নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেমন করে বাঁজাও বাঁশি সুর যেন গো সর্বনাশী থাকতে আমায় দেয়না গৃহ কোনে , ওঝা যেমন বীনের টানে গর্ত থেকে সর্প আনে তেমনি করে টানছো তোমার পানে।
সাহিত্যের আদিমতম শাখা হলো কবিতা। কবিতা বা পদ্য হচ্ছে শব্দের নান্দ্যনিক খেলা। শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ছান্দসিক বা অনিবার্য ভাবার্থের বাক্য-বিন্যাসে একজন কবি তাঁর আবেগ-অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তাধারাকে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে উপমা, উৎপ্রেক্ষা ও চিত্রকল্পের সাহায্যে সর্বোত্তম শব্দে সংক্ষিপ্তরূপে প্রকাশ করে; যা শ্রুতিময় এবং পাঠকের মনের আবেগ-অনুভূতিকে আন্দোলিত করে তোলে; তা-ই কবিতা। যুগে যুগে কবিতার বৈশিষ্ট্য ও কাঠামোতে পরিবর্তন ও পরিমার্জন হয়েছে। এ পরিবর্তনের ধারা বর্তমানেও চলছে এবং আগামীতেও চলবে। এ প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। কবিতায় ব্যবহৃত শব্দ শ্রুতিমধুর, পাঠে সুখ ও তৃপ্তিদায়ক হলে, সে সকল শব্দের সুষম বিন্যাসে একটি উজ্জ্বল ও সার্থক কবিতা হয়ে ওঠে। যা অনুধাবনে তথা পাঠ করে, আমাদের কাব্যিক মননের তৃষ্ণা মেটায় এবং মনের অনুভূতিকে আন্দোলিত করে তোলে
কিন্তু বড়োই পরিতাপের বিষয়, বর্তমানকালে আধুনিক কবিতা নির্মাণ ও প্রকাশে যে অবয়ব ধারণ করেছে; তার রস-আস্বাদন খুব সহজে উপভোগ করা যায় না। চেতনায় আঘাত করে পাঠককে আন্দোলিত করে না। মনে হয়, শব্দগুলো ঝংকৃত হতে হতে মগজে প্রবিষ্ট না হয়ে, মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলে যায়। মূলতঃ কবিতা গভীর উপলব্ধির বিষয়। অনেক কাব্যবোদ্ধাগণ কবিতায় চিত্রকল্পের নান্দ্যনিক গ্রন্থনার কথা বলেন। কিন্তু আধুনিক কবিতায় চিত্রকল্প সৃষ্টির চেয়ে বিমূর্ত বিষয়ের উপর অধিক মাত্রায় কবিতা সৃষ্টি হচ্ছে। যা সাধারণ পাঠক মনে আগ্রহ ও আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারছে না। ফলে, কবিতার পাঠকের বিস্তৃতি ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে; যা আদৌই কাম্য নয়।
কবিতা খুব নিবিড়ভাবে পাঠ করতে হয়। কবিতার প্রতিটি শব্দের ভেতরে ডুবে যেতে হয়। তখন একেকটি শব্দ একেকটি দিগন্ত উন্মোচন করে দেবে। আর একেকটি দিগন্ত একেকটি ভুবন বিকশিত করে। যখন কবিতা বিকশিত ভুবনে বিকাশিত হবে; তথনই একেকটি ভুবনে খুঁজে পাওয়া যাবে তৃপ্তিদায়ক রসের আকর। আর, পাঠক আগ্রহভরে কবিতা পাঠ করবে এবং দোলায়িত কবিতা স্মরণে রাখবে।
সাম্প্রতিকালে কিছু কবি মনে করেন, কবির আবেগ, অনুভূতি বা মনের ভাব শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে প্রকাশ করাই কবিতা। কবি কবিতা লিখবেন তার নিজস্ব মননে উৎসারিত ভাবনাকে শব্দের কাঠামো দিয়ে। কবিতার গূঢ়ার্থ উদ্ধারের সম্পূর্ণ দায় পাঠকের; কবির নয়। যে সকল কবিগণ শব্দের পর শব্দকে সাজিয়ে ভাবনার বিমূর্ত ছায়াছবি সৃষ্টি করবে; সে সকল কবিদের ধারণা অনেকটা এরকম, কবিতার অর্থোদ্ধারে পাঠকের যতো কষ্ট ও ভোগান্তি হবে; কবি হিসেবেও তাদের মহত্ব বা কবিত্ব তত বেড়ে যাবে! জটিল সৃজনশক্তির কাছে পরাস্ত হয়ে পাঠক কবিকে সম্মান ও সালাম জানাবে। তাই হয়তো, তাদের চেতনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন প্রমূখ কবিগণ মান্দাত্মার কালের কবি এবং আধুনিককালে তাঁরা পরিত্যাজ্য। ছন্দময় কবিতাকে নেতিবাচক চেতনায় পদ্য বলে অভিহিত করেন। কেউ কেউ রাবিন্দ্রিক যুগের কবিতা বলেও উপহাসচ্ছলে মন্তব্য করেন।
