![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম অংশঃ
-----------------
ঘরের এককোনে টিম টিম করে প্রদীপটি জ্বলছে ......
বাইরে কালো মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশটা ,
ঝড় উঠবে হয়তো এখনি...
ঘরের মধ্যে আবছা অন্ধকার.........
সেই ঘোর লাগা অন্ধকারে পিছন ফিরে বরুনা দাড়িয়ে আছে জানালার একপাশে, চোখে যে তার আজ ঝড় উঠেছে কালবৈশাখী, সে চায়না সুনীল সেইটা বুঝে ফেলুক আর নষ্ট হয়ে যাক তার সুনীলকে একটা ভাল জীবন উপহার দেওয়ার এত দিনের এত চেষ্টা ......
সুনীলও কিছুটা বিব্রত, সে অনবরত পায়চারি করেই যাচ্ছে, ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা হয়তো, তার মুখটাও বেশ থমথমে হয়ে আছে ......
এইতো কয়েক মাস আগের কথা, বরুনা নিজেই বলেছিল তার পক্ষে আর সম্পর্কটা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
সুখে, দুঃখে অনেকটা সময় পার করেছে তারা একসাথে, কিন্তু হঠাৎ কেন জানি মেয়েটা পাল্টে গেল ।
এরই মধ্যে সুনীলের জীবনেও কিছুটা পরিবর্তন এসে গেছে ।
হঠাৎ করে কিভাবে যেন জীবনটা নতুন এক মোড় নিলো । পূর্ণা এলো সুনীলের জীবনে ।
প্রথম দিকে বরুনার উপর এক প্রকার অভিমান থেকেই পূর্ণার সাথে মেলামেশা শুরু হলেও শেষের দিকে মেয়েটিকে ভাল লাগতে শুরু করে সুনীলের।
পূর্ণা তার জীবনে এক আশ্চর্যের মতো, মেয়েটাকে যতোই দেখে ততোই অবাক হয় সুনীল। এতোটা সাবলীল আর হাসিখুশি মেয়ে সে আগে দেখেনি কখনো ।
কি যেন এক নান্দনিক ছন্দ কাজ করে ওর চলাফেরায় আর কথাবার্তায় । কিন্তু সুনীল ধরতে পারেনা সেইটা কি ।
ধীরে, ধীরে জীবনটাও সুন্দর হতে শুরু করলো সুনীলের ।
পূর্ণার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত এক একটি স্বপ্ন পূরণের মতো মনে হয় ওর কাছে ।
সুনীল খেয়াল করেছে, পূর্ণা কাছে থাকলে পৃথিবীর আর কোন কিছুই ওর মাথায় কাজ করেনা । কেমন জানি এক অবাক মুগ্ধতা কাজ করে ওর ভেতরে তখন ।
মনে হয়, মেয়েটা সারা জীবন যদি পাশে থাকতো তবে মন্দ হতো না।
তবে সুনীলও সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগতে থাকে কিছুটা । বলা যায় এক প্রকার দোটানায় । সুনীলের এখন কি করা উচিৎ সে নিজেই বুঝতে পারছে না ।
বরুনার সাথে দুরত্ব বেড়েছে সে অনেকদিন হলো, বরুনা তো না বলেই দিয়েছে সেই কবে, তারপরেও বরুনার কথা মনে পড়লেই বুকের মধ্যে কোথায় যেন একটু খচখচ করে ওঠে সুনীলের ।
সুনীল বোঝে, অনেকটা সময় তারা একসাথে হেসেছে, কেঁদেছে । ভুলতে তো একটু কষ্ট লাগবেই। কষ্ট গুলোকে লুকিয়ে তবু সে নতুন করে আবার সব শুরু করেছে। তবে কেন হঠাৎ এখন এই মায়া কান্না বরুনার !?
সুনীল কিছুতেই বুঝতে পারছেনা,
তার মাথা কেমন জানি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে .........
,
,
,
দ্বিতীয় অংশঃ
-------------------
কিছুক্ষণ আগে বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, জানালা থেকে পানির ছিটা এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বরুনার মুখটা ।
এখন কান্নার পানি আর বৃষ্টির পানি মিলে একাকার ......
বরুনা কাঁদছে কিন্তু সে নিজেও বুঝতে পারছে না কেন কাঁদছে ... সে নিজেই তো সুনীলকে না বলে ঠেলে দিয়েছে এই পরিস্থিতির দিকে।
কি নেই সুনীলের ...?!
একটা ভাল জীবন সঙ্গী হওয়ার জন্য যা যা থাকা প্রয়োজন তার থেকে সব কিছু বেশীই দেখেছে সে সুনীলের ভেতরে ।
এমনকি নতুন করে বাঁচতে শেখা এই সুনীলের কাছ থেকেই । জীবনটা যখন প্রায় অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছিলো তখন, এই সুনীল এসেই হাত ধরে আলোর পথ চিনিয়েছিল তাকে।
একটা সময় তো ধরেই নিয়েছিলো সুনীল ছাড়া তার জীবন অচল । প্রতিটা নিঃশ্বাসে যেন তার সুনীলকেই প্রয়োজন ।
এত প্রাপ্তির পরেও বরুনা কিভাবে স্বার্থপর হবে..!?
জেনে শুনে সুনীলের জীবনটা নষ্ট হতে দেবে ... !?
নাহ তা হয়না ....
সেই সুনীলকে বরুনা কখনো ঠকাতে পারবেনা ......
হা হা হা ...... সে এইসব কি ভাবছে সুনীলকে দাড় করিয়ে রেখে ?
