নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: 'মেয়েটা'

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৭

এক



দুই



তিন



ব্যস্ত মানুষরা সুখ দুঃখের হিসেব কষার সময় পায়না। তাদের পুরো মাথা জুড়ে সর্বদা কাজের জীবাণুগুলো গিজগিজ করতে থাকে। সূর্য উঠলো কি উঠলো না, প্রীয় দল হারল না জিতলো, কে খেলো, কে খেলোনা, কার কষ্টের গভীরতা কত হলো... এসব খবর রাখার কোন ফুরসতই তারা পায়না। তারপর আস্তে আস্তে যখন ব্যস্ততার মেঘ কেটে গিয়ে মনের আকাশে শরতের সাদা মেঘ উঁকি দেয়, তখন ভুলে যাওয়া বিষয়গুলো এক এক করে সেই সাদা মেঘের পর্দায় প্রদর্শিত হতে থাকে। যার আবেশে আবিষ্ট হয়ে চিরচেনা ব্যস্ত মানুষটি হঠাৎ অচেনা হয়ে যায়।



গত সপ্তাহের পুরোটা জুড়েই ব্যস্ত ছিলাম। মহান প্রজেক্ট ওয়ার্ক সম্পন্ন করার নিমিত্তে প্রতিদিন ঘুম ঢুলুঢুলু চোখ নিয়ে ল্যাবে ঢুকতাম আবার সেই ঘুম ঢুলুঢুলু চোখ নিয়েই রুমে ফিরতাম। মাঝের সময়টা যে কি করে কেটে যেত সেটা বুঝতামই না। পেটের মধ্যে যখন খাবাবের টান পড়ত শুধু তখন বুঝতাম যে লাঞ্চ করার সময় হয়েছে। রাতটাও কেটে যেত মহা ব্যস্ততায়। ডাটা এনালাইসিসে গোঁজামিল দিতে দিতে মাঝ রাত পেড়িয়ে যেত। তারপর লম্বা লম্বা হাই তুলে ঘুমকে আলিঙ্গন করতাম। পরদিনটাও ঠিক এভাবেই কেটে যেত। কাজেই দেশ ও দশের খবর শত চেষ্টা করেও এ কয়দিনে আমার মাথার ত্রি-সীমানায় ভীড়তে পারেনি।



প্রজেক্ট ওয়ার্কের কয়েক টনি বোঝাটা যখন মাথা থেকে নামিয়ে স্যারের রুমে দিয়ে আসলাম তখন মনে হলো – “পৃথিবী এত সুন্দর কেন? আহা! কী সুন্দর আকাশ! কী সুন্দর বাতাস! কী সুন্দর চারিপাশ!” ফুরফুরে মন নিয়ে চলে গেলাম নদীর পাড়ে।



নদী আমার বরাবরই ভালো লাগে। কিচ্ছু না, নদীতে শুধু সাধারণ একটা ডিঙি নৌকা থাকলেই চলবে। নদীর মৃদু স্রোতে ভাসমান নৌকা দেখলেই মনটা কেমন যেন হয়ে যায়। সাধ জাগে নৌকাটার মত ঢেউয়ের তালে তালে ভাসতে। স্রোতের সাথে তুমুল যুদ্ধ হবে। স্রোত আমাকে দক্ষিণে টানবে আর আমি স্রোতকে ঠেলবো উত্তরে। তারপর শরীরের সবটুকু শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেলে স্বেচ্ছায় স্রোতের অধীনে চলে যাব...



ঐযে বলছিলাম হাতে কাজ না থাকলে মানুষ কল্পনাপ্রবণ হয়ে যায়, আমিও নদী পাড়ে বেকার বসে কল্পণার জাল বুনছিলাম। ভাবনায় ছেঁদ ফেলালো নীল রঙা একটা মেয়ে। মেয়েটা নীল না, মেয়ের শাড়িটা নীল। সুপ্ত স্মৃতি মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। এতো সেই মেয়েটা!



