নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অবাক পৃথীবি এবং আমি.........

আমারও লিখার অধিকার আছে.........

kabbyo

আমার স্বপ্নের হাতে হাতকরা, তাই স্বপ্নের হাতে বন্দি...................।

kabbyo › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুঁথি

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:১৪

বলি ভাইরে ভাই, বলে যায়, আজব এক ঘটনা,

সাপ খেলে সাপুরের মেয়ে নামে জরিনা।

জরিনার মা নাই,



জরিনার মা নাই, বাপ নাই, দাদির সাথে ঘোরে,

বেহুলা লক্ষীন দারের গানে পরান পাগল করে।

জরিনার বয়স ষোল,



জরিনার বয়স ষোল, হাতে ছিল, প্লাষ্টিকের চুড়ি,

গলায় ছিলো পুথির দানা পরনে জাম শাড়ী।

বরন কাঁচা সোনা,



বরন কাঁচা সোনা, হাত দুখানা, লাও লতিকার ডোগা,

ভ্রুতে বিজলী মাখা চাওনি স্বপন আঁকা।

ঠোটে মধু মাখা,



ঠোটে মধু মাখা, আঁকা বাঁকা, পথ ধরিয়া চলে,

দেখতে ভাল গঠন ভাল যে দেখে সে বলে।

হাসিতে জগত মাতায়,



হাসিতে জগত মাতায়, সুন্দর ও গায়, সবুজ ব্লাউজ আছে,

আওলিয়া কাজল ভ্রমর তার উপর দুলতাছে।

যেমন মধুর চাক,



যেমন মধুর চাক, দেখলে অবাক, মনের মন হরে,

সারাটা দিন সাপ খেলিয়া তারা সন্ধায় বাড়ী ফেরে।

তাদের ডিঙ্গা নাই,



তাদের ডিঙ্গা নাই, সেই দিন হায়, পূর্ণীমা রজনী,

খাওয়া দাওয়া অন্তে তামাক সাজে বিনোদীনি।

দিলো দাদীর হাতে,



দিলো দাদীর হাতে, মন খুশীতে, দাদী তামাক খায়,

মধ্য গাঙ্গে কলার ভেলা ধব ধবে জোসনায়।

যায় স্রোতের বেগে,



যায় স্রোতের বেগে, জরিনা দেখে, দাদীকে ডাকিলো,

মশারী টাঙ্গানো ভেলা অনুমান করিল।

সাপে কাটা মানুষ,



সাপে কাটা মানুষ, দেখতে হাউশ, হলো জরিনার,

দাদী বলে যাক না ভেসে আছে কি দরকার।

মানেনা মানা জরিনা,



মানেনা মানা জরিনা, ডিঙ্গি খানা, দেয় সে ভাসাইয়া,

কলার ভেলা যায় ভাসিয়া গেল সে পৌছাইয়া।

ভেলার নিকটে,



ভেলার নিকটে, সত্য বটে, সাপে কাটা মানুষ,

চাদর দিয়ে আছে ছাপানো মেয়ে নয় পুরুষ।

দাদী চাদর তোলে,



দাদী চাদর তোলে, দেখে বলে, বড় লোকের ছেলে,

বুকের সাথে কাগজ বাধা নিলো হাতে তুলে।

জরিনা পড়ে দেখে,



জরিনা পড়ে দেখে, কয় দাদীকে, বাড়ী সানপুকুরে,

ছয় দিন কেটেছে সাপে সঙ্গে সঙ্গে মরে।

সাপটি মারা পরে নাই,



