নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠক।

জুনায়েদ বি রাহমান

মৌসুমি রোদ্দুর মেঘ হলে, আমি বৃষ্টির জলে খুঁজবো তোমাকে; নীল খামে কাব্য করে বর্ষার ঠিকানায় লিখবো প্রেমপত্র।

জুনায়েদ বি রাহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি দুর্ঘটনার পূর্বের গল্প!

২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২০



বিকেল সাড়ে চারটা। দরজা খুলে আনিতাকে দেখে চোখেমুখে বিরক্তির আভা ফুটিয়ে আনাফ বলে- আপু তুই?! এই না গেলি!
আনিতা আনাফের বিরক্তির কারণ বুঝতে পারে- কলিংবেলের শব্দ শুনে আনাফ ভেবে নিয়েছিলো- আম্মু ফিরেছেন'। তবুও চিপসের প্যাকেট'টা ভ্যানিটিব্যাগ থেকে বের করতে করতে জিজ্ঞেস করে, আম্মু এখনো আসেনি?
আনাফ চুপচাপ বসে থাকে। তার বিরক্তির পরিমাণ আরো কিছুটা বেড়ে যায়। নিজের প্রতি রাগ হয়। ঘরে একাএকা মায়ের অপেক্ষা না করে আনিতার সাথে বাইরে গেলে কতকিছুই না দেখতে পারতো। রাজমহল থেকে ভ্যানিলা ফ্লেভারের আইসক্রিম খেতে পারতো....
জবাব না পেয়ে কয়েকসেকেন্ড পর আনিতা আবারো জিজ্ঞেস করে, কিরে আম্মু আসেনি?
আনিতার প্রশ্নটা এবার আনাফের কাছে কাটাগায়ে নোনের ছিটার মতো মনে হয়। সে লাউডলি জবাব দেয়, 'না আসেনি'।
'বলছিলাম না, আম্মু আসার আগেই চলে আসবো। তুই তো গেলি না....' বলতে বলতে আনিতা নিজের রুমে চলে যায়।
আনাফ চিপসের প্যাকেট হাতে নিয়ে চুপচাপ ড্রয়িংরুমে বসে বসে মায়ের অপেক্ষা করে। মা ফিরলে চিপস খেতে খেতে মোবাইলে "আংরিবার্ড" খেলবে। চিপস খেতে খেতে আংরিবার্ড খেলবার মজাটাই অন্যরকম! আজ সকালে আংরিবার্ডের নতুন একটা লেভেল শুরু করেছে আনাফ। মা ফিরলে সন্ধ্যার পূর্বেই সে এই লেভেলটা জিতে যেতো। সন্ধ্যা হয়ে গেলেই তো আবার পড়তে বসে হবে...
পড়তে বসবার কথা মনে পড়তেই মনটা আরো খারাপ হয় আনাফের। আনিতার কাছে গিয়ে অনুনয় করে বলে, 'আপু আম্মুকে একটা কল না'

ট্যাম্পুর ইঞ্জিনের শব্দে মোবাইলের কথাগুলো স্পষ্ট বুঝতে না পারলেও আমেনা বেগম বুঝতে পারলেন ছেলে কথা বলছে। তাই মধুকন্ঠে বলেন, এইতো বাবা। মা এখন গাড়িতে। নেমে কল ব্যাক করি।'
রাফিয়া মেডাম জিজ্ঞেস করে, কে? ছেলে!
-আর বলিয়েন আপা। যা দুষ্টুমি করে। ইদানীং গেম খেলা শিখেছে। অপেক্ষা করছে, আমি বাসায় গেলেই গেম খেলবে। বলেন আমেনা বেগম।
- কি গেম খেলে? খেয়াল রাইখেন। আজকাল ইন্টারনেটে আজেবাজে... কথাটা সম্পূর্ণ করার পূর্বেই কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় টেম্পুটা দুমড়ে মুচড়ে পড়ে রাস্তার পাশে।
আমেনা বেগম অনেক কষ্টে চোখ মেলে দেখেন পাশে রাফিয়া ম্যাডামের নিস্তব্ধ শরীর পড়ে আছে। তিনি চোখে মেলে রাখার চেষ্টা করেন। শুনেন কেউএকজন পাশে কাতরাচ্ছে। কিছু মানুষ এক্সিডেন্ট এক্সিডেন্ট বলে এগিয়ে আসছে।
তারপর কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতা শেষে এম্বুলেন্সের হুইশেল ভেদ করে মোবাইলের চেনা টিউনটা আবারো তার কানে আসে- "মা! ফোনটা ধরো না; মা......"।
***

