![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(চিঠি লেখা আমার খুব পছন্দের একটা কাজ।তাই অনেক অনেক আগে চিঠির ভাষায় গল্প লেখার চেষ্টা করতাম। আজ পনি অাপুর চিঠিটা পড়ে অনেক আগের এ লেখাটি পোস্ট করতে ইচ্ছে হচ্ছে। জানি, এটার হয়তো সাহিত্য মূল্য বলতে কিছু্ই নাই। তবু নিজের ইচ্ছের মূল্য দিলাম। লেখাটি সাহস করে পোস্ট করলাম)
প্রাক্তন স্বামীর কাছে চিঠি, তাও এদ্দিন পর, বিষয়টা অস্বস্তিকর বলেই বোধহয় তোমাকে সম্বোধন করার মতো কোন শব্দ পাচ্ছি না। মনে পড়ে, যখন আমাদের বিয়ে হল, যখন আমাদের প্রেমানভূতি তীব্র ছিল, তখন তোমাকে প্রিয়তম বলে ডাকতাম। তোমার মতো প্রিয় কোন কিছু আর হতে পারে এ আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না। তোমায় ছেড়ে আমার এক বিন্দু সময়ও কাটাতে ইচ্ছে হতো না। তুমি তোমার স্কুল থেকে ফিরতে বিকাল তিনটার পর। এই চিঠিটা তোমার চোখে না পৌছালে তুমি হয়তো কখনো জানবে না, তিনটা বেজে গেলে কতোটা উচাটন হয়ে পড়তাম আমি। ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত গুনা শুরু করতাম এই ভেবে যে ১০০ তে পৌছার আগেই দরজায় তোমার কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পাব। ১০০ গুনার মধ্যে তুমি না আসলে আবার গুনা শুরু করতাম। এবার ১ থেকে ৫০। এভাবে আবার ১ থেকে ৩০, তারপর ১ থেকে ২০ তারপর ১ থেকে ১০। তারপর আবার ১ থেকে ১০০। তুমি না আসা পর্যন্ত গুনা শেষ হতো না। তোমার জন্য আমার আকুল অপেক্ষা ছিল এতোটাই পাগলামো ভরা। তারপর ধীরে ধীরে খুব ধীরে আমাদের সম্পর্ক যখন মধ্য বয়সে উপনীত হল, যখন আমাদের রোমান্টিকতা রিয়ালিজমের কুটচালে পরাজিত হতে থাকল, তখন আমি জানতে পারলাম আসল সত্যটা। বুঝলাম ভালবাসা-টাসা এইসব আসলে কিছু না। অর্থ-ই সবকিছু। তোমার সেই প্রাইমারী স্কুলের ছাপোষা চাকরিটা যে নিতান্তই ঠুনকো তা বুঝতে পারলাম একসময়। আমার বান্ধবীরা তাদের কোটিপতি স্বামীদের দেয়া দামি দামি শাড়ি, গয়নাগাটি নিয়ে যখন গল্প করতো, তখন খুব কষ্ট হতো আমার। রূপ তো আমাকেও বিধাতা কম দেননি। আমি কি ওরকম ধনবান কারুর স্ত্রী হতে পারতাম না? অক্ষরে অক্ষরে বুঝলাম, বড্ড ভুল হেয়ে গেছে। তোমার মোহন ভুলানো কাব্যময় কথায়, ডেশিং নায়কোচিত চলাফেরায় আমার মজে যাওয়া মোটেই উচিত হয়নি। নিজেই আবার নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম। কি অর করা। রূপটা যে বিধাতা দিয়েছেন, জামাইতো সেই একই বিধাতার দান।
কিন্তু একসময় যখন আমাদের পাশের বাড়ীতে লাবণী আর তার ব্যাংকার জামাই উঠে আসল, যখন লাবণী প্রতিদিন তার স্বামীর অর্থ- বিত্তের গপ্পো করা শুরু করল, তখন আমার ঘুনে ধরা মন আর ভার সামলাতে পারল না। আমি ফেটে পড়লাম চরম উত্তেজনায়। তোমাকে যেন কিছুতেই আর সইতে পারছিলাম না। তুমি যা বলতে তাকেই আমার বিষ বলে মনে হতো। তুমি যখন বলতে ভালবাসি, আমি তখন মনে মনে বলতাম ঘৃণা করি।
একদিনের একটা ঘটনার কথা বলি, আমার জীবনের ভয়াবহতম ঘটনা। বাবা বেড়াতে এসেছেন। রান্না ঘরে গিয়ে দেখি তেল ফুরিয়ে গেছে। মাসের মাঝখানে এটা সেটা ফুরিয়ে যাওয়া নিত্য ঘটনা। তাই বরাবরের মতো তেল ধার চাইতে গেলাম পাশের বাড়ির লাবণীর কাছে। কেন জানি না তখন লাবণী ঘরে ছিল না। লাবণীর জামাই দরজা খুলে ভেতরে বসতে দিল। উনাকে দেখে বলতে পারলাম না আমার উদ্দেশ্যের কথা। বের হয়ে আসতে চাইলাম। হঠাৎ উনার চোখ দুটি যেন বদলে গেল। উনি আমার গাল ছুঁয়ে দিয়ে বললেন, ভাবী, আপনি খুব সুন্দর। আমি দৌড়ে বাইরে আসলাম। সব রাগ পড়ল গিয়ে তোমার উপর। অমন ছাপোষা একটা চাকরি করো বলেই তো আজ ওভাবে অপমান করতে পারল সেই লোকটি। তোমার উপর তীব্র রাগ থেকে সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাবার সাথে বের হয়ে গেলাম।