এমনও দেখেছি, কবিতা লেখার বদৌলতে, কবিতা-পাঠ অনুষ্ঠানে তথা কাব্যিক আসরে সভাপতি বা বিশেষ অতিথি হিসেবে মূল্যবান আসনটি অলংকৃত করে বসে আছেন এমন একজন কবি; যার কবিতা শুনে বা পড়ে বুঝতে পারি, কবিতা সৃষ্টির রূপময়তার কারুকাজ তার কবিতায় লেশমাত্র নেই। অতিশয় সাবলীল ও অপ্রচলিত শব্দগুচ্ছ সমাহারে পঙক্তিবদ্ধ করে কবিতা সৃষ্টির প্রয়াস করেন। সে সকল কবিতা সৃষ্টি হয়ে শিল্পোর্ত্তীর্ণের বাঙ্ময়তা লাভ করতে পারে না। রচিত কবিতার মর্মকথার রস আস্বাদন করা পাঠকের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। তাই দেখা যায়, গত শতাব্দীর ত্রিশ, ষাট বা নব্বই দশকে বাংলা কবিতার যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিলো, বর্তমানে উল্লেখ করার মতো তেমন কবিতার আন্দোলন নেই বললেও চলে। গত তিন দশকের উপরের সময়কালে উল্লেখ করার মতো তেমন কবির আবির্ভাব ঘটেনি বাংলা কবিতার অঙ্গনে।
বর্তমানে কবিতা লেখা যেন জলবৎতরলং। আজকাল কবিতা লেখা খুবই সহজ। ডিম ভাজতে ভাজতে কবিতা লিখে, বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ করে পাঠকের কাছে তুলে দেয়া যায়। যেন, কবিকে শুধুমাত্র একগুচ্ছ শব্দ সুগ্রন্থিত করে কবিতা নামে প্রকাশ করলেই কবিতা হয়ে যায়! তার লেখার অর্থ বা অর্থহীনতা, ভাবনার গূঢ়তা বা লঘুতা অনুসন্ধানের দায়িত্ব পাঠকের। অনেক সময় দেখা যায় ব্যকরণগতভাবে সার্থক বাক্যের অনুপস্থিতিতে, শব্দে পর শব্দ বসিয়ে কবিতার আবহ সৃষ্টিতে বদ্ধপরিরকর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যান সে সকল কবিগণ।
বর্তমানের শব্দকবিতা বিনির্মাণে যে সকল কবিগণ উচ্চকিত; তাদের ধারণা, কবিতায় একটি নির্দিষ্ট ভাবনা থাকতে হবে, তা নয়; একগুচ্ছ শব্দ ব্যকরণসিদ্ধ বাক্য গঠন করবে, তা-ও নয়। শব্দকবিতা সৃষ্টিকারী কবি মনে করেন, কবিতায় ব্যবাহৃত একটি শব্দ পাঠকের মনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিতে পারে এবং তাকে আমূল নাড়িয়ে; দিতে পারে। বর্তমানে শব্দকবিতার আন্দোলন চললেও তা' তেমনা সাড়া জাগানোর আন্দোলনও নয়। শব্দ কবিতার মূল বিষয়; কিন্ত শব্দই কবিতা নয়।
২| ১০ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৭
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।
কবিতার চারিত্রিক বিশ্লেষণ কিংবা ব্যবচ্ছেদ কবিদের পাঠকদের নজর কাড়বে বলেই আমার বিশ্বাস।
৩| ১১ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়ে বেশ কিছু বিষয় জানলাম।
৪| ১৩ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৪২
কবীর হুমায়ূন বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়জন। শুভ কামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: কবিতায় একটি বিষয় বা ভাব থাকতে হবে।