উপরের গল্পের শিক্ষিকা চরিত্র আমেনা ও রাফিয়া বেগমের মতো গত ৩ আগস্ট বিকেলে স্কুল থেকে টেম্পুযোগে 'গল্প করতে করতে' বাসায় ফিরছিলেন রাঙ্গুনিয়া নোয়াগাও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষিকা। তাদের একজনের নাম 'সোমা ঘোষ'। সোমা ঘোষের ছেলেটা বাসায় বসে বসে মায়ের ফেরার প্রহর গুনছিলো। সোমা ঘোষ ঐদিন আর বাসায় ফেরেন নি। উনাদের গাড়িটি শুলকবহর এলাকায় পৌছুলে পেছন থেকে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় উল্টে যায়। এবং ঘটনাস্থলে নিহত হন আমেনা বেগম নামের এক শিক্ষিকা। গুরুতর আহত আরো এক শিক্ষিকা চিকিৎসারত অবস্থায় একসপ্তাহ পর অবস্থায় মারা যান। এবং আজ ভোরে মারা যান 'সোমা ঘোষ'। । (সূত্র: প্রথমআলো)
এভাবে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। দুইদিন আগে 'rtv'র'একটা নিউজে দেখলাম- শুধু 'ঈদুল আযহা' উপলক্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় সারাদেশে ১৩৫+ মানুষ মারা গেছে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গতবছর আমাদের দেশে বড় আন্দোলন হয়েছে। সরকারের উচ্চমহল থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনো 'ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করার তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। আরো কতো আন্দোলন, আর কতো প্রাণ ঝরলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে??????

ছবি: অন্তর্জল

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


প্রথমে গল্প, পরে গল্প লেখার পটভুমিকা! শুরুতে এই ধরণের একটা গল্পের কি দরকার?

সড়ক নিরাপদ করাটা দক্ষতার বিষয়; বাংলাদেশে দক্ষ লোক কম।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৫

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: কিছুদিন ধরে, গল্প লিখতে ইচ্ছে করে। মাথায় কোনো প্লট থাকায়, যা দেখছি তাই গল্পের মতো লিখবার চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশে দক্ষ লোক নেই। দক্ষ লোক তৈরি করা, বা ক্ষমতায় নেওয়ারও তো কোনো উদ্যোগ নেই। এভাবে কতদিন?!

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৩

নূর আলম হিরণ বলেছেন: রোড এক্সিডেন্ট বন্ধ হোক, এই নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আর আলাদা বাজেট হোক।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৩৩

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: সহমত।

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, আলাদা বাজেট, সঠিক তদারকি ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করা হলে সমস্যার সমাধান হবে না

৩| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: এই দেশ আসলে নষ্ট হয়ে গেছে।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৩৪

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: নষ্টদের হাতে ক্ষমতা থাকলে দেশ নষ্ট হতে বাধ্য।

৪| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:২৭

ভুয়া মফিজ বলেছেন: পাদটীকা না দিয়ে শুধু গল্প লিখলে বেশী ভালো হয়। :)

২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৩৬

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ঠিক আছে মফিজ ভাই,
পরবর্তী সময় আপনার পরামর্শ মাথায় থাকবে।

৫| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৫৩

ইসিয়াক বলেছেন: ষ্টুডেন্ট পড়াতে আমি সাধারণত পায়ে হেঁটে চলাফেরা করি । আর প্রতি দিন ভয়ে ভয়ে রাস্তায় চলাফেরা করি । বেশ কয়েকদিন দূর্ঘটনা পড়তে পড়তে বেঁচে ফিরেছি ।প্রতিটা মানুষ মনে হয় নিয়ম না মানার খেলায় মেতে উঠেছে। ইদানিং খুব ভয় লাগে । সেদিন তো বেপরোয়া এক বাইক আমাকে প্রায় চাপা দিচ্ছিলো । নেহাৎ কপালের জোর তাই বেঁচে গেছি।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৪০

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: সাবধানে চলাফেরা করবেন ভাই। বাইকগুলার বেশিরভাগই কাগজ নেই। বাইকারগুলার লাইসেন্স নেই।
রাস্তায় যে গাড়িগুলা চলে ওগুলার বেশিরভাগই আনফিট, ধজভঙ্গ! দেখলে মনে হয়, যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সো সাবধান!