সাপটি মারা পরে নাই, আর ছেলে নাই, একটি মাত্র ছেলে,

এম. এ. ক্লাশে পড়তে ছিলো ভাগ্য গেছে টলে।

পত্রে লিখা আছে,



পত্রে লিখা আছে, আমার ছেলেকে যে, বাচাঁতে পারে,

পনের হাজার নগত টাকা বখশিস দিবো তারে।

দাদী চিন্তা করে,



দাদী চিন্তা করে, অনেক পরে, জরিনাকে কয়,

ডিঙ্গির সাথে বাধো ভেলা, মনে সন্ধ হয়।

ছেলেটি বাচঁতে পারে,



ছেলেটি বাচঁতে পারে, রাত্র ধরে, ঝাড়া ফোক করে,

ফল হলোনা কোন তাতেই দাদী চিন্তা করে।

ডাকে জরিনাকে,



ডাকে জরিনাকে, তোর চাচাকে, জলদি ডেকে আন,

কাল সাপ করেছে দংশন হয় যে অনুমান।

কড়ি চালান দিবো,



কড়ি চালান দিবো, সাপ আনিবো, যে সাপে দংশিলো,

সাদা রঙের খাসী দরকার বলো কোথায় পাব।

দুগ্ধ চাই আধ মন,



দুগ্ধ চাই আধ মন, কোথায় এখন, নগদ টাকা পায়,

জরিনা কয় দুল বেচিবো টাকার ভাবনা নাই।

জরিনার চাচা এলো,



জরিনার চাচা এলো, সব শুনিলো, যাই সে ধাওয়ায় ধায়,

এই দিনতো গেলে সাতদিন আর তো আশা নাই।

বেলা দুপুরে হলো,



বেলা দুপুরে হলো, যোগাড় হলো, খাসী দুধ আধ মন,

জল ডহরা হতে দাদী তুলে আনে তখন।

একটি মাটির পাতিল,



একটি মাটির পাতিল, মুখে তাহার নীল, কাপড় বাধা ছিলো,

ধুলা পড়া দিয়ে পাতিলের মুখ খুলিয়া দিলো।

গর্জন শোনা যায়,



গর্জন শোনা যায়, হায়রে হায়, কানে লাগে তালা,

ভয়েতে গায়ের রোম শিউরে ওঠে ঢাকনিতে দেয় ঠেলা।

দাদীর অঙ্গ কাঁপে,



দাদীর অঙ্গ কাঁপে, হস্ত কাঁেপ, গলায় বস্ত্র নিয়া,

দোহায় দিয়া খাড়া হলো পাতিলের সামনে গিয়া।

দর্শক হাজার হাজার,



দর্শক হাজার হাজার, গাঙ্গের কিনার, লোকে লোকারন্য,

শুধু শোনা যায় গর্জন দাদী ঘোন ঘোন।

দোহায় দেয় মনোশার,



দোহায় দেয় মনোশার, কিছুতেই আর, থামে না গর্জন।

ছত্রিশ কাহন সাপের মন্ত্র সব হলো খতম।

দাদী অস্থির হলো,



দাদী অস্থির হলো, ঢুলে পরলো, ডাকে জরিনায়,

আমারও হায়াত বুঝি শেষ হইয়া যায়।

জরিনা ছুটে এলো,



জরিনা ছুটে এলো, দাঁড়ায়লো, গলায় কাপড় দিয়া,

উলঙ্গ হইয়া মাজার সুতা ফেলে ছিড়িয়া।

বেহুলার গান ধরিলো,



বেহুলার গান ধরিলো, থেমে গেল দুরন্ত গর্জন,

আধ হাত সাপ একটা ঢাকনিতে তখন।

দাঁড়ায় ফনা ধরে,



দাঁড়ায় ফনা ধরে, ঢাকনি পরে, তিনটি কড়ি ছিলো,

তিনটি কড়ি তুলে জরিনা তিন দিকে দিলো।

সাপে চল্লো ছুটে,



সাপে চল্লো ছুটে, ধন্য বটে, ধন্য বেদের মেয়ে,

