কার্ড তো আমার ছেড়া না যে ছাড় দেব! জমিদার বাবু খুঁজেই যাচ্ছেন। এক ঘন্টা পেড়িয়ে গেল। ভদ্রলোক মোটামুটি বিপদেই পড়েছেন। এই প্রথম কারো বিপদ দেখে হাসি চলে এল! খুব মজা পাচ্ছিলাম। থেকে থেকে বইটার গুরুত্ব এবং বই না থাকার অসুবিধা সম্পর্কে জমিদার বাবুকে নসিহত করছিলাম। ভদ্রলোক কাহিল হয়ে পড়লেন!

-আপনি কালকে আসেন।

-কাল কেন? আমার তো বইটা লাগবে!

-না। কালকে একবার আসেন। আসলে কাজের অনেক চাপ তো! কোথায় যে রাখছি!

-তো কি করব? বইটা নিয়ে যাব? খুব দরকার। কাল ৯ টায় ক্লাস আছে।

-আমি তো বুঝতে পারছি। কিন্তু...



ফাইজলামী করার ইচ্ছে থাকলেও বাদ দিলাম। যদিও বিনোদনের অভাব হচ্ছিল না তারপরও জমিদারের করুণ মুখটা দেখে মায়া হল। আজকের মত ছেড়ে দিলাম। বেচারা... ‘আমি ছেড়া কার্ডে বই ইস্যু করি না!’



জমিদার বাবুর শাস্তিটা একেবারে মন্দ হয়নি। খোঁজো বাবা খোঁজো! রাতভর খোঁজো...

আমি বরং একটু হেসে নেই! :D :D :D

কাল আবার আসছি...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.