৬| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:২৮

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে চলছে বাংলাদেশ!!! আহা বেশ বেশ বেশ

২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৪২

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: সঠিক বলেছেন।
গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে চলছে বাংলাদেশ!!!
তবুও বাধ্য মোরা বলতে 'বেশ বেশ বেশ'!

৭| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৮:০৩

নীল আকাশ বলেছেন: লেখা ভাল লেগেছে। বাস্তবতা এর চেয়েও ভয়াবহ। BRTC তে লাইসেন্স এর নামে যা চলে সেটা বন্ধ করা না হলে এইসব দুর্ঘটনা কোন ভাবেই বন্ধ করা যাবে না। এর সাথে এই সব শ্রমিকদের সংঘটনের দৌরাত্ম্য বন্ধ ক রতে হবে।

কিন্তু আদতে এই সরকারের আমলে এইসবের কিছুই হবে না। যতদিন শাহাজাহান খান বেচে থাকবে ততদিন সড়ক পথে দুর্ঘটনা বন্ধ করা যাবে না।

ধন্যবাদ।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:৫৭

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: সহমত মিতা ভাই।

তবে সিস্টেম ঠিক না হলে, শাহাজাহান খান মরলেও সড়কের এইসব অরাজকতা বন্ধ হবে না। আরেক শাহাজাহান তৈরি হবে। এইসব শাহাজাহান চরিত্রের লোক ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলেও সড়কের দায়িত্বে ছিলো।

৮| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৯:৩৩

ইসিয়াক বলেছেন: নীল আকাশ বলেছেন: লেখা ভাল লেগেছে। বাস্তবতা এর চেয়েও ভয়াবহ। BRTC তে লাইসেন্স এর নামে যা চলে সেটা বন্ধ করা না হলে এইসব দুর্ঘটনা কোন ভাবেই বন্ধ করা যাবে না। এর সাথে এই সব শ্রমিকদের সংঘটনের দৌরাত্ম্য বন্ধ ক রতে হবে।

কিন্তু আদতে এই সরকারের আমলে এইসবের কিছুই হবে না। যতদিন শাহাজাহান খান বেচে থাকবে ততদিন সড়ক পথে দুর্ঘটনা বন্ধ করা যাবে না।
সহমত । ধন্যবাদ নীল আকাশ ভাইকে।
ভাইয়া অনেক দিন আপনার লেখা পাই না।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:৫৮

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: আজ লিখেছেন। মাত্র পড়ে এলাম...

৯| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৭

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: অ্যাংরিবার্ড, মজাটাই আলাদা।
আর বলিয়েন না আপা, টেম্পু যোগে, পৌঁছালে প্রভৃতি স্থানে কিছু টাইপো দেখলাম।
অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। সামুতে লাইক বাটনের পাশে স্যাড বাটনের অভাব অনুভব করছি।
দয়া করে কমেন্টটি ডিলিট করবেন।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:০৩

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানবেন পদাতিক দা,
ঠিক করে নিয়েছি।

সত্যি হৃদয়বিদারক ঘটনা। এসব বন্ধে কার্যকারী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সরকারের ভাবা উচিত, যারা রোডে বের, চলাফেরা করে তাদের বেশিরভাগই ফ্যামিলির অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আমি এমন ফ্যামিলি দেখেছি, যাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটা রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। পুরু ফ্যামিলি ভেঙ্গে পড়েছে!

১০| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৮

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা। সমবেদনা জ্ঞাপন করার ভাষা নেই।

১১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: নষ্টদের হাতে ক্ষমতা থাকলে দেশ নষ্ট হতে বাধ্য।

আমার বন্ধু আমাকে বলে, সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে হলে এই দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:০৬

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: নিজের দেশ ছেড়ে পরের দেশে গিয়ে নিরাপদে থাকা যায়, ভালো থাকা যায়। তবুও মজা পাওয়া যায়না ভাই।
বাংলার সবুজ, বাংলার সাধারণ সহজসরল মানুষ... স্মৃতি বার বার পিছুডাকে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.