দর্শকগন তো প্রশংসা করে হাতে তালি দিয়ে।

দুপুর পড়ে গেল,



দুপুর পড়ে গেল, দাঁড়ায়ে রইলো, জরিনা একভাবে,

নাভি ভরা পানিতে কোন বস্ত্র নাই শরীরে।

দাঁড়ায় হস্ত জুড়ে,



দাঁড়ায় হস্ত জুড়ে, উচ্চরন করে, আল্লাহ নবীর নাম,

হাজার হাজার লোক দাঁড়ায়ে রইলো নিমা শাম।

সবাই চেয়ে থাকে,



সবাই চেয়ে থাকে, হঠাৎ দেখে, দুরে বহু দুরে,

কি যেন যে আসিতেছে পানি দুভাগ করে।

গর্জন শোনা য়ায়,



গর্জন শোনা য়ায়, দেখে হায়, বিরাট অজগর,

আধ হাত সে সাপটি তার মাথার উপর।

অজগর ছুটে আসে,



অজগর ছুটে আসে, ভেলার পাশে, ঘোরে চতুর দিকে,

মাথা উঁচু করে মশারীর মধ্যে গেল ঢুকে।

লাশের পা যেদিকে,



লাশের পা যেদিকে, সেই দিকে, ফনা ধরে দাঁড়ালো,

হা করিয়া ছোবল দিয়া গিলিয়া ফেলিল।

পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল,



পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল, যে আঙ্গুলে, দংশনের দাগ ছিলো,

মুখের ভিতর দিয়া আঙ্গুলের বিষ চুষিয়া নিলো।

আঙ্গুল ছেড়ে দিলো,



আঙ্গুল ছেড়ে দিলো, ছুটে এলো, যেথায় দুধের ডালা,

মুখ ডুবাতে আধা মন দুধ হইয়া গেল কালা।

তখন ফনা ধরে,



তখন ফনা ধরে, গর্জন করে, ভীষন সে গর্জন,

সাদা খাসী এনে জরিনা সামনে দেয় তখন।

সাপে হাঁ করিয়া,



সাপে হাঁ করিয়া, ছোবল দিয়া, ধরে খাসীর গলায়,

লেজ দিয়া প্যাচায়ে ধরে উড়ার ছেড়ে যায়।

জরিনা জলদি করে,



জরিনা জলদি করে, হুস করে, দাদীকে তখন,

মশারী উচুঁ করে দেখে জহির অচেতন।

তখনও হুস ফেরে নাই,



তখনও হুস ফেরে নাই, বলে সবাই, কি হলো কি হলো,

মাথার কাছে বসে দাদী তিন থাপর দিলো।

কলার ভেলার পরে,



কলার ভেলার পরে, নামটি ধরে, ডাকে জোরে জোরে,

ওঠো ওঠো সোনার জহির ওঠো জলদি করে।

জহির চেতন হলো,



জহির চেতন হলো, চোখে মেলিলো, আল্লাহ আল্লাহ বলে,

মা-মা বলিয়া ডাকিয়া উঠিলো।

কোথায় মা আমার,



কোথায় মা আমার, দাদী জরিনার, মাথায় বুলাই হাত,

কাঁচা মাটির পাতিলে জরিনা রেঁধে আনে ভাত।

খাওয়া দুগ্ধ দিয়া,



খাওয়া দুগ্ধ দিয়া, বেলা ডুবিয়া, রাত্রি যে হলো,

সারা রাত্রি ধরে জরিনা শুশূষা করিলো।

শেষে রাত্রি বেলায়,



শেষে রাত্রি বেলায়, ঘুম ভেঙ্গে যায়, জহির চেয়ে রই,

কে তুমি সুন্দরী কন্যা বলো আমি কোথায়?