আজ যে সুনীলের খুব সুখের দিন । সন্ধ্যায় তাদের বিয়ের কার্ড নিয়ে এসেছে আমাকে নিমন্ত্রণ করার জন্য ।
সুনীলের জীবনে তার পদচারনা ছিল একটি বিষাক্ত কীটের মতোই । নিজেকে অভিশপ্ত মনে হয় বরুনার , যখন সে দেখে তার ছায়ায় একটা মানুষের শত যত্নে গড়া স্বপ্ন গুলো বারবার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে ।
সে বুঝেছিল তার ছায়া সুনীলের জন্য ক্ষতিকর ।
তাইতো এই সরে আসা .........
যতবার ভেবেছে সুনীলের জীবনটা সুন্দর করবে ততোবারই ছিটকে এসে পড়েছে শূন্যতায়। তখনই বরুনা বুঝে গিয়েছিলো সে সুনীলের জীবনের অভিশাপ, বরুনা নিজেও জানে সে ছোট বেলা থেকেই অভিশপ্ত; যখনই সে কোন কাজে হাত দিয়েছে, কোন কিছু আশা করেছে সেইটাই তার অভিশপ্ত জীবনের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সে জানে সুনীলের সাথে থাকা মানে সুনীলের জীবনটা নিজ হাতে ধ্বংস করা বৈকি আর কিছুই নয় ....
সুনীলের সাফল্য গুলোকে আঁটকে রাখার কোন অধিকারই নেই বরুনার ।
বরুনা কি এতটাই স্বার্থপর হতে পারে কখনো ......!?
নাহ, সে পারবে না,
সে সরে যাবেই .।.।.।.।.।।
তাই একদিন নিজের সাথেই নিজের যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলো বরুনা । শপথ নিয়েছিলো, যে ভাবেই হোক তার এই অভিশপ্ত কালো ছায়া থেকে মুক্তি দেবেই সুনীলকে। নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য সে সুনীলকে ঠকাবেনা কিছুতেই ।
আস্তে আস্তে সুনীলকে সে বোঝাতে শুরু করলো , বাস্তবতা দেখালো চোখে আঙুল দিয়ে ।
বুঝতে পারতো সুনীল খুব কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু এ ছাড়া সুনীলের জন্য আর কি বা করার আছে তার ।
ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে সুনীলের সাথে তার দূরত্ব বাড়াতে থাকলো বরুনা।
বরুনা জানতো প্রকাশ না করলেও সুনীল অনেক কষ্ট পেত তাদের দুরত্বের কারনে আর পূর্ণার সাথে সম্পর্কটাও তার উপরে অভিমান করেই শুরু করেছিলো সুনীল,
কিন্তু বরুনা চায় সেই অভিমানটা যেন চিরস্থায়ী হয়ে থেকে যায় সুনীলের ভেতরে । হয়তো ডাক দিলেই সুনীল সব ছেঁড়ে ছুঁড়ে ছুটে আসতো বরুনার কাছে কিন্তু বরুনা তো এমনটা কখনো চায়নি।
সুনীলের জন্য এর থেকে ভাল কিছু করার ক্ষমতা তার নেই । সুনীল সেইটা আজ না বুঝুক, একদিন বুঝবেই এইটা বরুনার বিশ্বাস।
সুনীলও এখন কেমন জানি বদলে গেছে। হয়তো বরুনা যা বোঝাতে চেয়েছিল সুনীল তা ঠিকঠাকই বুঝে নিয়েছিলো ......
বুঝে গিয়েছিলো আঘাতের বদলে আঘাত ই করতে হয় ।
তাই একটা সময় সে বুঝতে শুরু করলো এভাবে আর কত দিন .....?!
এক পক্ষ শুধু পেছোতে থাকলে আরেক পক্ষের কতখানিই বা আর আগানো সম্ভব...?!
ক্লান্তি বলে একটা কথা তো থেকেই যায় ......
শুনেছি পূর্ণা নামের একটা মেয়ের সাথে নাকি পরিচয় হয়েছিল সুনীলের । দুজনের নাকি খুব ভাল বোঝাপড়া ।
বরুনা লক্ষ্য করেছে পূর্ণা সুনীলের জীবনে আসার পর থেকে তার অভিশপ্ত ছায়াটা ধীরে ধীরে সরতে শুরু করেছে সুনীলের উপর থেকে। এখন চারিদিকে শুধু সুসংবাদের ছড়াছড়ি .........
এটাই তো চেয়েছিল বরুনা, তবে কেন আজ সুনীলের সুখের দিনে চোখ ভেঙ্গে কান্না আসছে তার ...।
নাহ, তাকে দুর্বল হলে চলবেনা । আরও শক্ত হতে হবে তাকে। অন্তঃত পক্ষে সুনীলের ভালোর কথা চিন্তা করে তাকে এইটুকু কষ্ট মেনে নিতেই হবে।
আজ হাসি মুখে বিদায় দিতে চায় সে সুনীলকে .........
বরুনা জানে সব গল্পের শেষ থাকতে নেই......
কারন অনেকে জিতে গিয়েও নাকি কখনো কখনো হেরে যায় ......
কিন্তু বরুনা হেরে গিয়েও জিততে চায়......
ভাল থেকো সুনীল ......
ভাল থেকো সকল জ্যোৎস্না মোড়ানো রাত্রি গুলোয় ......
ভাল থেকো কিছু স্বপ্ন পূরণের স্বপ্ন মেলায় .......
১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৭
তুষার কন্যা বলেছেন: ধন্যবাদ আপু!
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩০
খাইরুন নাহার বিনতে খলিল বলেছেন: ভালো লিখেছেন।