তারপর ঘাটের জল অনেকখানি গড়ালো। আমি আবার বিয়ে করেলাম। এবার কিন্তু আর ভুল করলাম না। তুমি বেতন পেতে ৫ হাজার আর আমার বর্তমান স্বামী পায় ৫০ হাজার। আমাদের এখানে এখন আর কোন অভাব নেই। মনে পড়ে তুমি আমাকে একটা হাতপাখা গিফট করেছিলে, তীব্র গরমে ওটাই ছিল সম্বল। এখানে শীত গ্রীষ্ম কখন আসে যায় আমি টের পাই না। গরমে এসি, শীতে হীটার। মোরগের মাংস যেদিন তুমি কিনে নিয়ে আসতে, সেদিন আমাদের উৎসবের দিন হতো। এখানে মাছ-মাংস ছাড়া খাবার কথা কল্পনাই করা যায় না। বাবার বাড়ি যেতে তুমি বেবী টেক্সি ভাড়া করে নিয়ে আসতে, এখানে এসি গাড়ি ছাড়া অন্য কোন কিছুতে কখনো চড়েছি বলে মনে পড়ে না। এক কথায় আমি এখানে রাজরানী হয়ে আছি। অনেক কিছুর অভাব এখানে নেই। তবু কেন জানি এখানে একটা মুহুর্তের জন্য শান্তি পাচ্ছি না। সবকিছু কেমন জানি যান্ত্রিক মনে হয়। আমার জন্য করা তোমার যেসব কাজ আমার কাছে পাগলামী বলে মনে হতো সেগুলোর চিন্তা আমাকে এখন স্বর্গীয় সুখ এনে দেয়। আমি রাগ করে না খেলে তুমিও না খেয়ে থাকতে, বাইরে থেকে তড়িঘড়ি বাসায় ফিরে আসার চেষ্টা, স্কুলে যাবার সময় খানিকক্ষণ আমার সাথে দুষ্টামী করা এসব এখন আমার কাছে স্বপ্ন বলে মনে হয়। বেতন পেয়ে আমার জন্য নিয়ে আসা তোমার সেই দুশো টাকার শাড়িটা তখন আমি লজ্জায় আমার বান্ধবীদের দেখাতে পারিনি। অথচ মাসের শেষে নিয়ম হিসেবে পাওয়া যান্ত্রিক উপহারের হাজার টাকা দামের শাড়িগুলো কাউকে দেখাতে ইচ্ছে করে না। আমার জানা আগের সত্য এখন মিথ্যায় পরিণত। আমি এখন আমার ভুলগুলো বুঝতে শিখেছি। আজ আমি বুঝতে পারি ৫,০০০ টাকা আর ৫০,০০০ টাকার পার্থক্য কেবল ঐ একটা শূণ্যতেই। আসল পার্থক্য... আসল পার্থক্য আসলে মানুষের মনে।
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:১৮
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৭:১১
মামুন রশিদ বলেছেন: আজ আমি বুঝতে পারি ৫,০০০ টাকা আর ৫০,০০০ টাকার পার্থক্য কেবল ঐ একটা শূণ্যতেই। আসল পার্থক্য... আসল পার্থক্য আসলে মানুষের মনে।
ইয়েস..
চমৎকার লিখেছেন ।
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:১৯
কয়েস সামী বলেছেন: পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
৩| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৭:২৭
মায়াবী ছায়া বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন ।।
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:১৯
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৬
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
সুন্দর লিখেছেন
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:১৯
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:০২
মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: বেশ ভালো। শুভেচ্ছা।
তবে প্যারাগুলো আরেকটু ছোট ভাগ ভাগ করে দিলে বোধহয় আরও ভালো হত।
ভালো থাকুন, লেখক।
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:২০
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।
৬| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৭
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: সুন্দর উপসংহার
৭| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:৩৩
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।
৮| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৯
সুমন কর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
৯| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: শেষে কথাগুলো ভালো লাগলো।
১০| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৬
অস্পিসাস প্রেইস বলেছেন:
story of reality ................. covered by ethical ending.
+ +
১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৪
কয়েস সামী বলেছেন: পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
১১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:২৭
সানফ্লাওয়ার বলেছেন: অনেক অনেক সুন্দর এবং শিক্ষণীয় একটা লেখা। অনেক ভাললাগা মিশে আছে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৫৯
ঘুমন্ত আমি বলেছেন: আসল পার্থক্য মানুষের মনে নয় বাস্তবতায় ঐ পার্থক্য গিয়ে শুন্যতেই শেষ হয় !