জরিনা সব বলিল,



জরিনা সব বলিল, জহির শুনিলো, তাজ্জবও হইয়া,

কেন বাঁচালে তুমি মোরে যাবে না ভুলিয়া।

সাক্ষী রাতের আঁধার,



সাক্ষী রাতের আঁধার, আর দরিয়ার, পানি কাষ্ঠের নাও,

আকাশের ও লক্ষ তারা তোমার সাক্ষী হও।

জরিনার ঋণ শুধিবো,



জরিনার ঋণ শুধিবো, জীবন দিবো, যে জীবন বাঁচায়,

হাতের আংটি খুলে জরিনার আঙ্গুলে পরাই।

নিশি প্রভাত হলো,



নিশি প্রভাত হলো, টেলিগ্রাম করিলো, জরিনার চাচায়,

শানপুকুরে বিরাট ধনী জহিরের আব্বায়।

টেলিগ্রাম পায় দুপুরে,



টেলিগ্রাম পায় দুপুরে, দেখে পড়ে, বেহুস হইলো,

আত্নীয় স্বজন সকলে যে দৌড়ায় আসিলো।

সবাই ছুটে এলো,



সবাই ছুটে এলো, ভাড়া করিল, বার খানা পাংশী,

কোথায় সে বাদিয়ার কেল্লা কোথায় বেহুলা নদী।

চলে খোঁজ করিয়া,



চলে খোঁজ করিয়া, যমুনা ছাড়িয়া, ধলেশ্বরী গিয়া,

খোঁজ পেলো বেথুয়া নদীর মানিক গড্ডে গিয়া।

রাত্রি ফজর হলো,



রাত্রি ফজর হলো, সাড়া পড়িলো, জহিরের বাপ এলো,

ঘুমায়ে ছিলো সোনার জহির জরিনা ডাকিলো।

জহিরের ঘুম ভাঙ্গিলো,



জহিরের ঘুম ভাঙ্গিলো, চেয়ে দেখিলো, বার খানা পাংশী,

শোকে জড়ো সরো বাপ-মা সাত দিন অনাহারে।

জহির যায় ছুটিয়া,



জহির যায় ছুটিয়া, পড়ে লুটিয়া, মা-বাপের ও পায়,

বলে আব্বা জহির উদ্দিন কে বাঁচায় তোমায়।

বখশিষ দেব তারে,



বখশিষ দেব তারি, টাকা কড়ি, সাথে জমিদারী,

দাদী বলে এ পুরস্কার প্রাপ্য জরিনারই।

জরিনার উছিলায়,



জরিনার উছিলায়, খোদা তাআলা বাঁচায়, তোমার ছেলে,

তাইতো আজি পুত্র ধনের মুখ দেখিতে পেলে।

এসো মা-জরিনা,



এসো মা-জরিনা, চাঁদের কনা, লহও পুরস্কার

জরিনা কয় প্রাণ বাঁচালাম যার।

আমি তাকে চাই,



আমি তাকে চাই, মিটাও, মনের আশা,

জহিরের আব্বা বলে মাগো ছাড়ো এ দুর আশা।

টাকা লও পঁচিশ হাজার,



টাকা লও পঁচিশ হাজার, দিয়া দিবো ঘর, ও বাড়ী,

বেদের মেয়ে তুমি যে মা, তাই আপত্তি করি।

জরিনা কয় না কথা,



জরিনা কয় না কথা, নিচু মাথা, উচুঁ না করিল,

ধীরে ধীরে পাও ফেলায়া ডিঙ্গিতে চড়িল।

কেহই হইনা রাজী,



কেহই হইনা রাজী, শরীফ কাজী, ধনী জমিদার,

কি করে যে পাঁচ দিন কাটে লইনা পুরস্কার।

জহির কয় মা-জননী,



জহির কয় মা-জননী, শোন তুমি, হোকনা বেদের মেয়ে,

জরিনাকে না পেলে আমি করবো আর বিয়ে।

জরিনা সাথে ছিলো,



জরিনা সাথে ছিলো, পায়ে ধরিলো, বলি আব্বা জান,

না পেলে প্রাণের জহিরকে তেজিবো প্রাণ।

বেথুয়া নদীর জলে,



বেথুয়া নদীর জলে, রাত্রিকালে, এই ঘটনা হলো,

একমাত্র পুত্র জহিরের বাপ-মা রাজী হলো।

বাজে সাদীয়ানা,



বাজে সাদীয়ানা, তিনশো খানা, বেদের নৌকা সাজে,

বারখানা পাংশী নৌকা চলে আগে পিছে।

মাঝে জহির জরিনা,



মাঝে জহির জরিনা, পাংশী খানা, সাজায় কি বাহার,

পাংশীর সাথে বেধে দিলো ডিঙ্গি দাদী-মার।

দাদীমা নামাজ পড়ে,



দাদীমা নামাজ পড়ে, মোনাজাত করে, হায়গো দয়াময়,

দাম্পত্য জীবন জরিনার করো মধুময়।

কবিতা ইতি হলো।।





(সংগ্রহ)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৪

হতাশ নািবক বলেছেন: জটিল..........................

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:০৯

kabbyo বলেছেন: অস্থির

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.