নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক।

কাকন রেজা

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক ।

কাকন রেজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফাগুন কথা ৬ : ফাগুন, ঝরাপাতা উড়ানোর দিন; ফাগুন, চিন্তার দৈন্যতা পোড়ানোর নাম

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩২



‘আব্বুজি টাকা দাও, বেকার ভাতা’, বাড়ানো দুটি হাত দেখার আশায় আজো চোখ মেলে তাকিয়ে থাকি। ফাগুনের কথা বলছি। ইহসান ইবনে রেজা ফাগুন, আমার ছেলে, আমার আমি। স্কুল থেকে কলেজ অবধি পড়া পর্যন্ত, মাঝে-মধ্যেই হুটহাট অফিসে এসেই হাত বাড়িয়ে দিত। এমনকি গণমাধ্যমে যোগ দেবারও পরও। বলেছি, এখনতো বেকার নস, তাহলে বেকার ভাতা কেনো? ‘দাও, পকেটে টাকা নেই।’ এখন আর চায় না ও। আমি দেয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে থাকি, ওর সেই বাড়ানো হাত আর দেখতে পাই না। আমার আকুলতা শূণ্যতায় হারায়।

আজ লিখতে বসেছিলাম ভারতীয় বিশ্লেষক করণ থাপরের একটি বিশ্লেষণ নিয়ে। কিন্তু লিখতে গিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই মনে হলে ফাগুনের সেই বাড়ানো হাত দুটোর কথা। সব বিশ্লেষণ গুলিয়ে গেলো। করণ থাপর মিলিয়ে গিয়ে ভেসে উঠলো ফাগুনের মুখ, বাড়ানো হাত। মুহূর্তে পৃথিবীকে অর্থহীন মনে হলো। বেঁচে থাকাটাও।

অফিস কেবিনটাকে সাজাচ্ছিলাম অনেকটা স্টুডিও ঢঙে। একটা লাইভ শুরু করার ইচ্ছা ছিলো। কথা হচ্ছিলো একটি মাধ্যমের সাথে। ফাগুন সাজানোটাকে পছন্দ করেছিলো। গেলো রোজার ঈদেই লাইভটা শুরু করবো। অথচ কি জানতাম, আমার নিজ ‘লাইভ’টাই বন্ধ হয়ে যাবে। আমার ফাগুন, আমার আমি চলে যাবো ‘আউট অব ফোকাসে’!

করণ থাপর বলেছিলেন আমাদের উন্নতির কথা। তাকে আমার জায়গায় বসিয়ে দিই তো দেখি কী বলেন। সম্ভব হলে তাই করতাম। করণ থাপর একপাল ‘ইয়ে’কে উস্কে দিয়েছেন মাত্র। তাকে প্রশ্ন করা উচিত, আপনি কি জানেন এদেশের সড়কে প্রতিদিন কতজন প্রাণ হারান? কতজন হারিয়ে যান। কতজন বাড়ি ফিরে আসেন না। হারানোর কতটা জানেন আপনি। কতটা জানেন, সে পরিবারগুলোর কথা, যাদের সন্তান, পিতা, ভাই-বোন ফিরবে না কখনো? আততায়ী আর ধর্ষকের ক্রুর হাত তাদের মানুষ থেকে ছবি বানিয়ে দিয়েছে।

ফাগুনের বড় আশা ছিলো দেশটাকে নিয়ে। নানা ভাবনা আর পরিকল্পনা ছিলো নিজের পেশাকে ঘিরে। একদিন বলছিলো, ‘সাংবাদিকতার ক্ষেত্রটি যদি শুদ্ধ হতো, তাহলে দেশের অনেক প্রবলেম সলভ্ড হয়ে যেতো।’ বড়দের প্রতি তার ক্ষোভ ছিলো, অভিমান ছিলো। প্রশ্ন ছিলো, ‘তাদের কাছ থেকে আমরা কী শিখবো?’ আশার কথাও বলতো। অনেক তরুণের নামই বলতো সে। জানাতো, ‘আব্বুজি একটা প্রজন্ম কিন্তু গড়ে উঠছে। এটা আমাদের প্রজন্ম। আমরা নিজেরাই ঠিক করে নিতে পারবো আমাদের করণীয়।’ আহা, কী কথা, কী চিন্তা। কতজন পারে এমনটা। এই যে বুড়োরা, আমরা বসে আছি, সেজে আছি জবরজং। আমাদের দিয়ে কী হবে? হয়েছে কি কিছু গত এক দশকে? নিজ আখের গোছানো ছাড়া আরতো কিচ্ছু হয়নি।

বুড়োদের নিয়ে সত্যিই কোনো আশা নেই। অথচ যাদের নিয়ে আশা ছিলো, যাদের মধ্যে সত্যিকার প্রতিশ্রুতি ছিলো বা আছে তাদের সরিয়ে দেবার কিংবা নড়িয়ে দেবার চেষ্টা চলছে প্রতিমুহূর্তে। আর এই চেষ্টাতে সামিল সেই বুড়োদেরও কেউ কেউ, তাদের স্থানচ্যুতির ভয়ে। হায় ভয়! প্রকৃতিইতো নির্ধারণ করে দিয়েছে, সময়ে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। এসেছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। অথচ নষ্ট বুড়োদের কেউ কেউ প্রকৃতিকে অস্বীকার করতে চায়। ফাগুন তার আগুন ছড়াতে ব্যর্থ হয়। ফাগুনেরা মরে যায়। মেরে ফেলা হয়।

ফাগুন প্রবৃদ্ধির ফাঁকিটা ভালো বুঝতো। লিখতেও চেয়েছিলো। কাজির গরু যে কেতাবে থাকে গোয়ালে নয়, এটা ও ভালো জানতো। চিনতো কেতাবে গরু রাখা কাজিদেরও। ভেতরে আগুন নিয়ে গড়ে উঠছিলো ফাগুন। যে আগুন এক সময় বুড়ো হয়ে যাওয়া চিন্তার দৈন্যতাকে ঠিক পুড়িয়ে দিতো। ঝরা পাতার মতন উড়িয়ে দিতো। ফাগুনের স্বভাব যা। বায়ান্নতে দিয়েছিলো। একাত্তরেও।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.