মেয়েটার অবস্থান আমার থেকে খুব বেশী দূরে না। বড়জোর পনের ফিট। আমি বড় একটা পাথরে বসা আর মেয়েটা আরো কয়েকজন শাড়ি পড়া রমণী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নৌকার অপেক্ষায়। আমি মেয়েটার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। মেয়েদের দিকে এক দৃষ্টে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে নেই। গুণীজনরা বলেন এতে নাকী প্রেমে পরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া বিষয়টা দেখতেও দৃষ্টিকটু। পূর্বপরিচিত হিসেবে কথা বলা যেতেই পারে। কিন্তু আগ বাড়িয়ে সাজুগুজু করা একটা সুশ্রী রমণীর সাথে কথা বলতে যাওয়াটা তাকিয়ে থাকার চেয়েও খারাপ জিনিস। নদীর অবাধ্য ঢেউগুলোর মত মনটা দুলছিল। মেয়েটার দিকে তাকাবো কি তাকাবো না? উঠে গিয়ে কথা বলবো নাকি উঠবোই না? এভাবে মিনিট পাঁচেক মনের সাথে তুমুল যুদ্ধ সেরে যখন মেয়েটার দিকে তাকালাম তখন নৌকা মেয়েটিকে মাঝ নদীতে নিয়ে গেছে!



বুকের ভেতর থেকে একটা বড় পাথর নেমে গেল। এবার নিঃসংকোচে তাকিয়ে থাকলাম নদীর দিকে। নিজের আচরণে নিজেই অবাক হলাম! এ কী করছি আমি?



আমি কি মেয়েটার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছি? এমন তো কথা ছিল না। প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল সেদিনই অবশ্য হুট করে আপনি থেকে তুমিতে নেমেছিলাম সত্য, তবে সেটা নিছক কৌতুক করেই। পরে যেদিন দেখা হল সেদিন তো আবার আপনিতেই ফিরে গিয়েছিলাম। স্বাভাবিকই তো ছিলাম! তবে আজ এমন করলাম কেন?



নৌকাটা অনেক দূরে চলে গেছে। আমি পাথরটায় পাথর হয়ে বসে আছি। চাইলেই উঠে যেতে পারি... তবুও উঠছি না। মানুষের উদাসীনতা, বৈরাগ্য, ভালো লাগা সবকিছুতেই পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রত্যক্ষ একটা প্রভাব থাকে। যে মেয়েটার কথা গত এক সপ্তাহে একটিবারের জন্যও আমার মনে হয়নি, সেই মেয়েটাকে হুট করে দেখে আমি বিনাকারণে অবশ হয়ে পড়ে আছি।



মনকে স্থির করলাম। মনের ভেতরে যত আত্নঘাতী বিক্রিয়াই চলুক না কেন আমাকে স্থির হতে হবে। মেয়েটা ফিরলে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করতে হবে। তার নীল শাড়ির রহস্য উৎঘাটন করতে হবে। মলিন ঠোঁট দুটো ডানে বামে প্রসারিত করে গুটিকয়েক মিষ্টি কথা বলতে হবে। এগুলোকে দূর্বলতা বলেনা, এগুলো সামাজিক রীতি; ভদ্রতা!



নৌকা তীরে ভিড়েছে। দেহের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করে উঠে দাড়ালাম। এবড়ো থেবড়ো পা ফেলে মেয়েটার সামনে চলে এলাম। তারপর স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম, ‘কেমন আছেন?’



মেয়েটা একটা মুচকী হাসি দিয়ে বলল, - ‘তখন থেকে এখানেই আছেন?’



তখন থেকে মানে? মেয়েটা তখনও আমাকে লক্ষ্য করেছে! কি উত্তর দেব আমি? কাচুমাচু করে শুধু বললাম, - ‘হুম!’



পাল্টা প্রশ্ন করার সুযোগ ও শক্তি কোনটাই পেলাম না। মেয়েটা তার দলবল সহ চলে গেল। আমি ফের গিয়ে ঐ পাথরটায় বসলাম। মনের ভেতরের আত্নঘাতী বিক্রিয়া চলছে। তীব্র গতিতে!



(চলবে)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২২

শায়মা বলেছেন: ভালো লাগলো ভাইয়া!!

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩২

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ শায়মা। :)

২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৩

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: স্রোতের সাথে তুমুল যুদ্ধ হবে। স্রোত আমাকে দক্ষিণে টানবে আর আমি স্রোতকে ঠেলবো উত্তরে। তারপর শরীরের সবটুকু শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেলে স্বেচ্ছায় স্রোতের অধীনে চলে যাব... -------------- অসাধারণ বাক্যবিন্যাস আর সাবলীলতা --- মুগ্ধ আমি

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১১

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: অফুরান ধন্যবাদ আপনাকে। দোয়া রাখবেন :-)

৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুন্দর লাগছে| চলুক

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১৮

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ রাখাল ভাই। দোয়া রাখবেন :-)

৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৪৯

তুষার কাব্য বলেছেন: চমত্কার লেখনি...ভালো লাগলো গল্প।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৫৬

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.