![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মৌসুমি রোদ্দুর মেঘ হলে, আমি বৃষ্টির জলে খুঁজবো তোমাকে; নীল খামে কাব্য করে বর্ষার ঠিকানায় লিখবো প্রেমপত্র।
'নাতি বেহুদা টেখা পয়সা উড়াইও না। টেখা পয়সা রুজি করা বহুত কষ্ট রেবা।' - দেখাসাক্ষাৎ হলে প্রতিবেশী ইব্রাহিম মহাজন এমন উপদেশাত্মক কিছু কথা প্রায়ই বলতেন। এলাকায় উনি 'কিপটা মাজন' নামে খ্যাত ছিলেন। বাবা চাচারা বলতেন, এই ইব্রাহিম মহাজন নাকি ৭১এর বছর দুয়েক পূর্বে বাজারে (আমাদের ধানের মিলের পাশে) ছোট্ট একটা টঙ দোকান পেতে বসেছিলেন। এবং শুধুমাত্র কিপটেমি করে করেইই এতো ধনী হয়েছেন। ইব্রাহিম মহাজন মরা গেছেন প্রায় এক যুগ। মাঝেমাঝে উনাকে মনে পড়ে। উনাকে নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করে-
আমি তখন সবেমাত্র নবম শ্রেণীতে। পাশের বাড়ির রবিন আমার ক্লাসমেট। আমরা প্রতিদিন একসাথে স্কুলে যেতাম। একবার রবিন আকস্মিক স্কুলে যাওয়া অফ করে দিলো। কারণ, জানতে চাইলে জল ছলছল চোখে সবুজ ধানক্ষেতের দিকে তাকাতে তাকাতে বললো- পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। আর স্কুলে যাবেনা। বাড়িতে বাবার সাথে চাষবাস, কামকাজ করবে। স্কুল-পড়ালেখা এসব নাকি তার ভালো লাগেনা। আমি জোরাজোরি করলে- কখনো তাদের জীর্ণশীর্ণ ধলাগাই'টি (গাভী) ডুলায়ে (এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে বেধে রাখা) দেওয়ার বাহানা ধরে, আবার কখনো কখনো বাবার জন্য টিফিন নিয়ে বা ক্ষেতে হাস-ছাগল পড়েছে কিনা দেখতে যাওয়ার বাহানা দেখিয়ে চলে যেতো। তারপর থেকে আমাকে বাধ্য হয়েই একাএকা স্কুলে যেতে হতো। আমাদের এলাকার কয়েকটা মেয়ে গালস স্কুলে পড়তো। মেয়েগুলা দলবেঁধে হাসি তামাশা করতে করতে স্কুলে যাওয়া আসা করতো। কারণেঅকারণে খেক-খেক করে হাসতো। তাদের হাসির খোরাক যোগাতো আমাদের চোলের স্টাইল, প্যান্ট, জুতা, ব্যাগ... ইত্যাদি। তাদের এই হাসি তামাশা অনেকটা টিজের মতো। আর টিজ থেকে বাচার একমাত্র উপায় ছিলো বাই সাইকেলে যাতায়াত। নিঃসন্দেহে বলতে পারি, তখনকার এলাকার ছেলেদের সাইকেল কেনার পেছনের অন্যতম কারণগুলোর একটি ছিলো মেয়েদের টিজিং থেকে নিজেকে বাচানো। যাহোক, রবিনের অনুপস্থিতিতে মেয়েদের হাসির পরিমাণ ফুরফুর করে দিনদিন বাড়তে লাগলো। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় - রাস্তায় যেনো মেয়েদের সাথে দেখা না হয় এই দোয়া জপতে জপতে সামনে পা বাড়াতাম।
একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে ইব্রাহিম মহাজন রবিনের স্কুল না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলেন। বললাম। মেয়েদের অত্যাচারের ব্যাপারেও বললাম। মহাজন সাহেব শুনে হা হা... করে হাসতে হাসতে বললেন। নাতি খবরদার, ইতা খেউরে কইস না। মাইসে হুনলে আসিবা ( হাসবে)। উনার হাসি দেখে কিছুটা লজ্জিত হয়ে চলে এলাম। এর সপ্তাহ খানেক পর থেকে রবিন আবার স্কুলে নিয়মিত হয়েছিলো। রবিনের স্কুলে নিয়মিত হবার পেছনের সম্পূর্ণ ক্রেডিট উনার ছিলো সেটা জানতে পেরেছি মাধ্যমিক রেজান্টের পর। আমার থেকে বিস্তারিত জেনে, উনিই রবিন এবং আমাদের ক্লাসের আরো দুজনকে স্কলারশিপ হিসেবে পড়ালেখার খরচ দিয়েছিলেন। তারপর, বিভিন্নসময় বিভিন্ন জায়গায় উনার অনেক ভালো কাজ সম্পর্কে শুনেছি। বিশেষ করে মৃত্যুর পর। এলাকায় কিপটা খ্যাত এই হিসেবি মানুষটি গোপনে গোপনে মানুষদের যেভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন বা করতেন সেসব প্রথমে শুনে অনেকের স্বপ্ন মনে হলেও পরে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছে। সেই কিপ্টে মানুষটির মানবিকতা, জীবনবোধ আজ এলাকার অনেকেরই আদর্শ। একটাসময় যারা উনার পরিচয় দিতে অপমানবোধ করতো আজ তারাই বুক ফুলিয়ে বলেন, তিনি আমার....
২২ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১৪
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ভাই, তখন আমাদের অবস্থা নাজেহাল কইরা ফেলতো। মাঝেমাঝে পিছন থেকে ''অই, ঐ... এরকম ডাকতো। পিছনে তাকালে একসাথে হু হু কইরা হাসতো।
টেনে উঠবার পর অবশ্য, আমরা শোধ নিতে বা শিক্ষা দিতে পেরেছিলাম।
২| ২২ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:২০
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: কিপ্টে মানুষের যদি এমন মহৎগুন থাকে তবে কিপ্টেইতো ভাল।
২২ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:০৬
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: তিনি হিসেবি ছিলেন। অযথা খরচ করতে না। তবে আশেপাশের মানুষের খোঁজখবর রাখতেন। সাহায্য সহযোগিতা করতেন। - এমন মানুষ আজকাল দেখা যায়না।
আর আমরা হিসেবি মানুষদের গণহারে কিপ্টে বলি। সব হিসেবি মানুষ কিন্তু কিপ্টে নন।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:০৯
দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: খুব ছোট লেখাতেই সাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মহাজন কে।
সে যাই হোক,আপনার এই লেখা পড়ার পর আফসোস হচ্ছে,কেনো যে সাইকেলে করে স্কুলে যেতাম???
নাহলে,দুএকটা ললনার হাসি দেখার সৌভাগ্য হইতো